পুরাতন নিয়মের ভবিষ্যতবাণী নতুন নিয়মে এসে পরিপূর্ণতা লাভ করেছে।

যিশাইয় ৫৩ অধ্যায় ৫ পদে লেখা আছে –

কিন্তু তিনি আমাদের অধর্ম্মের নিমিত্ত বিদ্ধ,

আমাদের অপরাধের নিমিত্ত চূর্ণ হইলেন;

আমাদের শান্তিজনক শাস্তি তাঁহার উপরে বর্ত্তিল,

এবং তাঁহার ক্ষত সকল দ্বারা আমাদের আরোগ্য হইল।

 

এবং ১ পিতর ২ অধ্যায় ২৪ পদে লেখা আছে –

তিনি আমাদের “পাপভার তুলিয়া লইয়া” আপনি নিজে দেহে কাষ্ঠের উপরে বহন করিলেন, যেন আমরা পাপের পক্ষে মরিয়া ধার্ম্মিকতার পক্ষে জীবিত হই; “তাঁহারই ক্ষত দ্বারা তোমরা আরোগ্য প্রাপ্ত হইয়াছ”।

আমাদের মধ্যে প্রায় বেশির ভাগ খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরাই এই পদগুলির সাথে পরিচিত, এই পদগুলি অনেক সময় পীড়িত মানুষদের সুস্থতার জন্য প্রার্থনায় ব্যবহার করা হয়। খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা সাধারণত এরকমটাই ভেবে থাকেন যে, যীশুর ক্ষতসকলের পরিবর্তে আমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে আরোগ্যতার দাবী জানাতে পারি, আর এই পদের ওপর ভিত্তি করে ঈশ্বর আমাদের প্রার্থনায় আরোগ্যতা প্রদান করতে বাধ্য। কিন্তু কোনও পদের অর্থ ভালোভাবে বোঝার জন্য সেই পদের প্রসঙ্গ (Context) আগে ভালোভাবে বুঝতে হবে, কেননা প্রসঙ্গই আমাদের বুঝতে সাহায্য করবে পদটি লেখার পেছনে লেখকের উদ্দেশ্য সম্পর্কে।

আজ আমরা ১ পিতর ২ অধ্যায় ২৪ পদের বিশ্লেষণ করতে চলেছি, আমরা পদটির অর্থ তার প্রসঙ্গ অনুযায়ী আলোচনা করব।

আসুন আমরা দেখে নিই যে, বাস্তবে আমরা আরোগ্যতার জন্য প্রার্থনার সময় এই পদটি ব্যবহার করতে পারি কি না!

খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা দুঃখভোগের জন্য আহুত (১ পিতর ২:১৮-২১ পদ অনুযায়ী):-

আমরা যদি এই পদটির আগের কিছু পদ দেখি, তাহলে সেখানে দেখতে পাবো যে, ১৮ থেকে ২০ পদে পিতর দাসদের ও স্বামীগণের মধ্যে সম্পর্ক কি ধরণের হওয়া উচিত, সে বিষয়ে লিখেছেন। তিনি দাসগণের উদ্দেশ্যে বলছেন যে, তারা যদি সদাচরণ করে দুঃখভোগ সহ্য করে, তাহলে ঈশ্বরের কাছ থেকে তারা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য হবে। ২১ পদের শুরুতে এই কথাটি লেখা আছে –

কারণ তোমরা ইহারই নিমিত্ত আহূত হইয়াছ;  

অর্থাৎ ঈশ্বর আহ্বান করেছেন, যেন দাসেরা ভালো কাজের জন্য দুঃখভোগ করে ঈশ্বরের প্রীতির পাত্র হয়ে উঠতে পারে।

অনেক সময় ঈশ্বরের আহ্বানকে আমরা সফলতা ও সমৃদ্ধির দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করি কিন্তু ওপরের বাক্যটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, খ্রীষ্ট আমাদের দুঃখভোগ করার জন্যও আহ্বান জানিয়েছেন।

আমরা অনেক সময় আশাবাদী হই যে, লোকেরা আমাদের ভালো কাজের জন্য সব সময় আমাদের প্রশংসা করবে, আর সেই আশাতেই আমরা অনেক সময় ভালো কিছু করার জন্য আগ্রহী হয়ে পরি, কিন্তু এখানে পিতর লিখছেন, যেন ক্লেশ ও দুঃখভোগ সত্ত্বেও আমরা ঈশ্বর-সচেতন হয়ে তাঁর উদ্দেশ্যে ভালো কাজ করতে থাকি, আর প্রভু যীশুই এরকম দুঃখভোগের সবচেয়ে বড়ো আদর্শ।

ঈশ্বর চান যেন, আমরা সমস্ত কঠিন পরিস্থিতির জন্যই তৈরী থাকতে পারি, যেন পিছু পা না হই।

প্রভু যীশু দুঃখভোগের আদর্শ (১ পিতর ২:২২-২৩ পদ অনুযায়ী):-

১ পিতর ২ অধ্যায় ২২ থেকে ২৩ পদে লেখা আছে –

22 তিনি পাপ করেন নাই, তাঁহার মুখে কোন ছলও পাওয়া যায় নাই”। 23 তিনি নিন্দিত হইলে প্রতিনিন্দা করিতেন না; দুঃখভোগ কালে তর্জ্জন করিতেন না, কিন্তু যিনি ন্যায় অনুসারে বিচার করেন, তাঁহার উপর ভার রাখিতেন।

প্রভু যীশু না কখনও ভুল কিছু বলেছেন, না কখনও এমন কোনও কাজ করেছেন, যার জন্য তাঁকে ক্রুশে প্রাণ দিতে হয়েছিল। তিনি সব সময় ভালো কাজই করতেন, এবং ধার্মিকতার বিষয়েই মানুষকে বেশী শিক্ষা দিতেন, কিন্তু তবুও তাঁকে ক্লেশ, দুঃখভোগ ও ক্রুশীয় মৃত্যুকে বরণ করে নিতে হয়েছে। প্রভু যীশুর এই সমস্ত ক্লেশ, দুঃখভোগ ও ক্রুশীয় মৃত্যু তাঁর দুর্বলতাকে প্রদর্শন করে না, কারণ তিনি সর্বশক্তিমান, এই জগতসংসারের সৃষ্টিকর্তা; মথি ২৬ অধ্যায় ৫৩ পদ অনুযায়ী তিনি দ্বাদশ বাহিনীর থেকেও বেশী স্বর্গদূত এনে সমস্ত কিছুর বিনাশ করতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা করেননি।

প্রভু যীশু সম্মান ও মহিমা পিতার কাছে দাবী করেননি, বরং আমাদের আদর্শ হবার জন্য মন্দের বদলে মন্দ নয়, কিন্তু অপমান, ক্লেশ, দুঃখভোগ ও মৃত্যু সহ্য করেছেন। যিশাইয় ৫৩ অধ্যায় ৭ পদ, লুক ২২ অধ্যায় ৬৪ থেকে ৬৫ পদ ছাড়াও অন্যান্য অনেক পদেই আমরা দেখতে পাই যে, কীভাবে প্রভু যীশু ক্লেশ, অপমান ও দুঃখভোগ সহ্য করেছেন।

যেহেতু আমরা খ্রীষ্টের অনুসারী, সেহেতু আমরা কখনই এটা আশা করব না যে, আমাদের জীবনে কখনই দুঃখ কষ্ট আসবে না, কারণ, যদি প্রভু যীশু আমাদের জন্য ক্লেশভোগের আদর্শ হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের জীবনেও ক্লেশ, দুঃখ ও কষ্ট আসবে, আর এটাই স্বাভাবিক।

প্রভু যীশু যেমন নিজেকে এবং তাঁর সমস্ত ভার পিতার হাতে সমর্পণ করেছিলেন, ঠিক তেমনই যেন আমরাও আমাদের এবং আমাদের জীবনের সমস্ত কিছুর ভার পিতার কাছে সমর্পণ করি।

প্রভু যীশু আমাদের পাপের জন্য দুঃখভোগ সহ্য করেছেন (১ পিতর ২:২৪ পদ ও অন্যান্য পদ অনুযায়ী):-

১ পিতর ২ অধ্যায় ২৪ পদে লেখা আছে –

তিনি আমাদের “পাপভার তুলিয়া লইয়া” আপনি নিজে দেহে কাষ্ঠের উপরে বহন করিলেন, যেন আমরা পাপের পক্ষে মরিয়া ধার্ম্মিকতার পক্ষে জীবিত হই; “তাঁহারই ক্ষত দ্বারা তোমরা আরোগ্য প্রাপ্ত হইয়াছ”।

এছাড়াও ১ পিতর ৩ অধ্যায় ১৮ পদে লেখা আছে –

কারণ খ্রীষ্টও এক বার পাপসমূহের জন্য দুঃখভোগ করিয়াছিলেন—সেই ধার্ম্মিক ব্যক্তি অধার্ম্মিকদের নিমিত্ত—যেন আমাদিগকে ঈশ্বরের নিকট লইয়া যান। তিনি মাংসে হত, কিন্তু আত্মায় জীবিত হইলেন।

 

প্রভু যীশু একটি বেদনাময় ও অভিশপ্ত মৃত্যু সহ্য করেছেন, আর তিনি এমনটা আমাদের পাপ থেকে পরিত্রাণ দেবার জন্যই করেছেন। তিনি পরিত্রাণের নিমিত্ত পিতা ঈশ্বরের পরিকল্পনাকে সম্পূর্ণ করেছেন। এই জগতসংসারের মানুষ যে দণ্ডের উপযুক্ত ছিল, সেই দণ্ডকে প্রভু যীশু নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। আমরা কখনই ঈশ্বরের ক্রোধ থেকে রক্ষা পাওয়ার এবং ঈশ্বরের দৃষ্টিতে ধার্মিক প্রতিপন্ন হওয়ার যোগ্য ছিলাম না, কিন্তু যীশু ক্রুশে প্রাণ দিয়ে আমাদের সেই যোগ্যতা প্রদান করেছেন।

গীতসংহিতা ৩৮ এর গীত ৪ পদে লেখা আছে –

কেননা আমার অপরাধসমূহ আমার মস্তকের উপরে উঠিয়াছে,

ভারী বোঝার ন্যায় সে সকল আমার শক্তি অপেক্ষা ভারী।

 

আমাদের শক্তি অপেক্ষা ভারী বোঝা তুলে নেওয়ার ক্ষমতা আমাদের কখনই ছিল না, সেই জন্যই প্রভু যীশু আমাদের সকল বোঝা তুলে নিয়েছেন।

আর এই কথাগুলি বোঝানোর জন্যই পিতর লিখেছেন - তাঁহারই ক্ষত দ্বারা তোমরা আরোগ্য প্রাপ্ত হইয়াছ”।

প্রভু যীশু পিতার আজ্ঞা ও বিধি-ব্যবস্থা সম্পূর্ণ করেছেন এবং মৃত্যুকে গ্রহণ করেছেন যেন, তিনি আমাদের পাপের নিমিত্ত নিখুঁত বলিদান হয়ে উঠতে পারেন।

যীশু ক্লেশ, দুঃখভোগ ও মৃত্যু থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য তাঁর দৈবিক শক্তির প্রয়োগ করেননি, বরং তিনি সমস্তই সহ্য করেছেন শুধুমাত্র আমাদের পাপের ক্ষতকে আরোগ্যতায় পরিবর্তিত করার জন্য।

প্রভু যীশুর দুঃখভোগের ফলাফল (১ পিতর ২:২৫ পদ ও অন্যান্য পদ অনুযায়ী):-

আমাদের এটা বুঝতে হবে যে, এই যে আরোগ্যতা আমরা লাভ করেছি, সেটি আমাদের শারীরিক আরোগ্যতা নয়, বরং আমাদের আত্মীক আরোগ্যতা। অনেকেই ১ পিতর ২ অধ্যায় ২৪ পদের অর্থকে ভুলভাবে ব্যবহার করে এই আরোগ্যতাকে শারীরিক আরোগ্যতায় পরিনত করেছে।

আমরা যদি ২৪ পদটিকে তার প্রসঙ্গ অনুযায়ী বিশ্লেষণ করি, তাহলে আমরা বুঝতে পারব যে, এই পদটি আগের পদগুলির সাথে সাথে ২৫ পদের সাথেও সম্পর্কযুক্ত।

১ পিতর ২ অধ্যায় ২৫ পদে লেখা আছে –

কেননা তোমরা “মেষের ন্যায় ভ্রান্ত হইয়াছিলে,” কিন্তু এখন তোমাদের প্রাণের পালক ও অধ্যক্ষের কাছে ফিরিয়া আসিয়াছ।

এই ২৫ পদই স্পষ্ট করে যে, ২৪ পদে কি ধরণের আরোগ্যতার কথা বলা হয়েছে। এখানে শারীরিক পীড়া থেকে মুক্ত হবার কথা বলা হয়নি, বরং আত্মীক ভাবে হারিয়ে যাওয়া লোকেদের পালক ও অধ্যক্ষ অর্থাৎ খ্রীষ্টের সাথে মিলন হবার কথাই বলা হয়েছে।

পাপের কারণে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের সাথে মানুষের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল, মানুষ পাপের দাস হয়ে তাদের জীবন অতিবাহিত করে চলেছিল এবং মেষের ন্যায় ভ্রান্ত হয়েছিল।

মানুষ সেই সম্পর্ককে জোড়া লাগাতে সমর্থ ছিল না, সেই জন্যই ঈশ্বরের পরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রভু যীশু আমাদের পাপের জন্য মূল্য হিসেবে নিজের প্রাণ উৎসর্গ করলেন, এবং ঈশ্বরের সাথে সেই সম্পর্ক পুনরায় স্থাপন করলেন।

আর এই সম্পর্ক স্থাপন কি আমাদের সুস্থ হয়ে ওঠা নয় ? পাপ থেকে মুক্ত হওয়া কি আমাদের আরোগ্যতা নয় ?

যে সুস্থতা বা আরোগ্যতা আমাদের কেউই প্রদান করতে পারত না, যীশু তাঁর দুঃখভোগের দ্বারা আমাদের তা প্রদান করেছেন।

         আমাদের এখন থেকে মনে রাখতে হবে যে, শারীরিক অসুস্থতা থেকে আরোগ্য পাওয়ার জন্য ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাসই যথেষ্ট। ১ পিতর ২ অধ্যায় ২৪ পদ কখনই আমাদের শারীরিক সুস্থতার কোনও আশ্বাসন দেয় না।

আমরা আগেই জেনেছি যে, খ্রীষ্টীয় জীবনে ক্লেশ ও দুঃখভোগ অতি সাধারণ বিষয়। যেহেতু আমাদের আদর্শ হিসেবে প্রভু যীশু দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছেন, আর আমরা তাকে অনুসরণ করে চলছি, সেহেতু আমাদেরও দুঃখ-কষ্ট ভোগ করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

         আসুন আমরা ঈশ্বরের ধন্যবাদের সহিত সেই দিনের জন্য আশাবাদী হই, যেদিনের বর্ণনা প্রকাশিত বাক্য ২১ অধ্যায় ৪ পদে রয়েছে, সেখানে লেখা আছে –

আর তিনি তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল।

প্রভু যীশুর বলিদানের জন্যই আমরা সেদিনের জন্য অপেক্ষার যোগ্য হয়েছি, তিনি আমাদের আত্মীক আরোগ্যতা প্রদান করেছেন, তাই প্রভু যীশুকে আমাদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।


Tags:- 

Christian Articles, বাংলা খ্রীষ্টীয় নিবন্ধ, bsbbca, bibleshikshabhaskar, BSB Ministry, Bengali Christian Blog, Bangla Gospel, Bengali Gospel, Preaching in Bengali Language, Bible Based Articles, বাংলা প্রচার, বাংলা যীশুর প্রচার, Bangla Christiyo Christio Khristiyo Khristio Prochar, BSB Gospel, Gospel Articles, Bangla Nibondho, Gospel Online, Online Gospel, বাইবেল প্রচার, বাইবেলের বাক্য, Blogger, Jesus Christ, যীশু খ্রীষ্ট,


0 Comments