আজ আমরা এই বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করে চলেছি।

বন্ধুরা, Easter বা পুনরুত্থানের দিনটিকে ল্যাটিন ও গ্রীক ভাষায় Pascha (পাস্কা) বলা হয়। আর এই দিনটিতেই প্রভু যীশু খ্রীষ্ট মৃত্যুকে জয় করে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন। শুক্রবার প্রভু যীশুকে নির্মম ভাবে ক্রুশে পেরেক মেরে হত্যা করা হয়েছিল এবং তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁকে নিকটবর্তী এক গুহার মধ্যে কবরস্থ করা হয়েছিল। কিন্তু মৃত্যু তাঁকে তার কবলে আবদ্ধ রাখতে পারেনি, প্রভু যীশু মৃত্যুকে হারিয়ে পুনরুত্থিত হয়েছেন। আর সেই কারণেই সমগ্র বিশ্বে এই দিনটি আনন্দের সাথে পালিত হয়।

অনেকে প্রশ্ন করেন, মানুষের মৃত্যু তো অনিবার্য, একদিন তো মৃত্যুকে আমাদের জীবনে স্বাগত জানাতেই হবে, কিন্তু যীশু কীভাবে মৃত্যুকে হারালেন ?

আমাদের জানা প্রয়োজন যে, একজন সাধারণ মানুষকে মৃত্যুর কাছে হার মানতেই হবে; কিন্তু ঈশ্বরের ক্ষেত্রেও যে একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে, এমনটা নয়। তাঁর পুনরুত্থান প্রমাণ করে যে, মৃত্যুর ওপরেও তাঁর কর্তৃত্ব রয়েছে।

ইহুদী ইতিহাসবিদ জোসেফাস’ও তার গ্রন্থে প্রভু যীশুর পুনরুত্থান সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন।

তিনি লিখেছেন যে, প্রভু যীশুর পুনরুত্থানের চর্চা তখন বহু স্থানে ছড়িয়ে পরেছিল। কেউ কেউ তা বিশ্বাস করেছিল, আবার কেউ কেউ বিশ্বাস করেনি, কিন্তু বিষয়টি প্রসার লাভ করেছিল।

গীতসংহিতা ২২ এর গীত ১৬ পদে লেখা আছে –

কেননা কুকুরেরা আমাকে ঘেরিয়াছে,

দুরাচারদের মণ্ডলী আমাকে বেষ্টন করিয়াছে;

তাহারা আমার হস্তপদ বিদ্ধ করিয়াছে

 

রাজা দাউদের মাধ্যমে খ্রীষ্টের জন্মের বহু বছর আগে একটি ভবিষ্যতবাণীতে বলে দেওয়া হয়েছিল যে, যীশুর হাতে ও পায়ে পেরেক মেরে তাকে বিদ্ধ করা হবে এবং তাঁকে ঘিরে ফেলা হবে।

রাজা দাউদ যখন এই ভবিষ্যতবাণীটি করেছিলেন, তখন ক্রুশীয় মৃত্যুর কোনও প্রচলন ছিল না, এমনকি রোমান সাম্রাজ্যের শাসনও ইস্রায়েলে ছিল না। আমরা অনেকেই জানি যে, ক্রুশীয় মৃত্যুর প্রচলন রোমান শাসনকালে পার্সিয়ানদের দ্বারা শুরু হয়েছিল। কিন্তু ঈশ্বরের মহান পরিকল্পনায় তা আগে থেকেই নির্ধারিত করা ছিল যে, যীশুকে ক্রুশে মৃত্যুবরণ করতে হবে।

অন্য একটি ভবিষ্যতবাণী আমরা দেখি, যিশাইয় ৫৩ অধ্যায় ৫ পদে, যা খ্রীষ্টের জন্মের প্রায় ৭০০ বছর আগে লেখা হয়েছিল; সেখানে লেখা আছে –

কিন্তু তিনি আমাদের অধর্ম্মের নিমিত্ত বিদ্ধ,

আমাদের অপরাধের নিমিত্ত চূর্ণ হইলেন;

আমাদের শান্তিজনক শাস্তি তাঁহার উপরে বর্ত্তিল,

এবং তাঁহার ক্ষত সকল দ্বারা আমাদের আরোগ্য হইল

 

এছাড়াও কয়েকটি ভবিষ্যতবাণীর মাধ্যমে এটিও উল্লেখ করা হয়েছিল যে, তিনি মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হবেন।

যিশাইয় ৫৩ অধ্যায় ৮ পদে লেখা আছে

তিনি উপদ্রব ও বিচার দ্বারা অপনীত হইলেন;

তৎকালীয়দের মধ্যে কে ইহা আলোচনা করিল

যে, তিনি জীবিতদের দেশ হইতে উচ্ছিন্ন হইলেন?

আমার জাতির অধর্ম্ম প্রযুক্তই তাঁহার উপরে আঘাত পড়িল

 

এবং গীতসংহিতা ১৬ এর গীত ১০ পদে লেখা আছে –

কারণ তুমি আমার প্রাণ পাতালে পরিত্যাগ করিবে না,

তুমি নিজ সাধুকে ক্ষয় দেখিতে দিবে না

 

যীশু আর পাতালে নেই! আপনি ভবিষ্যতবাণীগুলি থেকে সম্পূর্ণ বাইবেল ও ইতিহাস খতিয়ে দেখতে পারেন। পুনরুত্থান সম্পর্কে আপনি অনেক তথ্য পাবেন।

১ করিন্থীয় ১৫ অধ্যায় ৩ থেকে ৮ পদে প্রেরিত পৌল লিখেছেন –

3 ফলতঃ প্রথম স্থলে আমি তোমাদের কাছে এই শিক্ষা সমর্পণ করিয়াছি, এবং ইহা আপনিও পাইয়াছি যে, শাস্ত্রানুসারে খ্রীষ্ট আমাদের পাপের জন্য মরিলেন4 ও কবর প্রাপ্ত হইলেন, আর শাস্ত্রানুসারে তিনি তৃতীয় দিবসে উত্থাপিত হইয়াছেন5 আর তিনি কৈফাকে, পরে সেই বারো জনকে দেখা দিলেন6 তাহার পরে একেবারে পাঁচশতের অধিক ভ্রাতাকে দেখা দিলেন, তাহাদের অধিকাংশ লোক অদ্যাপি বর্ত্তমান রহিয়াছে, কিন্তু কেহ কেহ নিদ্রাগত হইয়াছে। 7 তাহার পরে তিনি যাকোবকে, পরে সকল প্রেরিতকে দেখা দিলেন

8 সকলের শেষে অকাল-জাতের ন্যায় যে আমি, আমাকেও দেখা দিলেন

 

প্রেরিত পৌল এখানে যখন শাস্ত্রানুসারে কথাতি উল্লেখ করেছেন, তখন তিনি বাইবেলের পুরাতন নিয়মকে ইঙ্গিত করেছেন, কারণ সেই সময় বাইবেলের নতুন নিয়ম লেখা হয়নি।

তিনি উল্লেখ করেছেন যে, যীশু খ্রীষ্টের পুনরুত্থানের সাক্ষী শুধুমাত্র তিনি নিজেই নন, বরং প্রভু যীশু তাঁর পুনরুত্থানের পর পাঁচশোরও বেশী মানুষকে দেখা দিয়েছিলেন। তিনি বিশেষভাবে এটিও বলেছেন যে, তার সময়ে সেই সাক্ষীদের মধ্যে অনেকেই জীবিত ছিলেন।

প্রেরিত ১ অধ্যায় ৩ পদ এও উল্লেখ করে যে, প্রভু যীশু তাঁর পুনরুত্থানের পর চল্লিশ দিন ধরে তাঁর শিষ্যদের দেখা দিতেন।

প্রভু যীশুর পুনরুত্থানের জন্যই আমাদের জীবনে আশা রয়েছে যে, তিনি যেভাবে মৃত্যু থাকে জীবিত হয়ে স্বর্গে নীত হয়েছেন, ঠিক তেমনই আমরাও যদি তাঁর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করি, তবে তাঁর মতো স্বর্গে নীত হবো।

১ করিন্থীয় ১৫ অধ্যায় ২১ থেকে ২২ পদে প্রেরিত পৌল লিখেছেন –

21 কেননা মনুষ্য দ্বারা যখন মৃত্যু আসিয়াছে, তখন আবার মনুষ্য দ্বারা মৃতগণের পুনরুত্থান আসিয়াছে। 22 কারণ আদমে যেমন সকলে মরে, তেমনি আবার খ্রীষ্টেই সকলে জীবনপ্রাপ্ত হইবে

এমনকি প্রভু যীশু নিজের মুখেই যোহন ১৪ অধ্যায় ১৯ পদে বলেছেন –

কারণ আমি জীবিত আছি, এই জন্য তোমরাও জীবিত থাকিবে। 

এবং যোহন ১১ অধ্যায় ২৫ পদেও যীশু বলেছেন –

আমিই পুনরুত্থান ও জীবন; যে আমাতে বিশ্বাস করে, সে মরিলেও জীবিত থাকিবে;

 

১ করিন্থীয় ১৫ অধ্যায় ১৪ থেকে ২১ পদ অনুযায়ী আমাদের বিশ্বাস বৃথা যদি খ্রীষ্ট পুনরুত্থিত না হয়ে থাকে; কিন্তু তিনি পুনরুত্থিত হয়ে ছেন, যা আমাদের বিশ্বাসকে দৃঢ় করে তোলে।



Tags:- 

Christian Articles, বাংলা খ্রীষ্টীয় নিবন্ধ, bsbbca, bibleshikshabhaskar, BSB Ministry, Bengali Christian Blog, Bangla Gospel, Bengali Gospel, Preaching in Bengali Language, Bible Based Articles, বাংলা প্রচার, বাংলা যীশুর প্রচার, Bangla Christiyo Christio Khristiyo Khristio Prochar, BSB Gospel, Gospel Articles, Bangla Nibondho, Gospel Online, Online Gospel, বাইবেল প্রচার, বাইবেলের বাক্য, Blogger, Jesus Christ, যীশু খ্রীষ্ট, resurrection,

0 Comments