এটি একটি বহু বিতর্কিত বিষয়। অনেক খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরাই এটা মেনে নিতে পারেন না যে, বাইবেলে স্পষ্ট ভাবেই অধ্যক্ষ ও পরিচারক হবার অধিকার শুধুমাত্র পুরুষদেরই দেওয়া হয়েছে।

বাইবেল শিক্ষা দেয়, ঈশ্বরের চোখে পুরুষ ও মহিলা, উভয়ই সমান।

আদিপুস্তক ২ অধ্যায় ২০ থেকে ২৩ পদে লেখা আছে -

20 আদম যাবতীয় গ্রাম্য পশুর ও খেচর পক্ষীর ও যাবতীয় বন্য পশুর নাম রাখিলেন, কিন্তু মনুষ্যের জন্য তাঁহার অনুরূপ সহকারিণী পাওয়া গেল না।

21 পরে সদাপ্রভু ঈশ্বর আদমকে ঘোর নিদ্রায় মগ্ন করিলে তিনি নিদ্রিত হইলেন; আর তিনি তাঁহার একখান পঞ্জর লইয়া মাংস দ্বারা সেই স্থান পূরাইলেন। 22 সদাপ্রভু ঈশ্বর আদম হইতে গৃহীত সেই পঞ্জরে এক স্ত্রী নির্ম্মাণ করিলেন ও তাঁহাকে আদমের নিকটে আনিলেন। 23 তখন আদম কহিলেন, এবার [হইয়াছে]; ইনি আমার অস্থির অস্থি ও মাংসের মাংস; ইহাঁর নাম নারী হইবে, কেননা ইনি নর হইতে গৃহীত হইয়াছেন। 

 

সেই স্ত্রী অর্থাৎ হবাকে ঈশ্বর আদমের সহকারিণী রূপে সৃষ্টি করেছিলেন, এর মানে এই নয় যে, হবা ঈশ্বরের চোখে আদমের তুলনায় নগন্য ছিল। যেহেতু ঈশ্বর হবাকে আদমের পাঁজর থেকে সৃষ্টি করেছিলেন, সেহেতু হবাও আদমের মতো ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতেই সৃষ্টি হয়েছিল।

আদিপুস্তক ১ অধ্যায় ২৭ পদে লেখা আছে –

পরে ঈশ্বর আপনার প্রতিমূর্ত্তিতে মনুষ্যকে সৃষ্টি করিলেন; ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তিতেই তাহাকে সৃষ্টি করিলেন, পুরুষ ও স্ত্রী করিয়া তাহাদিগকে সৃষ্টি করিলেন।

এই বাক্যের অর্থ এটাই, ঈশ্বরের নজরে আদম ও হবা উভয়ই সমান ছিল, কিন্তু বাইবেল আমাদের এটাও শেখায় যে, যেখানে সমতা থাকে, সেখানে অধীনতাও থাকে।

প্রতিটি মানুষের মধ্যেই অধীনতা থাকা প্রয়োজন, সে পুরুষ হোক বা স্ত্রী হোক।

১ করিন্থীয় ১১ অধ্যায় ৩ পদে লেখা আছে –

কিন্তু আমার ইচ্ছা এই, যেন তোমরা জান যে, প্রত্যেক পুরুষের মস্তকস্বরূপ খ্রীষ্ট, এবং স্ত্রীর মস্তকস্বরূপ পুরুষ, আর খ্রীষ্টের মস্তকস্বরূপ ঈশ্বর।

আর এটাই ঈশ্বরের নিয়ম।

ইফিষীয় ৫ অধ্যায় ২২ পদে লেখা আছে –

নারীগণ, তোমরা যেমন প্রভুর, তেমনি নিজ নিজ স্বামীর বশীভূতা হও। 

ঈশ্বর যেমন হবাকে আদমের বশীভূতা করে রেখেছিলেন, ঠিক তেমনই ওপরের বাক্যটিতে তিনি প্রেরিত পৌলের দ্বারা নারীগণকে পুরুষগণের বশীভূতা হতে বলেছেন।

             সৃষ্টির দিক দিয়ে বিচার করলে আদিপুস্তক ১ অধ্যায় ২৭ পদ অনুযায়ী পুরুষ ও স্ত্রী উভয়কেই ঈশ্বর তাঁর নিজ প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করেছিলেন, অতএব উভয়ই ঈশ্বরের প্রতিমূর্তিতে সমান।

             প্রভু যীশুতে বিশ্বাস দ্বারা আমরা সকলেই পরিত্রাণ পেয়েছি, আর এই পরিত্রাণ পুরুষ ও মহিলা, উভয়ের জন্যই সমান, কারও জন্য কম বা বেশী নয়। প্রভু যীশু সমগ্র মানবজাতির জন্যই মৃত্যুবরণ করেছিলেন, এবং সকলের জন্যই মৃত্যুকে জয় করে উঠেছেন, তাই তিনি সকলেরই ত্রানকর্তা, এখানে পুরুষ ও মহিলার মধ্যে কোনও ভেদাভেদ নেই।

গালাতীয় ৩ অধ্যায় ২৮ পদের একটি অংশে লেখা আছে –

নর ও নারী আর হইতে পারে না, কেননা খ্রীষ্ট যীশুতে তোমরা সকলেই এক। 

                ঈশ্বর তাঁর পবিত্র আত্মা পুরুষ ও স্ত্রী উভয়কেই দিয়েছেন, আর সমস্ত আত্মীক বরদানও তিনি উভয়কেই সমান ভাবে দিয়ে থাকেন।

প্রভু যীশু যখন মথি ২৮ অধ্যায় ১৯ থেকে ২০ পদে বলেছিলেন,

19 অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; পিতার ও পুত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর20 আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছি, সে সমস্ত পালন করিতে তাহাদিগকে শিক্ষা দেও। আর দেখ, আমিই যুগান্ত পর্য্যন্ত প্রতিদিন তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি।

তখন কি তিনি এই আজ্ঞা শুধুমাত্র পুরুষদেরই দিয়েছিলেন ?

অবশ্যই না!

তিনি উভয়কেই এই আজ্ঞা দিয়েছিলেন, সুতরাং ঈশ্বরের বাক্য প্রচারের অধিকার পুরুষ ও মহিলা উভয়েরই।

                  কিন্তু যখন আমরা যাজকত্বের বিষয় নিয়ে আলোচনা করি, তখন ১ তীমথিয় ২ অধ্যায় ১২ পদ অনুযায়ী আমরা দেখতে পাই যে, পৌল এই বিষয়ে কি লিখেছেন।

লেখা আছে –

আমি উপদেশ দিবার কিম্বা পুরুষের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবার অনুমতি নারীকে দিই না, কিন্তু মৌনভাবে থাকিতে বলি।

           বাইবেলের ঈশ্বর সমস্ত কাজই ধারাক্রমে করে থাকেন, যখন তিনি প্রথম মানুষ সৃষ্টি করেছিলেন, তখন তিনি আগে আদমকে ও তারপর হবাকে সৃষ্টি করেছিলেন।

যখন আমরা পরিবারের বিষয়ে কথা বলি, তখন আমরা ইফিষীয় ৫ অধ্যায় ২৩ পদে দেখতে পাই যে, ঈশ্বর পুরুষকেই স্ত্রীর মস্তক রূপে মনোনীত করেছেন।

            তো ঈশ্বর পুরুষকে আগে ও স্ত্রীকে পরে সৃষ্টি করেছিলেন এবং পুরুষকেই স্ত্রীর মস্তক রূপে মননীত করেছেন।  এই দুটি বিষয় নিয়ে যখন কোনও সমস্যা তৈরী হয়নি, তবে মণ্ডলীর পরিচারক হিসেবেও যখন ঈশ্বর কেবলমাত্র পুরুষকেই অধিকার দিয়েছেন, তখন কেন সমস্যা তৈরী হচ্ছে ?

সমস্যা হবার কারণ এটাই যে, অনেকেই এই বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত আবেগপ্রবণ হয়ে পরেন, তারা ঈশ্বরের সেবাকার্যের তুলনায় মণ্ডলীর মঞ্চকে বেশী প্রাধান্য দিয়ে থাকেন।

                ঈশ্বরের সেবাকার্য অনেক ভাবেই করা যেতে পারে যেমন, মহিলাদের মাঝে সুসমাচার প্রচার করা, বাচ্চাদের নিয়ে Sunday School চালানো, যুবতী মেয়েদের মাঝে গিয়ে সুসমাচার দেওয়া, বাক্য পাঠ করা, ঈশ্বরের প্রশংসার উদ্দেশ্যে গীত গাওয়া, ইত্যাদি।

            মনে রাখবেন, একজন মহিলা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের যাজক, পরিচারক ও অধ্যক্ষের জন্ম দিতে পারে। (উদ্ধৃতি হিসেবে আমরা ২ তীমথিয় ৩ অধ্যায় ১৫ পদ প্রসঙ্গ অনুযায়ী দেখতে পারি)।

            কিন্তু এখন অনেক মহিলাগণই এই সমস্ত কিছুর তুলনায় নিজেরাই অধ্যক্ষ ও পরিচারক হতে বেশী আগ্রহী হয়ে থাকেন।

অতএব তাদের উদ্দেশ্য সেবাকার্য নয়, কিন্তু অধ্যক্ষ ও পরিচারক পদ প্রাপ্ত করাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আর যারা পদ (Position) নিয়ে লড়াই করেন, তারাই অভিযোগ করে থাকেন যে, আমি কেন মহিলা পরিচারক হতে পারবো না ?

এই দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে অনেকে বলে থাকেন, পুরাতন নিয়মে ঈশ্বর DEBORAH ও HULDAH-কেও নেত্রী হিসেবে মনোনীত করেছিলেন, তাহলে আমরা কেন হতে পারব না ?

                কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে যে, সেটার পেছনে বিশেষ কারণ ছিল, আর সেই সময় মণ্ডলীর নিয়ম কানুনের কোনও অস্তিত্ব ছিল না।

            তো যারা এই ধরণের লড়াই করে থাকেন, তাদের কাছে একটাই প্রশ্ন – আপনি পরিচারক হয়ে কি করতে চান ? সেবাকার্যই কি নয় ?

যদি আপনার উদ্দেশ্য সেবাকার্যই হয়ে থাকে, তাহলে পরিচারক না হয়েও আপনি সেটা করতে পারেন!

               বাইবেলে ঈশ্বরের ধারাক্রম সম্বন্ধে পৌল আমাদের স্পষ্ট ভাবেই বুঝিয়েছেন যে, কেন তিনি মহিলাদের পরিচারক হবার অনুমতি দেননি।

১ তীমথিয় ২ অধ্যায় ১৩ থেকে ১৪ পদে লেখা আছে –

13 কারণ প্রথমে আদমকে, পরে হবাকে নির্ম্মাণ করা হইয়াছিল। 14 আর আদম প্রবঞ্চিত হইলেন না, কিন্তু নারী প্রবঞ্চিতা হইয়া অপরাধে পতিতা হইলেন।               

             অবশেষে এটাই বলার যে,

যদি একজন মহিলা হিসেবে ঈশ্বরের সেবাকার্যই আপনার উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তবে আজ থেকেই Position-এর জন্য লড়াই ও বিবাদ বন্ধ করুন এবং ঈশ্বরের বাক্যের আজ্ঞাবহ হন, কারণ আমরা ঈশ্বরের সিদ্ধান্তের ওপর নিজেদের সিদ্ধান্ত কখনই চাপিয়ে দিতে পারি না।  


Tags:- 

Christian Articles, বাংলা খ্রীষ্টীয় নিবন্ধ, bsbbca, bibleshikshabhaskar, BSB Ministry, Bengali Christian Blog, Bangla Gospel, Bengali Gospel, Preaching in Bengali Language, Bible Based Articles, বাংলা প্রচার, বাংলা যীশুর প্রচার, Bangla Christiyo Christio Khristiyo Khristio Prochar, BSB Gospel, Gospel Articles, Bangla Nibondho, Gospel Online, Online Gospel, বাইবেল প্রচার, বাইবেলের বাক্য, Blogger, Jesus Christ, যীশু খ্রীষ্ট,

0 Comments