খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের কি দশমাংশ দেওয়া বাধ্যতামূলক ? | BSB Bengali Christian Articles
যদিও এই প্রশ্নটি খুব
একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, কিন্তু তবুও একজন খ্রীষ্ট বিশ্বাসী হওয়ার দরুন আমাদের এই প্রশ্নের
উত্তর অবশ্যই জানা প্রয়োজন। আমরা জানি যে, বাইবেলের পুরাতন নিয়মের ৬১৩-টি আজ্ঞার মধ্যে
একটি আজ্ঞা হল দশমাংশ, আর অনেকের মধ্যেই এই দশমাংশের বিষয়টি নিয়ে অনেক ধরণের বিভ্রান্তি
রয়েছে। কেউ কেউ এই বিষয়টির ওপর খুব জোর দিয়ে থাকেন, আবার কেউ কেউ এই বিষয়টিকে অগ্রাহ্য
করেন, কারণ বাইবেলের নতুন নিয়ম আমাদের দশমাংশের বিষয়ে কোনও আজ্ঞা দেয় না।
তো, আসুন আমরা বাইবেল
থেকে বিশ্লেষণ করে দেখি যে, খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের দশমাংশ দেওয়া আবশ্যক কি না!
প্রথমেই আমরা দশমাংশের
পটভূমির দ্বারা বিষয়টিকে বিশ্লেষণ করব।
দশমাংশ (Tithe) বা מַעֲשֵׂ֖ר
ma-‘ă-śêr - এর অর্থ হল - দশম অংশ (উদাহরণ স্বরুপ ১০০
টাকার এক দশমাংশ ১০ টাকা)। এই দশমাংশ শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহৃত হয়েছে আদিপুস্তক
১৪ অধ্যায় ২০ পদে, যখন আব্রাহাম মল্কীষেদককে
তার সমস্ত দ্রব্যের দশম অংশ দিয়েছিলেন এবং তারপর সদাপ্রভু ঈশ্বর এই আজ্ঞা বা নিয়ম মোশির
ব্যবস্থার মাধ্যমে সমগ্র ইস্রায়েলীয়দের দিয়েছিলেন। ব্যবস্থায় ঈশ্বর ইস্রায়েলীয়দের জন্য
তিনটি ভিন্ন ভিন্ন দশমাংশ দেওয়ার আজ্ঞা দিয়েছিলেন।
১. লেবীয়দের জন্য দশমাংশঃ-
প্রথমত, লেবীয়দের জন্য ঈশ্বর দশমাংশ দেওয়ার আজ্ঞা দিয়েছিলেন কারণ, যদি আমরা পুরাতন নিয়ম অধ্যায়ন করি, তাহলে আমরা দেখতে পাবো যে, ইস্রায়েলীয়দের ১২-টি গোত্র ছিল এবং এই গোত্রগুলির মধ্যে ১১-টি গোত্রকেই ঈশ্বর জমি-জায়গা, পশুপাল সহ সমস্ত প্রকারের অংশ দিয়েছিলেন, কিন্তু একটিমাত্র গোত্রকে তিনি এই সমস্ত কিছুই দেননি, আর সেই গোত্রটি হল – লেবীয় গোত্র, সদাপ্রভু ঈশ্বরই ছিলেন লেবীয়দের অধিকার (যিহোশূয় ১৩ অধ্যায় ৩৩ পদ)।
ঈশ্বর তাদের হাতে পবিত্র
মন্দিরের সমস্ত দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন। আর এই কারণেই অন্যান্য গোত্রদের আদেশ দেওয়া
হয়েছিল যেন, তারা দশমাংশ দ্বারা লেবীয়দের সর্বপ্রকার সহযোগীতা করে।
২. তিনটি পর্বের
জন্য দশমাংশঃ-
দ্বিতীয়ত, ইস্রায়েলীয়দের
তিনটি পর্বের জন্য তাদের দশমাংশ দেওয়ার আজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল, সেই পর্বগুলি হল – নিস্তারপর্ব
(উদাহরণ স্বরুপ যাত্রাপুস্তক ১২ অধ্যায় ১১ পদ), সাত সপ্তাহের পর্ব (উদাহরণ স্বরুপ
যাত্রাপুস্তক ৩৪ অধ্যায় ২২ পদ) এবং ফল সংগ্রহের পর্ব [যাকে কুটীরের পর্বও বলা
হয়] (উদাহরণ স্বরুপ যাত্রাপুস্তক ২৩ অধ্যায় ১৬ পদ)। ইস্রায়েলীয়দের দশমাংশের
দ্বারাই এই তিনটি পর্ব পালনা করা হত।
৩. তৃতীয় বৎসরে দরিদ্র
ও অসহায়দের জন্য দশমাংশঃ-
তৃতীয়ত, ঈশ্বর ইস্রায়েলীয়দের
আজ্ঞা দিয়েছিলেন যেন, তিন বছরে একবার তারা লেবীয়কে, বিদেশীকে, পিতৃহীনকে ও বিধবাকে
দেওয়ার জন্য সমস্ত উৎপন্ন দ্রব্যের দশমাংশ পৃথক করে রাখে, যেন তারাও ভোজন করে পরিতৃপ্ত
হতে পারে (উদাহরণ স্বরুপ দ্বিতীয় বিবরণ ১৪ অধ্যায় ২৮ থেকে ২৯ পদ)।
এগুলিই ছিল পুরাতন নিয়মে দশমাংশের পটভূমি।
·
এবার
আমরা নতুন নিয়ম থেকে দশমাংশের বিষয়টি দেখব।
যদি আমরা নতুন নিয়ম ভালোভাবে
অধ্যায়ন করি, তাহলে আমরা জানতে পারব যে, বাইবেলের নতুন নিয়মে দশমাংশের বিষয়ে একটিও
আজ্ঞা দেওয়া হয়নি, স্পষ্টভাবে এমন কোথাও লেখা নেই যে, বিশ্বাসীদের দশমাংশ দেওয়া বাধ্যতামূলক।
কিন্তু নতুন নিয়মে এমন অনেক পদ রয়েছে, যেখানে দান করার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে
এই দানের নির্দিষ্ট কোনও সীমাবদ্ধতা নেই বরং খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের মুক্ত হস্তে দান করার
কথাই বলা হয়েছে।
আর প্রেরিত পৌলের সময়কালের
খ্রীষ্ট বিশ্বাসীগণ সেরকম ভাবেই দান করতেন।
২ করিন্থীয় ৮ অধ্যায়
৩ পদে প্রেরিত পৌল লিখেছেন
–
কেননা
আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, তাহারা সাধ্য পর্য্যন্ত, বরং সাধ্যের অতিরিক্ত পরিমাণে স্ব-ইচ্ছায় দান করিয়াছিল,
প্রথম শতকের খ্রীষ্ট বিশ্বাসীগণ
তাদেরকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন, যারা ঈশ্বরের রাজ্যবিস্তারের কাজের জন্য পরিশ্রম
করতেন।
১ করিন্থীয় ১৬ অধ্যায়
১ থেকে ২ পদে পৌল লিখেছেন –
1 আর পবিত্রগণের নিমিত্ত চাঁদার
সম্বন্ধে, আমি গালাতিয়া দেশস্থ মণ্ডলী সকলকে যে আজ্ঞা দিয়াছি, তদনুসারে তোমরাও কর। 2 সপ্তাহের প্রথম দিনে তোমরা প্রত্যেকে আপনাদের নিকটে কিছু
কিছু রাখিয়া আপন আপন সঙ্গতি অনুসারে অর্থ সঞ্চয় কর; যেন আমি যখন আসিব, তখনই চাঁদা না হয়।
এছাড়াও ২ করিন্থীয়
৯ অধ্যায় ৭ পদে লেখা আছে –
প্রত্যেক
ব্যক্তি আপন আপন হৃদয়ে যেরূপ সঙ্কল্প করিয়াছে, তদনুসারে
দান করুক, মনোদুঃখপূর্ব্বক কিম্বা আবশ্যক বলিয়া না দিউক; কেননা ঈশ্বর হৃষ্টচিত্ত দাতাকে ভাল বাসেন।
এই পদগুলি থেকে এটি স্পষ্ট
যে, বাইবেলের নতুন নিয়মে খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের ওপর দশমাংশের সীমাবদ্ধতাকে চাপিয়ে দেওয়া
হয়নি, বরং হৃদয় উন্মুক্ত করে দান করার কথাই বলা হয়েছে, যেখানে কোনও সীমাবদ্ধতা নেই।
তাই নতুন নিয়মের আদেশ অনুযায়ী আমরা যেন কখনও মনোদুঃখপূর্ব্বক
বা
আবশ্যকতার ভিত্তিতে দান না করি, বরং নিজেদের সাধ্য মতো স্ব ইচ্ছায় দান করি। কারণ এটা
গুরুত্বপূর্ণ নয় যে আপনি কতটা দিচ্ছেন, বরং আপনি কীভাবে দিচ্ছেন সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
দান করার সময় আমাদের কিছু কিছু বিষয় মাথায় অবশ্যই রাখতে হবে,
সেগুলি হল –
১. ঈশ্বরের রাজ্যবিস্তারের কাজের জন্য দান করার সময় যেন আমাদের
অন্তরে এমন কুবাসনা না জাগে যে, আমি যদি বেশী দান করি, তবে ঈশ্বর আমাকে বেশী আশীর্বাদ
প্রদান করবেন, কারণ এই ভাবনা আমাদের অন্তরে লালসার জন্ম দেয়।
২. কারও চাপের প্রভাবে দান করা কখনই উচিত নয়।
এমন অনেক মণ্ডলী রয়েছে, যেখানে দান, এমনকি দশমাংশ দেওয়ার জন্যও চাপ সৃষ্টি করা হয় অথবা বাইবেলের বাক্যের অর্থ পরিবর্তন করে বিশ্বাসীদের শোষণ করা হয়।
তাই সেই সমস্ত মণ্ডলীগুলি থেকে আমাদের সাবধান থাকার প্রয়োজন রয়েছে, কারণ তারা ঈশ্বরের
বাক্যের বিপরীত কথা বলে। আমাদের অবশ্যই ২ করিন্থীয় ৯ অধ্যায় ৭ পদ মনে রাখার প্রয়োজন
রয়েছে।
৩. ভণ্ড বা কপটীদের মতো দান করবেন না, কারণ এমন দান ঈশ্বরের
নিকটে গ্রাহ্য নয়।
মথি ৬ অধ্যায় ২ পদে প্রভু
যীশু বলেছেন –
অতএব
তুমি যখন দান কর,
তখন তোমার সম্মুখে তূরী বাজাইও না, যেমন কপটীরা লোকের কাছে গৌরব পাইবার জন্য সমাজ-গৃহে ও পথে করিয়া
থাকে; আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, তাহারা
আপনাদের পুরস্কার পাইয়াছে।
৪. কাউকে দেখানোর জন্য যেন আমরা দান না করি।
অনেকেই রয়েছেন যারা অন্যকে দেখানোর জন্য অথবা অন্যের কাছ থেকে
প্রশংসা পাওয়ার জন্য বেশী পরিমাণে দান করে থাকেন, কিন্তু এই ধরণের দান ঈশ্বর গ্রহণ
করেন না।
মথি ৬ অধ্যায় ৩ থেকে ৪ পদে প্রভু
যীশু বলেছেন –
3 কিন্তু তুমি যখন দান কর, তখন তোমার দক্ষিণ হস্ত কি করিতেছে, তাহা তোমার বাম হস্তকে জানিতে দিও না। 4 এইরূপে তোমার দান যেন গোপনে হয়; তাহাতে তোমার পিতা, যিনি গোপনে দেখেন, তিনি তোমাকে ফল দিবেন।
৫. ধন্যবাদ সহকারে ঈশ্বরের নিকটে দান স্বরুপ উপহার নিয়ে আসা
প্রয়োজন। কারণ, ঈশ্বর আমাদের সমস্ত কিছুই জুগিয়ে দেন, আমরা এই পৃথিবীতে যা কিছু ভোগ
করি, সেই সমস্ত কিছু ঈশ্বরেরই দান। আর সেইজন্যই ধন্যবাদের উপহার স্বরুপ আমাদের দান
ঈশ্বরের নিকটে আনতে হবে।
৬. ঈশ্বরের রাজ্যবিস্তারের কাজে সাহায্যের জন্য আমাদের সাধ্য
অনুযায়ী, যেন আমরা দান করার ইচ্ছা প্রকাশ করি, কারণ প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরাও
এমনটাই করতেন। আমরা যেন আমাদের স্থানীয় মণ্ডলীতে, যারা ঈশ্বরের রাজ্য বিস্তারের কাজের
জন্য সত্যই পরিশ্রম চালিয়ে যাচ্ছেন, তাদেরকে সাহায্য করতে পারি, যেমনভাবে প্রথম শতাব্দীর
খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা পৌলকে সাহায্য করতেন।
গালাতীয় ৬ অধ্যায় ৬ পদে লেখা
আছে –
কিন্তু
যে ব্যক্তি ঈশ্বরের বাক্য বিষয়ে শিক্ষা পায়, সে
শিক্ষককে সমস্ত উত্তম বিষয়ে সহভাগী করুক।
Tags:-
Christian Articles, বাংলা খ্রীষ্টীয় নিবন্ধ, bsbbca, bibleshikshabhaskar, BSB Ministry, Bengali Christian Blog, Bangla Gospel, Bengali Gospel, Preaching in Bengali Language, Bible Based Articles, বাংলা প্রচার, বাংলা যীশুর প্রচার, Bangla Christiyo Christio Khristiyo Khristio Prochar, BSB Gospel, Gospel Articles, Bangla Nibondho, Gospel Online, Online Gospel, বাইবেল প্রচার, বাইবেলের বাক্য, BSB Evangelical Team, Blogger, Jesus Christ, যীশু খ্রীষ্ট, Tithes, Should Christians need to give tithes, দশমাংশ, দান, offerings, cheerful offerings, Is it obligatory for Christians to pay tithes,
0 Comments