পবিত্র আত্মার পরিচয়ঃ-

অনেকেই পবিত্র আত্মা সম্পর্কে ভুল ধারণা রাখেন। যেমন, অনেকে বলেন – পবিত্র আত্মা হল একটি রহস্যময় শক্তি, আবার অনেকে বলেন – পবিত্র আত্মা হল এমন একটি ক্ষমতা যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।

কিন্তু বাইবেল অনুযায়ী পবিত্র আত্মা হল – যিহোবা ঈশ্বরের তৃতীয় ব্যক্তিত্ব।

এক কথায় পবিত্র আত্মা হলেন – ঈশ্বর।

বাইবেলে এমন অনেক পদ রয়েছে, যেখানে পবিত্র আত্মাকে ঈশ্বর হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছে। উদাহরণ স্বরুপ আমরা প্রেরিত ৫ অধ্যায় ১ থেকে ৪ পদ দেখবো, সেখানে লেখা আছে –

1 কিন্তু অননিয় নামে এক ব্যক্তি, এবং তাহার সহিত তাহার স্ত্রী সাফীরা, একটী সম্পত্তি বিক্রয় করিল2 এবং স্ত্রীর জ্ঞাতসারে তাহার মূল্যের কিছু রাখিয়া দিল, আর কতক আনিয়া প্রেরিতদের চরণে রাখিল। 3 তখন পিতর কহিলেন, অননিয়, শয়তান কেন তোমার হৃদয় এমন পূর্ণ করিয়াছে যে, তুমি পবিত্র আত্মার কাছে মিথ্যা বলিলে, এবং ভূমির মূল্য হইতে কতকটা রাখিয়া দিলে4 সেই ভূমি থাকিতে কি তোমারই ছিল না? এবং বিক্রীত হইলে পর কি উহা তোমার নিজ অধিকারে ছিল না? তবে এমন বিষয় তোমার হৃদয়ে কেন ধারণ করিলে? তুমি মনুষ্যদের কাছে মিথ্যা কথা কহিলে, এমন নয়, ঈশ্বরেরই কাছে কহিলে।

এখানে পিতর স্পষ্টই বলেছেন যে, পবিত্র আত্মার কাছে মিথ্যা বলার অর্থ ঈশ্বরেরই কাছে মিথ্যা বলা। অতএব, পবিত্র আত্মা হলেন – ঈশ্বর।

প্রভু যীশুর প্রতিশ্রুতিঃ-

ক্রুশীয় মৃত্যুর জন্য সমর্পিত হবার পূর্বে প্রভু যীশু তাঁর শিষ্যদের কাছে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যেগুলির মধ্যে অন্যতম হল – আমাদের অন্তরে সত্যের আত্মা দানের প্রতিশ্রুতি। সেই আত্মাকে জগৎ দেখে না, জানে না, এবং গ্রহণও করতে পারে না।

যোহন ১৪ অধ্যায় ১৬ থেকে ১৭ পদে প্রভু যীশু বলেছেন –

16 আর আমি পিতার নিকটে নিবেদন করিব, এবং তিনি আর এক সহায় তোমাদিগকে দিবেন, যেন তিনি চিরকাল তোমাদের সঙ্গে থাকেন17 তিনি সত্যের আত্মা; জগৎ তাঁহাকে গ্রহণ করিতে পারে না, কেননা সে তাঁহাকে দেখে না, তাঁহাকে জানেও না; তোমরা তাঁহাকে জান, কারণ তিনি তোমাদের নিকটে অবস্থিতি করেন ও তোমাদের অন্তরে থাকিবেন।

 

প্রতিশ্রুতির পরিপূর্ণতাঃ-

প্রভু যীশু খ্রীষ্টের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হয়েছিল পঞ্চাশত্তমীর দিনে, যখন তাঁর প্রেরিতগণ সকলে একস্থানে সমবেত হয়েছিলেন।

  প্রেরিত ২ অধ্যায় ২ থেকে ৬ পদে ঘটনাটি এমনভাবে উল্লিখিত রয়েছে –

2 আর হঠাৎ আকাশ হইতে প্রচণ্ড বায়ুর বেগের শব্দবৎ একটা শব্দ আসিল, এবং যে গৃহে তাঁহারা বসিয়াছিলেন, সেই গৃহের সর্ব্বত্র ব্যাপ্ত হইল। 3 আর অংশ অংশ হইয়া পড়িতেছে, এমন অনেক অগ্নিবৎ জিহ্বা তাঁহাদের দৃষ্টিগোচর হইল; এবং তাঁহাদের প্রত্যেক জনের উপরে বসিল। 4 তাহাতে তাঁহারা সকলে পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হইলেন, এবং আত্মা তাঁহাদিগকে যেরূপ বক্তৃতা দান করিলেন, তদনুসারে অন্য অন্য ভাষায় কথা কহিতে লাগিলেন।

5 ঐ সময়ে যিহূদীরা, আকাশের নিম্নস্থিত সমস্ত জাতি হইতে আগত ভক্ত লোকেরা, যিরূশালেমে বাস করিতেছিল। 6 আর সেই ধ্বনি হইলে অনেক লোক সমাগত হইল, এবং তাহারা হতবুদ্ধি হইয়া পড়িল, কারণ প্রত্যেক জন আপন আপন ভাষায় তাঁহাদিগকে কথা কহিতে শুনিতেছিল।

 

প্রভু যীশুর এই প্রতিশ্রুতি কেবলমাত্র সেই সময়কার বিশ্বাসীদের জন্যই ছিল না, বরং আজও, এমনকি তাঁর দ্বিতীয় আগমনের দিন পর্যন্ত তিনি সমস্ত বিশ্বাসীদের জন্য একই প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছেন। সত্যের আত্মা বা পবিত্র আত্মা ঈশ্বর দত্ত এমন একটি দান, যা আমরা প্রভু যীশুর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ব্যতীত অন্য কোনও উপায়ে লাভ করতে পারি না। আমরা এবিষয়ে নিশ্চিত যে, কোনও অবিশ্বাসী ব্যক্তি কোনও প্রকারেই পবিত্র আত্মা লাভ করতে পারে না, তাই একজন বিশ্বাসী হিসেবে আমরা চাইলেই কোনও ব্যক্তিকে পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হিসেবে ঘোষিত করতে পারি না।

যোহন ৭ অধ্যায় ৩৭ থেকে ৩৯ পদে লেখা আছে –

37 শেষ দিন, পর্ব্বের প্রধান দিন, যীশু দাঁড়াইয়া উচ্চৈঃস্বরে কহিলেন, কেহ যদি তৃষ্ণার্ত্ত হয়, তবে আমার কাছে আসিয়া পান করুক। 38 যে আমাতে বিশ্বাস করে, শাস্ত্রে যেমন বলে, তাহার অন্তর হইতে জীবন্ত জলের নদী বহিবে। 39 যাহারা তাঁহাতে বিশ্বাস করিত, তাহারা যে আত্মাকে পাইবে, তিনি সেই আত্মার বিষয়ে এই কথা কহিলেন; কারণ তখনও আত্মা দত্ত হন নাই, কেননা তখনও যীশু মহিমাপ্রাপ্ত হন নাই।

ওপরের এই ৩৯ পদ অনুযায়ী প্রভু যীশুর ওপর বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমেই পবিত্র আত্মা লাভ করার কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে পবিত্র আত্মা লাভ করার পেছনে সুসমাচার মুখ্য ভূমিকা পালন করে, কারণ সুসমাচার শ্রবণ দ্বারাই প্রভু যীশুর প্রতি বিশ্বাস গড়ে ওঠে, যার ফলে আমরা পবিত্র আত্মা দ্বারা মুদ্রাঙ্কিত হই।

ইফিষীয় ১ অধ্যায় ১৩ পদে লেখা আছে –

খ্রীষ্টে থাকিয়া তোমরাও সত্যের বাক্য, তোমাদের পরিত্রাণের সুসমাচার, শুনিয়া এবং তাঁহাতে বিশ্বাসও করিয়া সেই অঙ্গীকৃত পবিত্র আত্মা দ্বারা মুদ্রাঙ্কিত হইয়াছ

অতএব, আমরা যে মুহূর্তে সুসমাচার শ্রবণ দ্বারা প্রভুর প্রতি সম্পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করে তাঁকে নিজের ব্যক্তিগত ত্রাণকর্তা হিসেবে স্বীকার করি, ঠিক সেই মুহূর্তেই আমরা পবিত্র আত্মা লাভ করি। বাইবেল আমাদের স্পষ্টই বলে যে (উদাহরণঃ- গালাতীয় ৩ অধ্যায় ২ এবং ৫ পদ), ব্যবস্থা পালনের মাধ্যমে আমরা কোনও ভাবেই পবিত্র আত্মার ভাগী হতে পারি না।

ঈশ্বরের আজ্ঞাবহতা পবিত্র আত্মায় পূর্ণতা লাভের উপায়ঃ-

আজকাল আমাদের আশে পাশে এমন অনেক খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা রয়েছেন, যারা প্রভু যীশুর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের পরেও পবিত্র আত্মা লাভের জন্য প্রার্থনা করে থাকেন, কিন্তু আমাদের এটা বোঝার প্রয়োজন রয়েছে যে, ঈশ্বর তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে সমর্থ। তিনি ইতিমধ্যেই আমাদের হৃদয়ে পবিত্র আত্মা দান করেছেন। আমাদের শুধু প্রার্থনার মাধ্যমে ঈশ্বরের রবে কর্ণপাত করতে হবে, যেন পবিত্র আত্মার নির্দেশ অনুযায়ী আমরা আমাদের জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।

২ করিন্থীয় ১ অধ্যায় ২২ পদে লেখা আছে –

আর তিনি আমাদিগকে মুদ্রাঙ্কিতও করিয়াছেন, এবং আমাদের হৃদয়ে আত্মাকে বায়না দিয়াছেন।

আমরা যদি ঈশ্বরের ইচ্ছানুযায়ী ও তাঁর বাক্য অনুযায়ী চলতে শিখি, তাহলে অবশ্যই আমরা পবিত্র আত্মায় পূর্ণতা লাভ করতে পারবো, আর যদি আমরা তাঁর বাক্য ও তাঁর ইচ্ছাকে উপেক্ষা করে জীবন অতিবাহিত করি, তবে আমরা কখনই পবিত্র আত্মায় পূর্ণতা লাভ করতে পারবো না, বরং আমরা পবিত্র আত্মাকে দুঃখ দিয়ে ফেলবো।

ইফিষীয় ৪ অধ্যায় ৩০ পদে লেখা আছে –

আর ঈশ্বরের সেই পবিত্র আত্মাকে দুঃখিত করিও না, যাঁহার দ্বারা তোমরা মুক্তির দিনের অপেক্ষায় মুদ্রাঙ্কিত হইয়াছ।

     পবিত্র আত্মায় পূর্ণতা লাভ করার বিষয়টি আমাদের হাতেই রয়েছে, যদি আমরা ঈশ্বরের ইচ্ছাকে স্বীকার করে তাঁর বাক্য অনুযায়ী জীবন অতিবাহিত করতে শুরু করি তবেই ধীরে ধীরে আমরা তাঁর স্বভাবকে পরিধান করতে পারবো এবং আত্মায় বৃদ্ধি লাভ করতে শুরু করবো। এছাড়াও আমরা পবিত্র আত্মার ফলগুলি লাভ করবো, যেগুলির বিষয়ে গালাতীয় ৫ অধ্যায় ২২ থেকে ২৩ পদে উল্লেখ করা হয়েছে।

অনেক সময় আমরা বিশ্বাসে আসার পরেও নিরাশ হয়ে পড়ি এবং ঈশ্বরের কাছে অভিযোগ করি যে, পবিত্র আত্মার কার্য আমার জীবনে প্রকাশ পাচ্ছে না কেন!

কিন্তু আমরা এই বিষয়ে চিন্তা করি না যে, আমরা ঈশ্বরের বাক্যে স্থির রয়েছি কি না, বা তাঁর বাক্য অনুযায়ী জীবন অতিবাহিত করছি কি না। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ঈশ্বরের আজ্ঞা লঙ্ঘনের কারণেই পবিত্র আত্মা দুঃখিত হন এবং আমাদের অন্তরে বিরাজমান থাকা সত্বেও তাঁর কার্য আমাদের জীবনে প্রকাশিত হয় না। এক কথায় বলতে গেলে, আমরা পবিত্র আত্মাকে আমাদের জীবনে কাজ করার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে উঠতে পারি না।

আমরা যদি আমাদের জীবনে সেই ফল উৎপন্ন করতে চেষ্টা করি, যা পিতা ঈশ্বর আমাদের কাছে আশা করেন, তবে পবিত্র আত্মার কার্য আমাদের জীবনে অবশ্যই লক্ষ্য করা যাবে।

     ঈশ্বর চান যেন, আমরা সমস্ত প্রকার মন্দতা থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারি এবং পাপ থেকে দূরে থাকতে পারি, সেই কারণেই তিনি একজন সহায় আমাদেরকে দান করেছেন। তাই আমাদের জীবনে আমরা যেন ঈশ্বরের আত্মাকে স্বাধীনভাবে কাজ করার অনুমতি দিই। আমরা ততক্ষন ঈশ্বরের আত্মাকে আমাদের জীবনে স্বাধীনভাবে কাজ করার অনুমতি দিতে পারবো না, যতক্ষণ না আমরা পাপময় জীবন থেকে নিজেদেরকে পৃথক করার চেষ্টা করবো। আমরা নিজেদের ক্ষমতায় পাপময় জীবন থেকে নিজেদের পৃথক করতে পারি না, সেই কারণেই আমাদের প্রচুর পরিমাণে ঈশ্বরের কাছে সাহায্য-প্রার্থনার প্রয়োজন রয়েছে।

রাজা দাউদ-ও ঈশ্বরের কাছে পাপ থেকে নিজেকে পৃথক রাখার জন্য প্রার্থনা করেছিলেন, যার উল্লেখ আমরা গীতসংহিতা ১৯ এর গীত ১৩ থেকে ১৪ পদে পেয়ে থাকি, সেখানে লেখা আছে –

13 দুঃসাহসজনিত [পাপ] হইতেও নিজ দাসকে পৃথক্‌ রাখ,

সেই সকল আমার উপরে কর্ত্তৃত্ব না করুক;

তখন আমি সিদ্ধ এবং মহাপাতক হইতে শুচি হইব।

14 আমার মুখের বাক্য ও আমার চিত্তের ধ্যান তোমার দৃষ্টিতে গ্রাহ্য হউক,

হে সদাপ্রভু, আমার শৈল, আমার মুক্তিদাতা।

 

পবিত্র আত্মায় পূর্ণতা লাভ করার ক্ষেত্রে পাপই মুখ্য বাধা হিসেবে ভূমিকা পালন করে, যা মাংসের অভিলাষ হতে জন্ম নেয়, তাই সর্বপ্রথম পাপ থেকে নিজেদের দূরীভূত করার জন্য এবং পবিত্র আত্মার বশে চলার জন্য প্রার্থনার মাধ্যমে সচেষ্ট হয়ে উঠতে হবে এবং নিজেকে সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করতে হবে।

গালাতীয় ৫ অধ্যায় ২৪ থেকে ২৬ পদে লেখা আছে –

24 আর যাহারা খ্রীষ্ট যীশুর, তাহারা মাংসকে তাহার মতি ও অভিলাষ শুদ্ধ ক্রুশে দিয়াছে। 25 আমরা যদি আত্মার বশে জীবন ধারণ করি, তবে আইস, আমরা আত্মার বশে চলি26 অনর্থক দর্প না করি, পরস্পরকে জ্বালাতন না করি, পরস্পর হিংসাহিংসি না করি।

অতএব, আমার প্রিয় বন্ধুরা, আসুন আমরা ঈশ্বরের বাক্যের ওপর নির্ভর হয়ে প্রার্থনার মাধ্যমে আত্মার বশে চলার জন্য সচেষ্ট হই যেন মাংসকে পরাজিত করে পাপ থেকে দূরে সরে গিয়ে আত্মায় বৃদ্ধিলাভ করতে পারি।

আমেন।


Tags:- 

Christian Articles, বাংলা খ্রীষ্টীয় নিবন্ধ, bsbbca, bibleshikshabhaskar, BSB Ministry, Bengali Christian Blog, Bangla Gospel, Bengali Gospel, Preaching in Bengali Language, Bible Based Articles, বাংলা প্রচার, বাংলা যীশুর প্রচার, Bangla Christiyo Christio Khristiyo Khristio Prochar,  bsbbca blog, BSB Gospel, Gospel Articles, Bangla Nibondho, Gospel Online, Online Gospel, বাইবেল প্রচার, বাইবেলের বাক্য, BSB Evangelical Team, Blogger, Jesus Christ, যীশু খ্রীষ্ট, Good Friday Bengali Article, holy spirit, fulfilment of holy spirit,

0 Comments