পুরাতন নিয়মে আমরা এত যুদ্ধের বর্ণনা কেন পাই ? | BSB Bengali Christian Articles
পুরাতন নিয়মে যিহোবা ঈশ্বর
দ্বারা অনুমতি প্রাপ্ত অনেক ধরণের যুদ্ধের বিবরণ আমরা পেয়ে থাকি, আর সেই কারণেই অনেকের
মনে এই প্রশ্নটি জেগে ওঠে, সেটি হল – নতুন নিয়মের প্রেমময় ঈশ্বরই কি সেই যিহোবা ঈশ্বর,
যার অনুমতিতে এতগুলি যুদ্ধ হয়েছিল এবং যেগুলির বর্ণনা আমরা আজও পেয়ে থাকি ?
পুরাতন নিয়মের মধ্যে এমন কিছু পদ রয়েছে, যেগুলি
ঈশ্বরের প্রেমময় চরিত্রের বিরোধিতা করছে বলে মনে হয়।
তো আসুন আমরা এই ধরণের
কিছু পদ দেখি এবং এই বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে অধ্যায়ন করি।
উদাহরণস্বরূপ, দ্বিতীয় বিবরণ ২০ অধ্যায়ে সদাপ্রভু ঈশ্বর প্রদত্ত যুদ্ধের বিষয়ে কিছু আদেশ ও নির্দেশাবলী রয়েছে।
দ্বিতীয় বিবরণ ২০
অধ্যায় ১০ থেকে ১৩ পদে লেখা
আছে –
10 যখন তুমি কোন নগরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতে তাহার নিকটে উপস্থিত হইবে, তখন তাহার কাছে সন্ধির কথা ঘোষণা
করিবে। 11 তাহাতে যদি সে সন্ধি করিতে সম্মত
হইয়া তোমার জন্য দ্বার খুলিয়া দেয়, তবে সেই নগরে যে সমস্ত লোক পাওয়া
যায়, তাহারা তোমাকে কর দিবে, ও তোমার দাস হইবে। 12 কিন্তু যদি সে সন্ধি না করিয়া তোমার সহিত যুদ্ধ করে, তবে তুমি সেই নগর অবরোধ করিবে। 13 পরে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তাহা তোমার হস্তগত করিলে তুমি তাহার
সমস্ত পুরুষকে খড়গধারে আঘাত করিবে,
এছাড়াও সেই একই অধ্যায়ের
১৬ থেকে ১৭ পদে লেখা আছে –
16 কিন্তু এই জাতিদের যে সকল নগর তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু অধিকারার্থে
তোমাকে দিবেন, সেই সকলের মধ্যে শ্বাসবিশিষ্ট কাহাকেও জীবিত রাখিবে না; 17 তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর আজ্ঞানুসারে তাহাদিগকে—হিত্তীয়, ইমোরীয়, কনানীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়দিগকে—নিঃশেষে
বিনষ্ট করিবে;
সম্ভবত আপনার এই কথাটি
মনে থাকতে পারে যে, কীভাবে যিরীহো নগরের প্রাচীরটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিল এবং তারপর তারা
কি করেছিল!
যিহোশূয় ৬ অধ্যায়
২১ পদে লেখা আছে –
আর
তাহারা খড়গধারে নগরের স্ত্রী পুরুষ আবাল বৃদ্ধ এবং গো, মেষ ও গর্দ্দভ সকলই নিঃশেষে বিনষ্ট করিল।
এই পদগুলি অধ্যায়ন করলে
আমরা কোনও প্রকার সন্দেহ ছাড়াই স্পষ্টভাবে নিষ্ঠুরতা এবং প্রতিহিংসা খুঁজে পাই।
যেমনটা ধরুন, যিহোশূয়
১১ অধ্যায় ২০ পদে লেখা আছে –
কারণ
তাহাদের হৃদয়ের কঠিনীকরণ সদাপ্রভু হইতে হইয়াছিল, যেন
তাহারা ইস্রায়েলের সহিত যুদ্ধ করে, আর তিনি তাহাদিগকে নিঃশেষে
বিনষ্ট করেন, তাহাদের প্রতি দয়া না করেন, কিন্তু
তাহাদিগকে সংহার করেন; যেমন সদাপ্রভু মোশিকে আজ্ঞা করিয়াছিলেন।
আজ যখন আমরা আমাদের একবিংশ
শতাব্দীর দৃষ্টিকোণ থেকে এই সমস্ত কিছুর বিচার করি, তখন আমাদের মনে হয় যে, ‘এই সমস্ত
যুদ্ধ ও ধংসের মধ্য দিয়ে কি লাভ হয়েছিল ?’
কিন্তু যদি আমরা ভালোভাবে
লক্ষ্য করি, তবে আমরা এর ভিন্ন দিকটিও উপলব্ধি করতে পারব, যা সদাপ্রভু ঈশ্বরকে একজন
করুনাময় ঈশ্বর হিসেবে উপস্থাপন করে।
যিহিস্কেল ১৮ অধ্যায়
২১ এবং ২৩ পদ যদি আমরা দেখি,
তবে সেখান থেকে আমরা জানতে পারব যে, ঈশ্বর সত্যিই আমাদের জন্য করুণাময় এবং তিনি চান
যেন দুষ্ট লোকেরা পাপ থেকে মন পরিবর্তন করে তাঁর আজ্ঞা সকল পালন করে।
যিহিস্কেল ১৮ অধ্যায়
২৩ পদে লেখা আছে –
দুষ্ট
লোকের মরণে কি আমার কিছু সন্তোষ আছে? ইহা প্রভু সদাপ্রভু কহেন; বরং সে আপন কুপথ হইতে ফিরিয়া বাঁচে, ইহাতে কি
আমার সন্তোষ হয় না?
এবং যিহিস্কেল ১৮ অধ্যায়
৩২ পদে লেখা আছে –
কারণ যে
মরে, তাহার মরণে আমার কিছু সন্তোষ নাই, ইহা প্রভু সদাপ্রভু বলেন; অতএব তোমরা মন ফিরাইয়া বাঁচ।
ঈশ্বর দুষ্টদের দণ্ড দেওয়ার
জন্য সর্বদাই প্রস্তুত রয়েছেন, কিন্তু তিনি চান যেন সকলেই দুষ্টতার পথ ত্যাগ করে তাঁর
আজ্ঞা পালনকারী হয়ে ওঠে। তিনি কখনই কাউকে শাস্তি দিয়ে আনন্দিত হন না, বরং তিনি দুঃখিতই
হন, আর সেই জন্যই তিনি আমাদের সুযোগ দিয়ে চলেছেন। কিন্তু কখনও কখনও এমন সময় আসে, যখন
পাপ ও মন্দতার পরিমাণ অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে যায়, আর তখন ঈশ্বর সেগুলিকে সম্পূর্ণরূপে
ধ্বংস করে থাকেন।
আমাদের উচিত যেন আমরা এই ভয়ানক এবং কঠোর শাস্তিগুলিকে
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতির ওপর রেখে বিচার করি। সেই সময়ে মন্দতা এতটা পরিমাণে
বিস্তার লাভ করেছিল যে, অনৈতিকতা, চরিত্রের অবক্ষয় এবং অসভ্যতা মানুষের জীবনের প্রতিটি
ক্ষেত্রে তাদের কর্তৃত্বকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল।
পুরাতন নিয়মের বিবরণ অনুযায়ী
আমরা জানতে পারি যে, বাচ্চা শিশুদের তখন পৌত্তলিক দেবদেবীদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা
হত (উদাহরণস্বরূপ ২ রাজাবলি ১৭ অধ্যায় ৩১ পদ), ধর্মীয় পরম্পরার অংশ হিসেবে পুরুষ
ও মহিলাদের বেশ্যাবৃত্তি মন্দিরের ভেতরেই শুরু হয়েছিল (উদাহরণস্বরূপ আমোষ ২ অধ্যায়
৭ থেকে ৮ পদ), সামাজিক জীবন সেই সময় সম্পূর্ণরূপে অশুদ্ধতায় পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল,
মন্দতা সংক্রামকরূপে ছড়িয়ে পরেছিল, যার দরুন সদাপ্রভু ঈশ্বরের বাধ্য সন্তানদের মধ্যেও
তা সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি ছিল, কিন্তু অবশেষে ভয়ানক ন্যায়বিচার ঈশ্বর দ্বারা প্রকাশ
পেয়েছিল।
ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে অনেকে পৌত্তলিক ধর্মীয় সম্প্রদায়ের
সদস্যদের কন্যাদের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল (উদাহরণস্বরূপ ১ রাজাবলি ১ থেকে
৩ পদ, নহিমিয় ১৩ অধ্যায় ২৩ পদ, ইষ্রা ৯ অধ্যায়
২ পদ), আর এই কারণেই ঈশ্বরের
সন্তানগণের জন্য পৌত্তলিক ধর্মীয় রীতিনীতি গ্রহণের ঝুকি ছিল, যা বিকৃত এবং ব্যভিচারে
পরিপূর্ণ ছিল এবং একসময়ে সেই ঝুঁকি অত্যন্ত প্রবল হয়ে ওঠে, যার দরুন ঈশ্বরকে ন্যায়
করতে হয়।
সম্পূর্ণ বাইবেল (শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত) ন্যায়বিচারের
সাথে সাথে অনুগ্রহের পথও আমাদের জ্ঞাত করে, যা অপরিবর্তনশীল।
প্রভু যীশু দুষ্কর্মকারীদের ও কঠিন হৃদয়ের মানুষদের
শাস্তি সম্পর্কে আমাদের স্পষ্টভাবেই জানিয়েছেন।
মথি ২৫ অধ্যায় ৪১
পদে লেখা আছে –
পরে তিনি
বামদিকে স্থিত লোকদিগকেও বলিবেন, ওহে শাপগ্রস্ত সকল, আমার নিকট হইতে দূর হও, দিয়াবলের ও তাহার দূতগণের জন্য
যে অনন্ত অগ্নি প্রস্তুত করা গিয়াছে, তাহার মধ্যে যাও।
আমাদের সমাজ দুর্দশা এবং
শাস্তির বিষয়ে শুনতে আগ্রহী নয়। তারা এমন একজন কাল্পনিক যীশুকে পছন্দ করেন, যিনি সম্পূর্ণ
নম্র, প্রেমময়, শান্ত এবং ক্রোধহীন। আজকাল এমন অনেক লেখকদের দেখতে পাওয়া যায়, যারা
ঠিক এমন একজন কাল্পনিক যীশুকে সমাজে উপস্থাপন করে চলেছেন।
তবে বাইবেলের ঈশ্বর অপরিবর্তনশীল,
আর সেই দৃঢ় প্রতিশ্রুতির মধ্যেই আমাদের আশা টিকে রয়েছে।
এটি অত্যন্ত পরিস্কার
এবং স্পষ্ট যে, আমরা আদমের পাপের কারণে আমাদের নিখুঁত পরিপূর্ণতার চরিত্রটি হারিয়ে
ফেলেছি। আমরা প্রত্যেকেই হোঁচট খেয়ে থাকি, আমাদের প্রত্যেকের দ্বারাই পাপ হয়, এমনকি
একজন ধার্মিক ব্যক্তিও এই বিষয়টিকে বারংবার নিশ্চিত করে থাকেন।
পুরাতন নিয়ম হল এই জগতের
পরিস্থিতির ওপর ঈশ্বরের হস্তক্ষেপের একটি বিবরণ, যার সাথে একটি নতুন আশার প্রতিশ্রুতি
রয়েছে, এবং নতুন নিয়ম হল পাপ ও বিদ্রোহে পরিপূর্ণ মানুষদের ওপর ঈশ্বরের অনুগ্রহের বিবরণ,
যা প্রভু যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা এসেছে।
পরিত্রাণের পথ প্রস্তুত
করার জন্য ঈশ্বরের কোনও বাধ্যবাধকতা ছিল না, তবে তাঁর পূর্ব নির্ধারিত এমন একটি উজ্জ্বল
পরিকল্পনা ছিল, যা শব্দ দ্বারা বর্ণনা করা যায় না।
ঈশ্বর আমাদের জগতের মানুষদের
জন্য যে পথ প্রস্তুত করেছেন, সেই পথকে যদি মানুষ উপেক্ষা করে পাপেই জীবনযাপন করতে থাকে,
তবে ঈশ্বরের ন্যায়বিচার এখনও সমানভাবে কার্যকর হবে।
পুরাতন নিয়মে যেমন আমরা
বিভিন্ন প্রকার পাপের ও মন্দতার বর্ণনা পাই, সেই ধরণের মন্দতা আজও আমাদের এই সমাজে
টিকে রয়েছে। তাই যেমন সেই সময়ের মানুষদের ওপর ঈশ্বরের ক্রোধ নেমে এসেছিল, ঠিক সেইরকম
অন্তিম সময়েও ঈশ্বরের ক্রোধ মানুষের ওপর নেমে আসবে।
ঈশ্বর তাঁর প্রিয় পুত্র
প্রভু যীশুকে মানবজাতির পাপের বলিরূপে প্রেরণ করেছিলেন, যা তাঁর পূর্বপরিকল্পিত ছিল।
যেহেতু ঈশ্বর চান না যে কেউ বিনষ্ট হয়, তাই তিনি একটি সুযোগ আমাদের করে দিয়েছেন।
আমাদের এটি ভুলে গেলে
চলবে না যে, ঈশ্বর যেমন পুরাতন নিয়মে পাপীদের ও প্রতিমাপূজকদের ওপর ক্রোধ বর্ষণ করেছিলেন
এবং শাস্তি দিয়েছিলেন, ঠিক তেমনই অন্তিম সময়েও তিনি তাদের ওপর তাঁর ক্রোধ বর্ষণ করবেন
এবং শাস্তি দেবেন, যারা পাপের জন্য অনুতপ্ত হবে না এবং প্রভু যীশুকে ত্রাণকর্তা হিসেবে
স্বীকার করবে না।
ঈশ্বর তাঁর ক্রোধের মাঝে
অনুগ্রহের আলো জ্বালিয়েছেন, যার মধ্যে তাঁর প্রেমময় চরিত্র প্রকাশ পায়।
যোহন ৩ অধ্যায় ১৬
পদে লেখা আছে –
কারণ
ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।
তাই এখনই সময়! আমাদের মধ্যে যারা এখনও পাপের
মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করছি এবং ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে রয়েছি, তারা প্রভু যীশুর কাছে এসে বিনামূল্যে অনন্ত জীবনের অধিকারী হওয়ার সুযোগ গ্রহণ করুন।
[Source - Glory Apologetics,
Link - https://gloryapologetics.blogspot.com/2020/09/WarInOtHindi.html]
[Translated and Rearranged by - Evangelist Bhaskar Basak]
Tags:-
Christian Articles, বাংলা খ্রীষ্টীয় নিবন্ধ, bsbbca, bibleshikshabhaskar, BSB Ministry, Bengali Christian Blog, Bangla Gospel, Bengali Gospel, Preaching in Bengali Language, Bible Based Articles, বাংলা প্রচার, বাংলা যীশুর প্রচার, Bangla Christiyo Christio Khristiyo Khristio Prochar, BSB Gospel, Gospel Articles, Bangla Nibondho, Gospel Online, Online Gospel, বাইবেল প্রচার, বাইবেলের বাক্য, BSB Evangelical Team, Blogger, Jesus Christ, যীশু খ্রীষ্ট, old testament battle, why so much war in the old testament, old testament war,
0 Comments