বন্ধুরা, শয়তান আমাদেরকে ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য সর্বপ্রথম সে আমাদের প্রার্থনাশীল জীবনকে ধ্বংস করতে চেষ্টা করে। শয়তান এটা ভালোভাবেই জানে যে, যদি আমাদের প্রার্থনাশীল জীবনকে সে ধ্বংস করতে পারে, তবে সে আমাদের আত্মীক জীবনকেও ধ্বংস করতে পারবে, আর যদি আমাদের আত্মীক জীবন ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে ঈশ্বরের সাথে আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের মধ্যেও ফাটল সৃষ্টি হবে এবং আমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরে গিয়ে এই জগতের লোকেদের মতো জীবনযাপন করতে শুরু করব, যার শেষ পরিণাম হবে অনন্ত অগ্নি।

জগতের লোকেদের তো শয়তান ভ্রান্ত পথে পরিচালিত করে চলেছেই, বরং খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদেরকেও সে ভ্রান্ত পথে পরিচালিত করার জন্য সচেষ্ট হয়ে রয়েছে।

প্রার্থনা হল খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

যখন আমরা প্রার্থনা থেকে বিরত হয়ে পরি, তখন আমাদের জীবনে নানান ধরণের সমস্যা দেখা দেয়, যেগুলি থেকে আমরা নিজেরা বের হয়ে আসতে সক্ষম হই না।

আমরা যখন প্রার্থনা করি, তখন ঈশ্বরের শক্তি আমরা অনুভব করতে পারি, যা আমাদের খ্রীষ্টীয় জীবনে অত্যন্ত প্রয়োজন। আমরা ঈশ্বরের শক্তি দ্বারাই আমাদের জীবনের সমস্ত সমস্যাগুলির সাথে লড়াই করার জন্য উপযোগী হয়ে উঠি।

প্রার্থনার বিষয়ে পবিত্র বাইবেলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের জন্য অনেক উদাহরণই রয়েছে।

আসুন আমরা প্রার্থনার কিছু উদাহরণ পবিত্র বাইবেল থেকে দেখি।

গীতসংহিতা ৫৫ এর গীত ১৭ পদে লেখা আছে –

সন্ধ্যায়, প্রাতে ও মধ্যাহ্নে আমি বিলাপ করি ও কোঁকাই,

আর তিনি আমার রব শুনেন।

 

ওপরের পদটি থেকে আমরা জানতে পারি যে, রাজা দাউদ দিনের তিনটি প্রহরে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা নিবেদন করতেন এবং ঈশ্বর তার প্রার্থনায় কর্ণপাত করতেন।

     দানিয়েলও দিনে তিনবার ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতেন, দানিয়েল ৬ অধ্যায় ১০ পদে লেখা আছে –

পত্রখানি স্বাক্ষরিত হইয়াছে, ইহা দানিয়েল যখন জানিতে পাইলেন, তখন আপন গৃহে গেলেন; তাঁহার কুঠরীর বাতায়ন যিরূশালেমের দিকে খোলা ছিল; তিনি দিনের মধ্যে তিনবার জানু পাতিয়া আপন ঈশ্বরের সম্মুখে প্রার্থনা ও স্তবগান করিলেন, যেমন পূর্ব্বে করিতেন।

 

এছাড়াও বাইবেলে আমরা দেখতে পাই যে, ঈশ্বরের মনোনীত প্রত্যেক ব্যক্তিরই প্রার্থনাশীল জীবন ছিল।

যেসমস্ত লোকেরা পাপের সাথে আপোষ করে জীবন অতিবাহিত করে চলেছে, তাদের জীবনে প্রার্থনার কোনও গুরুত্ব নেই, কিন্তু একজন খ্রীষ্ট বিশ্বাসী হওয়ার দরুন প্রার্থনাই আমাদের পাপের পথ ও বিনাশের পথ থেকে রক্ষা করে।

প্রথমত, আমরা যখন প্রার্থনা থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখি, তখন পরোক্ষভাবে আমরা এটাই প্রকাশ করে থাকি যে, আমাদের জীবনে ঈশ্বরের সাথে সহভাগিতা রাখার কোনও প্রয়োজন নেই।

দ্বিতীয়ত, আমরা যখন প্রার্থনা থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখি, তখন আমরা নিজেদের কাছে এটা প্রকাশ করে থাকি যে, ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসার পরিমাণ আমাদের অন্তর থেকে ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে।

তৃতীয়ত, আমরা যখন প্রার্থনা থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখি, তখন আমরা এটা প্রকাশ করে থাকি যে, আমাদের জীবনে ঈশ্বরের ইচ্ছার কোনও গুরুত্ব নেই, আমরাই নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী নিজেদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।

আর চতুর্থত, আমরা যখন প্রার্থনা থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখি, তখন আমরা এটা প্রকাশ করে থাকি যে, আমরা নিজেরাই আমাদের আত্মীক যুদ্ধে জয়লাভ করতে পারব, ঈশ্বরের সাহায্যের কোনও প্রয়োজন আমাদের নেই।

বাইবেল বলে, আমাদের যুদ্ধ রক্ত মাংসের সঙ্গে নয়, বরং অন্ধকারের জগৎপতিদের সাথে ও দুষ্টতার আত্মাগণের সাথে।

ইফিষীয় ৬ অধ্যায় ১২ পদে লেখা আছে –

কেননা রক্তমাংসের সহিত নয়, কিন্তু আধিপত্য সকলের সহিত, কর্ত্তৃত্ব সকলের সহিত, এই অন্ধকারের জগৎপতিদের সহিত, স্বর্গীয় স্থানে দুষ্টতার আত্মাগণের সহিত আমাদের মল্লযুদ্ধ হইতেছে। 

আমাদের মনে আজ একটি প্রশ্ন অবশ্যই জেগে ওঠার প্রয়োজন রয়েছে, সেটি হল - আমরা যদি ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরে যাই, তাহলে শয়তানের নিয়ন্ত্রণে থেকে শয়তানেরই বিরুদ্ধে আমরা কীভাবে জয়লাভ করতে পারব ?

ঈশ্বরের সাহায্য ছাড়া কি শুধুমাত্র আমরা নিজেরাই আমাদের সীমিত শক্তির ওপর নির্ভর করে শয়তানের গ্রাস থেকে রক্ষা পেতে পারি ?

বন্ধুরা, একটি বড়ো জাহাজও যখন সমুদ্রের পথে যাত্রা করে, তখন সেই জাহাজটির চালক কখনই একটি ছোট নোঙ্গর সাথে নিতে ভুলে যান না, সেই ছোট নোঙ্গরটিই হয় বিপদের সময় জাহাজটির ভরসা।

তাহলে আমরা কেন আমাদের জীবনের যাত্রাপথে প্রার্থনা নামক নোঙ্গরটিকে সাথে নিতে চাই না ?

আমরা তখনই প্রার্থনা করতে আগ্রহী হয়ে উঠি, যখন আমাদের জীবনে নানারকম দুর্যোগ দেখা দেয়, কিন্তু আমরা প্রথম থেকেই প্রার্থনাকে আমাদের জীবনে প্রাধান্য দিই না!

আমরা কেবল প্রার্থনার মাধ্যমেই আমাদের জীবনে ওঠা ঝড়-ঝাঁপটাগুলি থেকে রক্ষা পেতে পারি, কারণ সমস্ত কিছুই ঈশ্বরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তাই একমাত্র তিনিই পারেন আমাদের জীবনের সমস্ত সমস্যাগুলির সমাধান করতে।

আপনি এটা কখনই মনে করবেন না যে, প্রার্থনাশীল জীবন ছাড়া আপনি শয়তানকে পরাজিত করতে পারবেন, বরং আপনার এটা জেনে রাখা নিতান্তই প্রয়োজন যে, ঈশ্বরের থেকে দূরে সরে গেলে আপনি পুরোপুরিভাবে ধ্বংস হয়ে যাবেন এবং ভ্রন্তিজনক দিয়াবলের সাথে নরকের অংশীদার হবেন।

প্রভু যীশু শারীরিকভাবে কোনও পাপ করেননি, শয়তানও তাকে কোনওভাবে প্রভাবিত করতে পারেনি, কারণ তিনি অবিরত পিতা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতেন।

শয়তান যদি প্রভু যীশুকে প্রলোভনে ফেলতে পারে, তাহলে আমাদের তো সে পুরোপুরিভাবে ধ্বংস করে ফেলতে পারে, সেইজন্য আমাদের আরও অধিক পরিমাণে প্রার্থনা করার প্রয়োজন রয়েছে, যেন আমরা শয়তান দ্বারা কবলিত না হই।

একজন খ্রীষ্ট বিশ্বাসী হিসেবে যদি আপনি প্রার্থনাশীল জীবন গড়ে তুলতে না পারেন, তাহলে আপনার বিশ্বাস মূল্যহীন, কারণ আপনার প্রার্থনাশীল জীবন গড়ে তোলা এবং না তোলার ওপরে আপনার আত্মীক জীবনের উন্নতি ও অবনতি নির্ভর করে।

১ থিষলনীকীয় ৫ অধ্যায় ১৬ থেকে ১৮ পদে লেখা আছে –

16 সতত আনন্দ কর; 17 অবিরত প্রার্থনা কর18 সর্ব্ববিষয়ে ধন্যবাদ কর; কারণ খ্রীষ্ট যীশুতে ইহাই তোমাদের উদ্দেশে ঈশ্বরের ইচ্ছা।

 

তাই, আসুন আমরা প্রার্থনাশীল জীবন গড়ে তুলি, যেন আমরা ঈশ্বরের সান্নিধ্যে থেকে শয়তানের বিনাশ দেখতে পারি।



Tags:- 

Christian Articles, বাংলা খ্রীষ্টীয় নিবন্ধ, bsbbca, bibleshikshabhaskar, BSB Ministry, Bengali Christian Blog, Bangla Gospel, Bengali Gospel, Preaching in Bengali Language, Bible Based Articles, বাংলা প্রচার, বাংলা যীশুর প্রচার, Bangla Christiyo Christio Khristiyo Khristio Prochar, BSB Gospel, Gospel Articles, Bangla Nibondho, Gospel Online, Online Gospel, বাইবেল প্রচার, বাইবেলের বাক্য, Blogger, Jesus Christ, যীশু খ্রীষ্ট,


0 Comments