ঈশ্বর মোশিকে যে দশটি আজ্ঞা দিয়েছিলেন, সেই দশটি আজ্ঞার মধ্যে একটি আজ্ঞা রয়েছে, যা আমরা যাত্রাপুস্তক ২০ অধ্যায় ৭ পদে পাই, সেখানে লেখা আছে –

তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর নাম অনর্থক লইও না, কেননা যে কেহ তাঁহার নাম অনর্থক লয়, সদাপ্রভু তাহাকে নির্দ্দোষ করিবেন না।

এই পৃথিবীতে অনেকেই আছেন, যারা ঈশ্বরের নাম যখন তখন উচ্চারণ করে থাকেন, কথায় কথায় তারা ঈশ্বরকে টেনে আনেন, কিন্তু অনর্থক ঈশ্বরের নাম নিতে পবিত্র বাইবেল আমাদের স্পষ্টই বারণ করে।

ঈশ্বর হলেন পবিত্র, সেই কারণে তাঁর নামও পবিত্র। ঈশ্বরের নাম তাঁর মহিমাকে, তাঁর শক্তিকে, তাঁর চরিত্রকে এবং তাঁর ঈশ্বরত্বকে প্রকাশিত করে। আর এই কারণেই ইহুদীরা খুব প্রয়োজন না হলে যিহোবা ঈশ্বরের নাম উচ্চারণ করত না। ইহুদীরা যখন শাস্ত্র পাঠ করত, তখন কোনও স্থানে যদি যিহোবা ঈশ্বরের নাম লেখা থাকত, তখন তারা সেই নামের পরিবর্তে অন্য কোনও পবিত্র নাম উচ্চারণ করত।

সাধারণভাবে বছরে কেবলমাত্র একবার সেই সময়ের মহাযাজকই পাপবলির সময় ঈশ্বরের নাম উচ্চারণ করতেন।

বাইবেলে ঈশ্বরের অনেক উপাধি রয়েছে, যেমন – 

১. “Elohim” অর্থাৎ “ঈশ্বর”, 

২. “El Shaddai” অর্থাৎ “সর্বশক্তিমান ঈশ্বর”, 

৩. “Elyon” অর্থাৎ “সর্বোচ্চ ঈশ্বর”, 

৪. “YHWH-Raah” অর্থাৎ “সদাপ্রভু আমার পালক”, 

৫. “YHWH-Rapha” অর্থাৎ “আরোগ্যদানকারী ঈশ্বর”, 

৬. “YHWH-Jireh” অর্থাৎ “ঈশ্বর জুগিয়ে দেবেন”, 

৭. “YHWH-Shalom” অর্থাৎ “ঈশ্বর হলেন শান্তি”, ইত্যাদি।

এছাড়াও বাইবেলে ঈশ্বরের আরও অনেক নাম ও উপাধি রয়েছে, আর এই নাম ও উপাধিগুলির মধ্যে তাঁর গুনাগুন, বৈশিষ্ট্য, চরিত্র ও মহিমা প্রকাশ পায়।

গীতসংহিতা ৮ এর গীত ১ পদে লেখা আছে –

হে সদাপ্রভু, আমাদের প্রভু,

সমস্ত পৃথিবীতে তোমার নাম কেমন মহিমান্বিত।

তুমি আকাশমণ্ডলের ঊর্দ্ধেও তোমার প্রভা সংস্থাপন করিয়াছ।

 

প্রভু যীশু মথি ৬ অধ্যায় ৯ পদে শিখিয়েছেন –

অতএব তোমরা এই মত প্রার্থনা করিও;

হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ

তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক,

 

অর্থাৎ প্রার্থনা শুরুর পূর্বে ঈশ্বরের নামকে পবিত্র বলে মেনে নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে, যদি আমরা ঈশ্বরের নামকে পবিত্র বলে না স্বীকার করি, তাহলে আমাদের প্রার্থনা মূল্যহীন।

          পুরাতন নিয়মে যদি কোনও ব্যক্তি ঈশ্বরের নামে কোনও প্রতিজ্ঞা করতেন, আর যদি সেই প্রতিজ্ঞাকে পূরণ করতে না পারতেন, বা প্রতিজ্ঞা ভেঙ্গে ফেলতেন, তাহলে এটা প্রমাণিত হত যে, সেই ব্যক্তি ঈশ্বরের অস্তিত্বকে স্বীকার করে না, সেই ব্যক্তির হৃদয়ে ঈশ্বরের প্রতি কোনও ভয়, শ্রদ্ধা ও ভক্তির অস্তিত্ব নেই, আর সেই কারণেই ঈশ্বর সেই ব্যক্তিকে দোষী করতেন।

          নতুন নিয়মে প্রভু যীশু আমাদের বুঝিয়েছেন যে, একজন খ্রীষ্ট বিশ্বাসীর চরিত্র এমন হওয়া উচিত, যেন লোকেরা তার ওপর সম্পূর্ণভাবে ভরসা ও বিশ্বাস করতে পারে, যেন কখনই তাকে ঈশ্বরের নামে কোনও প্রতিজ্ঞা করার ও শপথ নেওয়ার প্রয়োজন না পরে।

মথি ৩৩ অধ্যায় ৩৭ পদে যীশু বলেছেন –

কিন্তু তোমাদের কথা হাঁ, হাঁ, না, না, হউক; ইহার অতিরিক্ত যাহা, তাহা মন্দ হইতে জন্মে।

বাইবেল শিক্ষা দেয় যে, ঈশ্বরের নাম নেওয়া পাপ নয়, কিন্তু অনর্থক বা অকারণে ঈশ্বরের নাম নেওয়া হল পাপ। আপনি আপনার প্রার্থনায়, আপনার দুঃখ-কষ্টের সময়ে ঈশ্বরের নাম ও প্রভু যীশু খ্রীষ্টের নাম অবশ্যই নিতে পারেন।

যোহন ১৪ অধ্যায় ১৪ পদে প্রভু যীশু বলেছেন –

যদি আমার নামে আমার কাছে কিছু যাচ্ঞা কর, তবে আমি তাহা করিব।

প্রার্থনা করার অর্থ হল ঈশ্বরের সাথে কথা বলা, সেই জন্য অবশ্যই আপনি সেই সময় তাঁর নাম নিয়ে তাঁর কাছে আপনার সুখ-দুঃখের কথা ভাগ করে নিতে পারেন, কিন্তু আপনি কোনও কারণ ছাড়াই নির্বোধের মতো ঈশ্বরের নাম উচ্চারণ করতে পারেন না, কারণ আপনি যে উদ্দেশ্যে ঈশ্বরের নাম উচ্চারণ করছেন, সেই উদ্দেশ্যের ওপর আপনার জীবনে ঈশ্বরের গুরুত্ব ও তাঁর সম্মান নির্ভর করে। আর একজন খ্রীষ্ট বিশ্বাসী হয়ে যদি আপনি অনর্থক ঈশ্বরের নাম নেওয়া থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারেন, তাহলে ঈশ্বর আপনাকে দোষী করবেন।

            আজকাল এমন অনেক আধুনিক খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরাই রয়েছেন, যারা এই জগতের লোকেদের মতো ঈশ্বরের নামকে রাগের বশে ও উত্তেজনার বশে বা অন্য কোনও কারণে অশ্রদ্ধা ও অপমানের সাথে উচ্চারণ করে থাকেন, তাদের মুখে উচ্চারিত কিছু উল্লেখযোগ্য শব্দগুলি হল – God Damn It, God-Forsaken, ইত্যাদি। তো যারা এই সমস্ত কথাগুলি ব্যবহার করে থাকেন, তাদের অবশ্যই ঈশ্বরের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হবার প্রয়োজন রয়েছে।

          এমন অনেক খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা আছেন, যারা তাদের স্বার্থের জন্য অথবা কোনও কার্যসাধনের জন্য অন্য কোনও ব্যক্তির সামনে ঈশ্বরের নাম নিয়ে ফেলেন, যা ঈশ্বরের দৃষ্টিতে পাপ, কেননা সেখানে কোনও সততা নেই।

         অনেকেই আছেন, যারা প্রভু যীশুর নাম নিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে থাকেন, অথবা সত্য সাক্ষ্যের সাথে মিথ্যা সাক্ষ্য যোগ করে একটু বাড়িয়ে বলে থাকেন, তো এই সমস্ত কিছু ঈশ্বরের দৃষ্টিতে পাপ, কারণ সেই ব্যক্তি মিথ্যের সাথে ঈশ্বরের নাম যুক্ত করেছেন, এবং সেখানে সেই ব্যক্তি ঈশ্বরের নামের অগৌরব করে ফেলেছেন, যা অনর্থকভাবে ঈশ্বরের নাম নেওয়ার সমান।

        প্রার্থনা করার সময় অনেকে আছেন, যারা নিরন্তর যীশুর নাম ও ঈশ্বরের নাম উচ্চারণ করতে থাকেন, তো সেটিও অনর্থকভাবে ঈশ্বরের নাম উচ্চারণ করার উদাহরণ।

মথি ৬ অধ্যায় ৭ পদে যীশু বলেছেন –

আর প্রার্থনাকালে তোমরা অনর্থক পুনরুক্তি করিও না, যেমন জাতিগণ করিয়া থাকে; কেননা তাহারা মনে করে, বাক্যবাহুল্যে তাহাদের প্রার্থনার উত্তর পাইবে।

অনেকে জিজ্ঞাসা করেন যে, আমরা কি Oh My God!, Oh God!, Oh Lord!, Oh Jesus! বা হে আমার ঈশ্বর!, হে ঈশ্বর, হে প্রভু, হে যীশু, ইত্যাদি শব্দের ব্যবহার করতে পারি ? আর যদি আমরা এই সমস্ত শব্দগুলি উচ্চারণ করেই ফেলি, তাহলে কি তা অনর্থক ভাবেই উচ্চারণ করা বোঝায় ?

তো এর উত্তর হল – বিষয়টি নির্ভর করে, আপনি কোন প্রসঙ্গে বা কোন পরিস্থিতিতে এই সমস্ত শব্দগুলি উচ্চারণ করছেন, তার ওপর।

যদি আপনি কোনও বিপদের মধ্যে পরে ঈশ্বরকে ডাকেন, বা যদি আপনি এমন কোনও ঘটনার সম্মুখীন হন, যার দরুন আপনার মন দুঃখে ভরে গিয়ে থাকে, আর সেই কারণে যদি আপনি ঈশ্বরের নাম উচ্চারণ করেন, তাহলে ঈশ্বর আপনাকে দোষী করবেন না, কারণ ঈশ্বর আপনার হৃদয়ের সমস্ত কিছুই জ্ঞাত আছেন।

ধরে নিন, আপনি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন আর হঠাতই একটি দুর্ঘটনা আপনার চোখের সামনে ঘটে গেল, আর আপনার মুখ থেকে তৎক্ষণাৎ “হে ঈশ্বর” বা “Oh My God” শব্দটি বের হয়ে এল। তো এর জন্য ঈশ্বর আপনাকে দোষী করবেন না, কারণ তিনি আপনার মনের অবস্থা বোঝেন, আর তিনি এটাও জানেন যে আপনার হৃদয় তখন দুঃখে ভরে উঠেছে।

         কিন্তু, ধরে নিন একদিন আপনার একজন বন্ধু হঠাৎ করে একটি সুন্দর পোশাক পরে আপনার সামনে এসে উপস্থিত হল, আর আপনি তার পোশাক দেখে বলে উঠলেন – “Oh My God” আজ তোকে দারুন সুন্দর লাগছে!

তো আপনি সেই সময় ঈশ্বরের নাম অনর্থক উচ্চারণ করে ফেললেন, কারণ ঈশ্বরের নাম উচ্চারণ করায় সেখানে তাঁর কোনও মহিমা প্রকাশ হল না, অসম্মান ও অশ্রদ্ধার সাথেই আপনি তাঁর নাম উচ্চারণ করে ফেললেন।

          একজন খ্রীষ্ট বিশ্বাসী হবার দরুন, আমাদের প্রত্যেককেই এই সমস্ত বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করার প্রয়োজন রয়েছে।

আমরা মনে রাখব যে, যখন আমরা ঈশ্বরের নাম উচ্চারণ করব, তখন যেন সম্মান ও শ্রদ্ধার সাথেই তা করি, যেন আমাদের দ্বারা ঈশ্বরের অগৌরব না হয়।

ফিলিপীয় ২ অধ্যায় ৯ থেকে ১১ পদে লেখা আছে –

9 এই কারণ ঈশ্বর তাঁহাকে অতিশয় উচ্চপদান্বিতও করিলেন,

এবং তাঁহাকে সেই নাম দান করিলেন, যাহা সমুদয় নাম অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ;

10 যেন যীশুর নামে স্বর্গ মর্ত্ত্য পাতাল-নিবাসীদের “সমুদয় জানু পাতিত হয়,

এবং সমুদয় জিহ্বা যেন স্বীকার করে”

11 যে, যীশু খ্রীষ্টই প্রভু,

এইরূপে পিতা ঈশ্বর যেন মহিমান্বিত হন।

 

            যদি আমরা ভুলবশত অনর্থক ঈশ্বরের নাম ও প্রভু যীশুর নাম নিয়ে ফেলি, তাহলে তৎক্ষণাৎ যেন আমরা অনুতাপ করি ও ঈশ্বরের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হই।

লেবীয় পুস্তক ২২ অধ্যায় ৩২ পদে লেখা আছে –

আর তোমরা আমার পবিত্র নাম অপবিত্র করিও না; কিন্তু আমি ইস্রায়েল-সন্তানগণের মধ্যে পবিত্ররূপে মান্য হইব; আমি সদাপ্রভু তোমাদের পবিত্রকারী

ইস্রায়েলের সদাপ্রভুই আমাদের প্রভু যীশু, যিনি মানুষ হয়ে এই পৃথিবীতে এসেছিলেন এবং আমাদের পাপের জন্য ক্রুশে প্রাণ দিয়েছিলেন।

তো যখনই আমরা ঈশ্বরের নাম বা যীশুর নাম উচ্চারণ করব, তখন অবশ্যই তাঁর পবিত্রতাকে স্মরণে রাখতে হবে। কোনও প্রকারেই ঈশ্বরের নাম বা প্রভু যীশুর নামের অগৌরব করা উচিত হবে না। ঈশ্বরের চরিত্র ও গুণাবলী স্মরণে রেখে আমাদের ভাবা উচিত যে, কোন পরিস্থিতে ঈশ্বরের নাম নেওয়াটা উচিত হবে আর কোন পরিস্থিতিতে উচিত হবে না।

          আর সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অবশ্যই পবিত্র আত্মা আমাদের সাহায্য করবেন, যদি আমরা ঈশ্বরের বাক্যকে ভালোভাবে অধ্যায়ন করি, কারণ ঈশ্বরের বাক্যের দ্বারাই পবিত্র আত্মা আমাদের সঠিক দিশায় চালিত করেন।

          অতএব বাক্যে বৃদ্ধিলাভ করুন এবং ঈশ্বরকে আরও গভীরভাবে জানতে আগ্রহী হয়ে উঠুন।


Tags:- 

Christian Articles, বাংলা খ্রীষ্টীয় নিবন্ধ, bsbbca, bibleshikshabhaskar, BSB Ministry, Bengali Christian Blog, Bangla Gospel, Bengali Gospel, Preaching in Bengali Language, Bible Based Articles, বাংলা প্রচার, বাংলা যীশুর প্রচার, Bangla Christiyo Christio Khristiyo Khristio Prochar, BSB Gospel, Gospel Articles, Bangla Nibondho, Gospel Online, Online Gospel, বাইবেল প্রচার, বাইবেলের বাক্য, Blogger, Jesus Christ, যীশু খ্রীষ্ট,


0 Comments