পবিত্র বাইবেলের দ্বিতীয় বই যাত্রাপুস্তক, সেখানে আমরা দেখতে পাই, ইস্রায়েলীয়রা মিশর দেশে দাসত্বের অধীনে ছিল। আর কেবলমাত্র দাস ছাড়া সেখানে তাদের কোনও পরিচয় ছিল না। তারা সেই দাসত্বের জীবন থেকে মুক্তি পেতে চাইছিল, আর ঈশ্বর তাদের ক্রন্দন শুনেছিলেন এবং তিনি মোশিকে তাদের উদ্ধারকর্তা রূপে পাঠিয়েছিলেন।

কিন্তু ইস্রায়েলীয়দের মিশর থেকে বের করে আনার আগে ঈশ্বর মিশরের ওপর দশটি আঘাত নিয়ে এসেছিলেন।

তো প্রশ্ন এটাই যে, কি উদ্দেশ্য ছিল এই ১০-টি আঘাতের পেছনে ?

এর উত্তর হল – ১০-টি আঘাত ঈশ্বর এই কারণেই নিয়ে এসেছিলেন, যাতে তিনি মিশরের সমস্ত দেব-দেবীগনদের মিথ্যে প্রমাণ করতে পারেন। এটি সত্য ঈশ্বর ও মিথ্যে দেব-দেবীগণের সাথে একটি যুদ্ধ ছিল। ঈশ্বর তাদের দেখাতে চেয়েছিলেন যে, শুধুমাত্র আমিই সত্য ও জীবন্ত ঈশ্বর, আমি ছাড়া অন্য কোনও ঈশ্বর নেই।

যখন নীল নদীকে ঈশ্বর রক্তে রূপান্তরিত করেছিলেন, তখন সেই ঘটনার দ্বারা তিনি এটাই প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন যে, নদীর দেবতা Khnum ও Hapi মিথ্যে, ঈশ্বর বুঝিয়েছিলেন যে, নদীর ওপর এই দেব-দেবীর কোনও ক্ষমতা ও অধিকার নেই, কেবল তাঁরই আছে।

যখন ৩ দিন ও ৩ রাত মিশরে অন্ধকার নেমে এসেছিল, তখন ঈশ্বর ওই ঘটনার দ্বারাও প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন যে, সূর্য দেবতা Ra ও চন্দ্র দেবতা Thoth মিথ্যে।

সব বিপত্তিগুলির পেছনেই ঈশ্বরের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল অন্য সমস্ত দেব-দেবীদের মিথ্যে প্রমাণ করা। ঈশ্বর বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, সমস্ত কিছুর ওপরে কেবল তাঁরই অধিকার আছে, কারণ তিনিই সমস্ত কিছুর সৃষ্টিকর্তা।

আজও মানুষ সেই সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে গিয়ে জগতের ভোগ বিলাসিতার উপাসনা করতে শুরু করেছে, যা এক ধরণের মূর্তিপূজা বা প্রতিমাপূজা।

কলসীয় ৩ অধ্যায় ৫ থেকে ৬ পদে লেখা আছে – 5 অতএব তোমরা পৃথিবীস্থ আপন আপন অঙ্গ সকল মৃত্যুসাৎ কর, যথা, বেশ্যাগমন, অশুচিতা, মোহ, কু-অভিলাষ, এবং লোভ, এ ত প্রতিমাপূজা। 6 এই সকলের কারণ অবাধ্যতার সন্তানগণের প্রতি ঈশ্বরের ক্রোধ উপস্থিত হয়।

                              আজকাল আমরা দেখতে পাই, অনেক বিজ্ঞানী দাবী করে থাকেন যে, তারা উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে অমরতা অর্জন করতে সক্ষম হবে, তারা এটিও দাবী করেন, ঈশ্বরের কোনও প্রয়োজন নেই, মানুষ নিজেরাই নিজেদের ঈশ্বর হতে পারবে।

কিন্তু এখন আমরা বর্তমান পরিস্থিতিতে দেখতে পাচ্ছি যে, কীভাবে পুরো দুনিয়াটা ওলট পালট হয়ে গিয়েছে, পৃথিবীর বড়ো বড়ো ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিরাও এখন বুঝতে পারছেন যে, তারা কতটা নগন্য, কতটা দুর্বল! ঈশ্বরের ক্রোধের কারণেই এরকমটা হচ্ছে, কারণ ঈশ্বর চান না যে, এই মনুষ্যজাতি তাকে ভুলে গিয়ে এই জগতসংসারের উপাসনা করুক।

                             একটি ছোট্ট ভাইরাস! বড়ো বড়ো শহরের রাস্তা গুলিকে শান্ত করে দিয়েছে, বিমান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে, স্কুল, কলেজ, বিশ্ব বিদ্যালয়গুলিও বন্ধ করে দিয়েছে, দোকান, বাজার, শপিং মল – সমস্ত কিছুই বন্ধ করে দিতে সক্ষম হয়েছে, বড়ো বড়ো দেশের আর্থিক অবস্থা ধীরে ধীরে অবনতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

মনুষ্যজাতি মনে করত তারা খুবই শক্তিশালী, খুব Smart, তাদের প্রযুক্তি খুবই উন্নত। মানুষ ভাবতো যে, তাদের কেউ থামিয়ে রাখতে পারবে না। কিন্তু এই ছোট্ট ভাইরাসটি দেখিয়ে দিতে সক্ষম হল যে, মনুষ্যজাতি কতটা দুর্বল। মানুষ নিজেদের যতই শক্তিশালী ও ক্ষমতা সম্পন্ন মনে করুক না কেন, তারা ঈশ্বরের ক্রোধের সামনে অত্যন্ত নগন্য।

মানুষ এখন অপেক্ষায় রয়েছে যে, কবে পুরো দুনিয়া এই ভাইরাসের হাত থেকে মুক্ত হবে, কবে এই ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিস্কার হবে, কিন্তু এখনও কোনও রকম আশা বা নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি।

মানুষ নিজেদের রক্ষা করার জন্য মাস্ক ব্যবহার করছে, বারবার হাত ধুচ্ছে, নিজেদেরকে পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মানুষ কি এটা ভাবছে যে, কেন এই সমস্ত কিছু ঘটছে ?

ঈশ্বর চাইছেন যেন মানুষ তাঁর দিকে ফেরে।

আপনি লক্ষ করুন, যারা ঈশ্বরকে কোনও দিন সেরকম ভাবে গুরুত্ব দেয়নি, তারাও আজ ঈশ্বরের সামনে নত হচ্ছে, তাঁর কাছে এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পাবার জন্য প্রার্থনা করছে।  

এমন মনে হচ্ছে যেন, স্বয়ং ঈশ্বর মানুষদের জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন।

এই সমস্ত ঘটনাগুলি দেখলে আমাদের মনে পরে প্রভু যীশু অন্তিম সময়ের বিষয়ে কি কি বলেছিলেন।

লুক ২১ অধ্যায় ১১ পদে লেখা আছে - মহৎ মহৎ ভূমিকম্প এবং স্থানে স্থানে দুর্ভিক্ষ ও মহামারী হইবে, আর আকাশে ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর লক্ষণ ও মহৎ মহৎ চিহ্ন হইবে;

আর আমরা প্রত্যেকেই জানি যে, করোনা ভাইরাস এখন মহামারীর রূপ ধারণ করেছে, যা এই বাক্যের পরিপূর্ণতার একটি লক্ষন।

লুক ২১ অধ্যায় ২৫ পদে লেখা আছে - আর সূর্য্যে, চন্দ্রে ও নক্ষত্রগণে নানা চিহ্ন প্রকাশ পাইবে, এবং পৃথিবীতে জাতিগণের ক্লেশ হইবে, তাহারা সমুদ্রের ও তরঙ্গের গর্জ্জনে উদ্বিগ্ন হইবে।

কিন্তু আমাদের জন্য আশা রয়েছে,

লুক ২১ অধ্যায় ২৮ পদে লেখা আছে - কিন্তু এ সকল ঘটনা আরম্ভ হইলে তোমরা ঊর্দ্ধদৃষ্টি করিও, মাথা তুলিও, কেননা তোমাদের মুক্তি সন্নিকট।

                        আমাদের প্রত্যেককেই আজ জেগে ওঠার প্রয়োজন রয়েছে। এই করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য আমরা যতটা প্রস্তুতি নিচ্ছি, ততটা প্রস্তুতি কি আমরা প্রভু যীশুর দ্বিতীয় আগমনের জন্য নিচ্ছি ?

আমরা ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য যেমন আমাদের হাত ধুচ্ছি, সেরকমই কি আমরা আমাদের জীবন থেকে পাপগুলিকে ধুয়ে ফেলার চেষ্টা করছি ?

আমরা একে অপরের সাথে হাত মেলানো থেকে বিরত রয়েছি, ঠিক সেরকমই কি আমরা পাপকে এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করছি ?

করোনা ভাইরাস আমাদের দৈহিক মৃত্যু বা আমাদের প্রথম মৃত্যুর কারণ হতে পারে, কিন্তু পাপ আমাদের আত্মার মৃত্যু অর্থাৎ দ্বিতীয় মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

আমরা আমাদের শরীরকে রক্ষা করার জন্য মাস্ক ব্যবহার করছি, কিন্তু আমরা কি আমাদের আত্মাকে রক্ষা করার জন্য আত্মীক মাস্ক বা ঈশ্বরের বাক্যকে ব্যবহার করছি ?

আমাদের এটা মনে রাখা উচিত যে, পাপ আমাদের অনন্তকালীন মৃত্যুর দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

কেবলমাত্র খ্রীষ্টের পবিত্র রক্তই আপনাকে পাপ থেকে মুক্ত করতে পারে, আর অনন্তকালীন মৃত্যু থেকে রক্ষা করে আপনাকে অনন্ত জীবনে প্রবেশ করার অধিকার দিতে পারে।

বাইবেলে রোমীয় ৬ অধ্যায় ২৩ পদে লেখা আছে - কেননা পাপের বেতন মৃত্যু; কিন্তু ঈশ্বরের অনুগ্রহ-দান আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টেতে অনন্ত জীবন।

 

তো এখন প্রশ্ন এটাই যে, আমরা কোনটাকে বেশি ভয় করব ?

এই ছোট্ট ভাইরাসকে, যা কেবল আমাদের শরীরকে ধ্বংস করতে পারে ? নাকি সব থেকে বড়ো ভাইরাস পাপকে, যা আমাদের শরীর ও আত্মা উভয়কেই ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে পারে ?

সর্বশেষ এটাই বলার যে,

 অনুতাপ করুন, এবং ত্রাণকর্তা প্রভু যীশুর ওপর বিশ্বাস করুন, তিনি আপনাকে দ্বিতীয় মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করবেন।

                       হাল্লেলুইয়া!


Tags:- 

Christian Articles, বাংলা খ্রীষ্টীয় নিবন্ধ, bsbbca, bibleshikshabhaskar, BSB Ministry, Bengali Christian Blog, Bangla Gospel, Bengali Gospel, Preaching in Bengali Language, Bible Based Articles, বাংলা প্রচার, বাংলা যীশুর প্রচার, Bangla Christiyo Christio Khristiyo Khristio Prochar, BSB Gospel, Gospel Articles, Bangla Nibondho, Gospel Online, Online Gospel, বাইবেল প্রচার, বাইবেলের বাক্য, Blogger, Jesus Christ, যীশু খ্রীষ্ট,


0 Comments