এটি একটি ব্যক্তির কাহিনী, যিনি অনেক দূর দেশে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেই ব্যক্তিটি কোনও সাধারণ ব্যক্তি ছিলেন না। তার চিন্তা ভাবনা, কথাবার্তা বলার ধরন, কাজ করার পদ্ধতি অন্যান্য লোকদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল।

লোকটি প্রায় সমস্ত কাজেই পারদর্শী ছিলেন, ধার্মিক ছিলেন এবং জ্ঞান ও বুদ্ধিতে পরিপূর্ণ ছিলেন।

একদিন লোকটি একটি মেয়েকে ভালোবেসে বিবাহ করলেন, কিন্তু তিনি যাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন, সেই মেয়েটি ওই লোকটির স্বভাবের সম্পূর্ণ বিপরীত ছিল।

তার স্ত্রী ছিল অনেক অবুঝ, নির্বোধ এবং কুকর্মে লিপ্ত। লোকটিকে তার স্ত্রী শুধু দুঃখ ও কষ্ট ছাড়া কিছুই দিত না।

কিন্তু সেইসব বিষয়গুলি উপেক্ষা করে লোকটি তার স্ত্রীকে ভালোবাসতেন। তিনি এতটাই তার স্ত্রীকে ভালোবাসতেন যে, স্ত্রীর জন্য নিজের জীবনও দিতে প্রস্তুত ছিলেন।

লোকটির স্ত্রী জাগতিক ভোগ-বিলাসিতা ভালোবাসত, নেশায় মগ্ন থাকত, সেগুলির জন্য মানুষের কাছে অনেক টাকা ঋণও করে ফেলেছিল। মেয়েটির কাছে সেইসব ঋণ পরিশোধ করার মতো কোনও উপায় ছিল না, যেহেতু ঋণের পরিমাণ তার সাধ্যের বাইরে ছিল।

কিন্তু মেয়েটির স্বামী তাকে ভালোবাসেন, ঠিক সেই জন্যই তার স্বামী তার সমস্ত ঋণ পরিশোধ করার জন্য নিজের সমস্ত অর্থ ব্যয় করেন।

সমস্ত ঋণ পরিশোধ করার পর একদিন লোকটি তার স্ত্রীকে নিয়ে নিজের বাড়িতে ফিরলেন এবং নিজের পিতার সাক্ষাতে আইনত ভাবে তার স্ত্রীর সাথে বিবাহ সম্পন্ন করলেন।

এই সমস্ত ঘটনার পরেও লোকটির স্ত্রী পুনরায় আবার পাপ কাজ করা শুরু করল, আবার নেশায় মগ্ন হল আর ব্যভিচারে লিপ্ত হল। কিন্তু তারপরেও সেই লোকটি তার স্ত্রীকে আগের মতোই ভালোবাসা দিলেন এবং নিজের স্ত্রী করেই রাখলেন।

আপনি এই লোকটির দুঃখটা একবার কল্পনা করে দেখুন! এই সমস্ত ঘটনাগুলির পরিপ্রেক্ষিতে লোকটির মনে কতটা কষ্ট তৈরী হয়েছিল!

তবুও লোকটি আশাবাদী ছিলেন যে, তার স্ত্রী একদিন ঠিক তার ভালোবাসা বুঝতে পারবে এবং একজন বিশ্বস্ত স্ত্রী হয়ে উঠতে পারবে।

                                        আপনি অবশ্যই এই গল্পের মধ্যমে বুঝতে পেরেছেন যে, এটি আপনার এবং আমার জীবনের কাহিনী, আর সেই বরের কাহিনী, যিনি নিজের জীবন আমাদের মতো পাপীদের জন্য দান করলেন, যেন আমরাও তাঁর ধার্মিকতার গুনে ধার্মিক হয়ে উঠতে পারি।

এই যে ছোট্ট দৃষ্টান্তমূলক গল্প আপনাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে, সেটি আসলে মণ্ডলীর সাথে প্রভু যীশুর সম্পর্কের একটি চিত্র।

আমরা এই জগতে মন্দ কাজে লিপ্ত, কিন্তু প্রভু যীশু এখনও আশাবাদী যে, আমরা একদিন পাপ থেকে মন ফেরাবো এবং অনুতাপ করে তাঁর সাথে মিলিত হবো। কিন্তু আমরা বারংবার তাঁর বিরুদ্ধে পাপ করি আর তাঁকে কষ্ট দিই।

প্রভু যীশু নিজের মণ্ডলীর লোকদের নিঃস্বার্থ ভাবে প্রেম করেন। কিন্তু আমরা সেই অসৎ, বিশ্বাসঘাতক স্ত্রীর মতো বারবার তাঁর বিরুদ্ধে পাপ করি।

ঈশ্বর আমাদের মনোনীত করেছেন, যেন আমরা প্রভু যীশুর প্রতি বিশ্বস্ত হই। আমরা যেন এই সংসারের মধ্যে থেকেও এই সংসারের স্বরূপ না হই।

১ যোহন ২ অধ্যায় ১৫ পদে লেখা আছে - তোমরা জগৎকে প্রেম করিও না, জগতীস্থ বিষয় সকলও প্রেম করিও না। কেহ যদি জগৎকে প্রেম করে, তবে পিতার প্রেম তাহার অন্তরে নাই।

যোহন ৭ অধ্যায় ৭ পদে প্রভু যীশু এই জগতসংসারের বিষয়ে বলেছেন - জগৎ তোমাদিগকে ঘৃণা করিতে পারে না, কিন্তু আমাকে ঘৃণা করে, কারণ আমি তাহার বিষয়ে এই সাক্ষ্য দিই যে, তাহার কর্ম্ম মন্দ।

 

সেই কারণেই আমরা যেন ব্যভিচারী না হই, জগতের ভোগ-বিলাসিতাকে যেন আমরা প্রেম না করি।

কারণ যাকোব ৪ অধ্যায় ৪ পদে লেখা আছে - হে ব্যভিচারিণীগণ, তোমরা কি জান না যে, জগতের মিত্রতা ঈশ্বরের সহিত শত্রুতা?

তাহলে যদি কেউ এই জগতের সাথে মিত্রতা করতে চায়, তবে সে ঈশ্বরের সাথে শত্রুতা করে ফেলে।

১ যোহন ২ অধ্যায় ১৬ পদে লেখা আছে - কেননা জগতে যে কিছু আছে, মাংসের অভিলাষ, চক্ষুর অভিলাষ, ও জীবিকার দর্প, এ সকল পিতা হইতে নয়, কিন্তু জগৎ হইতে হইয়াছে। 

 

আবার মথি ৬ অধ্যায় ২৪ পদে আমরা দেখতে পাই, সেখানে লেখা আছে - কেহই দুই কর্ত্তার দাসত্ব করিতে পারে না; কেননা সে হয় ত এক জনকে দ্বেষ করিবে, আর এক জনকে প্রেম করিবে, নয় ত এক জনের প্রতি অনুরক্ত হইবে, আর এক জনকে তুচ্ছ করিবে; তোমরা ঈশ্বর এবং ধন উভয়ের দাসত্ব করিতে পার না।

 

এছাড়াও রোমীয় ১২ অধ্যায় ২ পদে আমরা দেখতে পাই, সেখানে লেখা আছে - আর এই যুগের অনুরূপ হইও না, কিন্তু মনের নূতনীকরণ দ্বারা স্বরূপান্তরিত হও; যেন তোমরা পরীক্ষা করিয়া জানিতে পার, ঈশ্বরের ইচ্ছা কি, যাহা উত্তম ও প্রীতিজনক ও সিদ্ধ।

আর ঈশ্বরের ইচ্ছা কি ? সেটা আমরা দেখতে পাই ১ থিষলনীকীয় ৪ অধ্যায় ৩ থেকে ৫ পদে – 3 ফলতঃ ঈশ্বরের ইচ্ছা এই, তোমাদের পবিত্রতা4 যেন তোমরা ব্যভিচার হইতে দূরে থাক, তোমাদের প্রত্যেক জন যেন5 যাহারা ঈশ্বরকে জানে না, সেই পরজাতীয়দের ন্যায় কামাভিলাষে নয়, কিন্তু পবিত্রতায় ও সমাদরে নিজ নিজ পাত্র লাভ করিতে জানে।

 

১ পিতর ৪ অধ্যায় ৩ পদে লেখা আছে - কেননা পরজাতীয়দের বাসনা সাধন করিয়া, লম্পটতা, সুখাভিলাষ, মদ্যপান, রঙ্গরস পানার্থক সভা ও ঘৃণার্হ প্রতিমাপূজারূপ পথে চলিয়া যে কাল অতীত হইয়াছে, তাহাই যথেষ্ট।

ঈশ্বর চান যেন আমরা এই সংসারের মধ্যে থেকেও নিষ্কলঙ্ক হতে পারি।

সেই জন্য যাকোব ১ অধ্যায় ২৭ পদের একটি অংশে লেখা আছে - সংসার হইতে আপনাকে নিষ্কলঙ্করূপে রক্ষা করাই পিতা ঈশ্বরের কাছে শুচি ও বিমল ধর্ম্ম।

আপনি একবার কিছু খাবার জিনিসের কথা ভাবুন, যেগুলি খাবার পর আমরা বিভিন্ন ধরণের রোগের শিকার হতে পারি। আর অনেকেই আছেন, যারা খাবার-দাবার সম্পর্কে অনেকটাই সচেতন, যাতে তারা বিভিন্ন ধরণের রোগের শিকার না হন।

ঠিক সেরকমই জীবন সম্পর্কেও আমাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। আমাদের কাজ,আমাদের কথাবার্তা, আমাদের চিন্তাধারা – প্রভৃতি সম্পর্কে আমরা কতোটা সচেতন, সেই প্রশ্ন যেন আমরা নিজেদের করি।

আমাদের জীবন সম্পর্কে অসচেতনতাই আমাদেরকে পাপের ভাগী করে তোলে।

পাপের শিকার হবার পূর্বেই আসুন আমরা পাপের পথ ত্যাগ করে ঈশ্বরের প্রতি ফিরে আসি, আর ধার্মিকতার পেছনে দৌড়োতে শুরু করি।

এর জন্য আপনাকে কিছু ত্যাগ স্বীকার করতে হতে পারে, কিন্তু এই ত্যাগ স্বীকারই আপনার জীবনকে রক্ষা করবে।

আমরা একটি যুদ্ধক্ষেত্রে রয়েছি, আর এই যুদ্ধক্ষেত্রে ঈশ্বর আমাদের পাঠিয়েছেন, যেন আমরা পাপের ওপর বিজয় লাভ করতে পারি আর ঈশ্বরকে যেন সন্তুষ্ট করতে পারি।

২ তীমথিয় ২ অধ্যায় ৪ পদে লেখা আছে -  কেহ যুদ্ধ করিবার সময়ে আপনাকে সাংসারিক ব্যাপাররূপ পাশে বদ্ধ হইতে দেয় না, যেন তাহাকে যে ব্যক্তি যোদ্ধা করিয়া নিযুক্ত করিয়াছে, তাহারই তুষ্টিকর হইতে পারে।

তাই আমরা যেন সাংসারিক ব্যাপারগুলিতে নিজেদের আবদ্ধ না করি। আমরা কেনই বা সাংসারিক ব্যাপারগুলিতে আবদ্ধ হবো ? আমরা তো এটা জানি যে, সেগুলি আমাদের জন্য কোনও লাভজনক নয়।

১ যোহন ২ অধ্যায় ১৭ পদে লেখা আছে - আর জগৎ ও তাহার অভিলাষ বহিয়া যাইতেছে; কিন্তু যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে অনন্তকালস্থায়ী।

তো আমাদের অত্যন্ত সতর্ক ও সাবধান হতে হবে, কারণ এই জগতের আনন্দ ও অভিলাষ আমাদের ঈশ্বরের থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়।

কলসীয় ৩ অধ্যায় ২ পদে লেখা আছে - ঊর্দ্ধস্থ বিষয় ভাব, পৃথিবীস্থ বিষয় ভাবিও না।

আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে, ঈশ্বর আমাদের ধর্ম কর্মের ভিত্তিতে পরিত্রাণ করেন না, তিনি তাঁর দয়ানুসারে আমাদেরকে পরিত্রাণ করেন।

তীত ৩ অধ্যায় ৫ পদে লেখা আছে - তখন তিনি আমাদের কৃত ধর্ম্মকর্ম্মহেতু নয়, কিন্তু আপনার দয়ানুসারে, পুনর্জন্মের স্নান ও পবিত্র আত্মার নূতনীকরণ দ্বারা আমাদিগকে পরিত্রাণ করিলেন,

আর তীত ২ অধ্যায় ১১ থেকে ১৪ পদ বলে – 11 কেননা ঈশ্বরের অনুগ্রহ প্রকাশিত হইয়াছে, তাহা সমুদয় মনুষ্যের জন্য পরিত্রাণ আনয়ন করে12 তাহা আমাদিগকে শাসন করিতেছে, যেন আমরা ভক্তিহীনতা ও সাংসারিক অভিলাষ সকল অস্বীকার করিয়া সংযত, ধার্ম্মিক ও ভক্তিভাবে এই বর্ত্তমান যুগে জীবন যাপন করি13 এবং পরমধন্য আশাসিদ্ধির জন্য, এবং মহান্‌ ঈশ্বর ও আমাদের ত্রাণকর্ত্তা যীশু খ্রীষ্টের প্রতাপের প্রকাশপ্রাপ্তির জন্য অপেক্ষা করি। 14 ইনি আমাদের নিমিত্তে আপনাকে প্রদান করিলেন, যেন মূল্য দিয়া আমাদিগকে সমস্ত অধর্ম্ম হইতে মুক্ত করেন, এবং আপনার নিমিত্ত নিজস্ব প্রজাবর্গকে, সৎক্রিয়াতে উদ্যোগী প্রজাবর্গকে, শুচি করেন।

 

Tags:- 

Christian Articles, বাংলা খ্রীষ্টীয় নিবন্ধ, bsbbca, bibleshikshabhaskar, BSB Ministry, Bengali Christian Blog, Bangla Gospel, Bengali Gospel, Preaching in Bengali Language, Bible Based Articles, বাংলা প্রচার, বাংলা যীশুর প্রচার, Bangla Christiyo Christio Khristiyo Khristio Prochar, BSB Gospel, Gospel Articles, Bangla Nibondho, Gospel Online, Online Gospel, বাইবেল প্রচার, বাইবেলের বাক্য, Blogger, Jesus Christ, যীশু খ্রীষ্ট,


0 Comments