আজ থেকে প্রায় ২০০০ বছর আগে, বিশ্বের ইতিহাসে, ইস্রায়েলের মাটিতে প্রভু যীশু খ্রীষ্ট মানব রূপে জন্মগ্রহন করেছিলেন। কিন্তু যোহন ১ অধ্যায় ১১ পদে লেখা আছে –

তিনি নিজ অধিকারে আসিলেন, আর যাহারা তাঁহার নিজের, তাহারা তাঁহাকে গ্রহণ করিল না।

অর্থাৎ সেই সময়ে ঈশ্বরের মনোনীত জাতি ইহুদীরাই তাঁকে গ্রহণ করেনি।

আজকাল অনেকের মনেই এই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে যে, কেন ইহুদীরা প্রভু যীশুকে খ্রীষ্ট বা মসীহ রূপে স্বীকার করেনি ?

তো আসুন আমরা যেনে নিই এমন ৫-টি কারণ সম্বন্ধে, যেগুলির জন্য ইহুদীরা যীশুকে খ্রীষ্ট বা মসীহ রূপে স্বীকার করেনি।

১. ইহুদীরা খ্রীষ্ট বা মসীহ সম্বন্ধে ভবিষ্যৎবাণীগুলির অর্থ ভুল ভাবে ব্যাখ্যা করত এবং ভুল ভাবে শিক্ষা দিত।

মথি ২১ অধ্যায় ৪২ পদে লেখা আছে –

যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, তোমরা কি কখনও শাস্ত্রে পাঠ কর নাই,

যে প্রস্তর গাঁথকেরা অগ্রাহ্য করিয়াছে,

তাহাই কোণের প্রধান প্রস্তর হইয়া উঠিল;

ইহা প্রভু হইতেই হইয়াছে,

ইহা আমাদের দৃষ্টিতে অদ্ভুত”?

 

              ইহুদী ধর্মগুরুরা মনে করতেন, তারা বিধি-ব্যবস্থা খুব ভালোভাবেই জানেন, সেই জন্য নিজেদের অহংকারের কারণে তারা এটা মানতে রাজি ছিল না যে, তারা ভুল। যেহেতু যীশু সবসময় তাদের ভুল ধরিয়ে দিতেন, সেহেতু তারা যীশুকে অগ্রাহ্যই করতেন ও তাঁর বিরুদ্ধে  বিভিন্ন ধরণের চক্রান্ত করতেন।

২. ইহুদীরা একজন শক্তিশালী মসীহের অপেক্ষায় ছিল, যিনি রোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটাবেন এবং তাদের উদ্ধার করবেন।

যিশাইয় ৫৩ অধ্যায় ও গীতসংহিতা ২২ এর গীতে উল্লিখিত ভবিষ্যৎবাণীগুলিতে এমন একজন মসীহের বিষয়ে বলা হয়েছে, যিনি অনেক কষ্ট সহ্য করবেন, অত্যাচারিত হবেন এবং আমাদের পাপের জন্য বলি হবেন। কিন্তু ইহুদীরা এইরকম মসীহের জন্য নয়, বরং একজন মহিমাময় ও শক্তিশালী মসীহের জন্যই অপেক্ষায় ছিল, কিন্তু এই মসীহ রাজা হবার জন্য জগতে আসেননি।

              ক্রুশে মৃত্যুবরণ করবার আগে যীশু যোহন ১৮ অধ্যায় ৩৬ পদের একটি অংশে পীলাতকে বলেছিলেন – আমার রাজ্য এ জগতের নয়;

আমরা এই বাক্য থেকে এটা জানতে পারি যে, যীশু এই জগতে রাজত্ব করার জন্য বা ক্ষমতা অর্জন করার জন্য জন্ম নেননি, বরং জগতের পাপের ভার নিজের কাঁধে তুলে নেওয়ার জন্যই তিনি জন্মেছিলেন। কিন্তু ইহুদীরা জাগতিক পরিত্রাণের অপেক্ষায় ছিল, তারা আত্মিক পরিত্রাণের বিষয়ে ভাবতে চায়নি।

৩. যীশু ধর্মীয় নেতাদের পাপগুলিকেও প্রকাশ্যে নিয়ে আসতেন, যার জন্য তারা যীশুকে মেনে নিতে চাইতেন না, যীশুর ওপর তাদের অন্তর্নিহিত ক্রোধ প্রকাশ করতেন ও তাঁকে দোষী প্রমাণ করারও চেষ্টা করতেন।

যোহন ৮ অধ্যায় ৩ থেকে ৯ পদে আমরা একটি ঘটনা দেখতে পাই, যেখানে যীশু প্রমাণ করে দিয়েছিলেন যে, অধ্যাপক ও ফরীশীদের মধ্যেও পাপ রয়েছে, লেখা আছে –

3 তখন অধ্যাপক ও ফরীশীগণ ব্যভিচারে ধৃতা একটী স্ত্রীলোককে তাঁহার নিকটে আনিল, ও মধ্যস্থানে দাঁড় করাইয়া তাঁহাকে কহিল4 হে গুরু, এই স্ত্রীলোকটা ব্যভিচারে, সেই ক্রিয়াতেই, ধরা পড়িয়াছে। 5 ব্যবস্থায় মোশি এ প্রকার লোককে পাথর মারিবার আজ্ঞা আমাদিগকে দিয়াছেন; তবে আপনি কি বলেন6 তাহারা তাঁহার পরীক্ষাভাবেই এই কথা কহিল, যেন তাঁহার নামে দোষারোপ করিবার সূত্র পাইতে পারে। কিন্তু যীশু হেঁট হইয়া অঙ্গুলি দ্বারা ভূমিতে লিখিতে লাগিলেন।

7 পরে তাহারা যখন পুনঃ পুনঃ তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিতে লাগিল তিনি মাথা তুলিয়া তাহাদিগকে কহিলেন, তোমাদের মধ্যে যে নিষ্পাপ, সেই প্রথমে ইহাকে পাথর মারুক। 8 পরে তিনি পুনর্ব্বার হেঁট হইয়া অঙ্গুলি দিয়া ভূমিতে লিখিতে লাগিলেন। 9 তখন তাহারা ইহা শুনিয়া, এবং আপন আপন সংবেদ দ্বারা দোষীকৃত হইয়া, একে একে বাহিরে গেল, প্রাচীন লোক অবধি আরম্ভ করিয়া শেষ জন পর্য্যন্ত গেল; তাহাতে কেবল যীশু অবশিষ্ট থাকিলেন, আর সেই স্ত্রীলোকটী মধ্যস্থানে দাঁড়াইয়াছিল।

 

              তো আমরা ঘটনাটি পড়ে স্পষ্টই বুঝতে পারলাম যে, কেউই ওই মহিলাটিকে পাথর মারতে পারেনি, এমনকি অধ্যাপক ও ফরীশীরাও না, কারণ তারা প্রত্যেকেই পাপী ছিলেন।

              যীশু ইহুদীদের স্পষ্টই বলতেন যে, তোমরা ঈশ্বরকে জান না এবং ঈশ্বর তোমাদের পিতা নন, যদি তোমরা ঈশ্বরকে জানতে, তাহলে আমাকেও স্বীকার করতে, কারণ আমি সেই পিতার কাছ থেকেই এসেছি, যাকে তোমরা ঈশ্বর বলে থাক। তোমরা আমাকে স্বীকার কর না, কারণ তোমরা দিয়াবলের সন্তান।

যোহন ৮ অধ্যায় ৪০ থেকে ৪৫ পদে লেখা আছে –

40 কিন্তু ঈশ্বরের কাছে সত্য শুনিয়া তোমাদিগকে জানাইয়াছি যে আমি, আমাকেই বধ করিতে চেষ্টা করিতেছ; অব্রাহাম এরূপ করেন নাই। 41 তোমাদের পিতার কার্য্য তোমরা করিতেছ। তাহারা তাঁহাকে কহিল, আমরা ব্যভিচারজাত নহি; আমাদের একমাত্র পিতা আছেন, তিনি ঈশ্বর।

42 যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, ঈশ্বর যদি তোমাদের পিতা হইতেন, তবে তোমরা আমাকে প্রেম করিতে, কেননা আমি ঈশ্বর হইতে বাহির হইয়া আসিয়াছি; আমি ত আপনা হইতে আসি নাই, কিন্তু তিনিই আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন। 43 তোমরা কেন আমার কথা বুঝ না? কারণ এই যে, আমার বাক্য শুনিতে পার না। 44 তোমরা আপনাদের পিতা দিয়াবলের, এবং তোমাদের পিতার অভিলাষ সকল পালন করাই তোমাদের ইচ্ছা; সে আদি হইতেই নরঘাতক, সত্যে থাকে নাই, কারণ তাহার মধ্যে সত্য নাই। সে যখন মিথ্যা বলে, তখন আপনা হইতেই বলে, কেননা সে মিথ্যবাদী ও তাহার পিতা। 45 কিন্তু আমি সত্য বলি, তাই তোমরা আমাকে বিশ্বাস কর না।

             যীশু সকলের সামনে ধর্মগুরু, অধ্যাপক ও ফরীশীদের পাপ ও ভুলগুলিকে প্রকাশ করতেন, যারা তাদের পবিত্র ও ধার্মিক বলে মনে করতেন। আর এগুলিই ছিল যীশুকে গ্রহণ না করার বৃহত্তর কারণ।

৪. মানুষের সৃষ্টি করা নিয়মকানুন যীশু মানতেন না, যেগুলি ঈশ্বরের বাক্যের বিরুদ্ধে ছিল। যীশু বিশ্রামবারকে তো পবিত্র মানতেন, কিন্তু তিনি এটা মানতেন না যে, বিশ্রামবারে কাউকে সুস্থ করা বা কারও উপকার করাটা পাপ, এছাড়াও যীশু নিজেকে বিশ্রামবারের কর্তা রূপে তাদের কাছে পরিচয় দিয়েছিলেন। আর এই কারণেই ধর্মগুরুরা তাঁর প্রতি ক্রোধিত হয়েছিলেন এবং তাঁকে হত্যা করার চক্রান্ত শুরু করেছিলেন।

মথি ১২ অধ্যায় ১৪ পদে লেখা আছে –

পরে ফরীশীরা বাহিরে গিয়া তাঁহার বিরুদ্ধে মন্ত্রণা করিতে লাগিল, কি প্রকারে তাঁহাকে বিনষ্ট করিতে পারে।

৫. লোকেরা ঈশ্বরের বাক্য থেকে বিপথগামী হয়ে ধর্মগুরুদের সৃষ্টি করা নিয়মকানুনগুলি অনুসরণ করতে শুরু করেছিল।

যীশু অনেকবার তাঁর প্রচারে বলেছিলেন যে, তারা অন্ধ।

মথি ১৫ অধ্যায় ১৪ পদে লেখা আছে –

উহারা অন্ধদের অন্ধ পথদর্শক; যদি অন্ধ অন্ধকে পথ দেখায়, উভয়েই গর্ত্তে পড়িবে।

       ক্রুশে দেওয়ার আগে, যখন পীলাত ইহুদীদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, তোমরা কি চাও, কাকে আমি তোমাদের জন্য মুক্ত করব, যীশুকে নাকি বারাব্বাকে ?

মথি ২৭ অধ্যায় ২০ থেকে ২১ পদে লেখা আছে –

20 আর প্রধান যাজকেরা ও প্রাচীনবর্গ লোকসমূহকে প্রবৃত্তি দিল, যেন তাহারা বারাব্বাকে চাহিয়া লয় ও যীশুকে সংহার করে। 21 তখন দেশাধ্যক্ষ তাহাদিগকে কহিলেন, তোমাদের ইচ্ছা কি? সেই দুই জনের মধ্যে কাহাকে ছাড়িয়া দিব? তাহারা কহিল, বারাব্বাকে।

           ইহুদীরা তাদের পথভ্রষ্ট ধর্মগুরুদের কথাই শুনত, তারা সত্যকে জেনেও তাঁকে স্বীকার করেনি, তারা যীশুর মহিমা দেখেও তাঁকে অবহেলা ও অগ্রাহ্য করেছিল।

           প্রেরিত পৌল একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা তার পত্রতে লিখেছেন।

১ করিন্থীয় ২ অধ্যায় ৬ থেকে ৮ পদে লেখা আছে –

6 তথাপি আমরা সিদ্ধদের মধ্যে জ্ঞানের কথা কহিতেছি, কিন্তু সেই জ্ঞান এই যুগের নয়, এবং এই যুগের শাসনকর্ত্তাদেরও নয়, ইঁহারা ত অকিঞ্চন হইয়া পড়িতেছেন। 7 কিন্তু আমরা নিগূঢ়তত্ত্বরূপে ঈশ্বরের সেই জ্ঞানের কথা কহিতেছি, সেই গুপ্ত জ্ঞান, যাহা ঈশ্বর আমাদের প্রতাপের জন্য যুগপর্য্যায়ের পূর্ব্বে নিরূপণ করিয়াছিলেন। 8 এই যুগের শাসনকর্ত্তাদের মধ্যে কেহ তাহা জানেন নাই; কেননা যদি জানিতেন, তবে প্রতাপের প্রভুকে ক্রুশে দিতেন না।


Tags:- 

Christian Articles, বাংলা খ্রীষ্টীয় নিবন্ধ, bsbbca, bibleshikshabhaskar, BSB Ministry, Bengali Christian Blog, Bangla Gospel, Bengali Gospel, Preaching in Bengali Language, Bible Based Articles, বাংলা প্রচার, বাংলা যীশুর প্রচার, Bangla Christiyo Christio Khristiyo Khristio Prochar, BSB Gospel, Gospel Articles, Bangla Nibondho, Gospel Online, Online Gospel, বাইবেল প্রচার, বাইবেলের বাক্য, Blogger, Jesus Christ, যীশু খ্রীষ্ট,

0 Comments