প্রভু যীশু খ্রীষ্ট এমন একজন ব্যক্তি ছিলেন, যাকে ছাড়া আমাদের পৃথিবীর ইতিহাস অসম্পূর্ণ। পৃথিবীর একটি বৃহত্তর সংখ্যা তাদের প্রচারকার্যের জন্য প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে ব্যবহার করে থাকেন, আর এটিই আমাদের প্রভুর একটি বিশেষত্ব।

     এই ভারতবর্ষে এমন অনেক মানুষ রয়েছেন, যারা দাবী করে থাকেন যে, যীশু খ্রীষ্ট তাঁর জীবনের ১২ থেকে ৩০ বৎসর বয়স পর্যন্ত সময়কালে ভারতবর্ষে এসেছিলেন এবং এই দেশ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে তিনি তাঁর নিজের দেশে ফিরে গিয়ে সেই শিক্ষা অন্যদের দান করেছিলেন।

আজ আমরা এই বিষয়টির ওপর আলোকপাত করতে চলেছি।

     আমরা যদি বাইবেল পাঠ করে থাকি, তাহলে আমরা দেখতে পাই যে, প্রভু যীশু খ্রীষ্টের জীবনকালের বিবরণে তাঁর ১২ থেকে ৩০ বৎসরের সময়কালটি অনুপস্থিত; আর এই বিষয়টিকেই হাতিয়ার করে অনেকে দাবী করেন, প্রভু যীশু খ্রীষ্ট ভারতবর্ষে এসেছিলেন।

     কিন্তু আমরা যদি বাইবেলকে ভালোভাবে অধ্যায়ন করি, তাহলে আমাদের কাছে বিষয়টি স্পষ্ট হয় যে, প্রভু যীশু তাঁর জীবনকালে কখনও ভারতবর্ষে আসেননি এবং এখান থেকে কোনও শিক্ষা গ্রহণ করে তা নিজের দেশে প্রচারও করেননি।

আমরা এমন পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখানে তুলে ধরতে চলেছি, যেগুলি দ্বারা ওপরের দাবীগুলি মিথ্যে প্রমাণিত হতে চলেছে।

প্রথম বিষয়ঃ-

ইহুদীদের একটি প্রথা ছিল, সেটি হল - কোনও ব্যক্তি তার জীবিকার জন্য যে কাজ বা ব্যবসা করতেন, সেই ব্যক্তি তার সন্তানদেরও সেই কাজ বা ব্যবসা শেখাতেন।

উদাহরণ স্বরুপ, যোষেফ ছিলেন একজন সূত্রধর অর্থাৎ একজন কাঠ মিস্ত্রী, তাই তিনি প্রভু যীশু খ্রীষ্টকেও সেই কাজ শিখিয়েছিলেন, আর প্রভু যীশু বহুকাল সময় ধরে সেই কাজই করতেন।

আমরা যদি মথি লিখিত সুসমাচার ১৩ অধ্যায় ৫৫ পদ  এবং মার্ক লিখিত সুসমাচার ৬ অধ্যায় ৩ পদ  পাঠ করি, তবে জানতে পারবো যে, ইহুদীরা প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে একজন সূত্রধরের পুত্র এবং একজন সূত্রধর হিসেবে বহুদিন ধরে পরিচিত ছিল।

     একবার ভেবে দেখুন!

প্রভু যীশু যদি তার জীবনকালের ১২ থেকে ৩০ বৎসরের সময়কালটি অন্য দেশে অতিবাহিত করতেন, তবে কীভাবে ইহুদীরা তাঁকে একজন সূত্রধরের পুত্র এবং একজন সূত্রধর হিসেবে শনাক্ত করতে পেরেছিলেন ?

এটি এইজন্য সম্ভব কারণ, তিনি ছোটবেলা থেকেই তাঁর পালক পিতার শেখানো কাজ করে আসছিলেন।

দ্বিতীয় বিষয়ঃ-

যদি আমরা লুক লিখিত সুসমাচার ৪ অধ্যায় ১৬ পদ  পাঠ করি, তাহলে সেখানে আমরা দেখতে পাই, লেখা আছে –

আর তিনি যেখানে পালিত হইয়াছিলেন, সেই নাসরতে উপস্থিত হইলেন, এবং আপন রীতি অনুসারে বিশ্রামবারে সমাজ-গৃহে প্রবেশ করিলেন, ও পাঠ করিতে দাঁড়াইলেন।

ওপরের পদটিতে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, প্রভু যীশু নাসরতে পালিত হয়েছিলেন, এবং ইহুদী রীতি অনুসারে বিশ্রামবারে সমাজ-গৃহে উপস্থিত হয়ে শাস্ত্র (পুরাতন নিয়ম) পাঠ করার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন।

পদটিতে যে ‘পালিত’ শব্দটির উল্লেখ রয়েছে, তার আসল গ্রীক শব্দ হল – ‘τεθραμμένος  (tethrammenos), যার অর্থ – ‘Brought up’ অর্থাৎ প্রতিপালিত হওয়া বা বেড়ে ওঠা।

যার স্পষ্ট অর্থ দ্বারায় যে, প্রভু যীশু খ্রীষ্ট ছোটবেলা থেকেই নাসরতে বড় হয়েছেন, তাঁর প্রতিপালন অন্য কোনও দেশে হয়নি।

তৃতীয় বিষয়ঃ-

প্রভু যীশু খ্রীষ্ট যখন ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে প্রচার করতেন, তখন সেই সময়ে সেখানে ইহুদী ধর্মগুরু, ফরীশী এবং অন্যান্য বিরোধীগণ উপস্থিত থাকতেন।

সেই সমস্ত লোকেরা প্রভু যীশুর বিরোধীতা করেছিল এবং তাঁর ওপর বেশ কিছু অপবাদ দিয়েছিল, যেমন – তিনি বিশ্রামবার লঙ্ঘন করতেন (যোহন ৫ অধ্যায় ১৮ পদ), ঈশ্বরকে নিজের পিতা বলে নিজেকে ঈশ্বরের সমান করতেন (যোহন ৫ অধ্যায় ১৮ পদ), ঈশ্বর নিন্দা করেছেন (মথি ৯ অধ্যায় ৩ পদ, মার্ক ১৪ অধ্যায় ৬৪ পদ, মার্ক ২ অধ্যায় ৭ পদ), তিনি ভূতগ্রস্ত (যোহন ৮ অধ্যায় ৪৮ পদ) ইত্যাদি।

কিন্তু ভাবার বিষয় এটাই যে, প্রভু যীশুর ওপর কেউ কোনও দিন এমন অপবাদ দেননি যে, তিনি অন্য দেশের শিক্ষা বা শাস্ত্রীয় বচন সেই দেশে প্রচার করেছেন।

প্রভু যীশুর বিরোধীদের অপবাদগুলির ভিত্তিতেও এটি স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, তিনি ভারতে এসে এই দেশের শাস্ত্রগুলি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে তাঁর নিজের দেশে প্রচার করেননি, এমনকি উল্লেখও করেননি। তিনি তাঁর প্রচারে পুরাতন নিয়মের পুস্তকগুলিই ব্যবহার করতেন।

চতুর্থ বিষয়ঃ-

প্রভু যীশু পুরাতন নিয়মের পুস্তকগুলি সম্বন্ধে অত্যন্ত জ্ঞানবান ছিলেন। তাঁর জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা প্রত্যেককেই আশ্চর্য করে তুলত। এমনকি শাস্ত্রীয় পণ্ডিতগণও তাঁর সাথে বিবাদে জড়াতে ভয় পেতেন। প্রভু যীশুর মধ্যে এমন কোনও জ্ঞানের অভাব ছিল না, যার জন্য তাঁকে অন্য দেশে গমন করে তা অর্জন করতে হত, বরং তিনি নিজেই ছিলেন জ্ঞানের ভাণ্ডার।

যীশু তাঁর প্রচারকার্যে সবসময় পুরাতন নিয়ম থেকেই উদ্ধৃতি দিতেন, অন্য কোনও শাস্ত্র থেকে তিনি কোনও দিন কোনও উদ্ধৃতি দেননি। চারটি সুসমাচার থেকে কেউ কোনও দিন এটা প্রমাণ করতে পারবে না যে, প্রভু যীশু অন্য কোনও শাস্ত্র থেকে শিক্ষা দিয়েছেন।

     একটি বিশেষ বিষয় আমরা বলতে চাই, সেটি হল - ইহুদীরা এতটাই নিপুণ ছিল যে, তারা একটি মানুষের কথা বলার ধরণ দেখেই বুঝে নিত, সেই ব্যক্তি কোথা থেকে আগত।

উদাহরণ স্বরুপ আমরা মথি ২৬ অধ্যায় ৭৩ পদ দেখবো, সেখানে লেখা আছে –

আর অল্পক্ষণ পরে, যাহারা নিকটে দাঁড়াইয়াছিল, তাহারা আসিয়া পিতরকে কহিল, সত্যই তুমিও তাহাদের এক জন, কেননা তোমার ভাষা তোমার পরিচয় দিতেছে।

অতএব, প্রভু যীশু যদি ভারতবর্ষে আসতেন, তবে তাঁর ভাষায় অল্প কিছু হলেও পরিবর্তন আসত, যেহেতু সময়টা ১৭ থেকে ১৮ বছরের মত লম্বা ছিল। এবং ইহুদীরা স্পষ্টভাবেই বুঝতে পারত যে, তিনি অন্য দেশ থেকে ঘুরে এসেছেন।

যেহেতু প্রভু যীশুর মধ্যে এমন কোনও লক্ষণই ছিল না, সেহেতু এটা প্রমাণিত হয় যে, তিনি কোনও দিনও ভারতবর্ষে আসেননি এবং এখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে তাঁর নিজের দেশে প্রচার করেননি। তিনি ইহুদী রীতি অনুযায়ী সমস্ত কিছু করতেন, কখনই তিনি অন্য দেশের রীতি নীতি পালন করেননি এবং কাউকে তেমন শিক্ষাও দেননি।

পঞ্চম বিষয়ঃ-

ঈশ্বরকে জ্ঞাত হবার বিষয়টি নিয়ে ইহুদী শাস্ত্রের সাথে ভারতীয় শাস্ত্রের মধ্যে কোনও সদৃশ নেই। প্রভু যীশু ঈশ্বরকে এবং নিজেকে যেমনভাবে প্রচার করেছেন, তা ভারতীয় শাস্ত্রের সাথে কোনও প্রকারেই সদৃশ হয় না। তিনি কেবলমাত্র পুরাতন নিয়মের পুস্তকগুলি দ্বারাই ঈশ্বরকে জগতের কাছে ব্যাখ্যা করেছেন।

     অতএব, প্রিয় বন্ধুরা, প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে এবং তাঁর জীবনী সম্বন্ধে জানবার জন্য বাইবেলকে নিগূঢ়ভাবে অধ্যায়ন করার প্রয়োজন রয়েছে। আমরা বাইবেল থেকেই প্রমাণিত করতে পেরেছি যে, প্রভু যীশু তাঁর জীবনকালে কখনই ভারতে আসেননি।

যোহন ৮ অধ্যায় ৩২ পদে প্রভু যীশু বলেছেন –

আর তোমরা সেই সত্য জানিবে, এবং সেই সত্য তোমাদিগকে স্বাধীন করিবে।

আমেন।



Tags:- 

Christian Articles, বাংলা খ্রীষ্টীয় নিবন্ধ, bsbbca, bibleshikshabhaskar, BSB Ministry, Bengali Christian Blog, Bangla Gospel, Bengali Gospel, Preaching in Bengali Language, Bible Based Articles, বাংলা প্রচার, বাংলা যীশুর প্রচার, Bangla Christiyo Christio Khristiyo Khristio Prochar,  bsbbca blog, BSB Gospel, Gospel Articles, Bangla Nibondho, Gospel Online, Online Gospel, বাইবেল প্রচার, বাইবেলের বাক্য, BSB Evangelical Team, Blogger, Jesus Christ, যীশু খ্রীষ্ট, was jesus came in India, kya Yeshu bharat aaye the, ভারতে যীশু, যীশু কি ভারতে এসেছিলেন, Jesus in India, luke 4:16, john 5:18, matthew 9:3, mark 2:7,

0 Comments