‘ভূত’ শব্দটির সাথে আমরা সকলেই পরিচিত, এই শব্দটির কথা ভাবলে প্রায় অনেকের মনেই একপ্রকার ভয় ভীতির সৃষ্টি হয়। ছোটবেলায় আপনারা অনেকেই হয়ত আপনাদের দাদু, ঠাকুরমা, দিদিমা অথবা মা-বাবার কাছ থেকে ভূতের গল্প শুনেছেন। আজকালকার দিনে তো বিভিন্ন সিনেমাতে অথবা টিভি সিরিয়ালেও ভূতেদের কাহিনী দেখানো হয়।

     যেহেতু আমরা এখন খ্রীষ্ট বিশ্বাসী, সেহেতু আমাদের জানা প্রয়োজন যে, ঈশ্বরের বাক্য ভূতেদের অস্তিত্ব স্বীকার করে কি না!

তো আসুন আমরা দেখি বাইবেল ভূতেদের অস্তিত্ব সম্পর্কে কি বলে।

     যদি আমরা ধরে নিই যে, ‘ভূত’ শব্দের অর্থ হল ‘আত্মীক প্রাণী’, তবে হ্যাঁ, বাইবেল আত্মীক প্রাণীদের অস্তিত্ব স্বীকার করে।

     কিন্তু যদি আমরা মনে করি যে, ‘ভূত’ হল ‘মৃত মানুষের অতৃপ্ত আত্মা’, যারা এখানে ওখানে ঘোরাফেরা করে, মানুষের ক্ষতি করে, এবং প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য মানুষের ওপর আক্রমন করে, তবে বাইবেল এই ধরণের ভূতেদের অস্তিত্ব স্বীকার করে না।

     আসুন আমরা আত্মীক প্রাণী এবং ভূতের (মানুষের অতৃপ্ত আত্মার) মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করি।

আত্মীক প্রানী:-

বাইবেল অনুযায়ী দুই ধরণের আত্মীক প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে, আর সেগুলি হল – ভালো ও মন্দ।

যারা ভালো আত্মীক প্রাণী, বাইবেল তাদের স্বর্গদূত হিসেবে চিহ্নিত করে। স্বর্গদূতেরা ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন করে, এবং তাঁর গৌরব, প্রশংসা ও মহিমা করে।

আর যারা মন্দ আত্মীক প্রাণী, তারা আগে স্বর্গদূত ছিল, কিন্তু তাদের মধ্যে প্রধান হল – শয়তান (Lucifer), যে তার অহংকারের বশে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল; যার ফলস্বরুপ সে এবং তার পরিচারকগণ স্বর্গ থেকে বিতারিত হয়েছিল, আর তারপর থেকেই তাদের মন্দ আত্মা হিসেবেই পরিচয় দেওয়া হয়।

এখন সেই মন্দ আত্মা বা দুষ্ট আত্মাগণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে, আর সেটিই হল তাদের প্রধান কাজ।

১ পিতর ৫ অধ্যায় ৮ পদে লেখা আছে –

তোমরা প্রবুদ্ধ হও, জাগিয়া থাক; তোমাদের বিপক্ষ দিয়াবল, গর্জ্জনকারী সিংহের ন্যায়, কাহাকে গ্রাস করিবে, তাহার অন্বেষণ করিয়া বেড়াইতেছে।

ভূত (মানুষের অতৃপ্ত আত্মা):-

ইব্রীয় ৯ অধ্যায় ২৭ থেকে ২৮ পদে লেখা আছে –

27 আর যেমন মনুষ্যের নিমিত্ত এক বার মৃত্যু, তৎপরে বিচার নিরূপিত আছে28 তেমনি খ্রীষ্টও ‘অনেকের পাপভার তুলিয়া লইবার’ নিমিত্ত এক বার উৎসৃষ্ট হইয়াছেন; তিনি দ্বিতীয় বার, বিনা পাপে, তাহাদিগকে দর্শন দিবেন, যাহারা পরিত্রাণের নিমিত্ত তাঁহার অপেক্ষা করে।

বাইবেল আমাদের স্পষ্টই বলে যে, মৃত্যুর পর আমাদের বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। আমরা যদি প্রভু যীশুতে বিশ্বাস করে থাকি, তাহলে আমরা অনন্ত জীবনে প্রবেশ করব, কিন্তু যদি আমরা প্রভু যীশুর বলিদানের ওপর বিশ্বাস না করে তাঁর মৃত্যুকে তুচ্ছ করি, তবে আমাদের স্থান হবে অনন্ত নরক।

মৃত্যুর পর এই পৃথিবীতে কোনও আত্মা ঘোরাফেরা করার অধিকার পায় না, বরং বিচারের সম্মুখীন হয়।

     অতএব ভূতেদের অস্তিত্ব বাইবেল স্বীকার করে না, তবে দুষ্ট বা মন্দ আত্মা অবশ্যই এই পৃথিবীতে রয়েছে, যারা আমাদের সাথে মিলিত হয়ে আমাদের সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাদের ভ্রান্ত পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা অবিরত করে চলেছে।

২ করিন্থীয় ১১ অধ্যায় ১৪ থেকে ১৫ পদে লেখা আছে –

14 আর ইহা আশ্চর্য্য নয়, কেননা শয়তান আপনি দীপ্তিময় দূতের বেশ ধারণ করে। 15 সুতরাং তাহার পরিচারকেরাও যে ধার্ম্মিকতার পরিচারকদের বেশ ধারণ করে, ইহা মহৎ বিষয় নয়; তাহাদের পরিণাম তাহাদের ক্রিয়ানুসারে হইবে।

ওপরের পদটি আমাদের আরও একটি বিষয় স্পষ্ট করে বলে যে, শয়তান অর্থাৎ মন্দ আত্মা দূতেদের বেশও ধারণ করতে পারে, এছাড়াও তারা ধার্মিকতার পরিচারকদেরও বেশ ধারণ করতে পারে, এগুলি শয়তান এবং তার পরিচারকদের জন্য খুবই সহজ কাজ।

মার্ক ৫ অধ্যায় ১ থেকে ২০ পদে আমরা দেখতে পাই যে, গেরাসেনীদের দেশে একজন ব্যক্তিকে অশুচি আত্মাদের একটি দল আবদ্ধ করে রেখেছিল। তারা কোনও মৃত ব্যক্তির অতৃপ্ত আত্মা ছিল না, বরং মন্দ আত্মাদেরই একটি দল ছিল, আর প্রভু যীশু সেই ব্যক্তিটিকে সেই মন্দ আত্মাদের কবল থেকে উদ্ধার করেছিলেন।

    তাই আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, আমাদের জীবনে যদি আমরা মনে করি - কোনও ভূত, প্রেত বা পিশাচ আমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে, বা আমাদের মনের মধ্যে ভয় ভীতির সৃষ্টি করছে এবং ঈশ্বরের কাছ থেকে আমাদের দূরে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করছে, তবে তা কোনও ভূত, প্রেত বা পিশাচ নয়, বরং মন্দ আত্মা।

মন্দ আত্মা যতই আমাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করুক না কেন, ঈশ্বরের প্রতি আমাদের বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত স্থির রাখতে হবে।

প্রকাশিত বাক্য ২০ অধ্যায় ১০ পদ অনুযায়ী ঈশ্বর সেই মন্দ আত্মাদের জন্যই নরক তৈরী করে রেখেছেন, তাদের শেষ পরিণাম অনন্ত নরকই হবে।

তাই আজ থেকে আমরা সাহসের সাথে মন্দ আত্মাদের সাথে মোকাবিলা করব, এবং মনে রাখব যে, প্রভু যীশু আমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছেন। আমাদের নিজেদেরকে ঈশ্বরের বশীভূত করতে হবে, তাহলে শয়তান আর আমাদের নিজের বশে আনতে পারবে না।

যাকোব ৪ অধ্যায় ৭ পদে লেখা আছে –

অতএব তোমরা ঈশ্বরের বশীভূত হও; কিন্তু দিয়াবলের প্রতিরোধ কর, তাহাতে সে তোমাদের হইতে পলায়ন করিবে। 

 

Tags:- 

Christian Articles, বাংলা খ্রীষ্টীয় নিবন্ধ, bsbbca, bibleshikshabhaskar, BSB Ministry, Bengali Christian Blog, Bangla Gospel, Bengali Gospel, Preaching in Bengali Language, Bible Based Articles, বাংলা প্রচার, বাংলা যীশুর প্রচার, Bangla Christiyo Christio Khristiyo Khristio Prochar, BSB Gospel, Gospel Articles, Bangla Nibondho, Gospel Online, Online Gospel, বাইবেল প্রচার, বাইবেলের বাক্য, Blogger, Jesus Christ, যীশু খ্রীষ্ট, Ghosts, 

0 Comments