আমরা অন্যদের ক্ষমা করলে তবেই কি ঈশ্বর আমাদেরকে ক্ষমা করবেন ? | BSB Bengali Christian Articles
মথি ৬ অধ্যায় ১৪
থেকে ১৫ পদে প্রভু যীশু বলেছেন
–
14 কারণ তোমরা যদি লোকের অপরাধ ক্ষমা কর, তবে তোমাদের স্বর্গীয় পিতা
তোমাদিগকেও ক্ষমা করিবেন। 15 কিন্তু তোমরা যদি লোকদিগকে ক্ষমা না কর, তবে তোমাদের পিতা তোমাদেরও অপরাধ
ক্ষমা করিবেন না।
এই পদের ওপর ভিত্তি করে খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের মনে প্রশ্ন জাগে – আমি তো পরিত্রাণ পেয়েছি, কিন্তু তবুও কখনও কখনও আমার দ্বারা পাপ হয়ে যায়! তাহলে যদি আমি অন্যকে ক্ষমা না করি, সেই কারণে কি ঈশ্বরও আমাদের ক্ষমা করবেন না ?
তো আসুন, সেই বিষয়ে আমরা বুঝতে চেষ্টা করি।
১ যোহন ৪ অধ্যায় ১০ পদে লেখা আছে –
ইহাতেই
প্রেম আছে; আমরা যে ঈশ্বরকে প্রেম করিয়াছিলাম, তাহা নয়; কিন্তু তিনিই আমাদিগকে প্রেম
করিলেন, এবং আপন পুত্রকে আমাদের পাপার্থক প্রায়শ্চিত্ত হইবার জন্য
প্রেরণ করিলেন।
এই বাক্যটিকে আপনি একটু
বোঝার চেষ্টা করুন,
আমরা ঈশ্বরকে প্রেম করিনি,
বরং তিনিই আমাদেরকে আগে প্রেম করেছেন, আর সেই জন্যই আমরা বুঝতে পেরেছি যে, ঈশ্বরের
প্রেম আসলে কেমন।
আর ক্ষমাও সেই প্রকার।
ঈশ্বর আগে আমাদের ক্ষমা করেছেন, যাতে আমরা বুঝতে পারি যে, ক্ষমার অর্থটা আসলে কি।
কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকেই
যায়, আর সেটা হল –
প্রভু যীশু কেন মথি
৬ অধ্যায় ১২ পদে এমনটা বলেছেন ?
সেখানে লেখা আছে –
আর আমাদের অপরাধ সকল ক্ষমা কর,
যেমন আমরাও আপন আপন অপরাধীদিগকে ক্ষমা করিয়াছি;
এই পদটির ওপর ভিত্তি করে
অনেকে বলতে পারেন, দেখ, এখানে তো লেখা আছে যে, আগে আমাদের উচিত অন্যকে ক্ষমা করা, তবেই
ঈশ্বর আমাদেরকে ক্ষমা করবেন। তাহলে ক্ষমা পাবার জন্য কি এটা ঈশ্বরের শর্ত ?
তো প্রথমেই এখানে একটি
কথা বলার আছে, সেটি হল – বাইবেল কখনই একটি বাক্যের সাথে অন্য বাক্যের বিরোধিতা করে
না, বাইবেল সব সময় একটিই বার্তা বহন করে, হতে পারে বাইবেলে এমন অনেক পদ রয়েছে, যেগুলি
দেখলে হয়ত একে ওপরের বিপরীত বলে মনে হতে পারে, কিন্তু যখন আপনি সেই পদগুলিকে প্রসঙ্গ
অনুযায়ী বুঝতে চেষ্টা করবেন, তখন আপনি বুঝতে পারবেন, পদগুলি নিজ নিজ ক্ষেত্রে সঠিক
এবং সেগুলি লেখার উদ্দেশ্য সম্বন্ধেও আপনি বুঝতে পারবেন।
আসুন আমরা দুটি গল্পের
মাধ্যমে ক্ষমা ও সহভাগিতা সম্বন্ধে একটু বুঝতে চেষ্টা করি।
প্রথম গল্পঃ-
কোনও এক সময়ে অত্যন্ত
ধনী একজন ব্যক্তি বাস করতেন, সেই ব্যক্তির একটি পুত্র সন্তান ছিল। সেই ব্যক্তিটি তার
সন্তানকে খুবই আদরে বড়ো করে তুলেছিলেন, কোনও দিন কোনও প্রকারের অভাব তিনি তার সন্তানকে
দেননি।
ধীরে ধীরে বিলাসিতার মধ্য
দিয়ে সেই ব্যক্তির ছেলেটি যুবকে পরিনত হয়ে ওঠে। কিন্তু অর্থের বাহুল্যের কারণে ছেলেটি
মন্দ পথে পা বাড়িয়ে ফেলে, মদ্যপান সহ বিভিন্ন ধরণের নেশায় সে মগ্ন হয়ে পরে, বন্ধু-বান্ধবদের
সাথে এখানে ওখানে গিয়ে টাকা-পয়সা ওড়াতে থাকে, এমনকি ব্যভিচারও করতে শুরু করে।
ধনী ব্যক্তিটি অর্থাৎ
ছেলেটির পিতা তার ছেলেকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলেও সে কোনও কথায় কর্ণপাত করত না।
এরপর এমন এক সময় এলো,
যখন ছেলেটির ভোগ-বিলাসিতা চরম পর্যায়ে পৌঁছালো এবং সে অনেকের কাছ থেকে তার পিতার নাম
করে মোটা অঙ্কের টাকা ঋণ করে ফেলল এবং সেই টাকা সে উড়িয়ে ফেলল। সময় মতো ঋণ পরিশোধ করতে
না পারায় সেই লোকেরা (যাদের কাছে সে ঋণ করেছিল) তার পিতার কাছে এসে বলল – আমরা আপনার
ছেলেকে ঋণ দিয়েছিলাম এই জন্য, কারণ আপনি একজন ধনী ব্যক্তি এবং সমাজে আপনার অনেক নাম-ডাক এবং সম্মান
রয়েছে। আমরা ভেবেছিলাম আমাদের টাকা আমরা সময় মতো ফেরত পেয়ে যাব, কিন্তু আমরা তা এখনও
পাইনি! সেই জন্য আমরা আপনাকে এটাই বলতে এসেছি যে, আপনার ছেলে যদি আমাদের টাকা ফেরত
না দেয়, তাহলে আমরা তাকে হত্যা করব, নয়ত তাকে কারাগারে নিক্ষিপ্ত করব।
এই কথা শুনে ধনী ব্যক্তিটি
তাদের বলল – আপনারা আমার ছেলেকে কিছুই করবেন না, আপনাদের কাছে আমার ছেলে যত টাকা ঋণ
করেছে, তার সমস্তটাই আমি পরিশোধ করে দিচ্ছি।
তো ধনী ব্যক্তিটি তার
সন্তানের করা সমস্ত ঋণ পরিশোধ করে ফেলল, এবং সেই লোকেরা তার ছেলেটিকে ছেড়ে দিল।
ঠিক এমনভাবেই আমাদের পাপের মূল্য প্রভু যীশু
ক্রুশে বলি হয়ে তাঁর রক্ত দিয়ে পরিশোধ করেছেন।
কিন্তু আপনি একবার ভেবে
দেখুন – সেই ধনী ব্যক্তিটি তার ছেলের ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া সত্ত্বেও তার ছেলের সাথে
তার যে সহভাগিতা ভেঙ্গে গিয়েছিল, সেটি সংযুক্ত হয়নি, কারণ – ছেলেটি তখনও মন্দতার মধ্যেই
জীবনযাপন করছিল, সে তার পিতার কাছে তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী হয়নি এবং তার
প্রতি তার পিতার যে ভালোবাসা, সেই ভালোবাসার মূল্য সে দেয়নি।
তার পিতা তার সমস্ত ঋণ
পরিশোধ করে দিলেও তিনি চান যেন তার ছেলেটি সঠিক পথে ফিরে আসে, সেই জন্য তিনি অপেক্ষা
করে রয়েছেন।
আপনি ভালোভাবে চিন্তা করুন – প্রভু যীশু আমাদের
পাপের ক্ষমার জন্য দণ্ড ভোগ করেছেন ঠিকই, কিন্তু দেখার বিষয় এটাই যে, আমাদের কি প্রভুর
সাথে সহভাগিতা গড়ে উঠেছে ?
মথি ৬ অধ্যায় ১৪ থেকে
১৫ পদে প্রভু যীশু যা যা বলেছেন, সেই সমস্ত কিছুর অর্থ আমরা পরবর্তী গল্পে বুঝতে পারব,
যা বাইবেল থেকেই আমরা তুলে ধরছি।
দ্বিতীয় গল্পঃ-
আসুন আমরা বাইবেল থেকে
দেখি, যেখানে ক্ষমার বিষয়ে প্রভু যীশু দৃষ্টান্ত সহকারে আমাদের বুঝিয়েছেন।
মথি ১৮ অধ্যায় ২১
থেকে ৩৫ পদ –
21 তখন পিতর তাঁহার নিকটে আসিয়া কহিলেন, প্রভু, আমার ভ্রাতা আমার নিকটে কত বার অপরাধ করিলে
আমি তাহাকে ক্ষমা করিব? কি সাত
বার পর্য্যন্ত?
22 যীশু তাঁহাকে কহিলেন, তোমাকে বলিতেছি না, সাত বার পর্য্যন্ত, কিন্তু সত্তর গুণ সাত বার পর্য্যন্ত। 23 এজন্য স্বর্গ-রাজ্য এমন এক জন রাজার
তুল্য, যিনি আপন
দাসগণের কাছে হিসাব লইতে চাহিলেন। 24 তিনি হিসাব আরম্ভ করিলে, এক জন তাঁহার নিকটে আনীত হইল, যে তাঁহার দশ সহস্র তালন্ত ধারিত। 25 কিন্তু তাহার পরিশোধ করিবার সঙ্গতি না
থাকাতে তাহার প্রভু তাহাকে ও তাহার স্ত্রী পুত্রাদি সর্ব্বস্ব বিক্রয় করিয়া আদায়
করিতে আজ্ঞা করিলেন। 26 তাহাতে সে
দাস তাঁহার চরণে পড়িয়া প্রণিপাত করিয়া কহিল, হে প্রভু, আমার প্রতি ধৈর্য্য ধরুন, আমি আপনার সমস্তই পরিশোধ করিব। 27 তখন সে দাসের প্রভু করুণাবিষ্ট হইয়া
তাহাকে মুক্ত করিলেন ও তাহার ঋণ ক্ষমা করিলেন।
28 কিন্তু সেই দাস বাহিরে গিয়া তাহার
সহদাসদের মধ্যে এক জনকে, দেখিতে
পাইল, যে তাহার
এক শত সিকি ধারিত; সে তাহাকে
ধরিয়া গলাটিপি দিয়া কহিল, তুই যা
ধারিস্, তাহা
পরিশোধ কর্। 29 তখন তাহার
সহদাস তাহার চরণে পড়িয়া বিনতিপূর্ব্বক কহিল, আমার প্রতি ধৈর্য্য ধর, আমি তোমার ঋণ পরিশোধ করিব। 30 তথাপি সে সম্মত হইল না, কিন্তু গিয়া তাহাকে কারাগারে ফেলিয়া
রাখিল, যে
পর্য্যন্ত ঋণ পরিশোধ না করে। 31 এই ব্যাপার দেখিয়া তাহার সহদাসেরা বড়ই
দুঃখিত হইল, আর
আপনাদের প্রভুর কাছে গিয়া সমস্ত বৃত্তান্ত বলিয়া দিল। 32 তখন তাহার প্রভু তাহাকে কাছে ডাকাইয়া
কহিলেন, দুষ্ট
দাস! তুমি আমার কাছে বিনতি করাতে আমি তোমার ঐ সমস্ত ঋণ ক্ষমা করিয়াছিলাম; 33 আমি যেমন তোমার প্রতি দয়া করিয়াছিলাম, তেমনি তোমার সহদাসের প্রতি দয়া করা কি
তোমারও উচিত ছিল না? 34 আর তাহার
প্রভু ক্রুদ্ধ হইয়া পীড়নকারীদের নিকটে তাহাকে সমর্পণ করিলেন, যে পর্য্যন্ত সে সমস্ত ঋণ পরিশোধ না
করে।
35 আমার স্বর্গীয় পিতাও তোমাদের প্রতি
এইরূপ করিবেন, যদি
তোমরা প্রতিজন অন্তঃকরণের সহিত আপন আপন ভ্রাতাকে ক্ষমা না কর।
ওপরের ৩৫ পদে প্রভু যীশু
বলেছেন – তোমরা যদি অন্যকে ক্ষমা না কর, তাহলে স্বর্গীয় পিতাও তোমাদের ক্ষমা করবেন না।
প্রভু দৃষ্টান্তের মাধ্যমে
বুঝিয়েছেন যে, যতক্ষণ আমরা অন্যকে ক্ষমা না করব, ততক্ষন পিতাও আমাদের ক্ষমা করবেন না,
কারণ – ক্ষমা না করলে পিতার সাথে আমাদের সহভাগিতা কোনও দিনই তৈরী হবে না।
ঈশ্বর ক্ষমাশীল, আমরা
যখন প্রভু যীশুতে বিশ্বাস করে তাকে আমাদের ত্রাণকর্তারূপে স্বীকার করেছি, তখন আমরা
ঈশ্বরের সন্তান হবার অধিকার পেয়েছি, আর সেই কারণে আমাদেরও ক্ষমাশীল হতে হবে, তবেই আমাদের
সাথে ঈশ্বরের সহভাগিতা বজায় থাকবে। কিন্তু যদি আমরা অন্যকে ক্ষমা না করি, তবে ঈশ্বরের
সাথে আমাদের সহভাগিতা ভঙ্গ হবে। সেই সহভাগিতা ততক্ষন পুনরায় সংযুক্ত হবে না, যতক্ষণ
না আমরা ক্ষমাশীল হয়ে হৃদয়কে বিশুদ্ধ করব।
বাস্তব জীবনে কেউ যদি
কখনও আমাদের বিরুদ্ধে কিছু অন্যায় করে, এবং তাকে যদি আমরা ক্ষমা করে দিই, তার মানে
এই নয় যে, সেই ব্যক্তিটি পরিবর্তন হয়ে যাবে, কিন্তু ঈশ্বর সেই ব্যক্তির তুলনায় আমাদের
দিকে বেশী লক্ষ্য রাখেন, কারণ আমরা এখন তাঁর সন্তান। ঈশ্বর আমাদের পাপের ক্ষমা করেছেন,
তাই তিনি দেখেন, আমরা তাঁর সন্তান হওয়ার দরুন অন্যদের ক্ষমা করছি কি না।
যদি আমরা অন্যদের ক্ষমা
না করি, তবে ঈশ্বরের সাথে আমাদের সহভাগিতা গড়ে উঠবে না, সে বিষয়ে আমরা আগেই আলোচনা
করেছি। ঈশ্বরের সাথে সহভাগিতা না গড়ে উঠলে আমাদের জীবনে অনেক ধরণের সমস্যা তৈরী হবে,
আমরা আমাদের জীবনে ঈশ্বরের শান্তি উপলব্ধি করতে পারব না, আমাদের হৃদয় কঠিন হতে শুরু
করবে, যার দরুন পবিত্র আত্মার চেতনা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে না, তাই আমরা
হবো পথভ্রষ্ট।
ঈশ্বর তাঁর সাথে আমাদের
সহভাগিতা বজায় রাখার জন্য এবং আমাদেরকে সঠিক দিশায় পরিচালিত করার জন্য অনেক সময় তিনি
আমাদের পরীক্ষার মধ্যে ফেলেন, যেগুলি অনেক কষ্টদায়ক, কিন্তু সেগুলি আমাদের মঙ্গলজনক
শাস্তি।
অতএব, আমাদের ঈশ্বরের
সাথে সহভাগিতা অবশ্যই বজায় রাখতে হবে, সেই জন্য পবিত্র আত্মার সহায়তায় ঈশ্বরের স্বভাব
আমাদের ধীরে ধীরে পরিধান করতে হবে এবং ঈশ্বরের মতো ক্ষমাশীল হয়ে উঠতে হবে, কারণ – তিনিই
আগে আমাদের ক্ষমা করেছেন।
ইফিষীয় ৪ অধ্যায়
৩২ পদ বলে –
তোমরা
পরস্পর মধুরস্বভাব ও করুণচিত্ত হও, পরস্পর ক্ষমা কর, যেমন ঈশ্বরও খ্রীষ্টে তোমাদিগকে ক্ষমা করিয়াছেন।
Tags:-
Christian Articles, বাংলা খ্রীষ্টীয় নিবন্ধ, bsbbca, bibleshikshabhaskar, BSB Ministry, Bengali Christian Blog, Bangla Gospel, Bengali Gospel, Preaching in Bengali Language, Bible Based Articles, বাংলা প্রচার, বাংলা যীশুর প্রচার, Bangla Christiyo Christio Khristiyo Khristio Prochar, BSB Gospel, Gospel Articles, Bangla Nibondho, Gospel Online, Online Gospel, বাইবেল প্রচার, বাইবেলের বাক্য, Blogger, Jesus Christ, যীশু খ্রীষ্ট,
0 Comments