প্রভু যীশুর প্রকৃত শিষ্য হয়ে ওঠার শর্তাবলী | BSB Bengali Christian Articles
আজ আমরা বাইবেলের এমন
কিছু পদ নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলির বিষয়ে বেশীরভাগ আধুনিক মণ্ডলীগুলিতে খুব কমই শিক্ষা
দেওয়া হয়ে থাকে, অথবা দেওয়া হয় না বললেই চলে, কারণ এই শিক্ষাগুলি বা শর্তগুলি সকলের
পক্ষে গ্রহণযোগ্য নয়।
তো আসুন আমরা সেই সমস্ত
পদগুলি বিশ্লেষণ করি।
লুক ১৪ অধ্যায় ২৫
থেকে ২৭ পদঃ-
25 একদা বিস্তর লোক তাঁহার সঙ্গে
যাইতেছিল; তখন তিনি মুখ ফিরাইয়া তাহাদিগকে কহিলেন, 26 যদি কেহ আমার নিকটে আইসে, আর আপন পিতা, মাতা, স্ত্রী সন্তানসন্ততি, ভ্রাতৃগণ, ও ভগিনীগণকে এমন কি, নিজ প্রাণকেও অপ্রিয় জ্ঞান না করে, তবে সে আমার শিষ্য হইতে পারে না। 27 যে কেহ নিজের ক্রুশ বহন না করে ও আমার
পশ্চাৎ পশ্চাৎ না আইসে, সে আমার শিষ্য হইতে পারে না।
ওপরের ২৫ পদ অনুযায়ী আমরা
বুঝতে পারি যে, প্রভু যীশু সেই সময়ে কতটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু তিনি সেই বিস্তর
লোকের ভির দেখে তাদের ধন্যবাদ করেননি, এমনকি তাদের সামনে এমন কোনও কিছুর প্রচার করেননি,
যার দ্বারা তারা আকৃষ্ট হয়ে পুনরায় তাঁর কাছে ফিরে আসবে, বরং তিনি স্পষ্টভাবেই তাদের
বলেছিলেন যে, কেউ যদি তাঁর শিষ্য হয়ে উঠতে চায়, তাহলে তাকে কি কি শর্তগুলি অবলম্বন
করতে হবে।
প্রভু যীশু সেই বিস্তর
লোকদের কাছে এই শর্তগুলি রেখেছিলেন -
১. প্রকৃত শিষ্য
তার পরিবারের থেকে বেশী প্রভু যীশুকে ভালোবাসবেঃ-
ওপরের ২৬ পদ অনুযায়ী,
প্রভু যীশুর প্রকৃত শিষ্য হয়ে উঠতে চাইলে কোনও ব্যক্তিকে অবশ্যই তার পরিবারকে অপ্রিয়
জ্ঞান করতে হবে। এখানে অপ্রিয় জ্ঞান করার অর্থ এই নয় যে তাদেরকে সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ
করে দিতে হবে, বরং এর অর্থ হল - তাদের তুলনায় অধিক প্রভু যীশুকে ভালোবাসতে হবে এবং
তাঁকে সর্বোচ্চ স্থান দিতে হবে।
কিন্তু যদি আপনার পরিবার
আপনার কাছে দুটি বিকল্প রাখে (হয় পরিবার, নয়ত যীশু), তাহলে অবশ্যই আপনাকে প্রভু যীশুকেই
বেঁছে নিতে হবে।
২. প্রকৃত শিষ্য
নিজেকে অস্বীকার করবেঃ-
ওপরের ২৬ পদে শুধুমাত্র
নিজের পরিবারকে নয়, বরং নিজের প্রাণকেও অপ্রিয় জ্ঞান করার বিষয়ে আজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
প্রভু যীশু এই বাক্য দ্বারা
বোঝাতে চেয়েছেন যে, তাঁর প্রকৃত শিষ্য অবশ্যই নিজের প্রানের থেকে বেশী তাঁকে ভালোবাসবে
এবং তাঁর দেখানো পথেই চলতে শুরু করবে।
প্রভুর জন্য নিজের জীবনকে
উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে হবে এবং বিশ্বাসে শেষ পর্যন্ত স্থির থাকতে হবে, পেছনে ফিরে
তাকালে চলবে না।
প্রভু আমাদের সমস্ত কিছুই
জানিয়ে দিয়েছেন, যেন আমরা পরবর্তীকালে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ না করি।
৩. প্রকৃত শিষ্য
কষ্টভোগের জন্য প্রস্তুত থাকবেঃ-
প্রভু যীশুর প্রকৃত শিষ্যদের
জীবনে দুঃখ-কষ্ট অবশ্যই আসবে, তাই আরামদায়ক জীবন অতিবাহিত করার পাশাপাশি দুঃখ-কষ্ট
ভোগ করার জন্যও তাদের সর্বদা তৈরী থাকতে হবে।
প্রভু যীশু আমাদের স্পষ্টই
বলেছেন যে, তাঁর প্রকৃত শিষ্যদের অবশ্যই নিজেদের ক্রুশ বহন করতে হবে।
ক্রুশ বহন করার অর্থ হল
– আমরা যখন প্রভুতে চলতে শুরু করব, তখন আমাদের জীবনে নানান ধরণের তাড়না, ঘৃণা, অপমান,
প্রত্যাখ্যান ও দুঃখভোগ সহ্য করতে হবে, এমনকি মৃত্যুকেও স্বীকার করতে হতে পারে। সেই
জন্য তিনি এই সমস্ত বিষয়ে আগেই আমাদের জ্ঞাত করেছেন।
যেসমস্ত প্রচারকেরা বলে থাকেন যে, প্রভু যীশুকে
গ্রহণ করার পর আপনার জীবন অত্যন্ত সহজ হয়ে যাবে এবং আপনার জীবন থেকে সমস্তরকম সমস্যাগুলি
দূর হয়ে যাবে, তারা অবশ্যই সত্যের প্রচার করে না, কারণ প্রভু যীশু কখনই এমনটা বলেননি
যে, তাঁকে গ্রহণ করার পর আমাদের জীবনের সমস্ত সমস্যাগুলির সমাধান হয়ে যাবে বা দুঃখ-কষ্ট
চিরকালের মত বিদায় নেবে, বরং তিনি বলেছেন এই সমস্ত কিছু আরও বৃদ্ধি পাবে।
প্রভু যীশু এই সাংসারিক
জীবনের ভোগ-বিলাসিতার প্রচার করেননি, তিনি কেবল অনন্ত জীবনের প্রচার করেছেন।
আপনি যদি বাইবেল থেকে
প্রভু যীশুর শিক্ষাগুলিকে ভালোভাবে অধ্যায়ন করতে শুরু করেন, তাহলে বুঝতে পারবেন যে,
সেই শিক্ষাগুলি আজকালকার প্রচারকদের শিক্ষাগুলির তুলনায় কতটা ভিন্ন।
খ্রীষ্টকে বিশ্বাস করা
আমাদের জন্য সহজ, কিন্তু খ্রীষ্টেতে জীবনযাপন করা তাঁর তুলনায় অত্যন্ত কঠিন। যখন আমরা
খ্রীষ্টেতে জীবনযাপন করতে শুরু করি, তখন থেকেই আমাদের জীবনে আসল সংঘর্ষ শুরু হয়, সেই
লড়াই বা সংঘর্ষ আমাদের নিজ নিজ শরীরের সাথে, এই জগতের সাথে এবং শয়তান দিয়াবলের সাথে।
৪. প্রভু যীশুর প্রকৃত
শিষ্য তাঁর পশ্চাৎ গমন করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকবেঃ-
প্রভু যীশুর পশ্চাৎ গমন
করার অর্থ হল – যারা তাঁর শিষ্য হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করবে, তারা অবশ্যই তাদের জীবনের
সমস্ত রকম পরিস্থিতিতেই প্রভুর দেখানো পথ অনুযায়ী এগিয়ে যাবে, প্রভু যেমন ভাবে আমাদের
এগিয়ে যেতে বলবেন, তেমন ভাবেই তাদের এগিয়ে যেতে হবে, হতে পারে সেই পথ অত্যন্ত কষ্টদায়ক,
কিন্তু তবুও সেই পথেই আমাদের বিশ্বাস সহকারে এগিয়ে যেতে হবে, পেছনে ফিরে তাকালে চলবে
না।
লুক ৯ অধ্যায় ৬২
পদে প্রভু যীশু বলেছেন –
যে কোন
ব্যক্তি লাঙ্গলে হাত দিয়া পিছনে ফিরিয়া চায়, সে ঈশ্বরের রাজ্যের উপযোগী নয়।
প্রভু যীশু আমাদের কাছে
কোনও শর্তই গোপন রাখেননি, বরং তিনি স্পষ্ট করেই আমাদের সমস্ত কিছু বুঝিয়ে দিয়েছেন।
লুক ১৪ অধ্যায় ২৮
থেকে ৩০ পদে প্রভু যীশু বলেছেন
–
28 বাস্তবিক দুর্গ নির্ম্মাণ করিতে ইচ্ছা
হইলে তোমাদের মধ্যে কে অগ্রে বসিয়া ব্যয় হিসাব করিয়া না দেখিবে, সমাপ্ত করিবার সঙ্গতি তাহার আছে কি না? 29 কি জানি ভিত্তিমূল বসাইলে পর যদি সে
সমাপ্ত করিতে না পারে, তবে যত লোক তাহা দেখিবে, সকলে তাহাকে বিদ্রূপ করিতে আরম্ভ
করিবে, 30 বলিবে, এ ব্যক্তি নির্ম্মাণ করিতে আরম্ভ
করিয়াছিল, কিন্তু সমাপ্ত করিতে পারিল না।
ওপরের পদ তিনটির দ্বারা
প্রভু যীশু সেই বিস্তর লোকদের বোঝাতে চেয়েছেন, তাঁর শিষ্য হওয়ার জন্য শেষ পর্যন্ত তাঁর
শর্তগুলি পালন করতে হবে, তাই কেউ যদি মাঝপথে সেই শর্তগুলি পালন করতে অনিচ্ছুক হয়ে পরে
অথবা ব্যর্থ হয়, তাহলে সে আর তাঁর রাজ্যের উপযোগী রইবে না, তাই তিনি স্পষ্টই সকলের
কাছে সমস্ত কঠিন সত্য প্রকাশ করেছেন, যেন আমরা নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি।
যারা প্রভু যীশুর প্রকৃত
শিষ্য হয়ে ওঠার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, তাদের কাছে তিনি এই প্রশ্নই রেখেছেন – তুমি কি
আমার সাথে শেষ পর্যন্ত চলতে পারবে ?
উদাহরণস্বরুপ বলা যায়
– যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে যদি কোনও সৈনিক পালিয়ে এসে তার থেকে উচ্চপদস্থ কোনও অফিসারকে
বলেন, মহাশয়, শত্রুরা তো আমাদের ওপর গুলি বর্ষণ করছে!
তখন সেই উচ্চপদস্থ অফিসারটি
সেই সৈনিককে বলবেন, আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন ?
আপনি কি জানেন না যে, আপনি একজন সৈনিক আর আপনি এখন
যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছেন ? এখানে তো গুলিবর্ষণ হবেই, আর এগুলির সাথে তো আমাদের
মোকাবিলা করতেই হবে। আপনাকে এখানে আসার আগে ভেবে নেওয়া উচিত ছিল।
ঠিক এই প্রকারেই প্রভু যীশু প্রত্যেকের উদ্দেশ্যে
বলছেন – তোমরা সংঘর্ষের মধ্যে আসতে চলেছ, তাই পরে তোমরা অভিযোগ করতে পারবে না যে, অন্যদের
জীবনে তো এত আনন্দ, এত বিলাসিতা, তাহলে আমরা কেন এসমস্ত কিছু থেকে বঞ্চিত ? তাই অবশ্যই
আমার পশ্চাৎ গমন করার আগে তোমরা সমস্ত কিছু ভেবে নাও, কারণ আমি শর্তগুলি স্পষ্টই সকলের
সামনে প্রকাশ করেছি।
আজকাল অনেক খ্রীষ্ট বিশ্বাসীরাই এই সংঘর্ষগুলিকে
স্বীকার করে নিতে চায় না, তারা কেবল আরামদায়ক জীবন অতিবাহিত করতে পছন্দ করে। তারা প্রভুর
পশ্চাতে চলতে তো অবশ্যই চায়, কিন্তু তারা তাঁর কঠিন শিক্ষাগুলি এবং শর্তগুলি উপেক্ষা
করেই চলতে চায়।
আজ আমরা যদি প্রভু যীশুর প্রকৃত শিষ্য হয়ে ওঠার
ইচ্ছা প্রকাশ করি, তবে অবশ্যই আমাদের নিজেদের এই প্রশ্নটি করার প্রয়োজন রয়েছে যে, আমরা
কি সত্যিই আমাদের জীবনের সমস্ত সংঘর্ষগুলির মধ্য দিয়ে প্রভু যীশুর সাথে শেষ পর্যন্ত
চলতে পারব ?
আমাদের এটি জেনে রাখা প্রয়োজন, পরিত্রাণ লাভ
করার জন্য আমাদের কোনও মূল্য দিতে হয় না, কিন্তু প্রভু যীশুর পশ্চাৎ গমন করতে হলে আমাদের
অনেক মূল্য দিতে হবে।
আমরা যদি সত্যিই তাঁর
পশ্চাৎ গমন করতে চাই, তাহলে অবশ্যই আমাদের সত্যে ও আত্মায় প্রার্থনা করতে হবে, তিনিই
আমাদের তাঁর পথে চলার জন্য পবিত্র আত্মা দ্বারা আত্মীক শক্তি প্রদান করবেন।
Tags:-
Christian Articles, বাংলা খ্রীষ্টীয় নিবন্ধ, bsbbca, bibleshikshabhaskar, BSB Ministry, Bengali Christian Blog, Bangla Gospel, Bengali Gospel, Preaching in Bengali Language, Bible Based Articles, বাংলা প্রচার, বাংলা যীশুর প্রচার, Bangla Christiyo Christio Khristiyo Khristio Prochar, BSB Gospel, Gospel Articles, Bangla Nibondho, Gospel Online, Online Gospel, বাইবেল প্রচার, বাইবেলের বাক্য, Blogger, Jesus Christ, যীশু খ্রীষ্ট,
0 Comments