সামাজিক মাধ্যম ও খ্রীষ্ট বিশ্বাসী | BSB Bengali Christian Articles
সামাজিক মাধ্যম আধুনিক
জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় প্রত্যেকের জীবনেই সামাজিক মাধ্যম
কিছু না কিছু প্রভাব ফেলেছে।
এটা সত্যি যে সামাজিক
মাধ্যম মানুষের অনেক উপকার করেছে, দূরে থাকা আমাদের পরিবারের কোনও সদস্যের সাথে, অথবা
আমাদের বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আমরা সামাজিক মাধ্যমের সহায়তায় যোগাযোগ রাখতে পারি।
কিন্তু অনেকের জীবন ও
অনেকের পরিবার ধ্বংস হওয়ার পেছনে এই সামাজিক মাধ্যমগুলির অবদান রয়েছে, আর সেইসব ঘটনাগুলির
বিবরণ আমরা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ও ইন্টারনেটে পেয়ে থাকি।
সহজ ভাবে বলা যায় যে,
সামাজিক মাধ্যমের যেমন কিছু ভালো দিক রয়েছে, ঠিক তেমনই কিছু খারাপ দিকও রয়েছে। আর এই
খারাপ দিক গুলিই আমাদের জীবনকে ও আমাদের ভবিষ্যতকে ধ্বংস করতে পারে।
আজকের দিনে পৃথিবীর একটি
বড়ো সংখ্যা সামাজিক মাধ্যমের সাথে যুক্ত। মানুষ প্রতিদিন গড়ে অন্তত ২ ঘণ্টা সময় ধরে
সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে থাকে, সেটা Facebook হোক, Whatsapp হোক, Instagram হোক
বা অন্য কোনও সামাজিক মাধ্যম।
আমাদের দেখতে হবে যে,
কীভাবে এই সামাজিক মাধ্যমগুলি আমাদের বাস্তব জীবনকে প্রভাবিত করে। অবশ্যই এগুলির ভালো
দিক রয়েছে, কিন্তু তবুও এগুলির এমন অনেক খারাপ দিক রয়েছে, যেগুলি থেকে আমাদের নিজেদেরকে
রক্ষা করতে হবে।
Facebook, Instagram বা অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমগুলি
আমাদের শিখিয়ে দিয়েছে যে, আমরা কোনও সাধারণ মানুষ নই, আমরা বিশেষ কোনও ব্যক্তি। আমরা
সামাজিক মাধ্যমে নিজেদের ছবিগুলি শুধু শুধু শেয়ার করি না, আমরা চাই লোকেরা সেগুলিকে
যেন লাইক করে, কমেন্ট করে ও আমাদের ফলো করে। আমরা যখন কোনও ছবি আপলোড করি, তখন বারবার
চেক করি যে, কতগুলো লাইক হল বা কতগুলো কমেন্ট হল ইত্যাদি।
সামাজিক মাধ্যম আমাদের জীবনে
গুপ্ত পাপের রাস্তা খুলে দেয়। অনেকেই এগুলির ব্যবহার অনেক খারাপ কাজেও করে থাকে। বিভিন্ন
ধরণের ছবি ও বিভিন্ন ধরণের ভিডিও এগুলির মাধ্যমে আমাদের চোখের সামনে চলে আসে, আর সেগুলি
আমাদের পাপের পথে নিয়ে যেতে সমর্থ্য।
আমরা, অর্থাৎ খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা
যেন নিজেরা সচেতন হই এবং একে অপরকে চেতনা দিই, কারণ,
ইফিষীয় ৫ অধ্যায় ১৩ পদে লেখা আছে - কিন্তু
দোষ দেখাইয়া দেওয়া হইলে সকলই দীপ্তি দ্বারা প্রকাশ হইয়া পড়ে; বস্তুতঃ যাহা প্রকাশ হইয়া পড়ে, তাহা
সকলই দীপ্তিময়।
সামাজিক মাধ্যম আমাদের
জীবন থেকে সময়কে চুরি করে, আর সময় হল ঈশ্বরের দেওয়া একটি মূল্যবান উপহার। আমাদের জীবনের
প্রত্যেকটি সেকেন্ডেরই গুরুত্ব রয়েছে, আর সামাজিক মাধ্যমগুলি সেই সময়কেই আমাদের জীবন
থেকে কেড়ে নিচ্ছে। বর্তমানে এমন অনেক সামাজিক মাধ্যম এসেছে, যেখানে আমরা অভিনয় করে
আমাদের ভিডিওগুলি আপলোড করি, আমরা চাই যেন, লোকেরা সেই ভিডিও দেখে, লাইক করে ও শেয়ার
করে। আর এগুলির পেছনে আমরা সুসমাচার প্রচারের থেকেও বেশী সময় ব্যয় করি।
আমরা হয়ত ভুলে যাই যে,
আমরা জগতে রয়েছি ঠিকই, কিন্তু আমাদের ঈশ্বর তাঁর রাজ্যবিস্তারের কাজের জন্য মনোনীত
করেছেন। আমরা প্রভু যীশুর সেই আজ্ঞাকে বেশী গুরুত্ব দিই না, যেখানে বলা হয়েছে – 19 অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য
কর; পিতার ও পুত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর; 20 আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা আজ্ঞা
করিয়াছি, সে সমস্ত পালন করিতে তাহাদিগকে শিক্ষা দেও। আর দেখ, আমিই যুগান্ত পর্য্যন্ত প্রতিদিন
তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি। (মথি
২৮ অধ্যায় ১৯ ও ২০ পদ)
আমরা প্রভু যীশুর থেকে বেশী নিজেদেরকে সকলের সামনে তুলে ধরি, কারণ, আমরা ঈশ্বরের থেকে বেশী নিজেদেরকে ভালবাসতে শুরু করেছি।
আমরা অনেকেই হয়ত লক্ষ করেছি, আমাদের বিশ্বাসীদের জীবনে সামাজিক মাধ্যম আমাদের সাথে ঈশ্বরের কথোপকথনের সময়কালের হ্রাস ঘটিয়েছে। প্রার্থনা করার সময় যেন আমাদের ফোনটি আমাদের আকর্ষণ করে, আমাদের প্রার্থনায় মনোনিবেশ করতে বাধা দেয়। আমরা সারাদিনে সামাজিক মাধ্যমে অনেকবারই প্রবেশ করি, সেগুলির পেছনে সময় ব্যয় করি, কিন্তু ঈশ্বরের সাথে বেশী সময় ব্যয় করি না।
আমাদের খুব সাবধান হবার প্রয়োজন
রয়েছে, কারণ, শয়তান এগুলিকে নিজের অস্ত্র বানিয়েছে, যাতে এগুলির মাধ্যমে আমাদের ব্যস্ত
রাখতে পারে, আর আমরা যেন ঈশ্বরের সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপনে ব্যর্থ হই।
ইফিষীয় ৫ অধ্যায় ১৫ থেকে ১৬ পদে লেখা আছে – 15 অতএব তোমরা ভাল করিয়া দেখ, কিরূপে চলিতেছ; অজ্ঞানের ন্যায় না চলিয়া জ্ঞানবানের
ন্যায় চল। 16 সুযোগ কিনিয়া লও, কেননা এই কাল মন্দ।
তাই আমরা যেন অজ্ঞানের
ন্যায় না চলি, আর ঈশ্বরের দেওয়া প্রত্যেকটি সুযোগের যেন সৎ ব্যবহার করতে শিখি।
খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা,
নিজেদের প্রশ্ন করুন, আমরা সারাদিন সামাজিক মাধ্যমে ডুবে রয়েছি, কিন্তু যে ঈশ্বরের
দয়া ও করুনায় আমরা জীবিত রয়েছি, সেই ঈশ্বরের বাক্যের গভীরে আমরা কতোটা ডুবে যেতে পেরেছি
?
আমাদের ছবিতে যদি কেউ
কোনও ভালো মন্তব্য করে, তাহলে তাকে আমরা ধন্যবাদ জানিয়ে থাকি, কিন্তু ঈশ্বর যে আমাদেরকে
সুস্থ রেখেছেন, ভালো রেখেছেন, সেই জন্য তাঁকে কি প্রতিনিয়ত আমরা ধন্যবাদ দিয়ে থাকি
?
আমাদের জীবনে কোনটা প্রথম
স্থানে রয়েছে ?
সামাজিক মাধ্যম, নাকি
ঈশ্বর ?
খ্রীষ্ট বিশ্বাসী হওয়ার
দরুন আমাদের জীবনের প্রত্যেকটি পদক্ষেপ নেওয়ার আগে নিজেদের প্রশ্ন করার প্রয়োজন রয়েছে
যে, আমরা যেগুলি করছি, সেগুলির মাধ্যমে ঈশ্বর কি মহিমান্বিত হচ্ছেন ?
জগতের লোকেরা সামাজিক
মাধ্যম বিভিন্ন কারণেই ব্যবহার করতে পারে, কিন্তু খ্রীষ্ট বিশ্বাসী হিসেবে আমরা ঈশ্বরের
গৌরবার্থে সেগুলির ব্যবহার করতে পারি।
আমরা সব মানুষের কাছে
হয়ত সরাসরি গিয়ে সুসমাচার প্রচার করতে পারি না, সেইসব মানুষদের কাছে আমরা খ্রীষ্টের
সুসমাচার এই সামাজিক মাধ্যমগুলির সাহায্যে পৌঁছে দিতে পারি।
তাই আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আসুন আমরা সামাজিক মাধ্যমগুলি সুসমাচার প্রচার করনার্থে ব্যবহার করি। কিন্তু আমরা যেসব মানুষদের
কাছে সহজেই পৌঁছে যেতে পারি, তাদেরকে যেন সরাসরি সুসমাচার প্রচার করি, আমাদের এটা মাথায়
রাখতে হবে যে, সামাজিক মাধ্যমই সুসমাচার প্রচারের একমাত্র মাধ্যম নয়।
বন্ধুরা, সময় তো
থেমে থাকার নয়, ঈশ্বর আপনাকে যে দায়িত্ব দিয়েছন, সেই দায়িত্ব পালন করার জন্য আপনি কতোটা
প্রস্তুত ? সেটা নিজেকে প্রশ্ন করুন।
আপনিই ঠিক করুন যে, সামাজিক
মাধ্যমকে প্রথমে রাখবেন, নাকি ঈশ্বরকে!
Tags:-
Christian Articles, বাংলা খ্রীষ্টীয় নিবন্ধ, bsbbca, bibleshikshabhaskar, BSB Ministry, Bengali Christian Blog, Bangla Gospel, Bengali Gospel, Preaching in Bengali Language, Bible Based Articles, বাংলা প্রচার, বাংলা যীশুর প্রচার, Bangla Christiyo Christio Khristiyo Khristio Prochar, BSB Gospel, Gospel Articles, Bangla Nibondho, Gospel Online, Online Gospel, বাইবেল প্রচার, বাইবেলের বাক্য, Blogger, Jesus Christ, যীশু খ্রীষ্ট,
0 Comments