আমাদের মধ্যে এমন অনেক খ্রীষ্ট বিশ্বাসী রয়েছেন, যারা এখনও পর্যন্ত সঠিকভাবে জানেন না যে, আমাদের দেশ অর্থাৎ ভারতবর্ষে খ্রীষ্ট বিশ্বাসের আগমন কীভাবে ঘটেছিল। এই দেশে এমন অনেক মানুষই রয়েছেন, যারা মনে করেন ব্রিটিশদের দ্বারা অথবা ইংরেজদের দ্বারা ভারতে খ্রীষ্ট বিশ্বাসের আগমন ঘটেছিল। তবে এই সমস্ত ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।

আজ আমরা এর আসল সত্যতা নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি।

প্রভু যীশু খ্রীষ্টের ১২ জন শিষ্য ছিলেন, সেটি আমরা প্রায় সকলেই জানি, আর সেই শিষ্যদের মধ্যে একজন, যার নাম থোমা (Thomas), তিনিই খ্রীষ্টের সুসমাচার ভারতে নিয়ে এসেছিলেন।

বাইবেলের নতুন নিয়মে থোমার উল্লেখঃ-

বাইবেলের নতুন নিয়মে মোট চারটি সুসমাচার পুস্তক রয়েছে, যেগুলি যীশু খ্রীষ্টের বিষয়ে আমাদের জ্ঞাত করে। সেই চারটি সুসমাচারের মধ্যে প্রথম তিনটি সুসমাচারে (মথি ১০ অধ্যায় ৩ পদ, মার্ক ৩ অধ্যায় ১৮ পদ, লুক ৬ অধ্যায় ১৪ পদ) প্রেরিত থোমার বিষয়ে সামান্য উল্লেখ পাওয়া যায়, তবে যোহন লিখিত সুসমাচারে প্রেরিত থোমার বিষয়ে বেশী উল্লেখ রয়েছে (যোহন ২০ অধ্যায় ২৮ পদ, ১৪ অধ্যায় ৫ পদ, ১১ অধ্যায় ১৬ পদ, ২০ অধ্যায় ২৪ পদ, ২১ অধ্যায় ২ পদ, ২০ অধ্যায় ২৬ পদ)। এছাড়াও প্রেরিত ১ অধ্যায় ১৩ পদে প্রেরিত থোমার নাম উল্লিখিত রয়েছে।

আসুন আমরা প্রেরিত থোমা সম্পর্কে কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করি।

১. প্রেরিত থোমা ছিলেন প্রভু যীশু খ্রীষ্টের একজন বিশ্বস্ত অনুসারীঃ-

যোহন ১১ অধ্যায়ে আমরা লাসার নামক একজন ব্যক্তির অসুস্থতা এবং মৃত্যুর বিবরণ পাই, যাকে প্রভু যীশু ভালোবাসতেন। তিনি লাসারের অসুস্থতা ও মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে তাঁর শিষ্যদের নিয়ে যিহূদীয়ায় যাবার জন্য মনস্থির করেছিলেন। তবে শিষ্যদের মধ্যে থোমা ব্যতিত প্রত্যেকেই সেখানে যাওয়ার জন্য ভীত হয়েছিলেন, কারণ পূর্বে সেখানকার যিহূদীরা যীশুকে পাথর মারার চেষ্টা করেছিল।

যোহন ১১ অধ্যায় ১৬ পদে লেখা আছে –

তখন থোমা, যাঁহাকে দিদুমঃ [যমজ] বলে, তিনি সহ-শিষ্যদিগকে কহিলেন, চল, আমরাও যাই, যেন ইহাঁর সঙ্গে মরি।

 

এই পদ থেকে প্রমাণিত হয় যে, থোমা একজন বিশ্বস্ত ও নির্ভীক শিষ্য ছিলেন।

২. প্রেরিত থোমা ছিলেন একজন জিজ্ঞাসু ও কৌতূহলী শিষ্যঃ-

যোহন ১৪ অধ্যায় ৪ পদে প্রভু যীশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন –

আর আমি যেখানে যাইতেছি, তোমরা তাহার পথ জান।

 

আর প্রভুর এই কথা শোনার পর প্রেরিত থোমা জিজ্ঞাসা করেছিলেন –

প্রভু, আপনি কোথায় যাইতেছেন, তাহা আমরা জানি না, পথ কিসে জানিব? (যোহন ১৪ অধ্যায় ৫ পদ)

 

তখন যীশু তাদের সকলের কাছে নিজেকে প্রকাশ করে বলেছিলেন –

আমিই পথ ও সত্য ও জীবন; আমা দিয়া না আসিলে কেহ পিতার নিকটে আইসে না। (যোহন ১৪ অধ্যায় ৬ পদ)

 

এছাড়াও প্রভু যীশুর পুনরুত্থানের পর প্রেরিত থোমা প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেননি যে, বিষয়টি সত্য, প্রভু পুনরুত্থিত হয়েছেন।

যোহন ২০ অধ্যায় ২৪ থেকে ২৫ পদে লেখা আছে –

24 যীশু যখন আসিয়াছিলেন, তখন থোমা, সেই বারো জনের এক জন, যাঁহাকে দিদুমঃ বলে, তিনি তাঁহাদের সঙ্গে ছিলেন না। 25 অতএব অন্য শিষ্যেরা তাঁহাকে কহিলেন, আমরা প্রভুকে দেখিয়াছি। কিন্তু তিনি তাঁহাদিগকে বলিলেন, আমি যদি তাঁহার দুই হাতে প্রেকের চিহ্ন না দেখি, ও সেই প্রেকের স্থানে আমার অঙ্গুলি না দিই, এবং তাঁহার কুক্ষিদেশ মধ্যে আমার হাত না দিই, তবে কোন মতে বিশ্বাস করিব না।

 

 

এই সমস্ত ঘটনার পর প্রভু যীশু যখন থোমাকে দর্শন দিলেন, তখন তিনি বলে উঠলেন –

প্রভু আমার, ঈশ্বর আমার! (যোহন ২০ অধ্যায় ২৮ পদ)

 

প্রেরিত থোমার ভারতে আগমনঃ-



প্রভু যীশু খ্রীষ্টের পুনরুত্থান ও স্বর্গারোহণের পর পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হয়ে প্রেরিত থোমা জেরুশালেম থেকে দক্ষিণ ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিলেন। ৫২ খ্রীষ্টাব্দ নাগাদ তিনি কেরালার মালাবর উপকূলে এসে পৌঁছেছিলেন বলে জানা যায়। সেখান থেকেই তিনি সুসমাচার প্রচারকার্য শুরু করেন। তিনি পাকালোমাত্তোম, সংকরপুরি, থইয়িল, পাইপ্যাপিলি, কল্লী, কালিয়ানঙ্কাল এবং পাতামুক্কু নাম কয়েকটি পরিবারকে বাপ্তিস্ম দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি মোট সাতটি গীর্জা প্রতিষ্ঠিত করেন, সেগুলি কোডুঙ্গল্লুর, পলয়ূর, কোট্টাক্কাভু (পরাভুর), কোকামঙ্গালাম, নীরনাম, নীলকল (ছায়াল), কোল্লাম এবং তিরুভিথামকোডে রয়েছে।



প্রেরিত থোমার মৃত্যুঃ-



৭২ খ্রীষ্টাব্দ নাগাদ থোমা তামিলনাডুর ময়লাপুরে এসে পৌঁছান, সেখানেও তিনি প্রভু যীশুর সুসমাচার প্রচার করেছিলেন এবং অনেকেই সুসমাচার শুনে প্রভু যীশুকে তাদের ত্রাণকর্তা হিসেবে স্বীকার করেছিল। কিন্তু এমন অনেকেই ছিল, যারা তার প্রচারকার্য পছন্দ করেনি, তারা প্রেরিত থোমাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সেই কারণে থোমা নিজেকে একটি ছোট্ট পাহাড়ের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিলেন, যেখানে প্রার্থনারত অবস্থায় তাকে বর্শা দিয়ে হত্যা করা হয়।

প্রেরিত থোমার সমাধিঃ-



প্রেরিত থোমার সমাধি এখন স্যান থোম চার্চে রয়েছে, যা সেইন্ট থমাস ক্যাথেড্রাল বেসিলিকা নামেও পরিচিত, এটি চেন্নাইয়ের মেরিনা সমুদ্র সৈকতের পাশে অবস্থিত।

     এই সমস্ত ইতিহাস প্রমাণ করে যে, খ্রীষ্ট বিশ্বাস কোনও ইংরেজ ব্যক্তির দ্বারা ভারতে প্রসার লাভ করেনি, বরং প্রভু যীশুর প্রধান ১২ জন শিষ্যদের মধ্যে একজন প্রেরিতের দ্বারাই প্রসার লাভ করেছিল।

 

উল্লেখ্য, ২-রা ডিসেম্বর ১৯৬৪ সালে ভারতের ডাক ও টেলিগ্রাফ বিভাগ দ্বারা প্রেরিত থোমার নামে ডাকটিকিট ও স্ট্যাম্প তৈরী করা হয়েছিল। 




[Source - Stand for Satya, 

Link - https://standforsatya.blogspot.com/2021/03/stand-for-satya.html]

[External Sources - 

1. https://en.wikipedia.org/wiki/Thomas_the_Apostle

2. https://en.wikipedia.org/wiki/St._Thomas_Cathedral_Basilica,_Chennai#:~:text=His%20mortal%20remains%20were%20believed,Thomas.

3. https://www.istampgallery.com/st-thomas/

[Translated and Rearranged by - Evangelist Bhaskar Basak]



Tags:- 

Christian Articles, বাংলা খ্রীষ্টীয় নিবন্ধ, bsbbca, bibleshikshabhaskar, BSB Ministry, Bengali Christian Blog, Bangla Gospel, Bengali Gospel, Preaching in Bengali Language, Bible Based Articles, বাংলা প্রচার, বাংলা যীশুর প্রচার, Bangla Christiyo Christio Khristiyo Khristio Prochar,  bsbbca blog, BSB Gospel, Gospel Articles, Bangla Nibondho, Gospel Online, Online Gospel, বাইবেল প্রচার, বাইবেলের বাক্য, BSB Evangelical Team, Blogger, Jesus Christ, যীশু খ্রীষ্ট, historical records, christianity in india, saint thomas, christianity came in india, history of indian christianity,

0 Comments