পরিত্রাণ লাভের জন্য কি জলে বাপ্তিস্ম নেওয়া আবশ্যক ? | BSB Bengali Christian Articles
এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
প্রশ্ন, আর এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানা প্রয়োজন।
আসুন আমরা বাইবেল থেকে
প্রশ্নটির উত্তর জানার চেষ্টা করি।
রোমীয় ৩ অধ্যায় ২২
থেকে ৩০ পদ –
22 ঈশ্বর-দেয় সেই ধার্ম্মিকতা যীশু খ্রীষ্টে বিশ্বাস দ্বারা যাহারা বিশ্বাস
করে, তাহাদের
সকলের প্রতি বর্ত্তে—কারণ প্রভেদ নাই; 23 কেননা সকলেই পাপ করিয়াছে এবং ঈশ্বরের
গৌরববিহীন হইয়াছে— 24 উহারা
বিনামূল্যে তাঁহারই অনুগ্রহে, খ্রীষ্ট যীশুতে প্রাপ্য মুক্তি দ্বারা, ধার্ম্মিক গণিত হয়। 25 তাঁহাকেই ঈশ্বর তাঁহার রক্তে বিশ্বাস
দ্বারা প্রায়শ্চিত্ত বলিরূপে প্রদর্শন করিয়াছেন; যেন তিনি আপন ধার্ম্মিকতা দেখান—কেননা
ঈশ্বরের সহিষ্ণুতায় পূর্ব্বকালে কৃত পাপ সকলের প্রতি উপেক্ষা করা হইয়াছিল— 26 যেন এক্ষণে যথাকালে আপন ধার্ম্মিকতা
দেখান, যেন তিনি
নিজে ধার্ম্মিক থাকেন, এবং যে
কেহ যীশুতে বিশ্বাস করে, তাহাকেও
ধার্ম্মিক গণনা করেন।
27 অতএব শ্লাঘা কোথায় রহিল? তাহা দূরীকৃত হইল। কিরূপ ব্যবস্থা দ্বারা? কার্য্যের ব্যবস্থা দ্বারা? না; কিন্তু বিশ্বাসের ব্যবস্থা দ্বারা। 28 কেননা আমাদের মীমাংসা এই যে, ব্যবস্থার কার্য্য ব্যতিরেকে বিশ্বাস
দ্বারাই মনুষ্য ধার্ম্মিক গণিত হয়। 29 ঈশ্বর কি কেবল যিহূদীদের ঈশ্বর, পরজাতীয়দেরও কি নহেন? 30 হাঁ, পরজাতীয়দেরও ঈশ্বর, কেননা বাস্তবিক ঈশ্বর এক, আর তিনি ছিন্নত্বক্ লোকদিগকে
বিশ্বাসহেতু, এবং
অচ্ছিন্নত্বক্ লোকদিগকে বিশ্বাস দ্বারা ধার্ম্মিক গণনা করিবেন।
ওপরের পদগুলি থেকে এটি
স্পষ্ট যে, কেবল প্রভু যীশুতে বিশ্বাস দ্বারা একজন ব্যক্তি ধার্মিক গণিত হয়, বাপ্তিস্ম
দ্বারা নয়।
ইফিষীয় ২ অধ্যায়
৮ পদ –
কেননা
অনুগ্রহেই, বিশ্বাস দ্বারা তোমরা পরিত্রাণ পাইয়াছ; এবং ইহা তোমাদের হইতে হয় নাই, ঈশ্বরেরই
দান;
প্রভু যীশুতে বিশ্বাসের
দ্বারা আমরা পরিত্রাণ লাভ করেছি, এখানে পরিত্রাণের সাথে বাপ্তিস্মের কোনও সম্পর্ক নেই।
গালাতীয় ২ অধ্যায়
১৬ পদ -
তথাপি
বুঝিয়াছি, ব্যবস্থার কার্য্য হেতু নয়, কেবল
যীশু খ্রীষ্টে বিশ্বাস দ্বারা মনুষ্য ধার্ম্মিক গণিত হয়, সেই জন্য আমরাও খ্রীষ্ট যীশুতে বিশ্বাসী হইয়াছি, যেন ব্যবস্থার কার্য্য হেতু নয়, কিন্তু
খ্রীষ্টে বিশ্বাস হেতু ধার্ম্মিক গণিত হই; কারণ ব্যবস্থার কার্য্য হেতু
কোন মর্ত্ত্য ধার্ম্মিক গণিত হইবে না।
ওপরের পদগুলি ছাড়া এমন আরও অনেক পদই রয়েছে, যেখানে
প্রভু যীশুতে বিশ্বাসের দ্বারা ধার্মিকতা এবং পরিত্রাণ লাভের বিষয়ে বলা হয়েছে, কোথাও
এমনটা লেখা নেই যে, জলে বাপ্তিস্ম নেওয়ার ফলে কেউ ধার্মিক প্রতিপন্ন হয় বা কেউ পরিত্রাণ
প্রাপ্ত হয়।
প্রেরিত পৌল যখন সুসমাচার
প্রচার করতেন, তখন তিনি বাপ্তিস্মকে তার সুসমাচারের একটি অংশ হিসেবে প্রচার করতেন না।
১ করিন্থীয় ১ অধ্যায়
১৭ পদে প্রেরিত পৌল লিখেছেন
–
কারণ
খ্রীষ্ট আমাকে বাপ্তাইজ করিবার নিমিত্ত প্রেরণ করেন নাই, কিন্তু সুসমাচার প্রচার করিবার নিমিত্ত; তাহাও বিজ্ঞানের বাক্যে নয়, যেন খ্রীষ্টের ক্রুশ বিফল না হয়।
ওপরের পদ অনুযায়ী প্রেরিত
পৌল বোঝাতে চেয়েছেন যে, বাপ্তিস্ম সুসমাচারের অংশ নয়, বরং সুসমাচার হল খ্রীষ্টের ক্রুশ।
যদি বাপ্তিস্ম সুসমাচারের
অংশ হত, তাহলে তো প্রেরিত পৌলের সেবাকার্য বৃথা, কারণ তিনি বাপ্তিস্মকে সুসমাচারের
সঙ্গে সংযুক্ত করেননি।
লুক ৭ অধ্যায় ৩৭
থেকে ৫০ পদে আমরা একজন অনুতাপিনী
স্ত্রীলোকের বিষয়ে দেখতে পাই, যিনি কেবল অনুতাপ ও বিশ্বাসের দ্বারা পরিত্রাণ লাভ করেছিলেন।
লেখা আছে –
37 আর দেখ, সেই নগরে
এক পাপিষ্ঠা স্ত্রীলোক ছিল; সে যখন জানিতে পাইল, তিনি সেই
ফরীশীর বাটীতে ভোজনে বসিয়াছেন, তখন একটী শ্বেত প্রস্তরের পাত্রে সুগন্ধি তৈল লইয়া আসিল, 38 এবং পশ্চাৎ দিকে তাঁহার চরণের নিকটে
দাঁড়াইয়া রোদন করিতে করিতে চক্ষের জলে তাঁহার চরণ ভিজাইতে লাগিল, এবং আপনার মাথার চুল দিয়া তাহা মুছাইয়া
দিল, আর তাঁহার
চরণ চুম্বন করিতে করিতে সেই সুগন্ধি তৈল মাখাইতে লাগিল। 39 তাহা দেখিয়া, যে ফরীশী তাঁহাকে নিমন্ত্রণ করিয়াছিল, সে মনে মনে কহিল, এ যদি ভাববাদী হইত, তবে জানিতে পারিত, ইহাকে যে স্পর্শ করিতেছে, সে কে এবং কি প্রকার স্ত্রীলোক, কারণ সে পাপিষ্ঠা।
40 তখন যীশু উত্তর করিয়া তাহাকে কহিলেন, শিমোন, তোমাকে আমার কিছু বলিবার আছে। সে কহিল, গুরো, বলুন।
41 এক মহাজনের দুই জন ঋণী ছিল; এক জন ধারিত পাঁচ শত সিকি, আর এক জন পঞ্চাশ। 42 তাহাদের পরিশোধ করিবার সঙ্গতি না
থাকাতে তিনি উভয়কেই ক্ষমা করিলেন। ভাল, তাহাদের মধ্যে কে তাঁহাকে অধিক প্রেম
করিবে?
43 শিমোন উত্তর করিল, আমার বোধ
হয়, যাহার
অধিক ঋণ ক্ষমা করিলেন, সেই। তিনি
তাহাকে কহিলেন, যথার্থ
বিচার করিলে। 44 আর তিনি
সেই স্ত্রীলোকের দিকে ফিরিয়া শিমোনকে কহিলেন, এই স্ত্রীলোকটীকে দেখিতেছ? আমি তোমার বাটীতে প্রবেশ করিলাম, তুমি আমার পা ধুইবার জল দিলে না, কিন্তু এই স্ত্রীলোকটী চক্ষের জলে
আমার চরণ ভিজাইয়াছে ও নিজের চুল দিয়া তাহা মুছাইয়া দিয়াছে। 45 তুমি আমাকে চুম্বন করিলে না, কিন্তু যে অবধি আমি ভিতরে আসিয়াছি, এ আমার চরণ চুম্বন করিতেছে, ক্ষান্ত হয় নাই। 46 তুমি তৈল দিয়া আমার মস্তক অভিষিক্ত
করিলে না, কিন্তু এ
সুগন্ধি দ্রব্যে আমার চরণ অভিষিক্ত করিয়াছে। 47 এই জন্য, তোমাকে কহিতেছি, ইহার যে বহু পাপ, তাহার ক্ষমা হইয়াছে; কেননা এ অধিক প্রেম করিল; কিন্তু যাহাকে অল্প ক্ষমা করা যায়, সে অল্প প্রেম করে।
48 পরে তিনি সেই স্ত্রীলোককে কহিলেন, তোমার পাপ সকল ক্ষমা হইয়াছে।
49 তখন যাহারা তাঁহার সঙ্গে ভোজনে বসিয়াছিল, তাহারা মনে মনে বলিতে লাগিল, এ কে যে পাপক্ষমাও করে?
50 কিন্তু তিনি সেই স্ত্রীলোককে কহিলেন, তোমার বিশ্বাস তোমাকে পরিত্রাণ
করিয়াছে; শান্তিতে
প্রস্থান কর।
বাপ্তিস্ম কখনই পরিত্রাণের
কারণ নয়, বরং বাপ্তিস্ম পাপ থেকে মন পরিবর্তন করে প্রভু যীশুতে বিশ্বাসের দ্বারা পরিত্রাণ
লাভের পরবর্তী পদক্ষেপ।
অনেকে মনে করেন, কেবল
বাপ্তিস্ম গ্রহণ করলেই তারা পরিত্রাণ লাভ করতে পারবে, কিন্তু তাদের এই ধারণাটি সম্পূর্ণ
ভুল। পরিত্রাণ লাভের জন্য সর্বপ্রথম পাপ থেকে মন পরিবর্তন করতে হবে এবং প্রভু যীশুতে
বিশ্বাস করতে হবে।
একজন ব্যক্তি যদি মন পরিবর্তন
না করে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করেন, তাহলে তার বাপ্তিস্ম গ্রহণ করা বৃথা।
যারা বাপ্তিস্মকে স্বর্গের
টিকিট বলে মনে করেন, তারা পথভ্রষ্ট, তাদের সর্বপ্রথম অনুতাপ করার প্রয়োজন রয়েছে।
বাপ্তিস্ম আমাদের খ্রীষ্টীয়
জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কারণ স্বয়ং প্রভু যীশু আমাদের বাপ্তিস্ম গ্রহণ
করার আজ্ঞা দিয়েছেন।
প্রভুভোজ যেমন আমাদের
জন্য গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তেমনই বাপ্তিস্মও আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু তা পরিত্রাণ
লাভের জন্য নয়। প্রভু যীশুর মৃত্যু আমরা প্রভুভোজের মাধ্যমে স্মরণ করি, এবং প্রভু যীশুতে
আমাদের বিশ্বাস আমরা বাপ্তিস্মের দ্বারা জনসম্মুখে প্রকাশ করি।
অনেক মণ্ডলী বাপ্তিস্মকে
পরিত্রাণ লাভের পদ্ধতি হিসেবে তুলে ধরেন, কিন্তু তা বাইবেল ভিত্তিক বিচারধারা নয়।
আমরা যে প্রভু যীশুতে
বিশ্বাস করেছি, তার একটি চিহ্ন হল বাপ্তিস্ম, কিন্তু তা পরিত্রাণের সঙ্গে কখনই সম্পর্কযুক্ত
নয়।
পাপ থেকে মন পরিবর্তন
করে প্রভু যীশুতে বিশ্বাসের দ্বারা ধার্মিক প্রতিপন্ন হওয়ার পর আপনার কাছে বাপ্তিস্ম
নেওয়ার সুযোগ থাকা অবস্থায় যদি আপনি তা না গ্রহণ করেন, তাহলে আপনি জনসম্মুখে প্রভু
যীশুকে অস্বীকার করছেন।
মথি ১০ অধ্যায় ৩৩
পদে প্রভু যীশু বলেছেন –
কিন্তু
যে কেহ মনুষ্যদের সাক্ষাতে আমাকে অস্বীকার করে, আমিও আপন
স্বর্গস্থ পিতার সাক্ষাতে তাহাকে অস্বীকার করিব।
কিন্তু আপনার কাছে যদি পাপ থেকে মন পরিবর্তন
করে প্রভু যীশুতে বিশ্বাসের দ্বারা ধার্মিক প্রতিপন্ন হওয়ার পর বাপ্তিস্ম নেওয়ার সুযোগ
না থাকে, তবে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই, কারণ প্রভু যীশুতে আপনার বিশ্বাসই আপনাকে পরিত্রাণ
করবে।
প্রভু যীশুর সাথে যে দুজন
দস্যুকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে একজন প্রভু যীশুর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করেছিল,
আর প্রভু তাকে ক্ষমা করেছিলেন এবং পরমদেশে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই
দস্যুটির কাছে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করার সুযোগ ছিল না, কিন্তু তবুও সে পরিত্রাণ পেয়েছিল,
যার বর্ণনা আমরা লুক ২৩ অধ্যায় ৪০ থেকে ৪৩ পদে পেয়ে থাকি।
সারসংক্ষেপঃ-
পরিত্রাণ লাভের জন্য বাপ্তিস্ম
নয়, বরং প্রভু যীশুর প্রতি আপনার বিশ্বাস আপনি বাপ্তিস্মের দ্বারা জনসম্মুখে প্রকাশ
করেন, যা বিশ্বাসের চিহ্নস্বরুপ।
আপনার কাছে সুযোগ থাকা
অবস্থায় অবশ্যই বাপ্তিস্ম গ্রহণ করা প্রয়োজন, কারণ তা প্রভু যীশুর আজ্ঞা। কিন্তু আপনার
কাছে সুযোগ না থাকলে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই, কারণ আপনি মন পরিবর্তনের মাধ্যমে এবং
যীশুর প্রতি বিশ্বাসের দ্বারাই পরিত্রাণ লাভ করবেন।
Tags:-
Christian Articles, বাংলা খ্রীষ্টীয় নিবন্ধ, bsbbca, bibleshikshabhaskar, BSB Ministry, Bengali Christian Blog, Bangla Gospel, Bengali Gospel, Preaching in Bengali Language, Bible Based Articles, বাংলা প্রচার, বাংলা যীশুর প্রচার, Bangla Christiyo Christio Khristiyo Khristio Prochar, BSB Gospel, Gospel Articles, Bangla Nibondho, Gospel Online, Online Gospel, বাইবেল প্রচার, বাইবেলের বাক্য, Blogger, Jesus Christ, যীশু খ্রীষ্ট,
0 Comments