আজ আমরা একটি বিতর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করব, আর সেটি হল – অন্য ভাষায় কথা বলবার বিষয়।

এই বিষয়টি নিয়ে অনেকেই ভুল ধারণা রাখেন, আজকাল বিভিন্ন মণ্ডলীতে এই বিষয়টি নিয়ে অনেক ভুল শিক্ষাও দেওয়া হচ্ছে।

আজ আমরা দেখব যে, পবিত্র বাইবেল এই বিষয়ে আমাদের কি শিক্ষা দেয়।

তিনটি ভাগে আমরা এটি জানতে চলেছি –

১. অন্য ভাষার বরদান কি ?

ব্যাখ্যাঃ- অন্য ভাষায় কথা বলবার বরদান এমন একটি অলৌকিক যোগ্যতা, যার দ্বারা আপনি কোনও অচেনা ভাষায় (যে ভাষা আপনি কোনোদিন শেখেননি) কথা বলতে সক্ষম হবেন এবং সেই অচেনা ভাষার কোনও ব্যক্তির কাছে সহজেই সুসমাচার প্রচার করতেও সক্ষম হবেন।

উদাহরণস্বরূপ ধরে নিন – আপনি পশ্চিমবঙ্গের কোনও একটি ছোট গ্রামে থাকেন, আর কখনই আপনি অন্য কোনও দেশে ভ্রমন করেননি। কিন্তু হঠাৎ একদিন অন্য কোনও দেশ থেকে কিছু লোক আপনার গ্রামে এলো, আর তদেরকে আপনি তাদের ভাষাতেই সুসমাচার দিতে সক্ষম হলেন।

                              ঠিক এরকমই ঘটনা আমরা প্রেরিত পুস্তকে দেখতে পাই। পঞ্চাশত্তমীর দিনে যখন যীশুর শিষ্যদের ওপর পবিত্র আত্মার অবতরণ ঘটেছিল, তখন তারা অন্য অন্য ভাষায় কথা বলতে শুরু করেছিল।

সেই সময় অন্যান্য দেশ থেকে ও অন্যান্য ভাষার ইহুদীরা জেরুসালেমে উৎসব পালন করতে এসেছিল, আর পবিত্র আত্মার সেই বরদানে প্রেরিতগণ তাদেরকে তাদের ভাষাতেই সুসমাচার শুনিয়েছিল। যারা এগুলি শুনেছিল, তারা অত্যন্ত হতবাক হয়ে গিয়েছিল।

প্রেরিত ২ অধ্যায় ১ থেকে ৮ পদে লেখা আছে –

1 পরে পঞ্চাশত্তমীর দিন উপস্থিত হইলে তাঁহারা সকলে একস্থানে সমবেত ছিলেন। 2 আর হঠাৎ আকাশ হইতে প্রচণ্ড বায়ুর বেগের শব্দবৎ একটা শব্দ আসিল, এবং যে গৃহে তাঁহারা বসিয়াছিলেন, সেই গৃহের সর্ব্বত্র ব্যাপ্ত হইল। 3 আর অংশ অংশ হইয়া পড়িতেছে, এমন অনেক অগ্নিবৎ জিহ্বা তাঁহাদের দৃষ্টিগোচর হইল; এবং তাঁহাদের প্রত্যেক জনের উপরে বসিল। 4 তাহাতে তাঁহারা সকলে পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হইলেন, এবং আত্মা তাঁহাদিগকে যেরূপ বক্তৃতা দান করিলেন, তদনুসারে অন্য অন্য ভাষায় কথা কহিতে লাগিলেন।

5 ঐ সময়ে যিহূদীরা, আকাশের নিম্নস্থিত সমস্ত জাতি হইতে আগত ভক্ত লোকেরা, যিরূশালেমে বাস করিতেছিল। 6 আর সেই ধ্বনি হইলে অনেক লোক সমাগত হইল, এবং তাহারা হতবুদ্ধি হইয়া পড়িল, কারণ প্রত্যেক জন আপন আপন ভাষায় তাঁহাদিগকে কথা কহিতে শুনিতেছিল। 7 তখন সকলে অতিশয় আশ্চর্য্যান্বিত ও চমৎকৃত হইয়া বলিতে লাগিল, দেখ, এই যে লোকেরা কথা কহিতেছে, ইহারা সকলে কি গালীলীয় নহে8 তবে আমরা কেমন করিয়া প্রত্যেক জন নিজ নিজ জন্মদেশীয় ভাষায় কথা শুনিতেছি?

                                  

                               প্রেরিতগণ এমন কোনও ভাষায় কথা বলছিল না, যেগুলি কারও পক্ষে বোধগম্য ছিল না বা যেগুলির কোনও অর্থ ছিল না, তাদের অন্য ভাষাগুলি বুঝতে পারা যাচ্ছিল আর সেগুলি অর্থপূর্ণও ছিল।

তো প্রেরিতগণ পবিত্র আত্মার বরদানেই হঠাৎ করে অন্য দেশের ভাষা বলতে শুরু করেছিল।

                                    আর এই অন্য ভাষার সাথে আধুনিক যুগে বলা অন্য ভাষার কোনও মিল খুঁজে পাওয়া যায় না।

২. অন্য ভাষা নিয়ে কিছু ভুল ধারণা

ব্যাখ্যাঃ- অনেক মণ্ডলীতে এরূপ শেখানো হয় যে, প্রত্যেক বিশ্বাসীকেই অন্য ভাষায় কথা বলার প্রয়োজন রয়েছে, আর আমরা অন্য ভাষায় কথা বলতে শিখতেও পারি, সেই জন্য এটির অনুশীলনের প্রয়োজন আছে।

                                     কিন্তু এর বিপরীতে পবিত্র বাইবেল আমাদের শিক্ষা দেয় যে, অন্য ভাষায় কথা বলতে পারা বা না পারা সেটি পবিত্র আত্মার আত্মীক বরদানের ওপর নির্ভর করে। পবিত্র আত্মা যাকে এই বরদান দিতে ইচ্ছে করেন, তাকেই দিয়ে থাকেন।

১ করিন্থীয় ১২ অধ্যায় ১০ থেকে ১১ পদে লেখা আছে –

10 আর এক জনকে পরাক্রম-কার্য্য-সাধক গুণ, আর এক জনকে ভাববাণী, আর এক জনকে আত্মাদিগকে চিনিয়া লইবার শক্তি, আর এক জনকে নানাবিধ ভাষা কহিবার শক্তি, এবং আর এক জনকে বিশেষ বিশেষ ভাষার অর্থ করিবার শক্তি দত্ত হয়11 কিন্তু এই সকল কর্ম্ম সেই একমাত্র আত্মা সাধন করেন; তিনি সবিশেষ বিভাগ করিয়া যাহাকে যাহা দিতে বাসনা করেন, তাহাকে তাহা দেন।

                                   

                                    অনেক মণ্ডলীতে এই ধারণা রাখতে দেখা যায় যে, যে ব্যক্তি অন্য ভাষায় কথা বলার বরদান পেয়েছেন, সেই ব্যক্তি অন্য বিশ্বাসীদের তুলনায় অধিক আত্মীক, ও সেই ব্যক্তিই কেবল পবিত্র আত্মা লাভ করেছেন, বাকীরা কেউ পবিত্র আত্মা লাভ করতে পারেননি।

কিন্তু বাইবেল এই ধরণের কোনও ধারনাই আমাদের দেয় না, মণ্ডলীর কিছু ভ্রান্ত শিক্ষার জন্যই বিশ্বাসীদের মধ্যে অনেক মতভেদের সৃষ্টি হচ্ছে।

যেসব ব্যক্তিরা অন্য ভাষায় কথা বলতে সক্ষম, তাদের মধ্যে অনেক সময় অহংকার দেখতে পাওয়া যায়, আর যেসব ব্যক্তিরা অন্য ভাষা বলতে সক্ষম নন, তারা নিজেদেরকে ছোট বা তুচ্ছ মনে করতে শুরু করেন।  

৩. মণ্ডলীতে অন্য ভাষার প্রয়োগ কীভাবে করা উচিত ?

ব্যাখ্যাঃ- সর্বপ্রথম কোনও মণ্ডলীতে যদি কেউ অন্য ভাষা বলে থাকেন, তাহলে অবশ্যই সেগুলির অনুবাদককে সেখানে উপস্থিত থাকতে হবে।

১ করিন্থীয় ১৪ অধ্যায় ২৮ পদে লেখা আছে –

কিন্তু অর্থকারক না থাকিলে সেই ব্যক্তি মণ্ডলীতে নীরব হইয়া থাকুক, কেবল আপনার ও ঈশ্বরের উদ্দেশে কথা বলুক,

আর এই অধ্যায়েই ২৩ পদে পৌল লিখেছেন –

অতএব সমস্ত মণ্ডলী এক স্থানে সমবেত হইলে যদি সকলে বিশেষ বিশেষ ভাষায় কথা বলে, এবং কতকগুলি সামান্য কি অবিশ্বাসী লোক প্রবেশ করে, তবে তাহারা কি বলিবে না যে, তোমরা পাগল?

তো আমাদের বোঝার প্রয়োজন রয়েছে যে, আমরা কীভাবে মণ্ডলীতে অন্য ভাষার প্রয়োগ করতে পারি!

প্রেরিত পৌল একই অধ্যায়ের ২৭ পদে আরও লিখেছেন –

যদি কেহ বিশেষ ভাষায় কথা বলে, তবে দুই জন, কিম্বা অধিক হইলে তিন জন বলুক, পালানুক্রমেই বলুক, আর এক জন অর্থ বুঝাইয়া দিউন।

এখনকার মণ্ডলীগুলিতে কি এই বাক্যগুলির প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায় ? যদিও বা কোনও মণ্ডলী এই বাক্যগুলিকে প্রাধান্য দিয়েও থাকে, তবুও তার সংখ্যা খুবই কম।

একই অধ্যায়ের ১৯ পদে পৌল লিখেছেন –

কিন্তু মণ্ডলীর মধ্যে, বিশেষ ভাষায় দশ সহস্র কথা অপেক্ষা, বরং বুদ্ধি দ্বারা পাঁচটী কথা কহিতে চাই, যেন অন্য লোকদিগকেও শিক্ষা দিতে পারি।

                            অবশেষে আপনাকে একটা কথাই বলার আছে যে, যদি আপনার কাছে অন্য ভাষায় কথা বলার বরদান থেকে থাকে, তবে কখনই আপনি অন্য কোনও বিশ্বাসীকে বা বিশ্বাসীদের তুচ্ছ জ্ঞান করবেন না, যাদের কাছে এই বরদান নেই।

আপনি এটা মনে রাখুন যে, আপনাকে এই বরদান ঈশ্বরের ইচ্ছানুসারেই দেওয়া হয়েছে, আপনি আপনার নিজের কোনও যোগ্যতা অনুযায়ী এটি অর্জন করেননি।

                              আর যদি আপনি অন্য ভাষায় কথা বলার বরদান না পেয়ে থাকেন, তাহলে আপনি কখনই ভাববেন না যে, আপনার কাছে পবিত্র আত্মা নেই বা আপনি একজন তুচ্ছ ব্যক্তি। হতে পারে পবিত্র আত্মা আপনাকে অন্য কোনও বরদান দিয়েছেন!

                               বিশ্বাসে স্থির থাকুন, আর প্রার্থনার মাধ্যমে ঈশ্বরের কাছে জানতে চেষ্টা করুন যে, তিনি আপনাকে তাঁর ইচ্ছানুসারে কি বরদান দিয়েছেন বা দিতে চলেছেন।


Tags:- 

Christian Articles, বাংলা খ্রীষ্টীয় নিবন্ধ, bsbbca, bibleshikshabhaskar, BSB Ministry, Bengali Christian Blog, Bangla Gospel, Bengali Gospel, Preaching in Bengali Language, Bible Based Articles, বাংলা প্রচার, বাংলা যীশুর প্রচার, Bangla Christiyo Christio Khristiyo Khristio Prochar, BSB Gospel, Gospel Articles, Bangla Nibondho, Gospel Online, Online Gospel, বাইবেল প্রচার, বাইবেলের বাক্য, Blogger, Jesus Christ, যীশু খ্রীষ্ট,

 

 


0 Comments