যোহন লিখিত সুসমাচার ১৬ অধ্যায় ২ থেকে ৪ পদে লেখা আছে –

লোকে তোমাদিগকে সমাজ হইতে বাহির করিয়া দিবে; এমন কি, সময় আসিতেছে, যখন যে কেহ তোমাদিগকে বধ করে, সে মনে করিবে, আমি ঈশ্বরের উদ্দেশে উপাসনা-বলি উৎসর্গ করিলাম। তাহারা এই সকল করিবে, কারণ তাহারা না পিতাকে, না আমাকে জানিতে পারিয়াছে। কিন্তু, আমি তোমাদিগকে এ সকল কহিলাম, যেন এই সকলের সময় যখন উপস্থিত হইবে, তখন তোমরা স্মরণ করিতে পার যে, আমি তোমাদিগকে এই সকল বলিয়াছি। প্রথম হইতে এই সমস্ত তোমাদিগকে বলি নাই, কারণ আমি তোমাদের সঙ্গেই ছিলাম। 

প্রভু যীশু বলেছিলেন যে, আমাদের ওপর অত্যাচার আসবে, এমনকি আমাদের হত্যা পর্যন্ত করা হতে পারে।

যোহন লিখিত সুসমাচার ১৫ অধ্যায় ২০ পদের একটি অংশে তিনি স্পষ্টই বলেছেন –

লোকে যখন আমাকে তাড়না করিয়াছে, তখন তোমাদিগকেও তাড়না করিবে; তাহারা যদি আমার বাক্য পালন করিত, তোমাদের বাক্যও পালন করিত

আসুন আমরা এমন পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ঈশ্বরের বাক্য থেকে দেখি, যেখানে প্রভু যীশুকে কোনও কারণ ছাড়াই নির্যাতন করা হয়েছিল। তাঁর প্রত্যেকটি কথায়, যেখানে তাঁর কোনও অপরাধ ছিল না।

১. তারা যীশুর বিরুদ্ধে গিয়েছিল, কারণ তিনি অসুস্থদের সুস্থ করেছিলেন এবং পাপের ক্ষমা দিয়েছিলেনঃ-

লুক ৫ অধ্যায় যদি আমরা পাঠ করে থাকি, তবে সেখানে আমরা দেখতে পাই যে, প্রভু যীশুর কাছে একজন পক্ষাঘাতীকে নিয়ে আসা হয়েছিল। সেখানে অতিরিক্ত ভিড় থাকায় তারা সেই ব্যক্তিকে সামনে দিয়ে নিয়ে আসতে পারেনি, তাই তাকে ছাদের টালি সরিয়ে নিচে নামানো হয়েছিল, যাতে তারা প্রভু যীশুর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। প্রভু যীশু তাদের বিশ্বাস দেখলেন এবং তাদের বিশ্বাস প্রযুক্ত তিনি সেই অসুস্থ ব্যক্তিকে বললেন (লুক ৫ অধ্যায় ২০ পদে),

হে মনুষ্য, তোমার পাপ সকল ক্ষমা হইল

তখন অধ্যাপক ও ফরীশীরা বচসা করতে লাগলো যে, এই ব্যক্তি ঈশ্বর-নিন্দা করছে। কারণ তারা জানত যে, ঈশ্বর ব্যতীত কেউই মানুষের পাপ ক্ষমা করতে পারেন না। দেখুন, প্রভু যীশু একজন পক্ষাঘাতীকে সুস্থ করেছিলেন, যিনি না বসতে পারতেন, না হাঁটতে পারতেন, আর না নিজের থেকে খাদ্য গ্রহণ করতে পারতেন। আমরা জানি যে একজন পক্ষাঘাতীর জীবন এমনই কষ্টকর হয়। তো এমন একজন ব্যক্তিকে সুস্থতাদানের জন্য এবং সেই ব্যক্তির পাপ ক্ষমা করার জন্যও প্রভু যীশুর বিরোধ করা হয়েছিল, তাঁর কোনও ভালো কাজের জন্যই তারা তাঁর প্রসংশা করেনি, বরং তাঁর নিন্দা করেছে। তাহলে আমরা আজ কীভাবে এটা আশা করতে পারি যে এই জগৎ আমাদের ভালো কাজের পরিবর্তে আমার প্রতি ভালো কিছুই ফিরিয়ে দেবে ?

আমাদের মঙ্গল কেবল ঈশ্বরই করতে পারেন, তবে এই জগৎ আমাদের বিরোধীতাই করবে, কারণ এই জগৎ প্রভু যীশুর বিরোধীতা করেছে, এমনকি সেই সময়েও, যখন তিনি পাপের ক্ষমা দিয়েছিলেন।

২. তারা যীশুর বিরোধীতা করেছিল, যখন তিনি কর আদায়কারী ও পাপীদের সাথে ভোজনপান করেছিলেনঃ-

যখন প্রভু যীশু পাপীদের সাথে সময় কাটাতেন এবং কর আদায়কারীদের সাথে ভোজনপান করতেন, তখনও তাঁর বিরুদ্ধে বিরোধীতা করা হয়েছিল। তারা নিজেদের মধ্যে বচসা করে যীশুর শিষ্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল এই বলে যে (লুক ৫ অধ্যায়৩০ পদ দেখুন)

তোমরা কি কারণ করগ্রাহী ও পাপীদের সঙ্গে ভোজন পান করিতেছ?

প্রভু যীশু এই কারণে পাপীদের সাথে সময় কাটাতেন, কারণ তিনি বলেছিলেন যে (লুক ৫ অধ্যায় ৩১ এবং ৩২ পদ দেখুন)

সুস্থ লোকদের চিকিৎসকে প্রয়োজন নাই, কিন্তু পীড়িত লোকদেরই প্রয়োজন আছে। আমি ধার্ম্মিকদিগকে নয়, কিন্তু পাপীদিগকেই ডাকিতে আসিয়াছি, যেন তাহারা মন ফিরায়

প্রভু যীশুর উদ্দেশ্য ছিল সেই পাপিদেরকে পাপ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা, কিন্তু তবুও তারা তাঁর বিরুদ্ধে বিরোধীতা করেছিল। তাহলে আমরাও আজ কীভাবে আশা করতে পারি যে, আমরা কোনও ব্যক্তিকে পাপ থেকে বের করে নিয়ে আসতে চাইলে, প্রভুর পাপ ক্ষমার সুসমাচার এই জগতে প্রচার করলে এই জগতের মানুষ আমাদের বিরোধীতা করবে না ? মানুষ এইজন্য আমাদের বিরোধ করবে, কারণ তারা পাপেই আনন্দ করতে পছন্দ করে।

৩. মন্দ আত্মার কবল থেকে মুক্তি দেওয়ার সময়েও প্রভু যীশুর বিরোধীতা করা হয়েছিলঃ-

প্রভু যীশু যখন মানুষের মধ্য থেকে মন্দ আত্মা দূর করেছিলেন, তখনও তাঁর বিরোধীতা করা হয়েছিল। লুক ১১ অধ্যায় যদি আমরা পাঠ করি, তবে সেখানে আমরা দেখতে পাবো যে, তিনি একজন বোবা মন্দ আত্মাকে দূর করেছিলেন, এবং সেই মন্দ আত্মা বের হয়ে যাওয়ার পর যার ওপরে সেই আত্মা ভর করেছিল, সে কথা বলতে শুরু করেছিল। তখন সেখানে উপস্থিত থাকা জনতা আশ্চর্য হয়ে উঠেছিল যে এমনটা কীভাবে হতে পারে ? এবং যীশুকে এই অপবাদ দিয়েছিল যে –

এ ব্যক্তি ভূতগণের অধিপতি বেল্‌সবূলের দ্বারা ভূত ছাড়ায় আর কেহ কেহ পরীক্ষা ভাবে তাঁহার কাছে আকাশ হইতে কোন চিহ্ন চাহিল। 

আপনারা দেখলেন যে, তিনি একজন ব্যক্তিকে একটি বোবা মন্দ আত্মার কবল থেকে রেহাই দিয়েছিলেন, আপনারা কি কেউ এটিকে কোনও খারাপ কাজ বলতে পারবেন ?

অবশ্যই না। কিন্তু একবার চিন্তা করে দেখুন যে, সেই সময় এই ভালো কাজের জন্যও তাঁকে দোষারোপ করা হয়েছিল যে, তিনি শয়তানের সহায়তায় মন্দ আত্মা দূর করেছিলেন। তাই যখন বর্তমান সময়ে আমি এবং আপনি ঈশ্বরের পরিচর্যার কাজ করবো, আমরাও প্রভু যীশুর মতো তাঁর সহায়তায় মানুষদের সুস্থতা প্রদান করবো অথবা তাদের মধ্য থেকে মন্দ আত্মা দূর করবো, তখনও যদি কেউ আমাদের বিরোধীতা করে, তবে তা কি আমাদের জন্য নতুন কোনও বিষয় হবে ?

না, কারণ যখন প্রভু যীশু নিজেই এই সমস্ত কাজ করেছিলেন এবং তাঁর বিরোধীতা করা হয়েছিল, তখন আমাদেরও বিরোধীতা করা হতে পারে, যা কোনও আশ্চর্যের বিষয় নয়।

৪. তারা যীশুকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল, যখন তিনি বিশ্রামবারে মানুষকে প্রাধান্য দিয়েছিলেনঃ-

মার্ক ৩ অধ্যায়ে আমরা দেখতে পাই যে, ফরীশীরা সবসময় সুযোগের সন্ধানে থাকতো যে কখন তারা যীশুর মধ্যে কোনও দোষ খুঁজে পাবে এবং কখন তারা তাঁকে ধরিয়ে দিতে পারবে। মার্ক ৩ অধ্যায় ২ পদ আমাদের বলে যে –

তখন লোকেরা, তিনি বিশ্রামবারে তাহাকে সুস্থ করেন কি না, দেখিবার জন্য তাঁহার প্রতি দৃষ্টি রাখিল; যেন তাঁহার নামে দোষারোপ করিতে পারে

কিন্তু প্রভু যীশু বিশ্রামবারের তুলনায় বেশী সেই ব্যক্তিকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন এবং সুস্থতা প্রদান করেছিলেন, যার একটি হাত শুকিয়ে গিয়েছিল। এই পরিপ্রেক্ষিতে দেখুন তাঁর বিরুদ্ধে তাদের কি প্রতিক্রিয়া ছিল, লুক ৩ অধ্যায় ৬ পদে তা এমনভাবে উল্লিখিত রয়েছে –

পরে ফরীশীরা বাহির হইয়া তৎক্ষণাৎ হেরোদীয়দের সহিত তাঁহার বিরুদ্ধে মন্ত্রণা করিতে লাগিল, কি প্রকারে তাঁহাকে বিনষ্ট করিতে পারে

একটি ভালো কাজের জন্য তারা যীশুকে বিনষ্ট করতে চাইছিলেন, তাহলে আজ আমরা সেই দিনের তুলনায় আরও অধিক পাপময় জগতে বসবাস করছি, অতএব আমাদের প্রতিও এমনটা করা হতে পারে, তার নিশ্চয়তা রয়েছে। আমরা কখনোই প্রভু যীশুর শিষ্য হিসেবে এই জগতের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করতে পারি না।

 

৫. যদিও যীশুর মধ্যে কোনও দোষ খুঁজে পাওয়া যায়নি, তবুও তাঁকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিলঃ-

যখন প্রভু যীশুকে পিলাতের কাছে বিচারের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তখন পিলাতের জবাব ছিল (যোহন ১৮ অধ্যায় ৩৮ পদ দেখুন)

আমি ত ইহার কোনই দোষ পাইতেছি না

কিন্তু পিলাতের এই কথায় তারা সন্তুষ্ট হয়নি, তারা চিৎকার করে বলে উঠেছিল যে, যীশুকে নয়, বরং বারাব্বাকে মুক্তি দিন। যীশু ছিলেন নির্দোষ, কিন্তু বারাব্বা ছিল একজন দস্যু। তবুও তারা যীশুকে নয়, বরং বারাব্বাকেই মুক্তি দেওয়ার জন্য চিৎকার করেছিল। আর যীশু মৃত্যুর যোগ্য কোনও অপরাধ না করেই ক্রুশে নির্মমভাবে মৃত্যুদণ্ড ভোগ করেছিলেন।

 

                             অতএব দেখুন, যখন যীশু লোকেদের সুস্থতা প্রদান করেছিলেন এব্বং মন্দ আত্মা দূর করেছিলেন, তখনও তাঁর বিরোধীতা করা হয়েছিল; যখন যীশু পাপ ক্ষমা করেছিলেন, তখনও তাঁর বিরোধিতা করা হয়েছিল; যখন যীশু পাপীদের সাথে ভোজনপান করেছিলেন, তখনও তাঁর বিরোধীতা করা হয়েছিল; যখন তিনি বিশ্রামবারের তুলনায় মানুষকে বেশী গুরুত্ব দিয়েছিলেন, তখনও তাঁর বিরোধীতা করা হয়েছিল; এমনকি যখন তাঁর মধ্যে কোনও দোষ পাওয়া যায়নি, তখনও তাঁর বিরোধীতা করা হয়েছিল এবং ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল।

এই সমস্ত কারণে আজ আমাদের প্রত্যেককেই বুঝতে হবে যে, এই জগতে আমাদের ক্লেশভোগ করতে হবে, যেমনভাবে প্রভু যীশু আমাদের বলেছেন –

জগতে তোমরা ক্লেশ পাইতেছ; কিন্তু সাহস কর, আমিই জগৎকে জয় করিয়াছি

আমেন।




Tags:- 

Christian Articles, বাংলা খ্রীষ্টীয় নিবন্ধ, bsbbca, bibleshikshabhaskar, BSB Ministry, Bengali Christian Blog, Bangla Gospel, Bengali Gospel, Preaching in Bengali Language, Bible Based Articles, বাংলা প্রচার, বাংলা যীশুর প্রচার, Bangla Christiyo Christio Khristiyo Khristio Prochar, BSB Gospel, Gospel Articles, Bangla Nibondho, Gospel Online, Online Gospel, বাইবেল প্রচার, বাইবেলের বাক্য, Blogger, Jesus Christ, যীশু খ্রীষ্ট, persecution, world hates jesus,

0 Comments