প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে কি শুধুমাত্র ইস্রায়েলীয়দের জন্য পাঠানো হয়েছিল ? | BSB Bengali Christian Articles
মথি ১০ অধ্যায় ৬ পদে লেখা আছে –
6 তোমরা পরজাতিগণের পথে যাইও না, এবং শমরীয়দের কোন নগরে প্রবেশ করিও
না; বরং ইস্রায়েল-কুলের হারান মেষগণের কাছে যাও।
এবং মথি ১৫ অধ্যায়
২৪ পদে লেখা আছে –
তিনি
উত্তর করিয়া কহিলেন, ইস্রায়েল-কুলের হারান মেষ ছাড়া
আর কাহারও নিকটে আমি প্রেরিত হই নাই।
ওপরের এই দুটি পদের ওপর
ভিত্তি করে অন্য বিশ্বাসের লোকেরা দাবী করে থাকেন যে, প্রভু যীশুকে পিতা ঈশ্বর কেবলমাত্র
ইস্রায়েলীয়দের জন্যই পাঠিয়েছিলেন, সমগ্র মানবজাতির জন্য নয়।
যেসব লোকেরা এরকম দাবী করে থাকেন, তারা এটা ভুলে
যান যে, প্রভু যীশু হল পিতা ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার পরিপূর্ণতা, যে প্রতিজ্ঞা তিনি আব্রাহামের
কাছে করেছিলেন।
আব্রাহাম ঈশ্বরের আজ্ঞাবহ
হয়েছিলেন, তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন, সেই কারণে ঈশ্বর তাকে প্রধানত দুই ধরণের প্রতিশ্রুতি
দিয়েছিলেন।
১. ঈশ্বর আব্রাহামের বংশকে
বহুজাতি করবেন। (আদিপুস্তক ১৭:৬)
২. ঈশ্বর আব্রাহামের বংশের
দ্বারাই পৃথিবীর সকল জাতিকে আশীর্বাদ করবেন, কারণ আব্রাহাম তাঁর বাক্যে অবধান করেছিলেন।
(আদিপুস্তক ২২:১৮)
ঈশ্বরের এই দ্বিতীয় প্রতিশ্রুতিটি প্রভু যীশু
খ্রীষ্টের দ্বারা পরিপূর্ণতা লাভ করেছে, আর তাঁর দ্বারাই সমগ্র জগতসংসার আশীর্বাদ প্রাপ্ত
হয়েছে।
আসুন আমরা বাইবেল থেকেই
এমন কিছু ঘটনা এবং পদ নিয়ে আলোচনা করি, যেগুলি আমাদের কাছে এটি স্পষ্ট করবে যে, প্রভু
যীশুকে কেবলমাত্র ইস্রায়েলীয়দের জন্য নয় বরং সমগ্র মানজাতির জন্য পাঠানো হয়েছিল।
প্রভু যীশুর শিশুকালে শিমিয়োন নামে একজন ব্যক্তি
জেরুশালেমে ছিলেন, তিনি অত্যন্ত ধার্মিক একজন ব্যক্তি ছিলেন। পবিত্র আত্মা সেই ব্যক্তিকে
প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, খ্রীষ্টকে স্বচক্ষে না দেখা পর্যন্ত তার মৃত্যু হবে না।
আর আত্মার আদেশে সেই ব্যক্তি ধর্মধামে এসে পৌঁছেছিলেন, যেখানে যীশুর মা-বাবা যীশুকে নিয়ে উপস্থিত ছিলেন ব্যবস্থার রীতি অনুযায়ী কার্য করার জন্য।
তো সেই শিমিয়োন আত্মার
বশে শিশু যীশুকে কোলে তুলে নিয়ে বলেছিলেন (লুক ২ অধ্যায় ২৯ থেকে ৩২ পদ) –
29 হে স্বামিন্, এখন তুমি তোমার
বাক্যানুসারে তোমার দাসকে শান্তিতে
বিদায় করিতেছ,
30 কেননা আমার নয়নযুগল তোমার
পরিত্রাণ দেখিতে পাইল,
31 যাহা তুমি সকল জাতির সম্মুখে
প্রস্তুত করিয়াছ,
32 পরজাতিগণের প্রতি প্রকাশিত হইবার
জ্যোতি,
ও তোমার প্রজা ইস্রায়েলের গৌরব।
ওপরের ৩২ পদটি প্রমাণ
করে যে, প্রভু যীশুর সেবাকার্য দুই ভাগে বিভক্ত, যেমনটা আব্রাহামের প্রতি ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি
দুই ধরণের ছিল, তেমনটা প্রভু যীশুর সেবাকার্যও দুই ধরণের।
১. ইস্রায়েলীয়রা তাদের
হৃদয় কঠিন করেছিলেন এবং নিজেদের ইচ্ছেমত কপটতার সহিত জীবনযাপন করতে শুরু করেছিলেন,
সেই জন্য এটা আবশ্যক ছিল যেন, প্রভু যীশু সেখানে উপস্থিত থেকে নানান ধরণের আশ্চর্য
কাজ করে তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে তাদের ভুলগুলি ধরিয়ে দেন। যেহেতু ইস্রায়েলীয়রা ঈশ্বরের
মনোনীত লোকজন ছিলেন, সেহেতু প্রভু যীশু তাদের কাছে তাঁর অলৌকিক কাজগুলির দ্বারা এবং
পুরাতন নিয়মের ভবিষ্যৎবাণীগুলি পূরণের দ্বারা এটা প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন যে, তিনিই
সেই প্রতিশ্রুত মসীহ বা খ্রীষ্ট, আর এটিই ছিল তাঁর প্রথম উদ্দেশ্য।
২. প্রভু যীশুর দ্বিতীয়
উদ্দেশ্য ছিল সমগ্র মানবজাতির পাপের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করা।
তিনি কেবলমাত্র ইহুদীদের
জন্য নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির পাপক্ষমার নিমিত্ত ক্রুশে প্রাণ দিয়েছিলেন, কবরপ্রাপ্ত
হয়েছিলেন এবং তৃতীয় দিবসে মৃত্যুকে জয় করে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন।
১ তীমথিয় ২ অধ্যায়
৪ থেকে ৬ পদে লেখা আছে –
4 তাঁহার ইচ্ছা এই, যেন সমুদয় মনুষ্য পরিত্রাণ পায়, ও সত্যের তত্ত্বজ্ঞান পর্য্যন্ত
পঁহুছিতে পারে। 5 কারণ একমাত্র ঈশ্বর আছেন; ঈশ্বরের ও মনুষ্যদের মধ্যে একমাত্র
মধ্যস্থও আছেন, 6 তিনি মনুষ্য, খ্রীষ্ট যীশু, তিনি সকলের নিমিত্ত মুক্তির মূল্যরূপে
আপনাকে প্রদান করিয়াছেন; এই সাক্ষ্য যথাসময়ে দাতব্য;
প্রভু যীশুর স্বর্গারোহণের
পূর্বে তিনি প্রেরিত ১ অধ্যায় ৮ পদে তাঁর শিষ্যদের বলে গিয়েছেন –
কিন্তু
পবিত্র আত্মা তোমাদের উপরে আসিলে তোমরা শক্তি প্রাপ্ত হইবে; আর তোমরা যিরূশালেমে, সমুদয় যিহূদীয়া ও শমরিয়া দেশে, এবং পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত আমার সাক্ষী হইবে।
তাহলে অন্য বিশ্বাসীদের
কাছে আমাদের প্রশ্ন এটাই যে, যদি প্রভু যীশুকে কেবলমাত্র ইস্রায়েলীয়দের জন্যই পাঠানো
হয়ে থাকে, তাহলে তিনি স্বর্গারোহণের পূর্বে কেন তাঁর শিষ্যদের এমনটা বলে গেলেন যে,
পবিত্র আত্মা তোমাদের ওপরে আসলে তোমরা শক্তিলাভ করবে এবং তারপর তোমরা জেরুশালেমে, সমুদয়
যিহূদীয়াতে, শমরিয়া দেশে এবং পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত আমার সাক্ষী হবে ?
এছাড়াও মথি ২৮ অধ্যায় ১৯ পদে আমরা প্রভু
যীশুর শেষ আদেশে এমনটা পেয়ে থাকি, সেখানে লেখা আছে –
অতএব
তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; পিতার ও পুত্রের ও পবিত্র
আত্মার নামে তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর;
প্রভু যীশু এমনটা বলেননি
যে, তোমরা গিয়ে শুধুমাত্র ইস্রায়েলীয়দেরকে আমার শিষ্য কর, বরং তিনি বলেছেন সমুদয় জাতিকে
শিষ্য করতে।
যোহন ৮ অধ্যায় ১২ পদে আমরা পাই যে, প্রভু
যীশু সেখানে নিজেকে জগতের জ্যোতি বলে অভিহিত করেছেন, তিনি কিন্তু এমনটা বলেননি, আমি
ইস্রায়েলের জ্যোতি, বরং তিনি স্পষ্টই বলেছেন, ‘আমি জগতের জ্যোতি’।
যোহন ৩ অধ্যায় ১৬ পদে লেখা আছে –
কারণ
ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।
ওপরের পদটিতে এমনটা লেখা
নেই যে, ঈশ্বর ইস্রায়েলীয়দের এমন প্রেম করিলেন, বরং লেখা আছে - জগৎকে এমন প্রেম করিলেন।
আর শুধুমাত্র ইহুদীরা বা ইস্রায়েলীয়রা নয় বরং যে কেউ তাঁকে বিশ্বাস করবে সে বিনষ্ট
হবে না কিন্তু অনন্ত জীবন লাভ করবে।
প্রভু যীশু যেমন ইস্রায়েলীয়দের জন্য নিজের প্রাণ
উৎসর্গ করেছেন, ঠিক তেমনটাই প্রত্যেক জাতির মানুষের জন্যও নিজের প্রাণ উৎসর্গ করেছেন,
আর সেই জন্যই পরজাতীয়েরাও তাঁর ওপর প্রত্যাশা রাখবে, যেন তারা অনন্ত জীবন লাভ করতে
পারে।
Tags:-
Christian Articles, বাংলা খ্রীষ্টীয় নিবন্ধ, bsbbca, bibleshikshabhaskar, BSB Ministry, Bengali Christian Blog, Bangla Gospel, Bengali Gospel, Preaching in Bengali Language, Bible Based Articles, বাংলা প্রচার, বাংলা যীশুর প্রচার, Bangla Christiyo Christio Khristiyo Khristio Prochar, BSB Gospel, Gospel Articles, Bangla Nibondho, Gospel Online, Online Gospel, বাইবেল প্রচার, বাইবেলের বাক্য, Blogger, Jesus Christ, যীশু খ্রীষ্ট, was Jesus sent only for Israelites?,
0 Comments