আজ আমরা এই নিবন্ধটির মাধ্যমে আমাদের জীবনের সাথে জড়িত কিছু গভীর ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্বন্ধে আলোচনা করতে চলেছি। আপনি যদি একজন যুবক অথবা যুবতী হয়ে থাকেন, তবে এই সমস্ত বিষয়গুলি আপনার অবশ্যই জানার প্রয়োজন রয়েছে।

১. সফলতার পেছনে নয়, বরং ঈশ্বরের পেছনে দৌড়ানো উচিতঃ-

আজকাল প্রায় সকলেই সফলতার পেছনে দৌড়ে চলেছে। যে কোনও প্রকারে মানুষ আজ সফলতার মুখ দেখার জন্য সচেষ্ট হয়ে রয়েছে, কিন্তু মানুষ ভুলে গিয়েছে যে, ঈশ্বরের থেকে বড়ো সফলতার অস্তিত্ব বাস্তবে নেই। মানুষ সফলতার পেছনে তো দৌড়ে চলেছেই, কিন্তু তারা পাপের মধ্যে ডুবে রয়েছে এবং সেখান থেকে বের হয়ে আসার কোনও ইচ্ছা তাদের মধ্যে প্রকাশ হয়ে ওঠে না।

আজ আপনি যদি সফলতা পেয়ে যান এবং ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরে যান, তবে আপনার কি লাভ হতে পারে ?

মথি ১৬ অধ্যায় ২৬ পদে প্রভু যীশু বলেছেন –

বস্তুতঃ মনুষ্য যদি সমুদয় জগৎ লাভ করিয়া আপন প্রাণ হারায়, তবে তাহার কি লাভ হইবে? কিম্বা মনুষ্য আপন প্রাণের পরিবর্ত্তে কি দিবে

রাজা আলেকজান্ডার (Alexander the Great) পৃথিবীর প্রায় ৯০ শতাংশ জয় করে ফেলেছিলেন, কিন্তু মৃত্যুর আগে তার শেষ ইচ্ছে ছিল যেন কফিন বাক্স থেকে তার খালি হাতদুটি বের করে রাখা হয়। তার উদ্দেশ্য ছিল সারা বিশ্বকে একটি সংবাদ দেওয়া, সেটি হল – মানুষের মৃত্যু ঘটলে সে এই পৃথিবী থেকে কোনও কিছুই তার সাথে নিয়ে যেতে পারে না, প্রত্যেকে যেমন খালি হাতে জন্ম নেয়, ঠিক তেমনই প্রত্যেককে খালি হাতেই এই পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিতে হবে।

আমাদের অবশ্যই মনে রাখা দরকার যে, আমাদের জাগতিক সফলতা কখনই চিরস্থায়ী নয়, আর আমরা চাইলেও মৃত্যুর পর এগুলি আমাদের সাথে করে নিয়ে যেতে পারব না।

মৃত্যুর পর শুধুমাত্র আমরা ঈশ্বরের সম্মুখীন হব, আমাদের সফলতাগুলি নয়।

তাই আজ যখন আপনার হাতে সময় রয়েছে, তখন আপনি ঈশ্বরের গৌরব, প্রশংশা ও মহিমার জন্য সেই সময় ব্যবহার করুন এবং তাঁর বাক্যে বৃদ্ধিলাভ করুন।

যোষেফ, দানিয়েল, তিমথি সহ বাইবেলে আমরা প্রায় অনেকের নামই পেয়ে থাকি, যারা তাদের যৌবন বয়সে সফলতার পেছনে দৌড়াননি, বরং ঈশ্বরের পেছনেই দৌড়েছিলেন।

যখন আপনি ঈশ্বরের পেছনে দৌড়াতে শিখবেন, তখন তিনিই আপনাকে সফল করবেন এবং আপনাকে ব্যবহার করবেন।

যোষেফ ঈশ্বরের পেছনে দৌড়েছিলেন, সেই কারণে ঈশ্বর তাকে মিশর দেশের অধ্যক্ষ বানিয়েছিলেন; দাউদ ঈশ্বরকে ভয় করতেন, সেই কারণে ঈশ্বর তাকে ইস্রায়েলের রাজা হিসেবে মনোনীত করেছিলেন; দানিয়েল ঈশ্বরের পথে চলতেন, সেই জন্য ঈশ্বর দানিয়েলকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে নিজের সত্যতা সমগ্র বাবিলনের মানুষদের কাছে প্রকাশ করেছিলেন।

     আমরা এটা কখনই বলছি না যে, আপনাদের পরিশ্রম করার কোনও প্রয়োজন নেই, বরং আমরা আপনাদের এটাই বলতে চাইছি যে, আপনাদের জীবনে সমস্ত কিছুর তুলনায় ঈশ্বরকে স্থান দেওয়ার প্রয়োজন বেশী রয়েছে।

২. আত্মীক বন্ধুদের বা আত্মীক মানুষদের সাথে সমবেত হওয়া আবশ্যকঃ-

যৌবন বয়স ঈশ্বরের একটি উপহার। এই সময়ে আমাদের শরীরে কঠোর ভাবে পরিশ্রম করার সক্ষমতা থাকে। এই বয়সেই আমরা আমাদের জীবনে অনেক ধরণের ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি, যার প্রভাব ভবিশ্যতে প্রকাশ পায়। এছাড়া যৌবন বয়সে খারাপ সঙ্গ দ্বারা মানুষের জীবন নষ্ট হয়ে যায়।

১ করিন্থীয় ১৫ অধ্যায় ৩৩ পদে প্রেরিত পৌল লিখেছেন –

ভ্রান্ত হইও না, কুসংসর্গ শিষ্টাচার নষ্ট করে। 

এছাড়া হিতোপদেশ ১৩ অধ্যায় ২০ পদে লেখা আছে –

জ্ঞানীদের সহচর হও, জ্ঞানী হইবে; কিন্তু যে হীনবুদ্ধিদের বন্ধু, সে ভগ্ন হইবে।

যৌবন বয়সে আমাদের উচিত যেন আমরা যাচাই করে দেখি আমাদের সঙ্গ ঠিক আছে কি না। আমাদের সঙ্গ যদি আমাদেরকে ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়, তবে অবিলম্বে আমাদের সেই সঙ্গ ত্যাগ করে  আত্মীক মানুষদের সাথে সমবেত হওয়ার চেষ্টা করা প্রয়োজন।

৩. যৌবন বয়সের অভিলাষ থেকে পলায়ন করুনঃ-

যুবক-যুবতীদের সব থেকে বড়ো দুর্বলতা হল – ব্যভিচার, আর শয়তান এই ব্যভিচারকেই তার প্রধান অস্ত্র হিসেবে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে চলেছে।

২ তীমথিয় ২ অধ্যায় ২২ পদে লেখা আছে –

কিন্তু তুমি যৌবনকালের অভিলাষ হইতে পলায়ন কর; এবং যাহারা শুচি হৃদয়ে প্রভুতে ডাকে, তাহাদের সহিত ধার্ম্মিকতা, বিশ্বাস, প্রেম ও শান্তির অনুধাবন কর।

 

এবং যাকোব ৪ অধ্যায় ৭ পদে লেখা আছে –

অতএব তোমরা ঈশ্বরের বশীভূত হও; কিন্তু দিয়াবলের প্রতিরোধ কর, তাহাতে সে তোমাদের হইতে পলায়ন করিবে।

 

কত আশ্চর্যের বিষয়!

শয়তানের বিষয়ে বাইবেল বলে তার প্রতিরোধ করতে, কিন্তু শারীরিক অভিলাষ সম্পর্কে বাইবেল বলে সেগুলি থেকে পলায়ন করতে।

বন্ধুরা, শয়তানের সাথে লড়াই করা যতটা কঠিন, তার থেকেও অনেক বেশী কঠিন শারীরিক অভিলাষগুলি থেকে নিজেকে রক্ষা করা।

রাজা দাউদ সিংহকে পরাজিত করেছিলেন, গলিয়াতকেও পরাজিত করেছিলেন এবং অনেক রাজ্য জয় করেছিলেন, কিন্তু বৎশেবার সৌন্দর্যের কাছে তিনি তার শারীরিক অভিলাষের কারণে পরাজিত হয়েছিলেন।

শিম্‌শোন (Samson) একজন শক্তিশালী যোদ্ধা ছিলেন, পলেষ্টীয়দের পরাজিত করার জন্য তিনি একাই যথেষ্ট ছিলেন, কিন্তু তার প্রেমিকা দলীলার জন্য তিনি পলেষ্টীয়দের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন।

কিন্তু যোষেফ এই ধরণের ব্যক্তি ছিলেন না। যখন পোটীফরের স্ত্রী তাকে তার সাথে শয়ন করার জন্য জোর-জবরদস্তি করছিলেন, তখন তিনি তার বস্ত্র সেখানে ফেলে রেখে সেখান থেকে পলায়ন করেছিলেন।

     আর পবিত্র বাইবেল আমাদের এরকমটাই শিক্ষা দান করে, যেন আমরা প্রলোভন ও শারীরিক অভিলাষগুলি থেকে পলায়ন করতে পারি।

৪. আমাদের জীবন সীমিত, সেটি অবশ্যই মনে রাখা প্রয়োজনঃ-

আমাদের জীবনের সময়সীমা অতি সামান্য। আমরা এই পৃথিবীতে খুব জোর ৭০-৮০ বছর পর্যন্ত জীবিত থাকব, তারপর আমাদের জীবনের সমাপ্তি ঘটবে। এইজন্য আমরা এমনভাবে আমাদের জীবন অতিবাহিত করব না, যেন মনে হয় আমরা অমর।

আমরা চিরকালের জন্য এই পৃথিবীতে আসিনি, বরং কিছু দিনের জন্যই এসেছি।

গীতসংহিতা ১০৩ এর গীত ১৫ থেকে ১৬ পদে লেখা আছে –

15 মর্ত্ত্য, তাহার আয়ু তৃণ সদৃশ;

যেমন মাঠের পুষ্প, তেমনি সে প্রফুল্ল হয়।

16 তাহার উপর দিয়া বায়ু বহিলেই সে আর নাই,

তাহার স্থানও তাহাকে আর চিনিবে না।

 

এছাড়া যাকোব ৪ অধ্যায় ১৪ পদে লেখা আছে –

তোমরা ত কল্যকার তত্ত্ব জান না; তোমাদের জীবন কি প্রকার? তোমরা ত বাষ্পস্বরূপ, যাহা ক্ষণেক দৃশ্য থাকে, পরে অন্তর্হিত হয়।

 

আমাদের জীবন সীমিত হওয়ার কারণে আমাদের উচিত যেন আমরা আমাদের যৌবন বয়স থেকেই ঈশ্বরের গৌরব করি। আমরা আজ জীবিত রয়েছি ঠিকই কিন্তু কাল নাও থাকতে পারি, সেইজন্য ঈশ্বরের সান্নিধ্যে আসার ক্ষেত্রে বৃদ্ধ বয়সের অপেক্ষা করা বৃথা।

ইয়োব ১৪ অধ্যায় ১ থেকে ২ পদে লেখা আছে –

1 মনুষ্য, অবলাজাত সকলে, অল্পায়ু ও উদ্বেগে পরিপূর্ণ।

2 সে পুষ্পের ন্যায় প্রস্ফুটিত হইয়া ম্লান হয়,

সে ছায়ার ন্যায় চলিয়া যায়, স্থির থাকে না;

 

৫. আপনি আপনার যৌবনকাল থেকেই সৃষ্টিকর্তাকে স্মরনে রাখুনঃ-

উপদেশক ১২ অধ্যায় ১ পদে লেখা আছে –

আর তুমি যৌবনকালে আপন সৃষ্টিকর্ত্তাকে স্মরণ কর, যেহেতু দুঃসময় আসিতেছে, এবং সেই বৎসর সকল সন্নিকট হইতেছে, যখন তুমি বলিবে, ইহাতে আমার প্রীতি নাই।

এই পদটি দ্বারা আমাদের কোনও পরামর্শ দেওয়া হয়নি, বরং এটি আমাদের প্রত্যেকের জন্য একটি আজ্ঞা।

আমাদের মধ্যে অনেকেই মনে করে থাকেন যে, আমরা বৃদ্ধ বয়সে ঈশ্বরের সান্নিধ্যে আসবো, কিন্তু বাইবেল বলে সেই সময়ে আমাদের আর সেই ইচ্ছে থাকবে না।

একটি জাহাজকে কি উদ্দেশ্যে তৈরী করা হয়েছে, তা মানুষ জানে, এবং একটি বিমানকে কি উদ্দেশ্যে তৈরী করা হয়েছে, তাও মানুষের জানা, কারণ তা মানুষেরই সৃষ্টি; ঠিক সেরকমই মানুষের জীবনের সঠিক উদ্দেশ্য কেবলমাত্র ঈশ্বরই জানেন, কারণ তিনিই আমাদের সৃষ্টি করেছেন।

তাই এখনই সময়!

আপনি আপনার যৌবন বয়সেই সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করুন এবং তাঁর দেখানো পথে চলতে শুরু করুন, তাহলে আপনি আপনার জীবনের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে ভালোভাবে জ্ঞাত হবেন এবং ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভ করবেন।


Tags:- 

Christian Articles, বাংলা খ্রীষ্টীয় নিবন্ধ, bsbbca, bibleshikshabhaskar, BSB Ministry, Bengali Christian Blog, Bangla Gospel, Bengali Gospel, Preaching in Bengali Language, Bible Based Articles, বাংলা প্রচার, বাংলা যীশুর প্রচার, Bangla Christiyo Christio Khristiyo Khristio Prochar, BSB Gospel, Gospel Articles, Bangla Nibondho, Gospel Online, Online Gospel, বাইবেল প্রচার, বাইবেলের বাক্য, BSB Evangelical Team, Blogger, Jesus Christ, যীশু খ্রীষ্ট, Youth, Worship God, Purpose of life, Warning, Christian youth,

0 Comments