মানুষ এখন সেই উদ্দেশ্যে জীবনযাপন করে না, যে উদ্দেশ্যে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছিল।

সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি আজ আমাদের জানা প্রয়োজন, আর সেটি হল – ঈশ্বর কি উদ্দেশ্যে মানুষকে সৃষ্টি করেছিলেন ? আজ এই জগতসংসারে কেন এত নিষ্ঠুরতা, এত অশান্তি, এত হিংসা, এত স্বার্থপরতা রাজত্ব করছে ? যত দিন যাচ্ছে, ততই কেন মানুষের মন থেকে প্রেম নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে ?

                               আমরা যখন নিজেদের চারপাশ লক্ষ করি, তখন মানুষের মধ্যে নিরাশা, হাহাকার, স্বার্থপরতা, হিংসা, ঘৃণা, অহংকার ও সমস্ত মন্দ বিষয়গুলি দেখতে পাই, মানুষের মধ্যে এই সমস্যাগুলি যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে!

বিভিন্ন সম্পর্কগুলিতেও যেন ফাটল দেখা দিচ্ছে, আর সেগুলি ঠিক করার তেমন কোনও সমাধান খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না!

এসবের কারণ কি ?

--- এসবের কারণ হল মানুষ তার জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য থেকে বিপথগামী হয়েছে।

তো মানুষের জীবনের উদ্দেশ্যটা কি ? সৃষ্টিকর্তা মানুষকে কি উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছিলেন ?

                    বাইবেল অনুযায়ী, মানুষকে ঈশ্বরের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছিল।

কিন্তু আজকাল টিভি, মিডিয়া, বিভিন্ন ধরণের বিজ্ঞাপন, ও অনেক পণ্ডিতেরা এই শিক্ষা দিয়ে থাকেন যে, মানুষ কেবল মানুষের জন্যই সৃষ্টি।

                                মানুষের মধ্যে এখন আত্ম-অহংকার অধিক পরিমাণে লক্ষ করা যায়, আর এটিই সমস্ত মন্দের মূল কারণ।

রোমীয় ৩ অধ্যায় ২৩ পদে লেখা আছে - কেননা সকলেই পাপ করিয়াছে এবং ঈশ্বরের গৌরববিহীন হইয়াছে—

                                    অতএব সবার প্রথমে এটা মেনে নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে যে, মানুষের জীবনে পাপ আছে, মানুষের জন্ম হয়েছে পাপে, আর মানুষ প্রতিনিয়তই পাপ করে চলেছে, তার পাশাপাশি এটা জানা প্রয়োজন যে, কেন মানুষের জীবন সঠিক দিশায় এগোচ্ছে না ?

                                    মানুষের জীবন অশান্তিতে, একাকিত্বতায়, অনিশ্চয়তায় ও বিভিন্ন ধরণের সমস্যায় জর্জরিত, এর কারণ হল – মানুষ ঈশ্বরের গৌরব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ঈশ্বর তাঁর মহিমার জন্যই মানুষকে সৃষ্টি করেছিলেন, হৃদয় দিয়ে তাঁর গৌরব, প্রশংসা ও মহিমা করাই মানুষের প্রধান উদ্দেশ্য, আর ঈশ্বরের এই উদ্দেশ্য সাধনেই মানুষ তার জীবনে শান্তি, আনন্দ, নিশ্চয়তা ও অনুগ্রহ লাভ করতে পারে। কিন্তু মানুষ সেই উদ্দেশ্যে জীবনযাপন করে না, কারণ তারা পথভ্রষ্ট।

যোহন ১৫ অধ্যায় ৫ পদে যীশু বলেছেন - আমি দ্রাক্ষালতা, তোমরা শাখা; যে আমাতে থাকে, এবং যাহাতে আমি থাকি, সেই ব্যক্তি প্রচুর ফলে ফলবান্‌ হয়; কেননা আমা ভিন্ন তোমরা কিছুই করিতে পার না।

                                বাইবেল অনুযায়ী মানুষ ঈশ্বরকে ত্যাগ করে কিছুই করতে পারে না। মানুষ এরকম মনে করতে পারে যে, ঈশ্বরকে ছাড়াই তো আমরা জীবনে অনেক সফলতা অর্জন করতে পেরেছি, তাহলে ঈশ্বরের কি প্রয়োজন ?

 কিন্তু এরকম চিন্তাভাবনা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ, মানুষের এই সফলতা শুধুমাত্র জাগতিক, ক্ষণস্থায়ী। মানুষ তার জীবনে ঈশ্বরকে ছাড়া সেই ফল উৎপন্ন করতে পারবে না, যেই ফল তিনি মানুষের কাছ থেকে আশা করেন।

আর যোহন ১৫ অধ্যায় ৬ পদে প্রভু যীশু বলেছেন - কেহ যদি আমাতে না থাকে, তাহা হইলে শাখার ন্যায় তাহাকে বাহিরে ফেলিয়া দেওয়া যায় ও সে শুকাইয়া যায়; এবং লোকে সেগুলি কুড়াইয়া আগুনে ফেলিয়া দেয়, আর সে সকল পুড়িয়া যায়।

                                আর এই বাক্য অনুযায়ী মানুষের অবস্থা ঈশ্বরকে ছাড়া শুকিয়ে যাওয়া ডালপালার মতো হবে, এবং সে একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে, তার আর কোনও অস্তিত্বই অবশিষ্ট থাকবে না।                        

                              আজকাল অনেকেই জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে শিক্ষা দিয়ে থাকেন, কিন্তু তারা ভ্রান্ত শিক্ষা দিয়ে থাকেন। তারা বলে থাকেন - আপনি জীবনে যা কিছুই হতে চান, ঈশ্বরও আপনাকে সেটাই তৈরী করতে চান, কিন্তু এটা সত্যি নয়।

আসল সত্যিটা হল – ঈশ্বর মানুষকে তাঁর ইচ্ছানুযায়ী তৈরী করতে চান, মানুষের ইচ্ছানুযায়ী নয়। মানুষ তখনই জীবনে শান্তি অনুভব করতে পারবে, যখন সে ঈশ্বরের ইচ্ছার অধীন হবে।

                                             কিন্তু, ঈশ্বরের ইচ্ছা কি ?

এই বিষয়ে প্রভু যীশু আমাদের শিখিয়েছেন,

মথি ২২ অধ্যায় ৩৭ থেকে ৩৯ পদে লেখা আছে -  37 তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ ও তোমার সমস্ত মন দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিবে,” 38 এইটী মহৎ ও প্রথম আজ্ঞা। 39 আর দ্বিতীয়টী ইহার তুল্য; “তোমার প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে।”

                                          কিন্তু আজ মানুষের কাছে এইসমস্ত বিষয় নিয়ে ভাবনাচিন্তা করার সময়ের বড়োই অভাব। মানুষ তাদের সমস্যাগুলির বিষয়ে বা অশান্তিগুলির বিষয়ে অভিযোগ তো অবশ্যই করে, কিন্তু তারা এটা জানতে চায় না যে, সেগুলির কারণগুলি আসলে কি!

                                          খ্রীষ্ট বিশ্বাসী হবার দরুন আজ আমাদের এটা কর্তব্য, যেন আমরা মানুষকে আসল সত্যিটা জানাই। মানুষের সাথে পাপ সম্পর্কে কথা বলার প্রয়োজন রয়েছে। ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে মানুষ যে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে, সে সকল বিষয়ে মানুষকে চেতনা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।

মানুষ যেন তার ভালোমন্দ সকল পরিস্থিতিতেই ঈশ্বরের ইচ্ছার অধীন হয়, সে বিষয়েও আমাদের মানুষকে চেতনা দিতে হবে।

উপদেশক ১২ অধ্যায় ১৩ থেকে ১৪ পদে লেখা আছে – 13 আইস, আমরা সমস্ত বিষয়ের উপসংহার শুনি; ঈশ্বরকে ভয় কর, ও তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন কর, কেননা ইহাই সকল মনুষ্যের কর্ত্তব্য 14 কারণ ঈশ্বর সমস্ত কর্ম্ম এবং ভাল হউক, কি মন্দ হউক, সমস্ত গুপ্ত বিষয়, বিচারে আনিবেন।

                                    --- ঈশ্বরের আজ্ঞাপালনই আমাদের জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য, তাই নিজেদের জন্য নয়, তাঁর মহিমার জন্যই জীবন অতিবাহিত করুন, যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছন।

আপনি যদি ভ্রান্ত উদ্দেশ্য ত্যাগ করে মুখ্য উদ্দেশ্য অর্থাৎ ঈশ্বরের ইচ্ছাকে আপনার জীবনের উদ্দেশ্য রূপে গ্রহণ করেন, তাহলে আপনি অবশ্যই উপহার হিসেবে দয়া, শান্তি ও অনুগ্রহ লাভ করবেন।


Tags:- 

Christian Articles, বাংলা খ্রীষ্টীয় নিবন্ধ, bsbbca, bibleshikshabhaskar, BSB Ministry, Bengali Christian Blog, Bangla Gospel, Bengali Gospel, Preaching in Bengali Language, Bible Based Articles, বাংলা প্রচার, বাংলা যীশুর প্রচার, Bangla Christiyo Christio Khristiyo Khristio Prochar, BSB Gospel, Gospel Articles, Bangla Nibondho, Gospel Online, Online Gospel, বাইবেল প্রচার, বাইবেলের বাক্য, Blogger, Jesus Christ, যীশু খ্রীষ্ট,

0 Comments