তোমরা বিচার করিও না, যেন বিচারিত না হও (প্রসঙ্গ অনুযায়ী মথি ৭ অধ্যায় ১ পদ) | BSB Bengali Christian Articles
এই পৃথিবীতে এমন অনেক খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরাই রয়েছেন, যারা মথি
৭ অধ্যায় ১ পদের ওপর ভিত্তি করে বলেন – তোমরা কি জানো না যে, বাইবেলে প্রভু বলেছেন
কারও বিচার না করতে অথবা কারও প্রতি দোষারোপ না করতে ?
কিন্তু সত্য এটাই যে, মথি ৭ অধ্যায় ১ পদের প্রসঙ্গ কেবল
সেই একটিমাত্র পদের ওপর নির্ভরশীল নয়, আমরা যদি পরবর্তী পদগুলি ভালোভাবে অধ্যায়ন করি,
তবে আমরা বুঝতে পারব যে, প্রভু যীশু আমাদের বলেছেন ন্যায়পূর্বক বিচার করতে।
এই পদটির প্রসঙ্গ বুঝতে পারা খুবই সহজ, কিন্তু অনেক খ্রীষ্ট
বিশ্বাসীরাই তা বুঝতে চেষ্টা করেন না এবং তারা মাত্র একটি পদের ওপর ভিত্তি করেই নিজেদের
বিচারধারা মানুষের সামনে তুলে ধরেন। এমন অনেকেই রয়েছেন, যারা অনেক সময় নিজেদেরকে রক্ষা
করার জন্য এই পদটির ব্যবহার করে থাকেন। আজকাল আমরা বিভিন্ন প্রচারকদেরও দেখতে পাই,
যারা এই বাক্যটি ব্যবহার করে থাকেন তাদের বিরুদ্ধে, যারা সেই প্রচারকের ভুল শিক্ষার
বিরুদ্ধে কিছু মন্তব্য করেন।
আজকে আমরা এই নিবন্ধের মাধ্যমে বাইবেল থেকে বুঝতে চেষ্টা করব
যে, বাইবেল কি সত্যিই কারও বিচার না করবার অথবা কাউকে দোষারোপ না করবার বিষয়ে আজ্ঞা
দেয় ?
আসুন আমরা দেখি
মথি ৭ অধ্যায় ২ থেকে ৩ পদ, সেখানে লেখা আছে –
2 কেননা যেরূপ বিচারে তোমরা বিচার কর, সেইরূপ বিচারে তোমরাও বিচারিত হইবে; এবং যে পরিমাণে পরিমাণ কর, সেই পরিমাণে তোমাদের নিমিত্ত পরিমাণ
করা যাইবে। 3 আর তোমার ভ্রাতার চক্ষে যে কুটা আছে, তাহাই কেন দেখিতেছ, কিন্তু তোমার নিজের চক্ষে যে কড়িকাট
আছে, তাহা কেন ভাবিয়া দেখিতেছ না?
তো এই পদ দুটি থেকে বিষয়টি স্পষ্ট, প্রভু যীশু এমনটা কখনই বলেননি
যে, আমরা কাউকে কখনও দোষারোপ করতে পারি না, অথবা কারও বিচার করতে পারি না; কিন্তু প্রভু
যীশু এখানে বলতে চেয়েছেন যে, অন্যকে দোষ দেওয়ার পূর্বে যেন আমরা একবার নিজেদের প্রতি
দৃষ্টিপাত করি।
ধরুন, আপনি একটি লাল রঙের রোদচশমা (Sunglass) পরে রয়েছেন, আর
সেটির দ্বারা আপনি আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখতে পাচ্ছেন যে, আকাশের রং কেমন যেন লাল দেখাচ্ছে;
কিন্তু বাস্তবে আকাশের রং নীল। তাই আকাশের আসল রং দেখার জন্য আপনাকে আপনার চোখ থেকে
অবশ্যই চশমাটি সরিয়ে ফেলতে হবে।
চশমা পরিহিত অবস্থায় আপনি আকাশের মধ্যে লাল ভাব দেখতে পেলেও,
বাস্তবে আকাশে কিন্তু কোনও লাল ভাব নেই; আপনি তেমনটা দেখতে পাওয়ার কারণ হল - আপনার
চশমা। তাই চশমার জন্যই আপনি আকাশের রং ভুল দেখতে পাচ্ছেন।
ঠিক সেই রকমই অন্যের
বিচার করবার পূর্বে আমাদের উচিত যেন আমাদের মধ্যে কোনও ভুল আছে কি না, তা ভালোভাবে
খুঁজে বের করা। আমরা যদি নিজেরা ভুল হয়ে অন্যদের বিচার করি, তবে তা অন্যায় বিচার হিসেবে
গন্য হবে; আর এই বিষয়টিই প্রভু যীশু আমাদের বোঝাতে চেয়েছেন।
আরও একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি বুঝতে চেষ্টা করি,
ধরুন আপনি মদ্যপান সহ বিভিন্ন নেশা করেন অথবা খুব গালাগালি
করেন। আর হঠাৎ আপনি একদিন দেখতে পেলেন যে, আপনার ছেলে নেশাগ্রস্ত হয়ে বাড়ি ফিরে খুব
গালাগালি করতে শুরু করেছে!
তখন সেই মুহূর্তে আপনি কি করবেন ?
আপনি কি আপনার ছেলেকে মারধর শুরু করবেন, নাকি তার ওপর আঙ্গুল
তুলে তার বিচার করবেন ?
যদি আপনি আপনার ছেলের ওপর আঙ্গুল তোলেন, তবে সেটি কি ন্যায়সঙ্গত
হবে ?
এর উত্তর হল – না।
কারণ আপনি আপনার ছেলের বিরুদ্ধে যে কারণে আঙ্গুল তুলছেন, সেই
একই কাজ আপনি নিজেই করে থাকেন।
তাই আপনার উচিত আগে নিজেকে সেই সমস্ত মন্দ বিষয়গুলি থেকে বের
করে নিয়ে আসা, এবং তারপর আপনার ছেলের বিচার করা।
যদি আপনি নিজেকে সেই সমস্ত মন্দ বিষয়গুলি থেকে বের করে নিয়ে
এসে আপনার ছেলের বিচার করেন, তবে তা হবে ন্যায়সঙ্গত বিচার, আর প্রভু যীশু আমাদের সেইরকম
ভাবে বিচার করার কথাই বলেছেন।
প্রেরিত পৌলও প্রভু
যীশুর এই বাক্যকে অনুসরণ করে পিতরকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন, যা বিস্তারিতভাবে আমরা
গালাতীয় ২ অধ্যায় ১১ থেকে ২১ পদে পেয়ে থাকি, সেখানে লেখা আছে –
11 কিন্তু কৈফা যখন আন্তিয়খিয়ায় আসিলেন, তখন আমি মুখের উপরেই তাঁহার প্রতিরোধ
করিলাম, কারণ তিনি
দোষী হইয়াছিলেন। 12 ফলতঃ
যাকোবের নিকট হইতে কয়েক জনের আসিবার পূর্ব্বে তিনি পরজাতীয়দের সহিত আহার ব্যবহার
করিতেন, কিন্তু
উহারা আসিলে পর তিনি ছিন্নত্বক্দের ভয়ে পিছাইয়া পড়িতে ও আপনাকে পৃথক্ রাখিতে
লাগিলেন। 13 আর তাঁহার
সহিত অন্য সকল যিহূদীও কপট ব্যবহার করিল; এমন কি, বার্ণবাও তাঁহাদের কাপট্যের টানে
আকর্ষিত হইলেন। 14 কিন্তু
আমি যখন দেখিলাম, তাঁহারা
সুসমাচারের সত্য অনুসারে সরল পথে চলেন না, তখন আমি সকলের সাক্ষাতে কৈফাকে কহিলাম, তুমি নিজে যিহূদী হইয়া যদি যিহূদীদের
মত নয়, কিন্তু
পরজাতিগণের মত আচরণ কর, তবে কেন
পরজাতিগণকে যিহূদীদের মত আচরণ করিতে বাধ্য করিতেছ?
15 আমরা জাতিতে যিহূদী, আমরা
পরজাতীয় পাপী নহি; 16 তথাপি
বুঝিয়াছি, ব্যবস্থার
কার্য্য হেতু নয়, কেবল যীশু
খ্রীষ্টে বিশ্বাস দ্বারা মনুষ্য ধার্ম্মিক গণিত হয়, সেই জন্য আমরাও খ্রীষ্ট যীশুতে
বিশ্বাসী হইয়াছি, যেন
ব্যবস্থার কার্য্য হেতু নয়, কিন্তু খ্রীষ্টে বিশ্বাস হেতু ধার্ম্মিক গণিত হই; কারণ ব্যবস্থার কার্য্য হেতু কোন
মর্ত্ত্য ধার্ম্মিক গণিত হইবে না। 17 কিন্তু আমরা খ্রীষ্টে ধার্ম্মিক গণিত
হইবার চেষ্টা করিতে গিয়া আপনারাও যদি পাপী বলিয়া প্রতিপন্ন হইয়া থাকি, তবে তৎপ্রযুক্ত খ্রীষ্ট কি পাপের
পরিচারক? 18 তাহা দূরে
থাকুক। কারণ আমি যাহা ভাঙ্গিয়া ফেলিয়াছি, তাহাই যদি পুনর্ব্বার গাঁথি, তবে আপনাকেই অপরাধী বলিয়া দাঁড় করাই। 19 আমি ত ব্যবস্থার দ্বারা ব্যবস্থার
উদ্দেশে মরিয়াছি, যেন
ঈশ্বরের উদ্দেশে জীবিত হই। 20 খ্রীষ্টের
সহিত আমি ক্রুশারোপিত হইয়াছি, আমি আর জীবিত নই, কিন্তু
খ্রীষ্টই আমাতে জীবিত আছেন; আর এখন
মাংসে থাকিতে আমার যে জীবন আছে, তাহা আমি বিশ্বাসে, ঈশ্বরের
পুত্রে বিশ্বাসেই, যাপন
করিতেছি; তিনিই
আমাকে প্রেম করিলেন, এবং আমার
নিমিত্তে আপনাকে প্রদান করিলেন। 21 আমি ঈশ্বরের অনুগ্রহ বিফল করি না; কারণ ব্যবস্থা দ্বারা যদি ধার্ম্মিকতা
হয়, তাহা হইলে
সুতরাং খ্রীষ্ট অকারণে মরিলেন।
ওপরে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, পৌল পিতরকে দোষী করেছিলেন, কারণ
পিতর নিজে ইহুদী হয়ে পরজাতীয়দের মতো আচরন করত, কিন্তু সে পরজাতীয়দের বাধ্য করত, যেন
তারা ইহুদীদের মতো আচরন করে।
কিন্তু পিতর কখনই
পৌলকে বলেননি যে, প্রভু যীশু তো বলেছেন অন্যদের বিচার না করতে, তাহলে তুমি কেন আমার
বিচার করছ ? কারণ, পিতর ভালোভাবেই জানতেন যে, প্রভু যীশু বিচার করতে বারণ করেননি, কিন্তু
ন্যায়সঙ্গত বিচার করতে বলেছেন; আর পৌলের বিচার ছিল ন্যায়সঙ্গত। পিতর জানতেন যে, তার চোখ
থেকে কুটা বের করার জন্য পৌলের চোখে কোনও কড়িকাঠ নেই।
মথি ৭ অধ্যায় ৬ পদে প্রভু
যীশু বলেছেন –
পবিত্র
বস্তু কুকুরদিগকে দিও না, এবং তোমাদের মুক্তা শূকরদিগের
সম্মুখে ফেলিও না;
পাছে তাহারা পা দিয়া তাহা দলায়, এবং ফিরিয়া তোমাদিগকে ফাড়িয়া ফেলে।
ওপরের বাক্যটিকে যদি আমরা নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করতে চাই, তবে
অবশ্যই আমাদের বিচার করে দেখতে হবে যে, প্রভু যীশু কাদের কুকুর বলেছেন, অথবা কাদের
শূকর বলেছেন। আমরা যদি বিচার করে না দেখি, তবে কখনই কুকুরদের এবং শূকরদের চিনে উঠতে
সক্ষম হবো না।
ন্যায়সঙ্গত বিচার
করার অর্থ হল – ভালো এবং খারাপকে সঠিকভাবে পৃথক করা, যা আমাদের প্রত্যেকটি খ্রীষ্ট
বিশ্বাসীর দায়িত্ব।
ইফিষীয় ৫ অধ্যায় ১৩ পদে লেখা
আছে –
কিন্তু
দোষ দেখাইয়া দেওয়া হইলে সকলই দীপ্তি দ্বারা প্রকাশ হইয়া পড়ে; বস্তুতঃ যাহা প্রকাশ হইয়া পড়ে, তাহা
সকলই দীপ্তিময়।
Tags:-
Christian Articles, বাংলা খ্রীষ্টীয় নিবন্ধ, bsbbca, bibleshikshabhaskar, BSB Ministry, Bengali Christian Blog, Bangla Gospel, Bengali Gospel, Preaching in Bengali Language, Bible Based Articles, বাংলা প্রচার, বাংলা যীশুর প্রচার, Bangla Christiyo Christio Khristiyo Khristio Prochar, BSB Gospel, Gospel Articles, Bangla Nibondho, Gospel Online, Online Gospel, বাইবেল প্রচার, বাইবেলের বাক্য, BSB Evangelical Team, Blogger, Jesus Christ, যীশু খ্রীষ্ট, context of matthew chapter 7 verse 1, matthew 7:1 context, verse explanation explaination,
0 Comments