বন্ধুরা, একই ক্ষেত্রে কর্মরত অবস্থায় আপনার সহকর্মী যখন আপনাকে অতিক্রম করে উচ্চ পদ প্রাপ্ত করে, তখন আপনার হৃদয়ের অনুভূতি কেমন হয় ?

আপনার প্রতিবেশীদের মধ্যে কেউ যদি আপনার থেকে বেশী উন্নতিসাধন করে, তাহলে কি আপনার হৃদয়ে সেই ব্যক্তির প্রতি ঈর্ষার জন্ম হয় ?

অথবা, আপনার মণ্ডলীর কোনও সদস্য আপনার থেকে বেশী আত্মীকভাবে উন্নত হতে শুরু করলে আপনার মধ্যে কি একপ্রকার হিংসার উদয় হয় ?

     যদি আপনি অনুভব করেন যে, অন্যের উন্নতিসাধনে আপনার হৃদয়ে একপ্রকার ঈর্ষার উদয় হচ্ছে, তাহলে আপনি অবশ্যই ঈশ্বরের কাছে নিজেকে সমর্পণ করুন, কারণ ঈর্ষা আপনাকে শারীরিকভাবে, মানসিকভাবে ও আত্মীকভাবে তিলে তিলে ধ্বংস করে ফেলবে। ঈর্ষা একপ্রকার ধীর গতি বিশিষ্ট বিষাক্ত গুন, যার কুপ্রভাব দ্বারা আমাদের বিনাশ নিশ্চিত।

আদিপুস্তক ৩৭ অধ্যায় ৫ থেকে ৩৬ পদের বিবরণ অনুযায়ী আমরা দেখতে পাই যে, যোষেফের স্বপ্নের কারণে তার ভাইয়েরা তাকে দ্বেষ করতে শুরু করেছিল। যোষেফ যে স্বপ্ন দেখেছিল, তার অর্থ ছিল - তার ভাইয়েরা তার কাছে প্রনিপাত করবে, আর সেই স্বপ্নের বৃত্তান্ত যোষেফ তার ভাইদের কাছে প্রকাশ করলে পর তারা তাকে দ্বেষ করতে শুরু করেছিল।

যোষেফের ভাইয়েরা তাকে দ্বেষ করলেও সদাপ্রভু ঈশ্বর তার সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন।

প্রেরিত ৭ অধ্যায় ৯ থেকে ১০ পদে লেখা আছে –

9 আর পিতৃকুলপতিরা যোষেফের প্রতি ঈর্ষা করিয়া তাঁহাকে বিক্রয় করিলে তিনি মিসরে নীত হন। 10 কিন্তু ঈশ্বর তাঁহার সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন, এবং তাঁহার সমস্ত ক্লেশ হইতে তাঁহাকে উদ্ধার করিলেন, আর মিসর-রাজ ফরৌণের সাক্ষাতে অনুগ্রহ ও বিজ্ঞতা প্রদান করিলেন; তাহাতে ফরৌণ তাঁহাকে মিসরের ও আপন সমস্ত গৃহের অধ্যক্ষ-পদে নিযুক্ত করিলেন।

আমরা যখন অন্যকে দ্বেষ করি, তখন আমরা নিজেরাই নিজেকে নগন্য হিসেবে প্রকাশ করি এবং ঈশ্বরের অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হই।

১ শমূয়েল ১৮ অধ্যায় যদি আমরা দেখি, সেখানে আমরা দাউদের প্রতি শৌলের ঈর্ষার বিষয়ে জানতে পারি।

ঈর্ষার কারণ আমরা ১ শমূয়েল ১৮ অধ্যায় ৬ থেকে ৯ পদে পেয়ে থাকি, সেখানে লেখা আছে –

6 পরে লোকেরা ফিরিয়া আসিলে যখন দায়ূদ পলেষ্টীয়দিগকে আঘাত করিয়া ফিরিয়া আসিতেছিলেন, তখন শৌল রাজার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতে ইস্রায়েলের সমস্ত নগর হইতে স্ত্রীলোকেরা তবলধ্বনি, আমোদ ও ত্রিতন্ত্রীবাদ্য পুরঃসর গান ও নৃত্য করিতে করিতে বাহির হইয়া আসিল। 7 সেই স্ত্রীলোকেরা অভিনয়ক্রমে পরস্পর গান করিয়া বলিল, শৌল বধিলেন সহস্র সহস্র, আর দায়ূদ বধিলেন অযুত অযুত। 8 তাহাতে শৌল অতি ক্রুদ্ধ হইলেন, তিনি এই কথায় অসন্তুষ্ট হইয়া কহিলেন, উহারা দায়ূদের বিষয়ে অযুত অযুতের কথা বলিল, ও আমার বিষয়ে কেবল সহস্র সহস্রের কথা বলিল; ইহাতে রাজত্ব ব্যতীত সে আর কি পাইবে9 সেই দিন অবধি শৌল দায়ূয়ের উপরে দৃষ্টি রাখিলেন।

শৌল দাউদের অধিক প্রশংসায় খুশি হননি, বরং ক্রোধিত হয়েছিলেন, কিন্তু ঈশ্বর দাউদের সহবর্তী ছিলেন। শৌল ঈশ্বরের মনোনীত রাজা হওয়া সত্ত্বেও তিনি শৌলকে দাউদের কাছে নত করেছিলেন, কারণ দাউদ শৌলের তুলনায় অধিক ধার্মিক ছিলেন (১ শমূয়েল ২৪ অধ্যায় ১৭ পদ অনুযায়ী)।

     ঈর্ষার বিষয়ে ইয়োব ৫ অধ্যায় ২ পদে লেখা আছে –

                           কারণ মনস্তাপ অজ্ঞানকে নষ্ট করে,

ঈর্ষা নির্বোধকে বিনাশ করে।

 

যারা ঈর্ষা করে, বাইবেল তাদেরকে নির্বোধ আখ্যা দেয়, কারণ ঈর্ষা মানুশের বিনাশ ডেকে আনে।

হিতোপদেশ ১৪ অধ্যায় ৩০ পদে লেখা আছে –

শান্ত হৃদয় শরীরের জীবন; কিন্তু ঈর্ষা সকল অস্থির পচনস্বরূপ।

 

 

চিকিৎসা বিজ্ঞানও আজ স্বীকার করে যে, ক্রোধ বা ঈর্ষা মানুষের জীবনে অনেক ধরণের রোগ বা ব্যাধির সৃষ্টি করে, এছাড়াও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে।

বাইবেল অনুযায়ী হিংসা বা ঈর্ষা অন্যান্য পাপকেও আমন্ত্রন করে, যা একজনকে অনন্তকালীন মৃত্যুর দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

রোমীয় ১ অধ্যায় ২৯ থেকে ৩২ পদে প্রেরিত পৌল ঈশ্বরের অবাধ্য ও অধার্মিক ব্যক্তিদের বিষয়ে লিখেছেন –

29 তাহারা সর্ব্বপ্রকার অধার্ম্মিকতা, দুষ্টতা, লোভ ও হিংসাতে পরিপূরিত, মাৎসর্য্য, বধ, বিবাদ, ছল ও দুর্বৃত্তিতে পূর্ণ30 কর্ণেজপ, পরীবাদক, ঈশ্বর-ঘৃণিত, দুর্বিনীত, উদ্ধত, আত্মশ্লাঘী, মন্দ বিষয়ের উৎপাদক, পিতামাতার অনাজ্ঞাবহ31 নির্ব্বোধ, নিয়ম-ভঙ্গকারী, স্নেহরহিত, নির্দ্দয়। 32 তাহারা ঈশ্বরের এই বিচার জ্ঞাত ছিল যে, যাহারা এইরূপ আচরণ করে, তাহারা মৃত্যুর যোগ্য, তথাপি তাহারা তদ্রূপ আচরণ করে, কেবল তাহা নয়, কিন্তু তদাচারী সকলের অনুমোদন করে।

 

হিংসা, দ্বেষ অথবা ঈর্ষা; এগুলি আমাদের জীবন থেকে আত্মীক সুখ ও শান্তি কেড়ে নেয় এবং আমাদেরকে ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।

যোহন ১৩ অধ্যায় ৩৫ পদে প্রভু যীশু বলেছেন –

তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য।

 ঈশ্বর প্রেম, সেই কারণে প্রভু যীশু সেই প্রেমের বাণীই প্রচার করেছেন। ঈর্ষা হল প্রেমের বিপরীত একটি গুন। আমাদের মধ্যে যদি ঈর্ষা থাকে, তবে প্রেম নিস্তেজ হয়ে যাবে। প্রভু যীশু আমাদের পরস্পরকে প্রেম করতে শিখিয়েছেন, অতএব যদি আমরা পরস্পরকে প্রেম করি, তবে ঈর্ষা আমাদের জীবন থেকে দূর হবে।

প্রেম ঠিক কেমন ধরণের হওয়া উচিত, সেই বিষয়ে ১ করিন্থীয় ১৩ অধ্যায় ৪ থেকে ৭ পদে প্রেরিত পৌল লিখেছেন –

4 প্রেম চিরসহিষ্ণু, প্রেম মধুর, ঈর্ষা করে না, প্রেম আত্মশ্লাঘা করে না5 গর্ব্ব করে না, অশিষ্টাচরণ করে না, স্বার্থ চেষ্টা করে না, রাগিয়া উঠে না, অপকার গণনা করে না6 অধার্ম্মিকতায় আনন্দ করে না, কিন্তু সত্যের সহিত আনন্দ করে7 সকলই বহন করে, সকলই বিশ্বাস করে, সকলই প্রত্যাশা করে, সকলই ধৈর্য্যপূর্ব্বক সহ্য করে।

 অতএব, যারা ঈশ্বরের সন্তান অথবা যারা ঈশ্বরের প্রেমের আস্বাদ লাভ করেছেন, তাদের অন্তরে যদি ঈর্ষা থাকে, তবে তারা ঈশ্বরের আজ্ঞা লঙ্ঘন করছেন।

যাকোব ৩ অধ্যায় ১৬ পদে লেখা আছে –

কেননা যেখানে ঈর্ষা ও প্রতিযোগিতা, সেইখানে অস্থিরতা ও সমুদয় দুষ্কর্ম্ম থাকে।

 আপনি যখন কারও প্রতি ঈর্ষা করেন, তখন আপনি সেই ব্যক্তিকে পরোক্ষভাবে অভিশাপ দিয়ে থাকেন, কারণ আপনার সামনের ব্যক্তির সফলতায় আপনি খুশি নন।

ঈর্ষার কারণে অনেক সময় আমাদের মধ্যে এই ভাবনা আসে যে, ঈশ্বর আমার প্রতিবেশীকে অনেক আশীর্বাদ করেছেন, কিন্তু তিনি আমাকে আশীর্বাদ করেননি। আর এই ভাবনার জন্য আমরা ঈশ্বরের কাছে অনেক সময় অভিযোগও করি।

প্রেরিত পৌল আমাদেরকে আত্মার বশে চলবার জন্য আহ্বান করেছেন, কারণ আমরা যদি আত্মার বশে চলতে শুরু করি, তবে ঈর্ষা আমাদের অন্তর থেকে দূর হবে।

গালাতীয় ৫ অধ্যায় ২২ থেকে ২৬ পদে পৌল লিখেছেন –

22 কিন্তু আত্মার ফল প্রেম, আনন্দ, শান্তি, দীর্ঘসহিষ্ণুতা, মাধুর্য্য, মঙ্গলভাব23 বিশ্বস্ততা, মৃদুতা, ইন্দ্রিয়দমন; এই প্রকার গুণের বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নাই। 24 আর যাহারা খ্রীষ্ট যীশুর, তাহারা মাংসকে তাহার মতি ও অভিলাষ শুদ্ধ ক্রুশে দিয়াছে। 25 আমরা যদি আত্মার বশে জীবন ধারণ করি, তবে আইস, আমরা আত্মার বশে চলি26 অনর্থক দর্প না করি, পরস্পরকে জ্বালাতন না করি, পরস্পর হিংসাহিংসি না করি।

যদি আমরা আত্মার বশে চলি, তবে আমরা আত্মার সমস্ত গুনগুলিও লাভ করব। আমাদের মধ্য থেকে শারীরিক অভিলাষগুলি দূর হবে।

যাকোব ৩ অধ্যায় ১৪ থেকে ১৫ পদে লেখা আছে –

14 কিন্তু তোমাদের হৃদয়ে যদি তিক্ত ঈর্ষা ও প্রতিযোগিতা রাখ, তবে সত্যের বিরুদ্ধে শ্লাঘা করিও না ও মিথ্যা কহিও না। 15 সেই জ্ঞান এমন নয়, যাহা উপর হইতে নামিয়া আইসে, বরং তাহা পার্থিব, প্রাণিক, পৈশাচিক।

 

ঈর্ষা নামক গুনটি কখনই ঈশ্বরের কাছ থেকে আসে না, ঈর্ষা একটি পার্থিব গুন, যা আমাদের আত্মীক ভাবে বৃদ্ধি লাভ করার ক্ষেত্রে বাঁধার সৃষ্টি করে।

অতএব, যদি আপনি ঈশ্বরকে জানার পরেও অন্যের প্রতি ঈর্ষা করে থাকেন, তবে আজই আপনি ঈশ্বরের নিকটে অনুতাপ করুন, অন্যের প্রতি ঈর্ষা বা হিংসা ত্যাগ করুন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করুন। ঈশ্বর আপনাকে ভালোবাসেন, তাই আপনি তাঁর আজ্ঞাবহতার মধ্যে নিজের জীবন অতিবাহিত করুন।

ঈশ্বরের আশীর্বাদ আপনাদের সহবর্তী হোক, আমেন।


Tags:- 

Christian Articles, বাংলা খ্রীষ্টীয় নিবন্ধ, bsbbca, bibleshikshabhaskar, BSB Ministry, Bengali Christian Blog, Bangla Gospel, Bengali Gospel, Preaching in Bengali Language, Bible Based Articles, বাংলা প্রচার, বাংলা যীশুর প্রচার, Bangla Christiyo Christio Khristiyo Khristio Prochar, BSB Gospel, Gospel Articles, Bangla Nibondho, Gospel Online, Online Gospel, বাইবেল প্রচার, বাইবেলের বাক্য, BSB Evangelical Team, Blogger, Jesus Christ, যীশু খ্রীষ্ট, Jealousy, Envy, Anger, 

0 Comments