আজ আমরা এই নিবন্ধটিতে এই বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করতে চলেছি, কারণ এমন অনেক খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের মনে এই প্রশ্নটি জেগে ওঠে যে, আমাদের কি বড়দিন বা খ্রীষ্টমাস্‌ ডে পালন করা উচিত ? কেননা খ্রীষ্টের জন্মদিন পালন সম্পর্কে বাইবেল আমাদের কোনও আজ্ঞা করে না।

অনেক খ্রীষ্ট বিরোধীরা এই বড়দিনকে পৌত্তলিক ধর্মীয় একটি উৎসব হিসেবে দাবী করে থাকে। কিন্তু আজ আমরা এই নিবন্ধে এটিও জানতে চেষ্টা করবো যে, সত্যিই কি বড়দিনের উৎস কোনও পৌত্তলিক ধর্মীয় উৎসব ?

অনেকে দাবী করেন, ২৫-শে ডিসেম্বর, যে দিনটিতে বর্তমানে খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা বড়দিন উদযাপন করেন, ঠিক সেই দিনই তাদের অনেক আগে থেকেই রোমীয় পৌত্তলিক ধর্মাবলম্বীরা সূর্য দেবতার আরাধনা করত। হ্যাঁ ঠিকই! ঐতিহাসিকভাবে এই দাবী সত্য যে, এই দিনটিতে রোমীয় পৌত্তলিক ধর্মাবলম্বীরা সূর্য দেবতার আরাধনা করত, কিন্তু এর অর্থ এটা নয় যে, ২৫-শে ডিসেম্বরেই খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা খ্রীষ্টমাস্‌ বা বড়দিন উদযাপন করে থাকেন, তাই এটিও একটি পৌত্তলিক উৎসব। বিরোধীদের এই যুক্তি অত্যন্ত হাস্যকর ও ভিত্তিহীন।

আমরা কখনোই পৌত্তলিক রীতিনীতি অনুসারে তাদের মতো মিথ্যে ঈশ্বরদের আরাধনা করি না, কিন্তু আমরা জীবন্ত ঈশ্বরের দৈহিক আবির্ভাবকে স্মরণ করার উদ্দেশ্যে এই দিনটি উদযাপন করে থাকি।

আজ থেকে ২০০০ বছরের কিছু বেশী সময় আগে যখন যীশু খ্রীষ্ট এই পৃথিবীতে বাস করতেন, তার কয়েকশো বছর পরে অর্থাৎ তাঁর স্বর্গারোহণেরও কয়েকশো বছর পরে রোমের সম্রাট কনস্টান্টিন, যিনি একজন খ্রীষ্ট বিশ্বাসী ছিলেন, তার রাজত্বকালেই ২৫-শে ডিসেম্বর দিনটিতে খ্রীষ্টের জন্মোৎসব পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর সেই সময় থেকেই বিশ্বের প্রায় প্রতিটি কোনেই ২৫-শে ডিসেম্বর খ্রীষ্টমাস্‌ ডে পালিত হয়। এর সাথে পৌত্তলিক উৎসবের কোনও সম্বন্ধ নেই।

এছাড়াও অনেকে অভিযোগ করেন, যীশু যে ২৫-শে ডিসেম্বরেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তার কোনও প্রমাণ নেই, তাই খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা অবশ্যই একটি ভুল দিনকে যীশুর জন্মদিন হিসেবে পালন করেন। হ্যাঁ, এই যুক্তিটির বা অভিযোগটির ভিত্তি আছে, কিন্তু তা খ্রীষ্টের অস্তিত্বে এবং খ্রীষ্টবিশ্বাসে কোনও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না। কারণ খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের কাছে যীশুর জন্মের তারিখের চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ তাঁর জন্মের উদ্দেশ্য। সম্পূর্ণ সুসমাচার যীশুর জন্মের উদ্দেশ্য আমাদের কাছে স্পষ্ট করে।

যোহন লিখিত সুসমাচার ১ অধ্যায় ১৪ পদ বর্ণনা করে যে, ঈশ্বরের বাক্য এই জগতে দেহধারণ করেছিলেন। আর এই দেহধারণের কারণ আমরা বাইবেলের অনেক অংশ থেকে জানতে পারি। তবে রোমীয় ৫ অধ্যায় ৮ পদে লেখা আছে –

কিন্তু ঈশ্বর আমাদের প্রতি তাঁহার নিজের প্রেম প্রদর্শন করিতেছেন; কারণ আমরা যখন পাপী ছিলাম, তখনও খ্রীষ্ট আমাদের নিমিত্ত প্রাণ দিলেন

অতএব, যীশুর জন্মের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল আমাদের পাপের নিমিত্ত নিজের প্রাণকে উৎসর্গ করা, যাতে আমরা তাঁর রক্তের গুণে পাপ থেকে শুচি হতে পারি। তবে এই দিনটি পালন করা বা না করা একজন খ্রীষ্ট বিশ্বাসীর সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।

আরও একটি যুক্তির দ্বারা অনেকে এই বড়দিন উদযাপনকে পৌত্তলিকতার সাথে সম্পর্কযুক্ত বলে দাবী করে থাকে, তা হল - খ্রীষ্টমাস্‌ ডে পালন শুরু হওয়ার আগে থেকেই কিছু ইউরোপীয় পৌত্তলিক ধর্মীয় সম্প্রদায় একটি গাছ কেটে এনে ফুল, মোমবাতি, ঘণ্টা ইত্যাদির দ্বারা সাজসজ্জা তৈরী করে তাদের উৎসব পালন করত, আর আজকাল খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরাও এমনটাই করে থাকেন। আর বাইবেল অনুযায়ী তো কোনও গাছ কেটে এনে, সেটিকে অলংকৃত করতে নিষেধ করে, তাহলে কি আপনারা একটি পৌত্তলিক রীতির অনুসরণ করছেন না ?

তারা তাদের যুক্তির সপক্ষে যিরমিয় ১০ অধ্যায় ১ থেকে ৫ পদ ব্যবহার করে থাকে, সেখানে লেখা আছে –

1 হে ইস্রায়েল-কুল, সদাপ্রভু তোমাদের বিষয়ে যে কথা কহেন, তাহা শুন। 2 সদাপ্রভু এই কথা কহেন,

তোমরা জাতিগণের ব্যবহার শিখিও না,

আকাশের নানা চিহ্ন হইতে ভীত হইও না;

বাস্তবিক জাতিগণই তাহা হইতে ভীত হয়

3 কেননা জাতিগণের বিধি সকল অসার; লোকে বনে কাষ্ঠ ছেদন করে,

তাহাই বাটালি সহকারে কারুকরের হস্তকৃত কর্ম্ম হইয়া উঠে

4 লোকে তাহা রৌপ্য ও সুবর্ণে অলঙ্কৃত করে;

এবং যেন না নড়ে, তজ্জন্য হাতুড়ি দিয়া প্রেক মারিয়া তাহা দৃঢ় করে

5 সে সকল কোঁদা স্তম্ভস্বরূপ; কথা কহিতে পারে না;

তাহাদিগকে বহন করিতে হয়, কারণ তাহারা চলিতে পারে না

তোমরা তাহাদের হইতে ভীত হইও না;

কারণ তাহারা অহিত করিতে পারে না,

হিত করিতেও তাহাদের সাধ্য নাই

 

এই পদটিকেই হাতিয়ার করে তারা দাবী করে যে, বাইবেলে যা স্পষ্টভাবেই নিষেধ করে, তা খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা আজ কেন অনুসরণ করে ?

কিন্তু ভালোভাবে এই পদগুলি পাঠ করলে বুঝতে পারা যায় যে, এখানে উপাসনার জন্য কাষ্ঠ ছেদন করে মূর্তির আকার দিতে বারণ করা হয়েছে। আর খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরা অবশ্যই কাষ্ঠ ছেদন করে সেটিকে মূর্তির আকার দিয়ে সেটির উপাসনা করে না। কেবলমাত্র তা সাজসজ্জার জন্যই ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

আমাদের এটি বুঝতে হবে যে, বাইবেল অনুযায়ী আমাদের এমন কিছু করা উচিত নয়, যা ঈশ্বরের দৃষ্টিতে পাপজনক। আর যদি আমরা এমন কিছু করি, যা বাইবেল এবং ঈশ্বরের বিরুদ্ধে যায় না; তবে তাতে কোনও সমস্যা নেই। আমরা যা কিছুই করি না কেন, তা যেন আমাদের ঈশ্বরের গৌরবের উদ্দেশ্যে করা হয়। আমাদের এমন কিছু করা উচিত নয়, যার দ্বারা আমাদের ঈশ্বরের অগৌরব প্রকাশ পায়।

অনেকে এই বড়দিন নানারকম মন্দ বিষয়ের দ্বারা উদযাপন করে থাকে, যেমন – বিভিন্ন ধরণের নেশার মধ্য দিয়ে, ব্যভিচারের মধ্য দিয়ে ও জাগতিক নানান ভোগ-বিলাসিতার মধ্য দিয়ে। কিন্তু এর অর্থ এটি নয় যে, এই সমস্ত কারণের জন্য আমাদের এই উৎসব পালন করা উচিত নয়। আমরা যদি এই উৎসব ঈশ্বরের গৌরবের জন্য উদযাপন করতে পারি, তবে তাতে কোনও মন্দতার বিষয় নেই।

কলসীয় ৩ অধ্যায় ১৭ পদে লেখা আছে –

আর বাক্যে কি কার্য্যে যাহা কিছু কর, সকলই প্রভু যীশুর নামে কর, তাঁহার দ্বারা পিতা ঈশ্বরের ধন্যবাদ করিতে করিতে ইহা কর

এবার সিদ্ধান্ত আপনার ব্যক্তিগত!

আপনি চাইলে খ্রীষ্টমাস্‌ ডে পালন করতেও পারেন, অথবা নাও করতে পারেন। তবে আপনার এই উৎসব পালন করা অথবা না করার জন্য যেন সুসমাচার প্রচার বাধাপ্রাপ্ত না হয়। আমাদের উচিত যেন আমরা ঈশ্বরকে গৌরবান্বিত করার প্রত্যেকটি সুযোগের সদ্ব্যবহার করি।

ঈশ্বর আপনাদের সকলকে আশীর্বাদযুক্ত করুন, আমেন।



Tags:- 

Christian Articles, বাংলা খ্রীষ্টীয় নিবন্ধ, bsbbca, bibleshikshabhaskar, BSB Ministry, Bengali Christian Blog, Bangla Gospel, Bengali Gospel, Preaching in Bengali Language, Bible Based Articles, বাংলা প্রচার, বাংলা যীশুর প্রচার, Bangla Christiyo Christio Khristiyo Khristio Prochar, BSB Gospel, Gospel Articles, Bangla Nibondho, Gospel Online, Online Gospel, বাইবেল প্রচার, বাইবেলের বাক্য, Blogger, Jesus Christ, যীশু খ্রীষ্ট, christmas message bengali, christmas season, should we celebrate christmas, 

0 Comments