প্রসঙ্গ অনুযায়ী মার্ক ৪ অধ্যায় ২৫ পদ | BSB Bengali Christian Articles
মার্ক ৪ অধ্যায় ২৫ পদে লেখা আছে –
কারণ যাহার আছে, তাহাকে আরও দেওয়া যাইবে; আর যাহার নাই, তাহার যাহা আছে, তাহাও তাহার নিকট হইতে লওয়া যাইবে।
এই একই কথার উল্লেখ আমরা মথি ১৩ অধ্যায় ১২ পদ এবং লুক
১৯ অধ্যায় ২৬ পদেও পেয়ে থাকি।
আমরা অনেকেই হয়ত ভেবে বসি যে, উক্ত পদটিতে ধন-দৌলতের বিষয়ে
বলা হয়েছে, যার কাছে ধন-দৌলত রয়েছে, তাকে আরও দেওয়া হবে; কিন্তু যার কাছে ধন-দৌলত নেই
এবং যে অভাবে জীবনযাপন করছে, তার কাছ থেকে সবকিছুই নিয়ে ধনবান ব্যক্তিকে দিয়ে দেওয়া
হবে।
উল্লিখিত পদটি যখন আমরা সাংসারিক দৃষ্টিকোণ থেকে বোঝার চেষ্টা
করি, তখন আমাদের মনে হয় যে, এটি কি ধরনের ন্যায় ? এটি তো অন্যায়!
অনেক খ্রীষ্ট বিরোধী মানুষেরাও এই পদটিকে সাংসারিক দৃষ্টিকোণ
দ্বারা বিচার করে আমাদের প্রভুকে অন্যায়কারী এবং অধার্মিক হিসেবে দাবী করেন।
কিন্তু আমরা জানি যে, আমাদের ঈশ্বর ন্যায়কারী, এবং তাঁর ধার্মিকতার
কোনও তুলনা হয় না।
আসলে পদটির প্রসঙ্গ ধন-দৌলতের সাথে একেবারেই জরিত নয়, বরং ঈশ্বরের
রাজ্যের জন্য আপনি কতটা ফলদায়ক, এই বিষয়ের সাথে পদটির প্রসঙ্গ জরিয়ে আছে।
যদি আপনি ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য ফলদায়ক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ
করতে পারেন, তবে তার অর্থ হবে এটাই যে, আপনি আরও অধিক ফল ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য উৎপন্ন
করার উপযোগী।
প্রভু যীশু এই উক্তিটি করার পূর্বে কিছু দৃষ্টান্তমূলক কথা
বলেছেন, যা আমরা বিশ্লেষণ করতে চলেছি।
যদি আমরা মথি ১৩ অধ্যায় ৪ থেকে ৮ পদ দেখি, সেখানে লেখা
আছে –
4 তিনি কহিলেন, দেখ, বীজবাপক বীজ বপন করিতে গেল। বপনের সময়
কতক বীজ পথের পার্শ্বে পড়িল, তাহাতে পক্ষীরা আসিয়া তাহা খাইয়া ফেলিল। 5 আর কতক বীজ পাষাণময় ভূমিতে পড়িল, যেখানে অধিক মৃত্তিকা ছিল না, তাহাতে অধিক মৃত্তিকা না পাওয়াতে তাহা
শীঘ্র অঙ্কুরিত হইয়া উঠিল, 6 কিন্তু সূর্য্য উঠিলে পর পুড়িয়া গেল, এবং তাহার মূল না থাকাতে শুকাইয়া গেল। 7 আর কতক বীজ কাঁটাবনে পড়িল, তাহাতে কাঁটাগাছ বাড়িয়া তাহা চাপিয়া
রাখিল। 8 আর কতক বীজ উত্তম ভূমিতে পড়িল ও ফল দিতে
লাগিল;
কতক শত গুণ,
কতক ষাট গুণ,
ও কতক ত্রিশ গুণ।
এই দৃষ্টান্তে বীজ বলতে ঈশ্বরের বাক্যকে বোঝানো হয়েছে এবং ভুমির
সাথে মানুষের হৃদয়ের তুলনা করা হয়েছে।
আপনি একটি বিষয় ভেবে দেখুন, যদি আপনাকে কিছু বীজ দেওয়া হয় ভালো
ফসল ফলানোর জন্য, তবে আপনি কি করবেন ? আপনি কি ধরনের জমিতে সেই বীজ বপন করবেন ?
একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি হিসেবে আপনি নিশ্চয়ই পাথুরে জমিতে বা
অনুর্বর (অনুপযোগী) জমিতে সেই বীজগুলি বপন করবেন না! নিশ্চয়ই আপনি উর্বর ও উত্তম জমিতেই
তা বপন করবেন, যেখান থেকে আপনি শতগুণ শস্য উৎপন্ন করতে পারেন।
আমাদের ঈশ্বরও সেইরকম ভাবেই আমাদের সাথে করেন। তিনি পরীক্ষা
করে দেখেন যে, কার হৃদয় সেই উত্তম ভূমির মতো, যেখানে বীজ অর্থাৎ ঈশ্বরের বাক্য বপন
করলে শতগুণ শস্য উৎপন্ন হতে পারে। সেই জন্য ঈশ্বর তাকেই বেশী ব্যবহার করে থাকেন, যে
ঈশ্বরের জন্য উপযোগী ও ফলদায়ক।
তাই আপনি যদি নিজেকে উত্তম ভূমি হিসেবে ঈশ্বরের কাছে তুলে ধরতে
পারেন, তবে তিনি আপনাকেও ব্যবহার করবেন এবং একজন বিস্বস্ত সন্তানের মতো আপনাকে দায়িত্ব
দেবেন, যেন আপনি সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারেন এবং ফলদায়ী হতে পারেন।
আমাদের হৃদয়কে উত্তম ভূমি হিসেবে তৈরী করবার জন্য ঈশ্বরের বাক্যকে
আমাদের হৃদয়ে এমনভাবে স্থান দিতে হবে যেন কোনও প্রকারে কীট অর্থাৎ শয়তান এসে তা ভক্ষণ
অর্থাৎ হরণ করে নিয়ে যেতে না পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, একমাত্র উত্তম ভূমিই শতগুণ
শস্য উৎপাদন করতে সক্ষম। তাই কাঁটাবন, অথবা পাথুরে জমি থেকে অবশ্যই ঈশ্বর তাঁর বীজগুলিকে
নিয়ে এসে উত্তম ভূমিতে বপন করবেন।
আসুন আমরা দ্বিতীয়
আরও একটি দৃষ্টান্তের মাধ্যমে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করি, যার উল্লেখ আমরা লুক ১৯
অধ্যায় ১২ থেকে ২৪ পদে পেয়ে থাকি, সেখানে লেখা আছে –
12 অতএব তিনি কহিলেন,
ভদ্রবংশীয় এক
ব্যক্তি দূরদেশে গেলেন,
অভিপ্রায় এই যে, আপনার জন্য রাজপদ লইয়া ফিরিয়া আসিবেন। 13 আর তিনি আপনার দশ জন দাসকে ডাকিয়া দশটী
মুদ্রা দিয়া কহিলেন,
আমি যে
পর্য্যন্ত না আসি,
ব্যবসায় কর। 14 কিন্তু তাঁহার প্রজাগণ তাঁহাকে দ্বেষ করিত, তাহারা তাঁহার পশ্চাৎ দূত পাঠাইয়া দিল, কহিল, আমাদের ইচ্ছা নয় যে,
এ ব্যক্তি
আমাদের উপরে রাজত্ব করে।
15 পরে তিনি রাজপদ প্রাপ্ত হইয়া যখন ফিরিয়া আসিলেন, তখন, যাহাদিগকে টাকা দিয়াছিলেন, সেই দাসদিগকে তাঁহার কাছে ডাকিয়া আনিতে বলিলেন, যেন তিনি জানিতে পারেন,
তাহারা
ব্যবসায়ে কে কত লাভ করিয়াছে। 16 তখন প্রথম ব্যক্তি নিকটে আসিয়া কহিল, প্রভু,
আপনার মুদ্রায়
আর দশ মুদ্রা হইয়াছে। 17 তিনি তাহাকে কহিলেন, ধন্য! উত্তম দাস, তুমি অতি অল্প বিষয়ে বিশ্বস্ত হইলে; এ জন্য দশ নগরের উপরে কর্ত্তৃত্ব কর। 18 দ্বিতীয় ব্যক্তি আসিয়া কহিল, প্রভু, আপনার মুদ্রায় আর পাঁচ মুদ্রা হইয়াছে। 19 তিনি তাহাকেও কহিলেন,
তুমিও পাঁচ
নগরের কর্ত্তা হও।
20 পরে আর এক জন আসিয়া কহিল, প্রভু, দেখুন,
এই আপনার মুদ্রা; আমি ইহা রুমালে বাঁধিয়া রাখিয়াছিলাম; 21 কারণ আমি আপনা হইতে ভীত ছিলাম, কেন না আপনি কঠিন লোক, যাহা রাখেন নাই, তাহা তুলিয়া লন, এবং যাহা বুনেন নাই, তাহা কাটেন। 22 তিনি তাহাকে কহিলেন,
দুষ্ট দাস, আমি তোমার নিজ মুখের প্রমাণে তোমার বিচার
করিব। তুমি না জানিতে,
আমি কঠিন লোক, যাহা রাখি নাই তাহাই তুলিয়া লই, এবং যাহা বুনি নাই তাহাই কাটি? 23 তবে আমার টাকা পোদ্দারদের কাছে কেন রাখ নাই? তাহা করিলে আমি আসিয়া সুদের সহিত তাহা আদায়
করিতাম।
24 আর যাহারা নিকটে দাঁড়াইয়াছিল, তিনি তাহাদিগকে বলিলেন,
ইহার নিকট হইতে
ঐ মুদ্রা লও,
এবং যাহার দশ মুদ্রা
আছে,
তাহাকে দেও।
এই দৃষ্টান্তটি ভালোভাবে অধ্যায়ন করে দেখুন, আপনি স্পষ্টই এই
দৃষ্টান্তটিতে প্রভু যীশুর দ্বিতীয় আগমনের বিষয়ে ইঙ্গিত পাবেন, যখন তিনি রাজবেশে এই
পৃথিবীতে রাজত্ব করতে আসবেন।
তবে তার আগে দূরদেশে অর্থাৎ পিতার কাছে যাবার পূর্বে তাঁর বিশ্বস্ত
দাসদের অর্থাৎ আমাদের মতো বিশ্বাসীদের কিছু তালন্ত অর্থাৎ বীজ (ঈশ্বরের বাক্য) দিয়ে
গিয়েছেন যেন আমরা সেই বীজের সঠিক ব্যবহার দ্বারা ফল উৎপন্ন করতে পারি। পুনরায় ফিরে
আসার পর তিনি তাঁর দাসদের অর্থাৎ আমাদের (যারা খ্রীষ্টের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করেছি)
জিজ্ঞাসা করবেন –
তোমরা সেই বীজ দ্বারা কত পরিমাণ ফল উৎপন্ন করতে পেরেছ ?
এখানে ফল বা লাভ
(profit) – এর অর্থ হল এই জগতের মানুষদের ঈশ্বরের বাক্যের সঠিক ব্যবহার দ্বারা পরিত্রাণের
বা অনন্ত জীবনের পথে নিয়ে আসা।
আমাদের মধ্যে যারা অধিক ফল উৎপন্ন করতে সক্ষম হবে, ঈশ্বর তাদেরকেই
আরও অধিক বীজ দেবেন, যাতে তার সঠিক ব্যবহার দ্বারা তারা আরও ফল উৎপন্ন করতে পারে, কিন্তু
আমাদের মধ্যে যারা ফল উৎপন্ন করতে সক্ষম হবে না অর্থাৎ তাঁর বাক্যের সঠিক ব্যবহার করতে
পারবে না, ঈশ্বর সেই ব্যক্তির কাছ থেকে বীজ নিয়ে উপযোগী ব্যক্তিদেরকেই তা তুলে দেবেন,
এমনকি তাদের হাতে আরও অনেক বড় বড় দায়িত্ব তুলে দেবেন।
সর্বপ্রথম ঈশ্বর
ইহুদীদের কাছেই সেই বীজ তুলে দিয়েছিলেন, কিন্তু তারা ফল উৎপন্ন করতে সক্ষম হয়নি এমনকি
তারা বীজদাতাকেই অস্বীকার করেছিল, তাই ঈশ্বর তাঁর বীজ সেই সমস্ত বিশ্বাসীদের হাতে তুলে
দিয়েছেন, যারা অধিক ফল উৎপন্ন করার জন্য উপযোগী।
তাই আজ আপনি ঠিক
করুন, আপনি নিজেকে কি ধরণের ভূমি হিসেবে প্রমাণ করতে চান এবং কেমন ভাবে ঈশ্বরের দেওয়া
তালন্ত অর্থাৎ ঈশ্বরের বাক্যকে ব্যবহার করতে চান।
আপনি যদি ঈশ্বরের কাছ থেকে অধিক দায়িত্ব পেতে চান, তবে আজ থেকেই
ঈশ্বরের কাছে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য সচেষ্ট হন, সুসমাচার প্রচার করুন, মানুষের হৃদয়ে
ঈশ্বরের রাজ্যকে স্থাপন করুন। যেন ঈশ্বর আপনাকেও বলেন –
“ধন্য! উত্তম দাস,
তুমি অতি অল্প
বিষয়ে বিশ্বস্ত হইলে; এ জন্য দশ নগরের উপরে কর্ত্তৃত্ব কর।”
Tags:-
Christian Articles, বাংলা খ্রীষ্টীয় নিবন্ধ, bsbbca, bibleshikshabhaskar, BSB Ministry, Bengali Christian Blog, Bangla Gospel, Bengali Gospel, Preaching in Bengali Language, Bible Based Articles, বাংলা প্রচার, বাংলা যীশুর প্রচার, Bangla Christiyo Christio Khristiyo Khristio Prochar, bsbbca blog, BSB Gospel, Gospel Articles, Bangla Nibondho, Gospel Online, Online Gospel, বাইবেল প্রচার, বাইবেলের বাক্য, BSB Evangelical Team, Blogger, Jesus Christ, 10 minars, seeds, parables of jesus, good land, responsibility of the kingdom of God, spread gospel to the world,
0 Comments