যখন কারও মৃত্যু হয়, আমরা সচরাচর বলে থাকি বা লিখে থাকি Rest In Peace বা R.I.P.

এই শব্দটি এখন আমাদের সংস্কৃতির সাথে জড়িয়ে গেছে। বিভিন্ন Social Media-তেও আমরা এই শব্দটির জনপ্রিয়তা উপলব্ধি করতে পারি। সাধারণত মৃত ব্যক্তিকে সম্মান, শ্রদ্ধা ও তার আত্মার শান্তি কামনার জন্য এই শব্দটি ব্যবহার করা হয়।

খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের এই শব্দটি সেই শান্তির কথা মনে করিয়ে দেয়, যে শান্তি ঈশ্বর প্রভু যীশুর মধ্যমে আমাদের জীবনে নিয়ে আসেন।

খ্রীষ্টকে অস্বীকার করে কোনও ব্যক্তি শান্তিতে বিশ্রাম নিতে পারেন না, কারণ আত্মার শান্তি একমাত্র প্রভু যীশুই দিতে পারেন।

R.I.P. কথাটির শুরু হয়েছিল একটি প্রার্থনার মাধ্যমে, এই শব্দটি সেই সব মানুষদের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল, যারা ঈশ্বরের সাথে একটি সুন্দর সম্পর্ক স্থাপন করার পর মৃত্যুবরণ করেছিলেন আর চিরকালের জন্য ঈশ্বরের শান্তিতে প্রবেশ করেছিলেন।

১৮ শতাব্দীতে খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের কবরে এই লেখাটি দেখতে পাওয়া যায়।

বাইবেলে R.I.P. এর কিছুটা ধারনা আমরা পাই যিশাইয় ৫৭ অধ্যায় ২ পদে - সে শান্তিতে প্রবেশ করে; সরলপথ-গামীরা প্রত্যেকে আপন আপন শয্যার উপরে বিশ্রাম করে।

 

এই বাক্যটি পুরোপুরি এই R.I.P. কে চিত্রিত করে না কিন্তু এটার কিছুটা আভাষ আমরা এখান থেকে পাই, বাক্যটি মৃত্যুর পর বিশ্রামের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

খ্রীষ্ট বিশ্বাসী হবার দরুন আমরা বিশ্বাস করি, মৃত্যু হল প্রভু যীশুর সাথে অনন্ত জীবনে প্রবেশ করার একটি দরজা।

সাধু পৌল বলেন, ২ করিন্থিয় ৫ অধ্যায় ৮ পদে - আমরা সাহস করিতেছি, এবং দেহ হইতে দূরে প্রবাস ও প্রভুর কাছে নিবাস করা অধিক বাঞ্ছনীয় জ্ঞান করিতেছি। 

তিনি বলেছেন, দেহের মধ্যে থাকার চাইতে প্রভুর সাথে থাকাটা অনেক বেশি ভালো।

আমাদের এটা বুঝতে হবে, পবিত্র বাইবেলে কোনও ব্যক্তির মৃত্যুতে Rest In Peace কথাটি কোনও জায়গাতেই স্পষ্ট ভাবে লেখা হয়নি, আর এটির ব্যবহারও করা হয়নি।

তাহলে, এই শব্দটির ব্যবহার বাইবেল ভিত্তিক নয়, এটা Unbiblical।

মৃত্যুর বিচারধারা মানুষের জন্য অতি ভয়ানক, সেই কারণে মানুষ অনেক কথা-কাহিনী তৈরি করেছে, যাতে সেগুলির মাধ্যমে তারা একে অন্যকে সাহস, সহানুভূতি ও সান্ত্বনা দিতে পারেন।

যখন কারও মৃত্যু হয়, তখন এই ধরনের কথা বার্তা অনেক সময় আমরা শুনে থাকি যে, এই ব্যক্তি স্বর্গে চলে গেছেন, ঈশ্বরের কাছে চলে গেছেন বা একটা সুন্দর জায়গায় বিশ্রাম নিতে চিরকালের জন্য চলে গেছেন। কিন্তু এটা কতটা সত্যি ?

আসলে এর পেছনে কোনও সত্যতা নেই, তারা না জেনে বুঝেই এই কথা গুলি বলে থাকেন। হতে পারে সেই মৃত ব্যক্তি অনেক ভয়ানক জায়গাতে চলে গেছেন!

মানুষ এটা বোঝে না যে, স্বর্গের নাগরিকত্ব দেওয়ার অধিকার তাদের কাছে নেই।

আমরা মৃত ব্যক্তির কবরে বা ছবিতে বা তার নামের আগে অনেক সময় “স্বর্গীয়” – কথাটি লেখা দেখতে পাই। আমাদের মনে কি এই প্রশ্নটা কখনও এসেছে যে, সব মানুষই কি মৃত্যুর পরে স্বর্গলাভ করে ?

মৃত ব্যক্তিটি যেরকম কাজই করে থাকুক না কেন, তার নামের আগে কিন্তু “নরকীয়” কথাটি লেখা দেখতে পাওয়া যায় না।

যে ব্যক্তি কোনও দিন ঈশ্বরকে সময় দেননি, ঈশ্বরের সাথে সুন্দর সম্পর্ক তৈরি করেননি, সেই ব্যক্তি হঠাৎ করে স্বর্গীয় হয়ে গেলেন!

এগুলো শুধুমাত্র মৃত ব্যক্তির পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বলা হয়ে থাকে।

ইব্রীয় ৯ অধ্যায় ২৭ পদ আমাদের স্পষ্টই বলে যে, মৃত্যুর পরেই কেউ স্বর্গে বা কেউ নরকে চলে যান না কারণ, আগে বিচার নিশ্চিত।

সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল – আমাদের ত্রাণকর্তা প্রভু যীশু শিখিয়েছেন, মৃত্যুর পর মানুষের কাছে দুটি মাত্র বিকল্প আছে – ১. স্বর্গ, আর ২. নরক।

মথি ২৫ অধ্যায় ৪৬ পদে লেখা আছে - পরে ইহারা অনন্ত দণ্ডে, কিন্তু ধার্ম্মিকেরা অনন্ত জীবনে প্রবেশ করিবে।

নরকের বর্ণনা প্রভু যীশু ধনী ও লাসারের গল্পে দিয়েছেন, যেটা আমরা লুক ১৬ অধ্যায় ১৯ থেকে ৩১ পদে দেখতে পাই।

অনেক ভয়ানক রূপেই নরকের বর্ণনা করা হয়েছে। এটি এমন একটি জায়গা, যেখানকার আগুন কখনও নেভে না, সেখানে শুধু রোদন ও দন্তঘর্ষণ হয়। এই জায়গাটি বিশ্রাম ও শান্তির জায়গা কোনও মতেই নয়।

বাইবেলের বাক্য অনুযায়ী কোনও ব্যক্তি যদি প্রভু যীশুকে ছাড়া নিজের শরীর ত্যাগ করেন, তার জন্য কোনও Rest In Peace-এর অস্তিত্ব থাকে না।

যিশাইয় ৪৮ অধ্যায় ২২ পদে লেখা আছে - সদাপ্রভু কহেন, দুষ্ট লোকদের কিছুই শান্তি নাই।

 

কিন্তু যারা খ্রীষ্টেতে আছেন, তাদের জন্য মৃত্যু সম্পূর্ণ আলাদা।

১ থিষলনীকীয় ৪ অধ্যায় ১৩ পদে পৌল বলেন - কিন্তু, হে ভ্রাতৃগণ, আমরা চাহি না যে, যাহারা নিদ্রাগত হয়, তাহাদের বিষয়ে তোমরা অজ্ঞাত থাক; যেন যাহাদের প্রত্যাশা নাই, সেই অন্য সকল লোকের মত তোমরা দুঃখার্ত্ত না হও। 

 

এই বাক্যটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমাদের বিশ্বাসী মৃত ভাই-বোনেদের জন্য শোকার্ত হবার কোনও প্রয়োজন নেই, যেমনটা অন্যেরা করে থাকে।

আমাদের আশা রয়েছে যে, আমরা তাদের আবার দেখতে পাবো এবং তাদের সাথে আবার মিলিত হতে পারব।

যারা খ্রীষ্টেতে মৃত্যুবরণ করেছেন, বাইবেল তাদের বিষয়ে বলে, তারা ঘুমিয়ে রয়েছে।

১ করিন্থীয় ১৫ অধ্যায় ২০ পদে লেখা আছে - কিন্তু বাস্তবিক খ্রীষ্ট মৃতগণের মধ্য হইতে উত্থাপিত হইয়াছেন, তিনি নিদ্রাগতদের অগ্রিমাংশ।

 

এই বাক্য থেকে আমরা জানতে পারি যে, মৃত্যুই শেষ নয়, এটা একটা অস্থায়ী অবস্থা।

মৃত্যুর পর খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা অবশ্যই শান্তিতে প্রবেশ করেন, কিন্তু তবুও R.I.P. বলাটা কি বাইবেল ভিত্তিক ?

লক্ষ্য করুন, এই R.I.P. – এর শুরু একটা প্রার্থনার মাধ্যমে শুরু হয়েছিল, এই কথাটি এসেছে লাতিন ভাষা থেকে, লাতিন ভাষায় এটিকে বলে – Requiescat in pace।

আর আমরা জানি যে, মৃত ব্যক্তির জন্য প্রার্থনা করাটা Unbiblical।

পবিত্র বাইবেল মৃত ব্যক্তির জন্য প্রার্থনা করতে আমাদের কখনও শেখায় না।

যদি প্রার্থনা করতেই হয়, তাহলে যারা জীবিত রয়েছে, তাদের জন্য প্রার্থনা করুন, তাদেরকে সুসমাচার দিন, যেন তারাও প্রভু যীশুর ওপর বিশ্বাস এনে মৃত্যুর পর শান্তিতে বিশ্রাম নিতে পারেন।


Tags:- 

Christian Articles, বাংলা খ্রীষ্টীয় নিবন্ধ, bsbbca, bibleshikshabhaskar, BSB Ministry, Bengali Christian Blog, Bangla Gospel, Bengali Gospel, Preaching in Bengali Language, Bible Based Articles, বাংলা প্রচার, বাংলা যীশুর প্রচার, Bangla Christiyo Christio Khristiyo Khristio Prochar, BSB Gospel, Gospel Articles, Bangla Nibondho, Gospel Online, Online Gospel, বাইবেল প্রচার, বাইবেলের বাক্য, Blogger, Jesus Christ, যীশু খ্রীষ্ট,

0 Comments