এই বিষয়টিও অন্যান্য বিষয়গুলির মত একটি বহু বিতর্কিত বিষয়। অনেক মণ্ডলীতে বলা হয়ে থাকে যে, খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের বিশ্রামবার হল – রবিবার, অর্থাৎ সপ্তাহের প্রথম দিন। কিন্তু এমন কিছু সংখ্যক মণ্ডলী রয়েছে, যারা মনে করেন যে, সপ্তাহের সপ্তম দিন, অর্থাৎ শনিবারই হল খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের বিশ্রামবার; কেননা তারা বলে থাকেন, ঈশ্বর মোশিকে আজ্ঞা দিয়েছিলেন, সপ্তম দিনটিকে বিশ্রামবার হিসেবে পালন করার জন্য।

কিন্তু আমাদের এটা বুঝতে হবে যে, বিশ্রামবারের প্রকৃত অর্থ আসলে কি!

আজকাল বিভিন্ন মণ্ডলীগুলিতে বিশ্রামবারকে উপাসনার দিন হিসেবে তুলে ধরা হয় এবং বিশ্বাসীদের উপাসনার জন্য মণ্ডলীতে আহ্বান করা হয়।

কিন্তু পবিত্র বাইবেল এই ধরণের বিশ্রামবার সমর্থন করে না। পুরাতন নিয়মে বিশ্রামবারের অর্থ আমরা যাত্রাপুস্তক ২০ অধ্যায় ৮ থেকে ১১ পদে পেয়ে থাকি, সেখানে লেখা আছে –

8 তুমি বিশ্রামদিন স্মরণ করিয়া পবিত্র করিও। 9 ছয় দিন শ্রম করিও, আপনার সমস্ত কার্য্য করিও10 কিন্তু সপ্তম দিন তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর উদ্দেশে বিশ্রামদিন; সে দিন তুমি কি তোমার পুত্র কি কন্যা, কি তোমার দাস কি দাসী, কি তোমার পশু, কি তোমার পুরদ্বারের মধ্যবর্ত্তী বিদেশী, কেহ কোন কার্য্য করিও না11 কেননা সদাপ্রভু আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী, সমুদ্র ও সেই সকলের মধ্যবর্ত্তী সমস্ত বস্তু ছয় দিনে নির্ম্মাণ করিয়া সপ্তম দিনে বিশ্রাম করিলেন; এই জন্য সদাপ্রভু বিশ্রামদিনকে আশীর্ব্বাদ করিলেন, ও পবিত্র করিলেন।

 

একটি বিষয় আমাদের মাথায় রাখতে হবে, সেটি হল – বিশ্রামবারের শুরু মোশির সময় থেকে হয়নি, বরং সৃষ্টির সমাপ্তিতে শুরু হয়েছে।

আদিপুস্তক ২ অধ্যায় ১ থেকে ৩ পদে লেখা আছে –

1 এইরূপে আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী এবং তদুভয়স্থ সমস্ত বস্তুব্যূহ সমাপ্ত হইল। 2 পরে ঈশ্বর সপ্তম দিনে আপনার কৃত কার্য্য হইতে নিবৃত্ত হইলেন, সেই সপ্তম দিনে আপনার কৃত সমস্ত কার্য্য হইতে বিশ্রাম করিলেন। 3 আর ঈশ্বর সেই সপ্তম দিনকে আশীর্ব্বাদ করিয়া পবিত্র করিলেন, কেননা সেই দিনে ঈশ্বর আপনার সৃষ্ট ও কৃত সমস্ত কার্য্য হইতে বিশ্রাম করিলেন।

 

ওপরের ৩ পদ অনুযায়ী ঈশ্বর সপ্তম দিনে তাঁর সমস্ত কাজ সমাপ্ত করে বিশ্রাম নিয়েছিলেন, কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, তিনি ক্লান্ত হয়ে পরেছিলেন।

গীতসংহিতা ১২১ এর গীত ৪ পদে লেখা আছে –

দেখ, যিনি ইস্রায়েলের রক্ষক,

তিনি ঢুলিয়া পড়েন না, নিদ্রা যান না।

 

ঈশ্বর সমস্ত সৃষ্টির কাজ সমাপ্ত করে বিশ্রাম নিলেন, এর অর্থ হল তিনি তাঁর সমস্ত কাজ সমাপ্ত করে থামলেন। আর এই কারণেই ঈশ্বর পরবর্তীকালে ইস্রায়েলীয়দের জন্য বিশ্রামবার পালন করে পবিত্র করার আজ্ঞা দিয়েছিলেন।

যাত্রাপুস্তক ১৬ অধ্যায় যদি আমরা পড়ি, তাহলে সেখানে আমরা দেখতে পাবো যে, ঈশ্বর সপ্তাহে ৬ দিন আকাশ থেকে মান্না বর্ষণ করতেন, কিন্তু ষষ্ট দিনে তিনি দ্বিগুণ মান্না বর্ষণ করতেন, যেন সপ্তম দিনে কারও মান্না একত্রিত করার প্রয়োজন না পরে। এর অর্থ হল সপ্তম দিনে ঈশ্বর ইস্রায়েলীয়দের বিশ্রাম করার একটি সুযোগ দিয়েছিলেন।

পরবর্তীকালে ঈশ্বর যখন মোশিকে দশ আজ্ঞা দিলেন, তখন সেই আজ্ঞাগুলির মধ্যে একটি আজ্ঞা বিশ্রামবার পালন করার বিষয়ে ছিল।

বিশ্রামবার ছিল অনন্তকালের বিশ্রামের একটি চিহ্নস্বরুপ, যা প্রভু যীশু খ্রীষ্টের দ্বারা আসতে চলেছিল এবং যা মানুষকে শারীরিকভাবে নয়, বরং আত্মীকভাবে বিশ্রাম দান করবে, আর ঈশ্বরের দৃষ্টিতে একজন মানুষকে ধার্মিক প্রতিপন্ন করবে; আর সেটিই হল পরিপূর্ণ বিশ্রাম এবং বিশ্রামের প্রকৃত অর্থ।

ঈশ্বর এই কারণেই পুরাতন নিয়মে বিশ্রামবার পালন করার কথা বলেছিলেন, যেন ইস্রায়েলীয়রা ঈশ্বরের সেই বিশ্রাম অনুভব করতে পারে, যা তিনি সমস্ত সৃষ্টি সমাপ্ত করার পর নিয়েছিলেন।

নতুন নিয়মে মথি ১১ অধ্যায় ২৮ থেকে ২৯ পদে প্রভু যীশুও বিশ্রাম সম্বন্ধে বলেছেন, লেখা আছে –

28 হে পরিশ্রান্ত ও ভারাক্রান্ত লোক সকল, আমার নিকটে আইস, আমি তোমাদিগকে বিশ্রাম দিব। 29 আমার যোঁয়ালি আপনাদের উপরে তুলিয়া লও, এবং আমার কাছে শিক্ষা কর, কেননা আমি মৃদুশীল ও নম্রচিত্ত; তাহাতে তোমরা আপন আপন প্রাণের জন্য বিশ্রাম পাইবে।

মানুষকে নিজেদের জীবন অতিবাহিত করার জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয়।

আদিপুস্তক ৩ অধ্যায় ১৯ পদে ঈশ্বর আদমকে বলেছিলেন –

তুমি ঘর্ম্মাক্ত মুখে আহার করিবে, যে পর্য্যন্ত তুমি মৃত্তিকায় প্রতিগমন না করিবে; তুমি ত তাহা হইতেই গৃহীত হইয়াছ; কেননা তুমি ধূলি, এবং ধূলিতে প্রতিগমন করিবে।

ঈশ্বর যে বিশ্রাম মানুষকে দিতে চান, তা আসলে শারীরিক বিশ্রাম নয়, বরং আত্মীক বিশ্রাম।

আত্মীক বিশ্রামই মানুষের প্রয়োজন, কারণ মানুষের আত্মা পাপে পরিপূর্ণ এবং দূষিত।

আমরা তখনই আত্মীক বিশ্রাম লাভ করতে পারি, যখন আমাদের পাপ ক্ষমা হয়, যখন আমরা ঈশ্বরের দৃষ্টিতে ধার্মিক প্রতিপন্ন হই এবং যখন আমরা অনন্ত জীবন লাভ করি।

একজন মানুষ তার ধনদৌলতের সাহায্যে শারীরিক বিশ্রাম তো লাভ করতেই পারে, কিন্তু সেই ব্যক্তিটি পরিত্রাণ লাভ না করলে আত্মীক বিশ্রাম কখনই লাভ করতে পারবে না, আর কেবল যীশুর প্রতি বিশ্বাস দ্বারাই কোনও ব্যক্তি পরিত্রাণ লাভ করতে পারে। প্রভু যীশুই আমাদের পাপের দণ্ড ভোগ করেছেন এবং আমাদের পাপ থেকে উদ্ধার করেছেন।

ইব্রীয় ১০ অধ্যায় ১ পদে লেখা আছে –

কারণ ব্যবস্থা আগামী উত্তম উত্তম বিষয়ের ছায়াবিশিষ্ট, তাহা সেই সকল বিষয়ের অবিকল মূর্ত্তি নহে; সুতরাং একরূপ যে সকল বার্ষিক যজ্ঞ নিয়ত উৎসর্গ করা যায়, তদ্দ্বারা, যাহারা নিকটে উপস্থিত হয়, তাহাদিগকে ব্যবস্থা কখনও সিদ্ধ করিতে পারে না।

 

এবং ইব্রীয় ১০ অধ্যায় ১১ থেকে ১৩ পদে লেখা আছে –

11 আর প্রত্যেক যাজক দিন দিন সেবা করিবার এবং একরূপ নানা যজ্ঞ পুনঃপুনঃ উৎসর্গ করিবার জন্য দাঁড়ায়; সেই সকল যজ্ঞ কখনও পাপ হরণ করিতে পারে না। 12 কিন্তু ইনি পাপার্থক একই যজ্ঞ চিরকালের জন্য উৎসর্গ করিয়া ঈশ্বরের দক্ষিণে উপবিষ্ট হইলেন13 এবং তদবধি অপেক্ষা করিতেছেন, যে পর্য্যন্ত তাঁহার শত্রুগণ তাঁহার পাদপীঠ না হয়।

 

আমরা যারা প্রভু যীশুর ওপর বিশ্বাস করেছি, তারা প্রত্যেকেই সেই আত্মীক বিশ্রাম লাভ করেছি এবং বিশ্রামের পথ ধরেই এগিয়ে চলেছি, কারণ আমাদের পাপের ভার প্রভু যীশু নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে আমাদের ধার্মিক করেছেন।

ইব্রীয় ৪ অধ্যায় ৩ থেকে ১১ পদে লেখা আছে –

3 বাস্তবিক বিশ্বাস করিয়াছি যে আমরা, আমরা সেই বিশ্রামে প্রবেশ করিতে পাইতেছি; যেমন তিনি বলিয়াছেন, “তখন আমি আপন ক্রোধে এই শপথ করিলাম, ইহারা আমার বিশ্রামে প্রবেশ করিবে না,” যদিও তাঁহার কর্ম্ম জগতের পত্তনাবধি সমাপ্ত ছিল। 4 কেননা তিনি এক স্থানে সপ্তম দিনের বিষয়ে এইরূপ বলিয়াছিলেন, “এবং সপ্তম দিনে ঈশ্বর আপনার সমস্ত কর্ম্ম হইতে বিশ্রাম করিলেন।” 5 আবার এই স্থানে তিনি কহেন, “ইহারা আমার বিশ্রামে প্রবেশ করিবে না।” 6 অতএব বাকী রহিল এই যে, কতকগুলি লোক বিশ্রামে প্রবেশ করিবে, আর যাহাদের নিকটে সুসমাচার অগ্রে প্রচারিত হইয়াছিল, তাহারা অবাধ্যতা প্রযুক্ত প্রবেশ করিতে পায় নাই7 আবার তিনি পুনরায় এক দিন নিরূপণ করিয়া দায়ূদ-গ্রন্থে এত কালের পর বলেন, “অদ্য,” যেমন পূর্ব্বে বলা হইয়াছে,

অদ্য যদি তোমরা তাঁহার রব শ্রবণ কর,

তবে আপন আপন হৃদয় কঠিন করিও না।”

8 বস্তুতঃ যিহোশূয় যদি তাহাদিগকে বিশ্রাম দিতেন, তবে ঈশ্বর তৎপরে অন্য দিনের কথা কহিতেন না। 9 সুতরাং ঈশ্বরের প্রজাদের নিমিত্ত বিশ্রামকালের ভোগ বাকী রহিয়াছে। 10 ফলতঃ যেরূপ ঈশ্বর আপন কর্ম্ম হইতে বিশ্রাম করিয়াছিলেন, তেমনি যে ব্যক্তি তাঁহার বিশ্রামে প্রবেশ করিয়াছে, সেও আপনার কর্ম্ম হইতে বিশ্রাম করিতে পাইল। 11 অতএব আইস, আমরা সেই বিশ্রামে প্রবেশ করিতে যত্ন করি, যেন কেহ অবাধ্যতার সেই দৃষ্টান্ত অনুসারে পতিত না হয়।

 

অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন যে, বাইবেলের নতুন নিয়মে খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের কি বিশ্রামবার পালন করার বিষয়ে আজ্ঞা দেওয়া হয়েছে ?

তো এর উত্তর হবে – না।

শনিবার এবং রবিবার, এই দুটির মধ্যে একটি দিনকেও নতুন নিয়মে বিশ্রামবার হিসেবে তুলে ধরা হয়নি। এর কারণ হল, পুরাতন নিয়মের বিশ্রামবার ঈশ্বরের বিশ্রামের একটি চিহ্ন ছিল, কিন্তু নতুন নিয়মে একজন বিশ্বাসী তো প্রভু যীশুর বলিদানের মাধ্যমে ইতিপূর্বেই ঈশ্বরের অনন্তকালের বিশ্রামে প্রবেশ করেছে।

প্রভু যীশু তাঁর ক্রুশীয় বলিদানের মাধ্যমে ব্যবস্থা পূর্ণ করেছেন, আর ব্যবস্থা পূরণের মাধ্যমেই সমস্ত কিছুর সমাপ্তিও হয়েছে।

যেহেতু আমরা প্রভু যীশুর দ্বারা ঈশ্বরের শান্তি ও বিশ্রাম লাভ করতে পেরেছি, সেহেতু কখনই আমরা বিশ্রামবার সহ অন্যান্য ব্যবস্থা পালন করার বিষয়ে ভাবিত হবো না বরং প্রভু যীশুর আজ্ঞা পালনের বিষয়ে ভাবিত হবো, যেন শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রতি স্থির থাকতে পারি।

উপসংহারঃ-

১. বাইবেলের পুরাতন নিয়ম অনুযায়ী বিশ্রামবার পালন করার আজ্ঞা ঈশ্বর কেবলমাত্র ইস্রায়েলীয়দের জন্যই দিয়েছিলেন, কারণ তারা তাঁর মনোনীত জাতি ছিল।

২. বাইবেলের নতুন নিয়ম অনুযায়ী খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের জন্য কোনও নিশ্চিত বিশ্রামবারের উল্লেখ নেই, কারণ তারা প্রভু যীশুর প্রতি বিশ্বাসের দ্বারা ঈশ্বরের অনন্তকালের বিশ্রাম লাভ করেছে।

৩. বিশ্রামবার ছিল অনন্তকালের বিশ্রামের একটি চিহ্ন, যা প্রভু যীশু দ্বারা মানুষ লাভ করতে চলেছিল।

৪. প্রভু যীশুর বলিদানের মাধ্যমে মানুষ অনন্তকালের জন্য বিশ্রামে প্রবেশ করার সুযোগ পেয়েছে।

 


Tags:- 

Christian Articles, বাংলা খ্রীষ্টীয় নিবন্ধ, bsbbca, bibleshikshabhaskar, BSB Ministry, Bengali Christian Blog, Bangla Gospel, Bengali Gospel, Preaching in Bengali Language, Bible Based Articles, বাংলা প্রচার, বাংলা যীশুর প্রচার, Bangla Christiyo Christio Khristiyo Khristio Prochar, BSB Gospel, Gospel Articles, Bangla Nibondho, Gospel Online, Online Gospel, বাইবেল প্রচার, বাইবেলের বাক্য, Blogger, Jesus Christ, যীশু খ্রীষ্ট, Sabbath, 

0 Comments