চিন্তা এমন একটি বিষাক্ত জিনিস, যা আমাদের তিলে তিলে বিনষ্ট করে। মানুষের রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়ার জন্য এই চিন্তা বিশেষ ভূমিকা পালন করে, চিন্তার কারণেই বর্তমানে অনেক মানুষ মৃত্যুর পথ বেছে নিচ্ছে।

খ্রীষ্টীয় জীবনে চিন্তা হল বিশ্বাসের বিপরীত একটি বিষয়, যেখানে চিন্তা রয়েছে, সেখানে বিশ্বাসের অভাব রয়েছে। আর যেখানে বিশ্বাসের পরিপূর্ণতা রয়েছে, সেখানে চিন্তার কোনও অস্তিত্ব নেই।

      প্রভু যীশু নিজে মানুষ হয়ে এই পৃথিবীতে এসে উপলব্ধি করেছেন যে, এই জগতের মানুষ চিন্তা করে নিজেদেরকে ধীরে ধীরে বিনাশের পথে নিয়ে যাচ্ছে, সেই কারণেই তিনি মথি ৬ অধ্যায় ২৫ পদে বলেছেন –

এই জন্য আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, ‘কি ভোজন করিব, কি পান করিব’ বলিয়া প্রাণের বিষয়ে, কিম্বা ‘কি পরিব’ বলিয়া শরীরের বিষয়ে ভাবিত হইও না; ভক্ষ্য হইতে প্রাণ ও বস্ত্র হইতে শরীর কি বড় বিষয় নয়?

 

          না চাইতেই ঈশ্বর আমাদের শরীর ও প্রাণ উপহার হিসেবে দিয়েছেন, তাহলে অবশ্যই তিনি আমাদের প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছুই জুগিয়ে দেবেন। ঈশ্বরের কাছে আমাদের জীবন খাদ্যের তুলনায় অনেক মূল্যবান, এবং আমাদের শরীর বস্ত্রের তুলনায় অনেক মূল্যবান, সেহেতু তিনি জানেন যে, প্রাণ এবং শরীরকে রক্ষা করার জন্য খাদ্য ও বস্ত্রের প্রয়োজন, তাই তিনি অবশ্যই সেগুলি আমাদের প্রদান করবেন। কিন্তু আমরা মানুষ, তাই ঈশ্বরের প্রতি আমাদের বিশ্বাস কম, এবং চিন্তা অনেক বেশী।

মথি ৬ অধ্যায় ২৬ পদে প্রভু যীশু আরও বলেছেন, লেখা আছে –

আকাশের পক্ষীদের প্রতি দৃষ্টিপাত কর; তাহারা বুনেও না, কাটেও না, গোলাঘরে সঞ্চয়ও করে না, তথাপি তোমাদের স্বর্গীয় পিতা তাহাদিগকে আহার দিয়া থাকেন; তোমরা কি তাহাদের হইতে অধিক শ্রেষ্ঠ নও?

          প্রভু যীশু এখানে আমাদের বোঝাতে চেয়েছেন যে, তিনি আকাশের পাখীদেরও সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের খাদ্যও তিনি জুগিয়ে দেন, সেহেতু ঈশ্বরের সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসেবে মানুষের মূল্য তাঁর কাছে অনেক বেশী, অতএব মানুষের প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছুও তিনি অবশ্যই জুগিয়ে দেবেন।

তাহলে আমরা কেন এই সমস্ত জাগতিক বিষয়গুলি নিয়ে চিন্তা করি ?

চিন্তা করার কারণ হল – আমাদের মধ্যে তাঁর প্রতি বিশ্বাসের অভাব রয়েছে।

বিশ্বাসের অভাবের কারণেই আমরা অযথা চিন্তা করে নিজেদের তিলে তিলে শেষ করে ফেলি।

প্রভু যীশু লুক ১২ অধ্যায় ২৫ পদে বলেছেন –

পক্ষিগণ হইতে তোমরা কত অধিক শ্রেষ্ঠ! আর তোমাদের মধ্যে কে ভাবিত হইয়া আপন বয়স এক হস্তমাত্র বৃদ্ধি করিতে পারে?

চিন্তা করে আমরা কখনই আমাদের জীবনের একটি মুহূর্ত বা একটি দিনও বৃদ্ধি করতে পারি না, কিন্তু একমাত্র সর্বশক্তিমান ঈশ্বরই পারেন আমাদের জীবনের একটি মুহূর্ত বা একটি দিনকে বৃদ্ধি করতে, তাঁর জন্য এটি খুবই সামান্য কাজ। সেই জন্যই প্রভু যীশু লুক ১২ অধ্যায় ২৬ পদে আরও বলেছেন –

অতএব তোমরা অতি ক্ষুদ্র কর্ম্মও যদি করিতে না পার, তবে অন্য অন্য বিষয়ে কেন ভাবিত হও?

        হ্যাঁ, ঈশ্বরের জন্য এটি সত্যিই অতি ক্ষুদ্র কর্ম, অতএব আমাদের উচিত, যেন আমরা তাঁর ওপরেই নির্ভরশীল হই এবং চিন্তাকে বিদায় জানাই।      

যেহেতু আমরা খ্রীষ্ট বিশ্বাসী, সেহেতু চিন্তা করাটা আমাদের জন্য শোভা পায় না, কারণ বাইবেল বলে চিন্তা তো অবিশ্বাসী বা পরজাতীয়েরা  করে থাকে।

মথি ৬ অধ্যায় ৩১ থেকে ৩২ পদে লেখা আছে -

31 অতএব ইহা বলিয়া ভাবিত হইও না যে32 কি ভোজন করিব?’ বা ‘কি পান করিব?’ বা ‘কি পরিব?’ কেননা পরজাতীয়েরাই এই সকল বিষয় চেষ্টা করিয়া থাকে; তোমাদের স্বর্গীয় পিতা ত জানেন যে, এই সকল দ্রব্যে তোমাদের প্রয়োজন আছে।

প্রভু যীশু চিন্তা না করার বিষয়ে আমাদের বারংবার বলে গিয়েছেন। আজ এই জগতের প্রত্যেকটি মানুষের জন্য ঈশ্বরের প্রয়োজন রয়েছে, আর ঈশ্বরই আমাদের সমস্ত চিন্তার ভার তুলে নেন।

১ পিতর ৫ অধ্যায় ৭ পদে লেখা আছে –

তোমাদের সমস্ত ভাবনার ভার তাঁহার উপরে ফেলিয়া দেও; কেননা তিনি তোমাদের জন্য চিন্তা করেন।

আপনি নিজেকে প্রশ্ন করুন, একজন খ্রীষ্ট বিশ্বাসী হিসেবে আপনি কি আপনার সমস্ত চিন্তার ভার ঈশ্বরের ওপর দিতে পেরেছেন ?

যদি আপনি আপনার সমস্ত চিন্তার ভার ঈশ্বরকে না দিয়ে উঠতে পারেন এবং নিজেই চিন্তা করতে থাকেন, তবে আপনার বিশ্বাস ধীরে ধীরে বিনষ্ট হতে শুরু করবে, কারণ যেহেতু আপনি নিজেই চিন্তা করছেন, সেহেতু আপনি ঈশ্বরের প্রতি আর বিশ্বস্ত থাকছেন না।

          চিন্তা শুধুমাত্র আমাদের বিশ্বাসকেই বিনষ্ট করে না, বরং আমাদের জীবন থেকে সমস্ত খুশি, আনন্দ ও শান্তিকেও বিনষ্ট করে, সেইজন্যই আজ থেকেই আপনি আপনার সমস্ত চিন্তার ভার ঈশ্বরের হাতে তুলে দিন এবং আপনি পরীক্ষা করে দেখুন, ঈশ্বর অবশ্যই আপনার জীবনে মঙ্গল করবেন।

গীতসংহিতা ৩৪ এর গীত ৮ পদে লেখা আছে –

আস্বাদন করিয়া দেখ, সদাপ্রভু মঙ্গলময়;

ধন্য সেই ব্যক্তি, যে তাঁহার শরণাপন্ন।

 

আপনি যদি মনে করেন যে, আপনি বিশ্বাসে দুর্বল হয়ে পরছেন, তাহলে পুনরায় আপনি চিন্তাকে দূরে সরিয়ে দিয়ে ঈশ্বরকে আস্বাদন করে দেখুন, তাহলে অবশ্যই আপনি মঙ্গলই দেখতে পাবেন, কারণ তিনি মঙ্গলময়।

আমরা যদি অন্তর থেকে এটা বিশ্বাস করি যে, আমরা প্রভুর চরাণির মেষ, তাহলে আমরা এটাও বিশ্বাস করতে পারব যে, প্রভু আমাদের অবশ্যই পরিচর্যা করবেন।

 

          অতএব চিন্তা আর নয়, বিশ্বাসে পরিপক্ক হতে চেষ্টা করুন।  


Tags:- 

Christian Articles, বাংলা খ্রীষ্টীয় নিবন্ধ, bsbbca, bibleshikshabhaskar, BSB Ministry, Bengali Christian Blog, Bangla Gospel, Bengali Gospel, Preaching in Bengali Language, Bible Based Articles, বাংলা প্রচার, বাংলা যীশুর প্রচার, Bangla Christiyo Christio Khristiyo Khristio Prochar, BSB Gospel, Gospel Articles, Bangla Nibondho, Gospel Online, Online Gospel, বাইবেল প্রচার, বাইবেলের বাক্য, Blogger, Jesus Christ, যীশু খ্রীষ্ট,



0 Comments