মথি ১০ অধ্যায় ৩৪ থেকে ৩৬ পদে লেখা আছে –

34 মনে করিও না যে, আমি পৃথিবীতে শান্তি দিতে আসিয়াছি; শান্তি দিতে আসি নাই, কিন্তু খড়গ দিতে আসিয়াছি। 35 কেননা আমি পিতার সহিত পুত্রের, মাতার সহিত কন্যার, এবং শাশুড়ীর সহিত বধূর বিচ্ছেদ জন্মাইতে আসিয়াছি; 36 আর আপন আপন পরিজনই মনুষ্যের শত্রু হইবে।

ওপরের এই তিনটি পদের ওপর ভিত্তি করে অনেকেই বলে থাকেন যে – দেখুন, এখানে যীশু বলেছেন, আমি পৃথিবীতে শান্তি দিতে আসিনি, বরং খড়গ দিতে এসেছি, অতএব যীশু শান্তিরাজ নন।

তারা আরও বলে থাকেন – যীশু যদি শান্তিরাজ হয়ে থাকেন, তাহলে তিনি খড়গ দিতে এসেছেন, এরকম কথা কেন বলেছেন ?

     তো আসুন আমরা এই সমস্ত প্রশ্নগুলির উত্তর বিস্তারিতভাবে আলোচনা করি।

প্রথমেই আমরা একটি ঘটনা আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই, সেটি হল - গেৎশিমানী বাগানের ঘটনা, যেখানে প্রভু যীশুকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। প্রভু যীশুর ১২ জন শিষ্যদের মধ্যে একজন (পিতর) যখন মহাযাজকের দাস মল্ককে খড়গ দ্বারা আঘাত করে তার একটি কান কেটে ফেলেছিলেন, তখন কি প্রভু যীশু সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর শিষ্যের প্রসংশা করেছিলেন ?

এর উত্তর হল – অবশ্যই না,

বরং মথি ২৬ অধ্যায় ৫২ পদে তিনি তাঁর শিষ্যকে বলেছিলেন –

তোমার খড়গ পুনরায় স্বস্থানে রাখ, কেননা যে সকল লোক খড়গ ধারণ করে, তাহারা খড়গ দ্বারা বিনষ্ট হইবে।

তো মথি ২৬ অধ্যায় ৫২ পদে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, প্রভু যীশু খরগের বিরোধীতা করেছেন, কিন্তু আবার মথি ১০ অধ্যায় ৩৪ পদে তিনি বলেছেন – আমি শান্তি নয়, বরং খড়গ দিতে এসেছি!

তাহলে এসবের অর্থ কি দাঁড়ালো ?

এসবের অর্থ আমরা তখনই বুঝতে পারব, যখন আমরা বাইবেলের প্রত্যেকটি পদকে তার প্রসঙ্গ অনুযায়ী বিশ্লেষণ করব।

আসুন, আমরা একটি উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি বুঝতে চেষ্টা করি –

ধরুন, আপনার স্থানীয় মণ্ডলীতে একজন যুবক খুব ভালো বাইবেলের বাক্য প্রচার করতে সক্ষম, তাই আপনি তাকে সেই স্থানীয় মণ্ডলীর “স্তম্ভ” নামে সম্বোধন করলেন, কিন্তু আপনি সেই যুবককে স্তম্ভ নামে সম্বোধন করলেও আসলে সে কিন্তু মণ্ডলীর একটি স্তম্ভ নয়, আপনি সেই যুবকটির গুণগুলির প্রশংসা ব্যক্ত করার জন্য তাকে স্তম্ভ নামে সম্বোধন করেছেন।

ঠিক সেরকমই প্রভু যীশু অনেক সময় তাঁর প্রচারে এমন কিছু শব্দ ব্যবহার করতেন, যেগুলির অন্তর্নিহিত অর্থ ভিন্ন।

তো প্রভু যীশু মথি ১০ অধ্যায় ৩৪ পদে যে খড়গের বিষয়ে বলেছেন, সেই খড়গের সঠিক অর্থ আমাদের জানা প্রয়োজন।

খড়গের সঠিক অর্থ আমরা পাই ৩৪ পদের ঠিক পরবর্তী পদ দুটিতে, অর্থাৎ ৩৫ এবং ৩৬ পদে, সেখানে লেখা আছে –

35 কেননা আমি পিতার সহিত পুত্রের, মাতার সহিত কন্যার, এবং শাশুড়ীর সহিত বধূর বিচ্ছেদ জন্মাইতে আসিয়াছি; 36 আর আপন আপন পরিজনই মনুষ্যের শত্রু হইবে।

যখন কোনও ব্যক্তি অন্য কোনও বিশ্বাস ত্যাগ করে হঠাৎ প্রভু যীশুর প্রেমকে আস্বাদন করে তাকে নিজের ত্রাণকর্তা রূপে স্বীকার করে তাঁর ওপর বিশ্বাস করতে শুরু করেন, তখন সেই ব্যক্তিটির পরিবার এবং পাড়া-প্রতিবেশী কি তার প্রশংসা করে থাকে ?

অবশ্যই না!

বরং সেই ব্যক্তিটির পরিবার এবং পাড়া-প্রতিবেশী তার বিরোধীতা করে।

সেই ব্যক্তিটির পরিবারের সদস্যরা তখন এটাই চিন্তা করে থাকে যে, এত বছর ধরে সে আমাদের বিশ্বাসেই বড়ো হয়ে উঠেছে, আমাদের রীতি-নীতিগুলি ও আচার অনুষ্ঠানগুলি পালন করে এসেছে, কিন্তু আজ হঠাৎ করেই সে আমাদের বিশ্বাসের বিরুদ্ধে নিজের বিশ্বাস স্থাপন করেছে!

আজকাল অনেক খ্রীষ্ট বিশ্বাসীর মুখ থেকে আমরা শুনতে পাই যে, খ্রীষ্টকে গ্রহণ করার জন্য তাদেরকে তাদের বাড়ী থেকে বিতারিত করা হয়েছে, অর্থাৎ তাদের আপন পরিবারই তাদের বিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

তো এরকম বিপক্ষ ও বিরোধী হওয়ার ঘটনা যে কোনও সম্পর্কের মধ্যেই হতে পারে, সেটা পিতা ও পুত্রের সম্পর্কের মধ্যে হতে পারে, মাতা ও কন্যার সম্পর্কের মধ্যে হতে পারে, শাশুড়ি ও বৌমার সম্পর্কের মধ্যে হতে পারে, অথবা আমাদের সাথে আমাদের আত্মীয়-পরিজনদের সম্পর্কের মধ্যেও হতে পারে।

তাহলে প্রভু যীশু যে খড়গের কথা আমাদের বলেছেন, সেই খড়গের আসল অর্থ কোনও তরবারি নয়, বরং সেই খড়গের অর্থ এটাই যে, আমরা যখন প্রভু যীশুতে বিশ্বাস করব, তখন জগৎ আমাদের বিপক্ষ হয়ে দাঁড়াবে, আমরা যখন ঈশ্বরের সাথে মিত্রতার সম্পর্ক গড়ে তুলব, তখন জগতের মন্দতাগুলির সাথে আমাদের একটি শত্রুতার সম্পর্ক তৈরী হবে, কারণ জগৎ ঈশ্বরের প্রেমের আস্বাদ গ্রহণ করতে এখনও পুরোপুরিভাবে সক্ষম হয়ে ওঠেনি, তাই জগৎ মন্দতায় পরিপূর্ণ।

প্রভু যীশু মথি ১০ অধ্যায় ৩৪ থেকে ৩৬ পদে আমাদের কাছে বাস্তবের সত্যতা প্রকাশ করেছেন, তিনি আমাদের শান্তির বার্তাই শুনিয়েছেন, কিন্তু জগতের এই বাস্তবতা আমাদের গলায় খড়গের মতো বিঁধতে চলেছে, সেই বিষয়টিই তিনি এখানে তুলে ধরেছেন।

প্রভু যীশু জগতে শান্তির বার্তাই শুনিয়ে গিয়েছেন এবং তাঁর শান্তি আমাদের জন্য রেখে গিয়েছেন, যার বিবরণ আমরা বাইবেলের বেশ কিছু পদে পেয়ে থাকি, যেমন –

লুক ৬ অধ্যায় ২৮ থেকে ২৯ পদ –

28 যাহারা তোমাদিগকে শাপ দেয়, তাহাদিগকে আশীর্ব্বাদ করিও; যাহারা তোমাদিগকে নিন্দা করে, তাহাদের নিমিত্ত প্রার্থনা করিও। 29 যে তোমার এক গালে চড় মারে, তাহার দিকে অন্য গালও পাতিয়া দিও; এবং যে তোমার চোগা তুলিয়া লয়, তাহাকে আঙ্‌রাখাটীও লইতে বারণ করিও না।

মথি ৫ অধ্যায় ৪১ থেকে ৪২ পদ –

41 আর যে কেহ এক ক্রোশ যাইতে তোমাকে পীড়াপীড়ি করে, তাহার সঙ্গে দুই ক্রোশ যাও। 42 যে তোমার কাছে যাচ্ঞা করে, তাহাকে দেও; এবং যে তোমার নিকটে ধার চায়, তাহা হইতে বিমুখ হইও না।

 

যোহন ১৪ অধ্যায় ২৭ পদ –

শান্তি আমি তোমাদের কাছে রাখিয়া যাইতেছি, আমারই শান্তি তোমাদিগকে দান করিতেছি; জগৎ যেরূপ দান করে, আমি সেরূপ দান করি না।

 

     প্রভু যীশু আমাদের যে শান্তি প্রদান করেন, তা জগতের শান্তির অনুরূপ নয়। আমাদের জানতে হবে যে, প্রভু আমাদের কি ধরণের শান্তি প্রদান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

আদিপুস্তক ১ম অধ্যায় এবং ২য় অধ্যায়ে আমরা দেখতে পাই যে, আদম ও হবা পাপ করেছিলেন, আর সেই পাপের কারণে ঈশ্বরের সাথে তাদের শান্তি বিনষ্ট হয়ে গিয়েছিল, এবং রোমীয় ৫ অধ্যায় ১ পদে আমরা দেখতে পাই, প্রভু যীশুর প্রতি বিশ্বাস দ্বারা আমরা ঈশ্বরের সাথে সেই শান্তি বা সন্ধি পুনরায় স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি। সেখানে লেখা আছে  -

অতএব বিশ্বাসহেতু ধার্ম্মিক গণিত হওয়াতে আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা আমরা ঈশ্বরের উদ্দেশে সন্ধি লাভ করিয়াছি;

 

অতএব মূল শান্তি হল – ঈশ্বরের সাথে মানুষের মধ্যে একটি শান্তির সম্পর্ক।

যখন কোনও ব্যক্তি প্রভু যীশুর বলিদানের ওপর বিশ্বাস দ্বারা ঈশ্বরের সাথে শান্তি স্থাপন করে, তখন সেই ব্যক্তির সাথে জগতের একটি অশান্তির সম্পর্ক তৈরী হয়, যা খড়গ স্বরুপ।

ঈশ্বরের দেখানো পথ ও শয়তানের দেখানো পথ সম্পূর্ণ আলাদা, তাই কোনও ব্যক্তি যদি ঈশ্বরের দেখানো আলোর পথে চলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তবে শয়তানের জন্য তা বিপজ্জনক, কারণ শয়তান অন্ধকারের অধিপতি।

আমরা যোহন ১ অধ্যায় ১১ পদে দেখতে পাই, প্রভু যীশুকেই তাঁর মনোনীত জাতি স্বীকার করেনি, কারণ তারা অন্ধকারের রাজত্বের অধীনে ছিল, তাই এই জগতের লোকেরা আমাদেরকেও স্বীকার করবে না, এটা স্বাভাবিক, কারণ আমরা প্রভু যীশুতে বিশ্বাস করেছি।

আর প্রভু যীশু যোহন ১৫ অধ্যায় ১৮ পদে বলেছেন –

জগৎ যদি তোমাদিগকে দ্বেষ করে, তোমরা ত জান, সে তোমাদের অগ্রে আমাকে দ্বেষ করিয়াছে।

আমেন।


Tags:- 

Christian Articles, বাংলা খ্রীষ্টীয় নিবন্ধ, bsbbca, bibleshikshabhaskar, BSB Ministry, Bengali Christian Blog, Bangla Gospel, Bengali Gospel, Preaching in Bengali Language, Bible Based Articles, বাংলা প্রচার, বাংলা যীশুর প্রচার, Bangla Christiyo Christio Khristiyo Khristio Prochar, BSB Gospel, Gospel Articles, Bangla Nibondho, Gospel Online, Online Gospel, বাইবেল প্রচার, বাইবেলের বাক্য, Blogger, Jesus Christ, যীশু খ্রীষ্ট,

0 Comments