বন্ধুরা, আপনাদের মনে কি এই প্রশ্নটি কখনও এসেছে যে, বাইবেলে চারটি সুসমাচারই কেন রয়েছে ?

যদি প্রশ্নটি আপনাদের মনে এসে থাকে, তাহলে আজকের এই নিবন্ধটি আপনাদেরই জন্য।

             আসুন জেনে নিই বাইবেলের চারটি সুসমাচারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে।

আমরা প্রভু যীশুর বিষয়ে সব থেকে বেশী জানতে পারি এই চারটি সুসমাচারের মাধ্যমে – মথি লিখিত সুসমাচার, মার্ক লিখিত সুসমাচার, লুক লিখিত সুসমাচার এবং যোহন লিখিত সুসমাচার।

চারটি সুসমাচারে আমরা প্রভু যীশুর বিষয়ে অনেক কিছুই জানতে পারি, কিন্তু এই সুসমাচার গুলিতে প্রভু যীশুর সমস্ত কার্যকলাপ তুলে ধরা সম্ভব হয়নি।

যোহন ২১ অধ্যায় ২৫ পদে লেখা আছে –

যীশু আরও অনেক কর্ম্ম করিয়াছিলেন; সে সকল যদি এক এক করিয়া লেখা যায়, তবে আমার বোধ হয়, লিখিতে লিখিতে এত গ্রন্থ হইয়া উঠে যে, জগতেও তাহা ধরে না।

এই চারটি সুসমাচারই ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি দ্বারা ভিন্ন ভিন্ন লোকেদের জন্য লেখা হয়েছিল, কিন্তু সুসমাচারগুলি লেখার পেছনে একটাই উদ্দেশ্য ছিল, আর সেটি হল – যাতে লোকেরা সুসমাচারগুলি পড়ে প্রভু যীশুকে ত্রাণকর্তা রূপে জানতে পারে ও স্বীকার করতে পারে, এবং তাঁর দ্বারা যেন তারা পরিত্রাণ লাভ করতে পারে।

১. মথি লিখিত সুসমাচারঃ-

এই সুসমাচার প্রেরিত মথি দ্বারা লেখা হয়েছিল।

মথি একজন ইহুদী ছিলেন এবং একজন কর আদায়কারী ছিলেন, যিনি পরবর্তীকালে প্রভু যীশুর মনোনীত শিষ্য হয়ে ওঠেন।

মথি লিখিত সুসমাচারে প্রভু যীশুর বংশ বৃত্তান্ত ও জন্ম বৃত্তান্ত খুব ভালোভাবে দেখতে পাওয়া যায়।

যেহেতু মথি একজন ইহুদী ছিলেন, সেহেতু তিনি চেয়েছিলেন যেন, অন্য ইহুদীরাও প্রভু যীশুকে খ্রীষ্ট বা মসীহ রূপে স্বীকার করে, এবং ত্রাণকর্তা রূপে গ্রহণ করে।

ইহুদীরা যেহেতু পুরাতন নিয়মের পুস্তকগুলিকে বেশী গুরুত্ব দিতেন, সেহেতু মথি তার সুসমাচারের অনেক স্থানেই পুরাতন নিয়মের বহু ভবিষ্যতবাণীর পরিপূর্ণতাগুলি তুলে ধরেছেন। তিনি ইহুদীদের সামনে প্রমাণ করেছেন যে, যীশুই সেই মসীহ, যার বিষয়ে ব্যবস্থা ও ভাববাদী গ্রন্থগুলিতে বর্ণনা করা আছে।

মথি লিখিত সুসমাচার অন্যান্য তিনটি সুসমাচারের তুলনায় অনেকটাই বড়ো, এর মধ্যে মোট ২৮-টি অধ্যায় রয়েছে।

২. মার্ক লিখিত সুসমাচারঃ-

মার্কও একজন ইহুদী ছিলেন, কিন্তু তিনি বিশেষ করে রোমীয়দেরকে লক্ষ্য করে সুসমাচারটি লিখেছিলেন। মার্ক তার সুসমাচারের মাধ্যমে রোমীয়দের বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, প্রভু যীশু শুধুমাত্র ইহুদীদের জন্য নয়, তাদের জন্যও। যীশু শুধুমাত্র ইহুদীদের জন্য প্রাণ দেননি, তাদের জন্যও দিয়েছেন।

           যেহেতু মার্ক লিখিত সুসমাচার বিশেষ করে রোমীয়দেরকে উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছিল, সেহেতু তার সুসমাচারে প্রভু যীশুর বংশ পরিচয়, জন্ম বৃত্তান্ত, পর্বতে দত্ত উপদেশ, ইত্যাদি পাওয়া যায় না। খুব বেশী পুরাতন নিয়মের ভবিষ্যতবাণীগুলিও এই সুসমাচারে তুলে ধরা হয়নি। মার্ক জানতেন যে, রোমীয়রা পুরাতন নিয়মের ভবিষ্যতবাণীগুলিতে বেশী আগ্রহী হবে না, সেই জন্যই তিনি তার সুসমাচারে প্রভু যীশুর মহিমাময় কাহিনীগুলির বর্ণনা করেছেন, যাতে রোমীয়রা সেগুলি পড়ে জানতে পারে যে, যীশুই জগতের ত্রাণকর্তা।

প্রভু যীশুর আশ্চর্য কাজগুলির বর্ণনা আমরা অন্য তিনটি সুসমাচারের তুলনায় মার্ক লিখিত সুসমাচারেই বেশী পেয়ে থাকি।

৩. লুক লিখিত সুসমাচারঃ-

লুক একজন অ-ইহুদী ছিলেন, এবং পেশায় একজন ডাক্তার ছিলেন।

লুক তার সুসমাচার অ-ইহুদীদের উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন। মথি লিখিত সুসমাচারের পরে দ্বিতীয় সবথেকে বড়ো সুসমাচার হল লুক লিখিত সুসমাচার, এটিতে মোট ২৪-টি অধ্যায় আছে। লুক তার সুসমাচারে এটাই বোঝাতে চেয়েছেন যে, প্রভু যীশু শুধুমাত্র ইহুদীদেরই নয়, বরং জগতের সকল মানুষকেই ভালোবাসেন এবং তিনি চান যেন সকল মানুষই পরিত্রাণ লাভ করতে পারে।

লুক লিখিত সুসমাচারে এমন কিছু দৃষ্টান্তের উল্লেখ রয়েছে, যেগুলি অন্য তিনটি সুসমাচারে দেখতে পাওয়া যায় না, যেমন – হারাণ মেষের দৃষ্টান্ত (লুক ১৫ অধ্যায় ১ থেকে ৭ পদ), হারাণ পুত্রের দৃষ্টান্ত (লুক ১৫ অধ্যায় ১১ থেকে ৩২ পদ), ইত্যাদি।

এছাড়াও আরও দুটি ঘটনা তার সুসমাচারে দেখতে পাওয়া যায়, সেগুলি হল – অনুতাপিনী স্ত্রীর প্রতি যীশুর দয়া (লুক ৭ অধ্যায় ৩৬ থেকে ৫০ পদ), এবং সক্কেয়ের মন পরিবর্তন (লুক ১৯ অধ্যায় ১ থেকে ১০ পদ)।

         লুক তার সুসমাচারে দেখিয়েছেন যে, প্রভু যীশুর প্রেম জগতের প্রত্যেকটি মানুষের জন্য, তিনি সকলেরই ত্রাণকর্তা। তিনি দেখিয়েছেন, যে কেউ প্রভুর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হয়ে নিজের পাপ স্বীকার করবে, সে-ই পরিত্রাণ পাবে।

৪. যোহন লিখিত সুসমাচারঃ-

প্রেরিত যোহন দ্বারা এই সুসমাচার লেখা হয়েছিল। এই সুসমাচার লেখার পেছনে প্রধান উদ্দেশ্য ছিল এটা প্রমাণ করা যে,  প্রভু যীশুই পরাক্রমশালী ঈশ্বর, যিনি দেহ ধারণ করে মানুষ রূপে এই পৃথিবীতে এসেছিলেন।

কেবলমাত্র যোহন লিখিত সুসমাচারই এমন একটি সুসমাচার, যেখানে প্রভু যীশুর বলা “I AM” শব্দটি ৭ বার তুলে ধরা হয়েছে, যেমন – “I AM THE BREAD OF LIFE” বা “আমিই জীবন খাদ্য (রুটি)” --- যোহন ৬ অধ্যায় ৩৫ পদ, “I AM THE DOOR” বা “আমিই দ্বার” --- যোহন ১০ অধ্যায় ৯ পদ, “I AM THE LIGHT OF THE WORLD” বা “আমিই জগতের জ্যোতি” --- যোহন ৮ অধ্যায় ১২ পদ, “I AM THE GOOD SHEPHERD” বা “আমিই উত্তম মেষপালক” --- যোহন ১০ অধ্যায় ১১ এবং ১৪ পদ, “I AM THE WAY, THE TRUTH AND THE LIFE” বা “আমিই পথ, সত্য ও জীবন” --- যোহন ১৪ অধ্যায় ৬ পদ, “I AM THE RESURRECTION AND THE LIFE” বা “আমিই পুনরুত্থান ও জীবন” --- যোহন ১১ অধ্যায় ২৫ পদ এবং “I AM THE VINE” বা “আমি দ্রাক্ষালতা” --- যোহন ১৫ অধ্যায় ৫ পদ।  

         প্রেরিত যোহন তার সুসমাচারে ৭-টি আশ্চর্য কাজেরও বর্ণনা করেছেন, সেগুলির বর্ণনা আপনি পাবেন – যোহন ২ অধ্যায় ১ থেকে ১১ পদে, যোহন ৪ অধ্যায় ৪৬ থেকে ৫৪ পদে, যোহন ৫ অধ্যায় ১ থেকে ৮ পদে, যোহন ৬ অধ্যায় ৫ থেকে ১৩ পদে, যোহন ৬ অধ্যায় ১৬ থেকে ২১ পদে, যোহন ৯ অধ্যায় ১ থেকে ৭ পদে এবং যোহন ১১ অধ্যায় ১ থেকে ৪৪ পদে।

          শেষে যোহন তার সুসমাচারের ২১ অধ্যায় ২৫ পদে এমন একটি কথা লিখেছেন, যেই কথাটির উল্লেখ আমরা এই নিবন্ধের শুরুতেই করেছি। লেখা আছে –

যীশু আরও অনেক কর্ম্ম করিয়াছিলেন; সে সকল যদি এক এক করিয়া লেখা যায়, তবে আমার বোধ হয়, লিখিতে লিখিতে এত গ্রন্থ হইয়া উঠে যে, জগতেও তাহা ধরে না।

এই কথাটি লেখার পূর্বে ২০ অধ্যায় ৩১ পদে যোহন লিখেছেন –

কিন্তু এই সকল লেখা হইয়াছে, যেন তোমরা বিশ্বাস কর যে, যীশুই খ্রীষ্ট, ঈশ্বরের পুত্র, আর বিশ্বাস করিয়া যেন তাঁহার নামে জীবন প্রাপ্ত হও।

বন্ধুরা, এই চারটি সুসমাচারই যীশুর বিষয়ে আমাদের জানতে সাহায্য করে। পবিত্র আত্মা যেমন ভাবে তাদের দ্বারা লিখিয়েছিলেন, তারা তেমন ভাবেই সুসমাচারগুলি লিখে গিয়েছেন। এই চারটি সুসমাচারের মাধ্যমেই আমরা প্রভু যীশুর সম্পূর্ণ জীবনী ভালোভাবে বুঝতে পারি।


Tags:- 

Christian Articles, বাংলা খ্রীষ্টীয় নিবন্ধ, bsbbca, bibleshikshabhaskar, BSB Ministry, Bengali Christian Blog, Bangla Gospel, Bengali Gospel, Preaching in Bengali Language, Bible Based Articles, বাংলা প্রচার, বাংলা যীশুর প্রচার, Bangla Christiyo Christio Khristiyo Khristio Prochar, BSB Gospel, Gospel Articles, Bangla Nibondho, Gospel Online, Online Gospel, বাইবেল প্রচার, বাইবেলের বাক্য, Blogger, Jesus Christ, যীশু খ্রীষ্ট,


0 Comments