বাইবেলে রোমীয় ১৩ অধ্যায় ১ থেকে ২ পদে লেখা আছে –

 1 প্রত্যেক প্রাণী প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্ত্তৃপক্ষদের বশীভূত হউক; কেননা ঈশ্বরের নিরূপিত ব্যতিরেকে কর্ত্তৃত্ব হয় না; এবং যে সকল কর্ত্তৃপক্ষ আছেন, তাঁহারা ঈশ্বর-নিযুক্ত। 2 অতএব যে কেহ কর্ত্তৃত্বের প্রতিরোধী হয়, সে ঈশ্বরের নিয়োগের প্রতিরোধ করে; আর যাহারা প্রতিরোধ করে, তাহারা আপনাদের উপরে বিচারাজ্ঞা প্রাপ্ত হইবে।

 

কখনও কখনও যখন আমরা Bike বা কোনও গাড়ী নিয়ে রাস্তায় বের হই, খ্রীষ্ট বিশ্বাসী হিসেবে মনস্থির করি যে, কখনও Traffic সিগন্যাল ভাঙবো না বা আইন অমান্য করব না, কিন্তু কখনও কখনও আমরা ভুল বশত আইন অমান্য করে ফেলি, যার জন্য পুলিশ আমাদের চালান কাটে বা ফাইন করে।

তেমনই খ্রীষ্ট বিশ্বাসী হিসেবে আমরা অনেক সময় মনস্থির করি বা প্রতিজ্ঞা করি যে, আমরা পাপের থেকে দূরে থাকব আর ঈশ্বরের বাক্য অনুযায়ী জীবন ধারণ করব, কিন্তু জীবন চলার পথে কখনও কখনও আমরা সেই প্রতিজ্ঞা থেকে সরে পরি, আর সেই সুযোগে শয়তান আমাদের চালান কাটে।

                                        এগুলো বলার অর্থ এই – মনস্থির করলেই যে আমরা ঈশ্বরের বাক্য অনুসারে চলতে পারব, এমনটা নয়। আমাদেরকে ঈশ্বরের বাক্যের ওপর নির্ভর করতে হবে এবং জীবনে চলার পথে সতর্ক হতে হবে।

                                        ইস্রায়েলীয়দের সাথে কি হয়েছিল ?

তারা তো বিশ্বাস থেকে সরে গিয়েছিল, যার জন্য ঈশ্বর তাদের চল্লিশ বছর জঙ্গলে রেখেছিলেন। দ্বিতীয় বিবরণ ৮ অধ্যায় ২ পদ বলে - আর তুমি সেই সমস্ত পথ স্মরণে রাখিবে, যে পথে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমাকে এই চল্লিশ বৎসর প্রান্তরে যাত্রা করাইয়াছেন, যেন তোমার পরীক্ষা করিবার নিমিত্তে, অর্থাৎ তুমি তাঁহার আজ্ঞা পালন করিবে কি না, এই বিষয়ে তোমার মনে কি আছে জানিবার নিমিত্তে তোমাকে নত করেন।

ঈশ্বর তো সকলের মনের কথা সমস্ত কিছুই জানেন, কিন্তু তিনি ইস্রায়েলীয়দের দেখাতে চেয়েছিলেন যে, তারা কত বার তাঁর আজ্ঞা ভঙ্গ করেছে, কত বার তারা বিশ্বাস থেকে সরে গেছে, ইত্যাদি।

                                        তো আমাদের জীবনেও এরকম পরীক্ষা ঈশ্বর নিয়ে থাকেন, তাঁর প্রতি আমরা বিশ্বস্ত থাকি কি না, সেটা তিনি দেখেন।

একজন খ্রীষ্ট বিশ্বাসী যখন অন্য কোনও বিশ্বাসের মানুষদের দেখেন, তখন অনেক সময় ভেবে থাকেন – তারা কীভাবে এত সাফল্য পাচ্ছে ? কীভাবে এত উন্নতি করছে ?

কিন্তু আমরা তো সফল হতে পারছি না! আমাদের জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই তো বাধার সৃষ্টি হচ্ছে!

                                        আমরা যখন এরকম ভাবে অবিশ্বাসীদের সাথে তুলনা করি, তখন আমরা এটা ভুলে যাই যে, আমরা শুধুমাত্র সেই ব্যক্তির সাংসারিক জীবনের কথা ভাবছি। কোনও শান্তি সেই ব্যক্তির জীবনে আছে কি না, বা জীবনে কত সমস্যার সম্মুখীন তিনি হচ্ছেন, সেই সব বিষয়ে আমরা ভাবি না। শুধুমাত্র সেই ব্যক্তির সাফল্যের দিকেই আমরা নজর দিয়ে থাকি।

                                        আমাদের এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, ঈশ্বর আমাদের জন্য ভালো পরিকল্পনাই করে রেখেছেন, তিনি যা কিছুই করছেন, সেগুলি খুব ভেবেচিন্তেই করছেন। আমরা যখন সম্পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে ঈশ্বরকে গ্রহন করেছি, তখন আমাদের জীবনের সব কিছু নিয়ন্ত্রনের ভারও তাঁর কাছে সমর্পণ করেছি।

                                        জগতে দুই ধরণের মানুষ দেখা যায়, সৃষ্টির পূর্বেই ঈশ্বর জানতেন যে, কোন ব্যক্তি পরবর্তীকালে যীশুকে বিশ্বাস করবে আর কে করবে না।

১. যার বিষয়ে ঈশ্বর জানতেন যে, আগামী দিনে সে যীশুকে গ্রহন করবে, তিনি তার জীবনে একটি সুন্দর পরিকল্পনা করে রেখেছেন, সেই ব্যক্তি ঈশ্বরের রাজ্যের জন্যে কি কি কাজ করবেন, সে সমস্ত কিছুই তিনি ঠিক করে রেখেছেন।

২. ঈশ্বর এটাও জানেন যে, কোন ব্যক্তি যীশুকে বিশ্বাস করবে না। তো সাধারণ ব্যাপার এটাই যে, সেই ব্যক্তিটি ঈশ্বরের রাজ্যের জন্য কোনও কাজও করবে না। এই কারণে সেই ব্যক্তির জীবনে ঈশ্বরের তেমন কোনও বিশেষ পরিকল্পনাও থাকে না।

                                        ঈশ্বর তখনই কোনও ব্যক্তির জন্য পরিকল্পনা করেন, যখন তিনি দেখেন যে, সেই ব্যক্তিটি নিজের জীবনকে তাঁর কাছে সমর্পণ করেছে।

কোনও ব্যক্তি যদি ঈশ্বরের কাছে নিজেকে সমর্পণ না করে, তাহলে তিনি সেই ব্যক্তির ওপর কোনও চাপ সৃষ্টি করেন না কারণ, ঈশ্বর প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার অধিকার দিয়েছেন।

                                        আপনার জীবনে এরকম অনেক কিছুই হবে, যার জন্য হয়ত আপনি সন্তুষ্ট হবেন না। হতে পারে কোনও ক্ষেত্রে আপনি অনেক বার অসফল হবেন। আপনি অনুভব করে থাকবেন যে, অন্য ব্যক্তিরা সফল হচ্ছে কিন্তু আপনি হতে পারছেন না। তবে চিন্তা করার কিছু নেই, ঈশ্বর আপনার জীবনে এমন অনেক কিছুই করবেন, যার জন্য আপনি অনেক কষ্টের সম্মুখীন হতে পারেন।

                                        আমাদের বুঝতে হবে, ঈশ্বর অবিশ্বাসীদের জীবনের প্রতি অতটা আগ্রহ দেখান না, যতটা তিনি একজন বিশ্বাসীর জীবনে দেখান।

                                        আমরা সকলেই হয়ত ক্রেন দেখেছি, ক্রেনের যে হুক দেখা যায়, যার দ্বারা অনেক ভারী ভারী জিনিস ওঠানো হয়। সেই হুকটি তৈরি করার সময় একটা লোহার দণ্ডকে আগুনের তাপে পুরো লাল করে ওরকম হুকের মতো আঁকার দেওয়া হয়। ওটা হুকে পরিনত না হওয়া পর্যন্ত ওটাকে আগুনে পোড়ানো হয়।

                                        ঠিক তেমনই ঈশ্বর আমাদের জীবনে করে থাকেন। যখন আমরা এই সংসারের মধ্যে ডুবে থাকি, তখন আমরা একটা শক্ত লোহার দণ্ডের মতো হয়ে থাকি, কিন্তু ঈশ্বর আমাদের লাল করেন অর্থাৎ কষ্টকর জীবনের মধ্যে ফেলেন, যাতে আমরা ক্রেনের হুকের মতো অর্থাৎ ঈশ্বরের বাধ্য সন্তান হয়ে উঠতে পারি এবং জীবনের ভারী ভারী ওজন ওঠাতে পারি অর্থাৎ নানান রকম কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারি।

                                        তো সেই প্রক্রিয়া যখন আমাদের জীবনে চলে, সেটা খুবই কষ্টদায়ক। আমরা অনেক সময় ভাবি যে, ঈশ্বর আমার জন্য সব দরজা বন্ধ করে দিচ্ছেন বা যেটা করতে চাইছি, সেটার বিপরীত হচ্ছে এবং অনেক বাধা বিপত্তি আসছে!

                                        আপনি তখন এটা চিন্তা করুন – ঈশ্বর আপনাকে এই সংসার থেকে আলাদা করে তাঁর পথে চালনা করতে চাইছেন। আপনি যখন আপনার জীবন ঈশ্বরের হাতে সঁপে দিয়েছেন, তখন তো তিনিই ঠিক করবেন, কোনটা আপনার জন্য উপযুক্ত।

যাকোব ১ অধ্যায় ২ থেকে ৩ পদ বলে – 2 হে আমার ভ্রাতৃগণ, তোমরা যখন নানাবিধ পরীক্ষায় পড়, তখন তাহা সর্ব্বতোভাবে আনন্দের বিষয় জ্ঞান করিও3 জানিও, তোমাদের বিশ্বাসের পরীক্ষাসিদ্ধতা ধৈর্য্যসাধন করে।

 

তো এখানে বলা হয়েছে, পরীক্ষার সময় যেন আমরা আনন্দিত হই। কিন্তু আপনি ততক্ষন আনন্দিত হতে পারবেন না, যতক্ষণ না আপনি বুঝতে পারবেন যে, ঈশ্বর পরীক্ষাগুলির মাধ্যমে আপনার জীবনে কি স্থির করতে যাচ্ছেন।

                                        আপনি যতটা ঈশ্বরের বাক্য দ্বারা তাঁকে জানতে চেষ্টা করবেন, ততটাই তাঁর পরিকল্পনা সম্বন্ধেও জানতে পারবেন।

                                        যখন আপনি ঈশ্বরের পরিকল্পনা গুলি বুঝতে শুরু করবেন, তখন আপনি এটাও বুঝতে পারবেন যে, – পরীক্ষাগুলির দ্বারা আপনার জীবনে কি কি পরিবর্তন এসেছে, আপনি এও বুঝতে পারবেন যে, পরীক্ষাগুলির মাধ্যমে কি কি শিখতে পেরেছেন।

একজন খ্রীষ্ট বিশ্বাসীর জীবনে পরীক্ষা তো একটি অংশ, এটা থেকে আপনি পালাতে পারবেন না কারণ, এটা আমাদের ভালোর জন্য।

১ পিতর ৫ অধ্যায় ৭ পদ বলে - তোমাদের সমস্ত ভাবনার ভার তাঁহার উপরে ফেলিয়া দেও; কেননা তিনি তোমাদের জন্য চিন্তা করেন।

তাই ঈশ্বর আমাদের পরীক্ষা নিলেও শেষে আমরা তাঁর অনুগ্রহই দেখতে পাবো, কারণ তিনি আমাদের বিষয়ে চিন্তা করেন। কিন্তু বাইবেল আমাদের সতর্কও করেছে।

১ পিতর ৫ অধ্যায় ৮ পদে লেখা আছে - তোমরা প্রবুদ্ধ হও, জাগিয়া থাক; তোমাদের বিপক্ষ দিয়াবল, গর্জ্জনকারী সিংহের ন্যায়, কাহাকে গ্রাস করিবে, তাহার অন্বেষণ করিয়া বেড়াইতেছে। 

যদিও ঈশ্বর আমাদের জন্য চিন্তা করেন, তবুও তিনি আমাদের 

সতর্ক হতে বলেছেন যাতে আমরা শয়তানের ফাঁদে পা না দিয়ে ফেলি।

আমরা ঈশ্বরের পথে চললেও অনেক সময় আমরা পথভ্রষ্ট হই, কখনও কখনও বাক্য থেকে সরে যাই ও প্রার্থনা থেকে বিরত থাকি।

শয়তান আমাদের গ্রাস করতে চাইবে এবং ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চাইবে। তাই নানা রকম পরীক্ষার মধ্য দিয়ে আমাদের দিন অতিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও ঈশ্বরের ওপর ও তাঁর বাক্যের ওপর নির্ভর করতে হবে, যার প্রথম ধাপ হল – প্রার্থনা।

                                        আমরা যত বেশি প্রার্থনায় সময় কাটাবো, শয়তান তত বেশি আমাদের থেকে দূরে থাকবে। তাই শয়তানকে পরাজিত করতে হলে ঈশ্বরের সাথে একটা ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরি করা প্রয়োজন।


Tags:- 

Christian Articles, বাংলা খ্রীষ্টীয় নিবন্ধ, bsbbca, bibleshikshabhaskar, BSB Ministry, Bengali Christian Blog, Bangla Gospel, Bengali Gospel, Preaching in Bengali Language, Bible Based Articles, বাংলা প্রচার, বাংলা যীশুর প্রচার, Bangla Christiyo Christio Khristiyo Khristio Prochar, BSB Gospel, Gospel Articles, Bangla Nibondho, Gospel Online, Online Gospel, বাইবেল প্রচার, বাইবেলের বাক্য, Blogger, Jesus Christ, যীশু খ্রীষ্ট,


 


0 Comments