ভয় করবেন না | BSB Bengali Christian Articles
পবিত্র বাইবেলে ঈশ্বর
প্রায় ৩৬৫ বার বলেছেন “ভয় কোরো না”, বাইবেলের অন্যান্য সংস্করণগুলিতে সংখ্যাটি কম-বেশী
হতে পারে। কিন্তু পবিত্র বাইবেলে ঈশ্বর যদি শুধুমাত্র একবার বলতেন “ভয় কোরো না”, তাহলে
সেটাই আমাদের জন্য যথেষ্ট হত। যেহেতু ঈশ্বর বাইবেলে কেবল একবার নয়, কিন্তু বহুবার আমাদের
বলেছেন ভয় না করতে, সেহেতু আমরা যদি ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস করি, তবে আমাদের ভয় পাওয়ার
কোনও কারণ নেই।
সারা পৃথিবীর মানুষ আজ একটি আতঙ্কের মধ্য দিয়ে
তাদের দিন অতিবাহিত করছে, কিন্তু যেহেতু আমরা খ্রীষ্ট বিশ্বাসী, সেহেতু আমাদের এই জগতের
মানুষদের মতো আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।
বিশ্বাস আসলে কেমন হওয়া
উচিত, আসুন আমরা একটি গল্পের মাধ্যমে তা বোঝার চেষ্টা করি।
“একদিন একজন বৃদ্ধ ভদ্রমহিলা বিমানে যাত্রা করছিলেন,
কিন্তু আবহাওয়া প্রচণ্ড খারাপ হওয়ার কারণে ওই ভদ্রমহিলাটি ছাড়া সেই বিমানের প্রত্যেক
যাত্রীই অত্যন্ত চিন্তিত ও ভিত হয়ে পরেছিল, তারা তাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছোতে পারবে
কি না, সেটা তাদের জানা ছিল না, কারণ হাওয়ার দাপটে বিমান দুর্ঘটনার কবলে পরতে চলেছিল।
বিমানের সকল যাত্রীদের
মধ্যে একজন ব্যক্তি ওই ভদ্রমহিলাটিকে বললেন – আপনি কেন চিন্তিত নন ? আপনার মধ্যে কেন
কোনও ভয়ের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ? আমরা আমাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছোতে পারব
কি না, তা জানি না, কিন্তু আপনি সে বিষয়ে তো একটুও চিন্তিত নন!
এর উত্তরে ভদ্রমহিলাটি
সেই ব্যক্তিটিকে বললেন – দেখ বাবা, আমি আমার ছেলের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি, আমার দুটি
ছেলে, তাদের মধ্যে দুজনই খ্রীষ্ট বিশ্বাসী। একজন জীবিত আছে, আর অন্যজন বিগত ১ মাস আগে
মৃত্যুবরণ করেছে। আর আমার চিন্তা না করার কারণ হল – আমি জানি যে, আমি আজ জীবিত থাকলেও
আমার ছেলের সাথে দেখা করতে পারব, আর আজ আমার মৃত্যু হলেও আমার ছেলের সাথে দেখা করতে
পারব, কারণ আমি বিশ্বাস করি আমার মৃত ছেলেটি ঈশ্বরের সান্নিধ্যে রয়েছে, আর সেই জন্য
আমি তাকে দেখতে পাবো, কারণ আমিও একজন খ্রীষ্ট বিশ্বাসী। আমার দুই ছেলের মধ্যে যে কোনও
একজনের সাথে আজ আমার দেখা হবেই, সেই জন্য আমি ভীত নই, বরং আনন্দিত।”
বন্ধুরা, এটাই হল প্রকৃত বিশ্বাস, ওই ভদ্রমহিলাটির
মধ্যে কোনও ভয় ছিল না, ছিল কেবল ঈশ্বরের প্রতি অগাধ বিশ্বাস, আর সেই বিশ্বাস ছিল অত্যন্ত
মজবুত।
খ্রীষ্ট বিশ্বাসী হওয়ার
দরুন আমাদের মধ্যেও যেন কোনও ভয় রাজত্ব না করে, আমরা যেন বিশ্বাসে পরিপক্ক হয়ে উঠতে
পারি।
ভয় আমাদেরকে ভ্রান্ত পথে
গমন করায় এবং আমাদের লক্ষ্যভ্রষ্ট করে, আর ভয় আমাদের তখনই গ্রাস করে, যখন আমাদের মধ্যে
বিশ্বাসের পরিপূর্ণতার অভাব দেখা দেয়।
মথি ৮ অধ্যায় ২৩
থেকে ২৬ পদে আমরা দেখতে পাই,
সেখানে প্রভু যীশুর শিষ্যদের মধ্যে ভয় দেখা দিয়েছিল, কারণ তাদের মধ্যে বিশ্বাসের পরিপূর্ণতার
অভাব ছিল। সেখানে লেখা আছে –
23 আর তিনি নৌকায় উঠিলে তাঁহার শিষ্যগণ
তাঁহার পশ্চাৎ গেলেন। 24 আর দেখ, সমুদ্রে ভারী ঝড় আসিল, এমন কি, নৌকা তরঙ্গে আচ্ছন্ন হইতেছিল; কিন্তু তিনি নিদ্রাগত ছিলেন। 25 তখন তাঁহারা তাঁহার নিকটে গিয়া তাঁহাকে
জাগাইয়া কহিলেন, হে প্রভু, রক্ষা করুন, আমরা মারা পড়িলাম।
26 তিনি তাঁহাদিগকে কহিলেন, হে অল্পবিশ্বাসীরা, কেন ভীরু হও? তখন তিনি উঠিয়া বায়ু ও সমুদ্রকে ধমক
দিলেন; তাহাতে
মহাশান্তি হইল।
সেই ভারী ঝড় তখন হঠাৎ
করেই এসেছিল, প্রভু যীশুর শিষ্যরা সেরকম পরিস্থিতির জন্য একেবারেই তৈরী ছিল না, তাদের
মধ্যে বিশ্বাসের অভাব দেখা দিয়েছিল, যার জন্য তারা ভীত হয়ে পরেছিল।
আজ অনেক খ্রীষ্ট বিশ্বাসীই
এই করোনা মহামারীর ভয়ানক পরিস্থিতির কারণে ভীত ও চিন্তিত হয়ে রয়েছেন, কারণ তাদের মধ্যে
বিশ্বাসের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে।
ওপরের ২৬ পদটিতে যদি আমরা
ভালোভাবে মনোযোগ দিই, তাহলে আমরা বুঝতে পারব যে, সমুদ্রের ঢেউয়ের কারণে শিষ্যদের মধ্যে
ভয় উৎপন্ন হয়নি, বরং প্রভুর প্রতি স্বল্প বিশ্বাসের কারণেই তারা মহা ভয়ে ভীত হয়ে পরেছিল।
আপনার জীবনে যদি বিশ্বাস
ছোট হয় এবং ঢেউ বড়ো হয়, তখন আপনি ভীত হবেন, কিন্তু যদি আপনার জীবনে বিশ্বাস বড়ো হয়,
তবে ঢেউ যত বড়োই হোক না কেন, আপনি ভীত হবেন না, আপনি নিশ্চিন্ত থাকবেন, কারণ আপনি জানেন
যে, প্রভু ঈশ্বর আপনার সহবর্তী।
জগতের লোকেদের কাছে তেমন
কোনও আশা না থাকলেও আমাদের কাছে আশা রয়েছে, আর সেই কারণেই আমাদের ভীত হওয়ার কোনও প্রয়োজন
নেই।
ভয় ঈশ্বরের প্রতি আমাদের
বিশ্বাসের পরিমাণ উদ্ঘাটন করে, এবং আমাদের লক্ষ্য ঠিক কোন জায়গায় (ঢেউয়ের প্রতি, নাকি
ঈশ্বরের প্রতি), সেই বিষয়টিও প্রকাশ করে।
২ তীমথিয় ১ অধ্যায় ৭ পদে লেখা আছে –
কেননা
ঈশ্বর আমাদিগকে ভীরুতার আত্মা দেন নাই, কিন্তু শক্তির, প্রেমের ও সুবুদ্ধির আত্মা দিয়াছেন।
যখন আমাদের মধ্যে ভীরুতা
উদয় হয়, তখন আমাদের মধ্য থেকে শক্তি, প্রেম ও সুবুদ্ধি হ্রাস পায়। সমস্তরকম কঠিন পরিস্থিতিতেই
আমাদের এই তিনটি গুন প্রয়োজন, কিন্তু ভয় আমাদের মধ্য থেকে এই গুনগুলি বের করে দেয় এবং
এর বিপরীত গুনগুলি আমাদের মধ্যে প্রবেশ করায়।
আজ আমাদের মধ্যে যারা
মহা ভয়ে ভীত রয়েছি, তাদেরকে প্রভু যীশু বলছেন –
হে অল্পবিশ্বাসীরা, কেন ভীরু হও?
প্রভু চান যেন, আমরা বিশ্বাসে
পরিপক্ক হই, আর বিশ্বাস খ্রীষ্টের বাক্য শ্রবনের দ্বারাই দৃঢ় হয়।
রোমীয় ১০ অধ্যায়
১৭ পদে লেখা আছে –
অতএব বিশ্বাস শ্রবণ হইতে এবং শ্রবণ খ্রীষ্টের বাক্য দ্বারা হয়।
আমাদের জীবনে আজ যত বড়োই
ঝড়-তুফান আসুক না কেন, আমরা ভয় পাবো না, যদি আমাদের বিশ্বাস প্রভুতে স্থির থাকে। তাই
আপনি যদি আজ ভীত হয়ে থাকেন, চিন্তিত হয়ে থাকেন, তাহলে ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করুন, তিনিই
আপনাকে সাহস যোগাবেন। ঈশ্বর আমাদের যুগিয়ে দেন, তাই তো তাঁর নাম - יְהוָה יִרְאֶה (YHWH yirʾe) (সদাপ্রভু যোগাইবেন)।
অতএব
আমার প্রিয় বন্ধুরা, বিশ্বাসে পরিপক্ক হতে চেষ্টা করুন, তাহলে প্রভু যীশুর মতো আপনারাও
আপনাদের জীবনের অনেক বড়ো বড়ো ঝড়-তুফানগুলিকে থামিয়ে দিতে সক্ষম হবেন।
আমাদের
ভীত নয় বরং অত্যন্ত আনন্দিত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে, কারণ আমরা জীবিত ঈশ্বরের আরাধনা করি,
আর তিনি ইম্মানুয়েল, তিনি সর্বদা আমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছেন।
হাল্লেলুইয়া!
Tags:-
Christian Articles, বাংলা খ্রীষ্টীয় নিবন্ধ, bsbbca, bibleshikshabhaskar, BSB Ministry, Bengali Christian Blog, Bangla Gospel, Bengali Gospel, Preaching in Bengali Language, Bible Based Articles, বাংলা প্রচার, বাংলা যীশুর প্রচার, Bangla Christiyo Christio Khristiyo Khristio Prochar, BSB Gospel, Gospel Articles, Bangla Nibondho, Gospel Online, Online Gospel, বাইবেল প্রচার, বাইবেলের বাক্য, Blogger, Jesus Christ, যীশু খ্রীষ্ট,
0 Comments