প্রভু যীশু যখন ক্রুশের ওপরে ছিলেন, তখন ইহুদী ধর্মগুরু ও ফরিশীগণ তাঁকে বিদ্রূপ করে বলেছিলেন –

29 ওহে, তুমি না মন্দির ভাঙ্গিয়া ফেল, আর তিন দিনের মধ্যে গাঁথিয়া তুল! 30 আপনাকে রক্ষা কর, ক্রুশ হইতে নাম। (মার্ক ১৫ অধ্যায় ২৯ এবং ৩০ পদ)

ঠিক এই প্রকারে আজও অনেক মানুষ খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের সামনে এই প্রশ্নটি নিয়ে আসেন, তারা বলেন – যীশু যদি ঈশ্বর হন, তাহলে তিনি নিজেকে ক্রুশীয় মৃত্যু থেকে কেন রক্ষা করতে পারলেন না ?

এছাড়াও অনেকে বলেন – যীশু তো নিজেকেই রক্ষা করতে পারেননি, তাহলে তিনি তোমাদের কীভাবে রক্ষা করবেন ?

     কিন্তু তারা এই বিষয়টি বোঝেন না যে, যদি প্রভু যীশু ক্রুশ থেকে নেমে আসতেন, তাহলে বাস্তবে কি সত্যিই আমরা রক্ষা পেতাম ? আমাদের পাপের কি ক্ষমা হত ?

প্রভু যীশু যদি ইচ্ছে করতেন, তবে তিনি অবশ্যই ক্রুশ থেকে নেমে আসতে পারতেন, কিন্তু তিনি যদি নেমে আসতেন, তাহলে মানবজাতির মুক্তির নিমিত্ত পিতা ঈশ্বরের যে পরিকল্পনা ছিল, তা সম্পন্ন হত না।

গেৎশিমানী বাগানে যখন প্রভু যীশুকে বন্দি করার জন্য সৈন্যদল এসে উপস্থিত হয়েছিল, তখন প্রভু যীশুর শিষ্যদের মধ্য থেকে একজন খড়গ বের করে মহাযাজকের একজন দাসের কান কেটে ফেলেছিল।

মথি ২৬ অধ্যায় ৫২ থেকে ৫৪ পদে লেখা আছে –

52 তখন যীশু তাঁহাকে কহিলেন, তোমার খড়গ পুনরায় স্বস্থানে রাখ, কেননা যে সকল লোক খড়গ ধারণ করে, তাহারা খড়গ দ্বারা বিনষ্ট হইবে। 53 আর তুমি কি মনে কর যে, আমি আমার পিতার কাছে বিনতি করিলে তিনি এখনই আমার জন্য দ্বাদশ বাহিনী অপেক্ষা অধিক দূত পাঠাইয়া দিবেন না54 কিন্তু তাহা করিলে কেমন করিয়া শাস্ত্রীয় এই বচন সকল পূর্ণ হইবে যে, এরূপ হওয়া আবশ্যক?

ওপরের ৫৩ পদটি ভালোভাবে পাঠ করলে আমরা বুঝতে পারব যে, প্রভু যীশুর ক্ষমতা ঠিক কতখানি ছিল। তিনি যে শাস্ত্রীয় বচন পূর্ণ করতেই এই পৃথিবীতে দেহ ধারণ করেছিলেন, তা ৫৪ পদটিতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

     প্রভু যীশু যে ঈশ্বর, তা তিনি ক্রুশীয় যন্ত্রণা সহ্য করবার আগে অর্থাৎ গেৎশিমানী বাগানেই প্রমাণ করতে পারতেন, কিন্তু তাঁর উদ্দেশ্য সেরকম ছিল না।

এই জগতের লোকেরা ঈশ্বরের ক্ষমতার বিচার করতে পছন্দ করেন, কিন্তু ঈশ্বর যে প্রেমময় এবং ক্ষমাশীল, সেই দিকটি তারা প্রধানত উপেক্ষা করে থাকে। তাদের কাছে ঈশ্বরের ক্ষমতার বৈশিষ্ট্য হল – কাউকে ধ্বংস করা, কোনও রাজ্য জয় করা, শত্রুদের পরাজিত করা, পাপীদের বিনাশ করা, ইত্যাদি।

প্রভু যীশুর সময়ের লোকেরা তাঁকে রাজা হিসেবে দেখতে চেয়েছিল। তারা এমন একজন মসীহ বা খ্রীষ্টের অপেক্ষায় ছিল, যিনি শক্তিশালী যোদ্ধা হবেন এবং ইস্রায়েলের পক্ষে যুদ্ধ করবেন। কিন্তু তারা সেই মসীহ বা খ্রীষ্টকে চাননি, যিনি সকলের নিমিত্ত দুঃখ ও কষ্ট ভোগ করবেন।

আমরা যদি গীতসংহিতা ২২ অধ্যায় পাঠ করি, তবে আমরা সেই মসীহ বা খ্রীষ্টের সম্বন্ধে ভবিষ্যতবাণী দেখতে পাবো, যিনি জগতের মানুষদের জন্য দুঃখ ও কষ্ট ভোগ করতে পৃথিবীতে আসতে চলেছিলেন। আর সেই মসীহ বা খ্রীষ্ট হলেন প্রভু যীশু।

প্রভু যীশু হলেন একজন সত্যিকারের রাজা, কিন্তু তাঁর রাজত্ব এ জগতের নয়।

ইহুদীরা যখন প্রভু যীশুকে বিচারের জন্য পীলাতের কাছে নিয়ে গিয়েছিল, তখন পীলাত যীশুকে কিছু প্রশ্ন করেছিলেন, যেগুলির মধ্যে একটি প্রশ্ন আমরা যোহন ১৮ অধ্যায় ৩৩ পদে পেয়ে থাকি, সেখানে লেখা আছে –

তখন পীলাত আবার রাজবাটীতে প্রবেশ করিলেন, এবং যীশুকে ডাকিয়া তাঁহাকে বলিলেন, তুমিই কি যিহূদীদের রাজা?

 

এরপর ৩৪ থেকে ৩৬ পদে লেখা আছে –

34 যীশু উত্তর করিলেন, তুমি কি ইহা আপনা হইতে বলিতেছ? না অন্যেরা আমার বিষয়ে তোমাকে ইহা বলিয়া দিয়াছে?

35 পীলাত উত্তর করিলেন, আমি কি যিহূদী? তোমারই স্বজাতীয়েরা ও প্রধান যাজকেরা আমার নিকটে তোমাকে সমর্পণ করিয়াছে; তুমি কি করিয়াছ?

36 যীশু উত্তর করিলেন, আমার রাজ্য এ জগতের নয়; যদি আমার রাজ্য এ জগতের হইত, তবে আমার অনুচরেরা প্রাণপণ করিত, যেন আমি যিহূদীদের হস্তে সমর্পিত না হই; কিন্তু আমার রাজ্য ত এখানকার নয়।

 

প্রভু যীশু স্বীকার করেছেন যে, তাঁর রাজ্য রয়েছে, কিন্তু তাঁর রাজ্য এ জগতের নয়।

প্রভুর উদ্দেশ্য ছিল এই জগতের কাছে প্রমাণ করা যে, ঈশ্বর প্রেমময় ও ক্ষমাশীল, কিন্তু তিনি ন্যায়পরায়ণও; ন্যায়কে বিসর্জন দিয়ে তিনি আমাদের পাপকে ক্ষমা করেন না। তিনি প্রমাণ করেছেন যে, এই জগতে এমন অন্য কোনও ঈশ্বর নেই, যিনি সমানভাবে সিদ্ধ, ন্যায়পরায়ণ ও ক্ষমাশীল। এই বিষয়টি প্রমাণ করার ক্ষমতা কেবল প্রভু যীশু খ্রীষ্টেরই ছিল, এবং তিনি তা করে দেখিয়েছেন। তিনি ক্রুশে প্রাণ দিয়ে, কবরপ্রাপ্ত হয়ে এবং তৃতীয় দিবসে পুনরুত্থিত হয়ে এই জগতের সামনে প্রমাণ করেছেন যে, তিনি নিজের সম্পর্কে যা কিছু দাবী করতেন, সেই সকল দাবী সত্য।

আমাদের কাছে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, যিনি পাঁচটি রুটি ও দুটি মাছ দ্বারা পাঁচ হাজারের বেশী মানুষদের তৃপ্ত করতে পারেন, যিনি জলের ওপর দিয়ে স্বচ্ছন্দে হেটে যেতে পারেন, যিনি ভয়ানক ঝড়কে থামিয়ে দিতে পারেন, যিনি মৃতকে জীবন দিতে পারেন, যিনি অন্ধকে চক্ষুদান করতে পারেন, খঞ্জকে সুস্থ করতে পারেন, তাঁর পক্ষে ক্রুশ থেকে নেমে এসে নিজেকে প্রমাণ করা কোনও কঠিন কাজ ছিল না।

তিনি আমাদের নিমিত্ত নিজেকে সমর্পণ করেছিলেন, সিদ্ধ বলিদান স্বরূপ হয়েছিলেন, যেন আমরা আমাদের পাপ থেকে পরিত্রাণ লাভ করতে পারি; কারণ ইব্রীয় ৯ অধ্যায় ২২ পদ অনুযায়ী –

                    রক্তসেচন ব্যতিরেকে পাপমোচন হয় না।

আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, আমাদের প্রভু কেবলমাত্র মৃত্যুবরণই করেননি, বরং তিনি পুনরুত্থানের মাধ্যমে মৃত্যুর ওপর বিজয়লাভও করেছেন।

যোহন ১০ অধ্যায় ১৭ এবং ১৮ পদে প্রভু যীশু বলেছিলেন –

17 পিতা আমাকে এই জন্য প্রেম করেন, কারণ আমি আপন প্রাণ সমর্পণ করি, যেন পুনরায় তাহা গ্রহণ করি। 18 কেহ আমা হইতে তাহা হরণ করে না, বরং আমি আপনা হইতেই তাহা সমর্পণ করি। তাহা সমর্পণ করিতে আমার ক্ষমতা আছে; এবং পুনরায় তাহা গ্রহণ করিতেও আমার ক্ষমতা আছে; এই আদেশ আমি আপন পিতা হইতে পাইয়াছি।

আর তাঁর পুনরুত্থান প্রমাণ করে যে, তাঁর দাবী সত্য ছিল; সত্যই তিনি স্ব ইচ্ছায় নিজ প্রাণ দিয়েছেন এবং স্ব ইচ্ছায় পুনরায় তা গ্রহণ করেছেন, যা তাঁর ক্ষমতার সবথেকে বড় নিদর্শন।

তাঁর পুনরুত্থানের ওপর আমাদের আশা রয়েছে, কারণ তাঁর পুনরুত্থান আমাদের আস্বাস দেয় যে, আমরাও একদিন পুনরুত্থিত হবো। প্রভু যীশু যেমন জীবিত, ঠিক তেমনই আমরা যদি তাঁর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করি, তবে আমরাও জীবিত থাকবো।

রোমীয় ৬ অধ্যায় ৮ থেকে ১১ পদে লেখা আছে –

8 আর আমরা যখন খ্রীষ্টের সহিত মরিয়াছি, তখন বিশ্বাস করি যে, তাঁহার সহিত জীবনপ্রাপ্তও হইব। 9 কারণ আমরা জানি, মৃতগণের মধ্য হইতে উঠিয়াছেন বলিয়া খ্রীষ্ট আর কখনও মরেন না, তাঁহার উপরে মৃত্যুর আর কর্ত্তৃত্ব নাই। 10 ফলতঃ তাঁহার যে মৃত্যু হইয়াছে, তদ্দ্বারা তিনি পাপের সম্বন্ধে একবারই মরিলেন; এবং তাঁহার যে জীবন আছে, তদ্দ্বারা তিনি ঈশ্বরের সম্বন্ধে জীবিত আছেন। 11 তদ্রূপ তোমরাও আপনাদিগকে পাপের সম্বন্ধে মৃত, কিন্তু খ্রীষ্ট যীশুতে ঈশ্বরের সম্বন্ধে জীবিত বলিয়া গণনা কর।

 

প্রিয় বন্ধুরা,

যীশুর ক্রুশীয় বলিদান তাঁর দুর্বলতাকে প্রকাশ করে না, বরং ঈশ্বরের পরিকল্পনার পরিপূর্ণতাকে প্রকাশ করে, যে পরিকল্পনা মানবজাতির পাপের ক্ষমার নিমিত্ত ঈশ্বর দ্বারা স্থির করা হয়েছিল। তাই আজ যে কেউ তাঁর ক্রুশীয় বলিদানের ওপর বিশ্বাস করে, সে পাপের কারণে বিনষ্ট হয় না, বরং অনন্ত জীবন লাভ করে।

আমেন।


Tags:- 

Christian Articles, বাংলা খ্রীষ্টীয় নিবন্ধ, bsbbca, bibleshikshabhaskar, BSB Ministry, Bengali Christian Blog, Bangla Gospel, Bengali Gospel, Preaching in Bengali Language, Bible Based Articles, বাংলা প্রচার, বাংলা যীশুর প্রচার, Bangla Christiyo Christio Khristiyo Khristio Prochar,  bsbbca blog, BSB Gospel, Gospel Articles, Bangla Nibondho, Gospel Online, Online Gospel, বাইবেল প্রচার, বাইবেলের বাক্য, BSB Evangelical Team, Blogger, Jesus Christ, যীশু খ্রীষ্ট, Good Friday Bengali Article, Good Friday, Easter, why jesus did not saved himself, why jesus died on the cross,

0 Comments