প্রার্থনা খ্রীষ্টীয় জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যারা নিয়মিত প্রার্থনায় জীবনযাপন করেন না, তারা আত্মীকভাবে দুর্বল হয়ে পরেন এবং সময়ের সাথে সাথে তারা আত্মীক সংঘর্ষে পরাজিত হতে থাকেন।

পবিত্র বাইবেলে আমরা দেখতে পাই যে, ঈশ্বর দ্বারা মনোনীত সকল ভাববাদী এবং রাজাগণ প্রার্থনায় সময় কাটাতেন। এমনকি আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট স্বয়ং প্রার্থনায় সময় কাটিয়েছিলেন। এগুলি থেকে ধারণা করা যায় যে, প্রার্থনা আমাদের জন্য কতটা প্রয়জনীয়!

বন্ধুরা, আজ আমরা এই নিবন্ধের দ্বারা প্রভু যীশু খ্রীষ্টের শিষ্য পিতর এবং যোহনের জীবনযাপন থেকে শিক্ষালাভ করবো যে, বর্তমানে আমাদের প্রার্থনাশীল জীবন কেমন হওয়া আবশ্যক। এছাড়াও আমরা শিখবো যে, কীভাবে আমরা আমাদের প্রার্থনাশীল জীবনকে উন্নত করতে পারি।

আসুন আমরা প্রেরিত ৩ অধ্যায় ১ থেকে ৫ পদ দেখি, যেখানে লেখা আছে –

1 এক দিন প্রার্থনার নির্দ্দিষ্ট সময়ে, নবম ঘটিকায়, পিতর ও যোহন ধর্ম্মধামে যাইতেছিলেন2 এমন সময়ে লোকেরা এক ব্যক্তিকে বহন করিয়া আনিতেছিল, সে মাতার গর্ভ হইতে খঞ্জ; তাহাকে প্রতিদিন ধর্ম্মধামের সুন্দর নামক দ্বারে রাখিয়া দেওয়া হইত, যেন, ধর্ম্মধামে যাহারা প্রবেশ করে, তাহাদের কাছে ভিক্ষা চাহিতে পারে। 3 সে পিতরকে ও যোহনকে ধর্ম্মধামে প্রবেশ করিতে উদ্যত দেখিয়া ভিক্ষা পাইবার জন্য বিনতি করিতে লাগিল। 4 তাহাতে পিতর যোহনের সহিত তাহার প্রতি একদৃষ্টে চাহিয়া কহিলেন, আমাদের প্রতি দৃষ্টিপাত কর। 5 তাহাতে সে তাঁহাদের প্রতি দৃষ্টি করিয়া রহিল, তাঁহাদের নিকট হইতে কিছু পাইবার অপেক্ষা করিতেছিল

সর্বপ্রথম এই পদগুলি থেকে আমরা যা শিক্ষা পাই, তা হল –

১. প্রার্থনা এবং প্রার্থনার নির্দিষ্ট সময়ঃ-

উল্লিখিত প্রথম পদেই আমরা দেখতে পেয়েছি যে, তারা নবম ঘটিকায় প্রার্থনা করার জন্য আরাধনাগৃহে যাচ্ছিলেন। এর অর্থ এটাই যে, তাদের কাছে প্রার্থনার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় ছিল।

আজকালকার দিনে আমরা একপ্রকার ব্যস্ততার জীবন অতিবাহিত করছি। আমাদের কাজ, আমাদের জীবিকা, আমাদের পরিবার এবং আমাদের ব্যক্তিগত সময় নিয়ে আমরা এতটাই ব্যস্ত হয়ে রয়েছি যে, প্রার্থনার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় বের করাই আমাদের জন্য কঠিন হয়ে ওঠে।

কিন্তু একবার ভেবে দেখুন, পিতর ও যোহনেরও পরিবার, জীবিকা এবং সেবাকার্য ছিল। তারা সেই সময় সেবাকার্যের একেবারে প্রারম্ভিক পর্যায়ে ছিলেন। তবুও তারা একটি নির্দিষ্ট সময় ঈশ্বরকে দিতে ভুলে যেতেন না।

এছাড়াও যদি আমরা দানিয়েলের জীবনযাপনের ওপর দৃষ্টিপাত করি (দানিয়েল ৬ অধ্যায় ১০ পদ), তবে আমরা দেখতে পাবো যে, তারও নির্দিষ্ট প্রার্থনার সময় নির্ধারিত ছিল। তিনি প্রতিদিন তিনবার ঈশ্বরের প্রশংসা ও ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতেন।

আমরা আপনাকে এটা বলতে চাই না যে, আপনারাও নবম ঘটিকায় প্রার্থনা করুন বা দানিয়েলকে অনুসরণ করুন। তবে আমাদের বলার উদ্দেশ্য হল – যাতে আপনারাও আপনাদের ব্যস্ততার জীবনে প্রার্থনার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় বের করার প্রচেষ্টা করেন এবং ঈশ্বরের সাথে সময় অতিবাহিত করেন। কারণ প্রার্থনা ছাড়া আমরা কিছুই নই।

যদি আপনি মনে করে থাকেন যে, প্রার্থনা ছাড়া আপনি খ্রীষ্টীয় জীবনযাপন করতে পারবেন, তবে আপনি ভ্রান্তিতে রয়েছেন।

২. শৃঙ্খলাবদ্ধ প্রার্থনাশীল জীবনঃ-

এমন নয় যে পিতর ও যোহনের প্রার্থনাশীল জীবনে কোনও বাধা বিপত্তি আসেনি, কিন্তু তবুও তারা তাদের প্রার্থনাশীল জীবনকে অনেক বেশী শৃঙ্খলাবদ্ধ করেছিলেন। যখন তাদের সেবাকার্য বৃদ্ধি পাচ্ছিল, তখনও তারা সবকিছুর চেয়ে বেশী প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাকতে চেয়েছিলেন।

প্রেরিত ৬ অধ্যায় ১ থেকে ৪ পদে লেখা আছে –

1 আর এই সময়ে, যখন শিষ্যগণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাইতেছিল, তখন গ্রীক ভাষাবাদী যিহূদীরা ইব্রীয়দের বিপক্ষে বচসা করিতে লাগিল, কেননা দৈনিক পরিচর্য্যায় তাহাদের বিধবারা উপেক্ষিত হইতেছিল। 2 তখন সেই বারো জন [প্রেরিত] শিষ্যসমূহকে কাছে ডাকিয়া কহিলেন, আমরা যে ঈশ্বরের বাক্য ত্যাগ করিয়া ভোজনের পরিচর্য্যা করি, ইহা উপযুক্ত নহে। 3 কিন্তু, হে ভ্রাতৃগণ, তোমরা আপনাদের মধ্য হইতে সুখ্যাতিপন্ন এবং আত্মায় ও বিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ সাত জনকে দেখিয়া লও; তাঁহাদিগকে আমরা এই কার্য্যের ভার দিব। 4 কিন্তু আমরা প্রার্থনায় ও বাক্যের পরিচর্য্যায় নিবিষ্ট থাকিব

প্রভু যীশু খ্রীষ্টের একজন শিষ্যের পরিচয় এটাই যে, তারা সবকিছুর চেয়ে বেশী প্রার্থনাকে এবং ঈশ্বরের বাক্যকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। আজ আপনার জীবনকে লক্ষ করে দেখুন, যে আপনার প্রার্থনাশীল জীবন কেমন!

হয়ত আপনি প্রার্থনা করেন, কিন্তু আপনার প্রার্থনা নিয়মনিষ্ঠ নয়। আপনি এটা মনে করবেন না যে, আপনার জীবন যখন কোনও কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাবে, তখনই প্রার্থনা করবেন। প্রার্থনা অবশ্যই আপনার নিত্যদিনের দায়িত্ব হতে হবে।

প্রেরিতগণ যেমন সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব প্রার্থনাকে দিয়েছিলেন, তেমনি আপনাকেও আপনার জীবনে প্রার্থনাকে বেশী গুরুত্ব দিতে হবে, যা হবে নিয়মনিষ্ঠ। আপনার প্রার্থনা যদি শৃঙ্খলাবদ্ধ না হয়, তবে আপনার আত্মীক উন্নতি কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

৩. দলবদ্ধ প্রার্থনা এবং কার্যঃ-

ব্যক্তিগত প্রার্থনার পাশাপাশি দলবদ্ধ প্রার্থনাও আমাদের জীবনে প্রয়োজন। প্রেরিত ৩ অধ্যায় ১ পদে আমরা দেখেছি যে, সেখানে দুজন ছিলেন – পিতর ও যোহন। তারা দলবদ্ধভাবে প্রার্থনা, প্রচার এবং ঈশ্বরের সেবাকার্য করতেন। দলবদ্ধভাবে প্রার্থনা এবং সহভাগিতার অনেক ইতিবাচক গুণ আছে। যখন দলবদ্ধভাবে একে অপরের জন্য প্রার্থনা করা হয়, তখন ঈশ্বরের উপস্থিতি আমরা ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারি এবং শয়তানকে অনেকাংশে প্রতিরোধ করতে পারি।

আপনি কখনোই দলবদ্ধ প্রার্থনাকে উপেক্ষা করবেন না। কারণ যখন আমরা তাতে অংশগ্রহণ করি, তখন আমরা একসাথে ঈশ্বরের পরাক্রমের অংশীদার হই। তাই যখনই আপনি সুযোগ পাবেন, তখনই নিজেকে দলবদ্ধ প্রার্থনার অংশীদার হওয়ার জন্য সমর্পণ করবেন।

                             অবশেষে আমরা পুনরায় মনে করিয়ে দিতে চাই যে, প্রার্থনা ছাড়া আপনার খ্রীষ্টীয় জীবন ব্যর্থ এবং দুর্দশাগ্রস্থ। তাই আপনি নিজেই ঠিক করুন যে, আপনি কীভাবে আপনার ব্যস্ততার জীবনে প্রার্থনার জন্য সময় বের করবেন।

ঈশ্বর আপনাদের আশীর্বাদযুক্ত করুন, আমেন।



Tags:- 

Christian Articles, বাংলা খ্রীষ্টীয় নিবন্ধ, bsbbca, bibleshikshabhaskar, BSB Ministry, Bengali Christian Blog, Bangla Gospel, Bengali Gospel, Preaching in Bengali Language, Bible Based Articles, বাংলা প্রচার, বাংলা যীশুর প্রচার, Bangla Christiyo Christio Khristiyo Khristio Prochar, BSB Gospel, Gospel Articles, Bangla Nibondho, Gospel Online, Online Gospel, বাইবেল প্রচার, বাইবেলের বাক্য, Blogger, Jesus Christ, যীশু খ্রীষ্ট, prayer life, disciplined prayer life,

0 Comments